বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
তোমাদের গল্প

চোর

সঞ্জয় সরকার
  ১০ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

সকালে ঘুম থেকে উঠেই মেজাজটা বিগড়ে গেল হারুন মিয়ার। খামার থেকে আজও একটা হাঁস চুরি হয়েছে। শুধু আজই না, প্রায় রাতেই একটা-দুইটা করে হাঁস চুরি হচ্ছে তার। পাড়া-পড়শিদের বাড়িতেও এমন হাঁস-মুরগি চুরির ঘটনা ঘটছে। কিন্তু চুরিটা কে করছে- তা কেউ বুঝতে পারছে না। হারুন মিয়ার খিস্তি খেউর শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলো। এদের মধ্যে একজন মোজাফ্‌ফর। সব সময় আগ বাড়িয়ে কথা বলে সে। চুরির ঘটনা শোনামাত্রই মোজাফ্‌ফর বলে উঠল- 'আমি জানি এটা সোলেমানের কাজ। সোলেমান ছাড়া আমাদের পাড়ায় আর কোনো চোর নেই। ছেলেটাকে আসকারা দিতে দিতে তার বাবা-মা একবারে পাক্কা চোর বানিয়ে ফেলেছে। ওকে এনে পিঠমোড়া দিয়ে বাঁধলেই চুরি বন্ধ হবে।' মোজাফ্‌ফরের কথায় সায় দিলেন বৃদ্ধা হাজেরা বেগমও। 'ঠিক বলেছ মোজাফ্‌ফর। আমারও তাই ধারণা। গতকাল ও আমার গাছ থেকে নারকেল চুরি করতে চেয়েছিল। ভাগ্যিস আমি টের পেয়েছিলাম।' রহিমুদ্দিন বললেন- 'শুধু কী নারকেল? মানুষের গাছ-গাছালির আতা, পেয়ারা, কলা, বরই, আম, জাম, কাঁঠাল কোনোকিছুই বাদ রাখছে না সে। এর একটা বিহিত করা দরকার।'

তেরো-চৌদ্দ বছরের কিশোর সোলেমান। কিছুটা ডাঙ্গর স্বভাবের। লেখাপড়া করে না বলে সারাদিন এ বাড়ি-ও বাড়ি টইটই করে ঘোরে। কারও গাছে ফল দেখলেই সবার অলক্ষ্যে সাবাড় করে। মাঝেমধ্যে অবশ্য তার বাবার ঠেলাগাড়ি চালানোর কাজেও সাহায্য করতে যায়। কিন্তু ও কাজে তার মন টেকে না। তার লক্ষ্য একটাই। গাছ থেকে ফল পেড়ে খাওয়া। আর এ কারণেই সবার সন্দেহের তীর সোলেমানের দিকে।

কথামতো কাজ শুরু হয়ে গেল। সোলেমানকে ধরে আনা হলো হারুন মিয়ার বাড়িতে। খবর পাঠানো হলো তার বাবা-মাকেও। কিন্তু চুরির কথা একবারও স্বীকার করছে না সোলেমান। তার সোজাসাপ্টা জবাব- 'আমি ফল পেড়ে খাই ঠিক। কিন্তু হাঁস-মুরগি চুরি করি না। তোমরা আমাকে ভুল বুঝছো।' কিন্তু তার কথা কে শোনে? সোলেমানের সঙ্গে তার বাবা-মাকেও গালমন্দ করল সবাই। রাগের স্বরে হারুন মিয়া বললেন- 'ঠিক আছে। হাতেনাতে ধরেই আমি প্রমাণ করব।' মোজাফ্‌ফর, হাজেরা বেগম, রহিমুদ্দিন সবাই সুর মিলালেন তার সঙ্গে। বললেন- 'হঁ্যা, আরেকদিন হাতেনাতেই ধরব। তারপর বোঝাবো ঠ্যালা'। '

ওইদিনই বাজার থেকে হাই ভোল্টেজের চার্জলাইট কিনে আনলেন হারুন মিয়া। রাতে বাড়িতে পাহারার ব্যবস্থা করলেন। চোর ধরার নেশায় স্বেচ্ছাশ্রমে পাহারা দিতে চলে এলেন মোজাফ্‌ফর, রহিমুদ্দিনসহ পাড়ার আরও কয়েক উঠতি যুবক। বাড়ির শিশু-কিশোররাও সামিল হলো চোর ধরার অভিযানে। সবার মধ্যে এক ধরনের আনন্দ আনন্দ ভাব। সোলেমান চোরা আজ হাতেনাতে ধরা খাবে। এরপর বুঝবে কত ধানে কত চাল!

রাত বারোটায় অভিযান শুরু হলো। চারদিকে তখন সুনসান নীরবতা। মোজাফ্‌ফরের কথামতো হারুন মিয়া বাড়ির সব লাইট অফ করে দিলেন। রহিমুদ্দিনের পরামর্শ মতো একেকজন বাড়ির একেক দিকে চুপচাপ অবস্থান নিলেন। সবার হাতে দা, বলস্নম, কাতরা প্রভৃতি দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র। হারুন মিয়া মাঝেমধ্যেই চার্জলাইট জ্বেলে সবার খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। কিন্তু না। রাত ক্রমেই বাড়লেও চোরের সাড়া-শব্দ মিলছে না। ঘুমের ঘোরে পাহারাদাররা ঝিমুতে শুরু করেছেন। গভীর রাতে হঠাৎ খামারের ভিতরে ধপ্পাস করে একটা শব্দ হলো। হাঁসগুলো প্রাণভয়ে 'প্যাক প্যাক' করতে থাকল। হারুন মিয়া চার্র্জলাইট ধরলেন। পাহারারদাররা 'চোর চোর' বলে চিৎকার করতে করতে এগিয়ে গেলেন খামারের দিকে। ভিতরে তখন কিছু একটার ছোটাছুটি চলছে। পালাবার পথ খুঁজছে। আর হাঁসগুলো অনেক্ষণ ধরে প্যাক প্যাক করেই চলেছে। মোজাফ্‌ফর বলতে লাগলেন- 'আয় সোলেমান, বেরিয়ে আয়। আজ আর তোর রক্ষা নেই'।

এদিকে পাহারাদারদের চিৎকার শুনে পাড়া-প্রতিবেশীরাও দৌড়ে এগিয়ে এলেন। কিন্তু তাদের সঙ্গে সোলেমানকেও আসতে দেখে অবাক হয়ে গেলেন প্রত্যেকে। 'কী আশ্চর্য! সোলেমান কি খামারের ভিতরে নেই? তাহলে চুরি করতে এলো কে?' প্রচন্ড কৌতূহল নিয়ে খামারের চারপাশে দাঁড়িয়ে রইল সবাই। খামারের ভিতরে তখনও কিছু একটার দাপাদাপি চলছে। হারুন মিয়া বললেন- 'চোর যেই হোক, আগে বাইরে বের করে আনো। আমি নিজ হাতে ওকে শাস্তি দিব। চুরি হওয়া সব কটা মুরগি ওর পেট থেকে বের করব আমি। তা না হলে আমার নাম হারুন মিয়া-ই না।'

রহিমুদ্দিন খামারের দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন। আস্তে আস্তে দরজার খানিকটা ফাঁকা করে ভিতরে ঢোকার প্রস্তুতি নিলেন। অমনি একটা জন্তু বিকট শব্দ করে লাফ দিয়ে বেরিয়ে গেল। হারুন মিয়া চার্জ লাইট ধরলেন। লাইটের আলোয় স্পষ্ট দেখা গেল- একটি মেছোবাঘ প্রাণভয়ে দৌড়ে পালাচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<61953 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1