মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পিঁপড়া ও ঘাসফুল

হাসান মাহমুদ বজ্র
  ১৯ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০
অনেক অনেক দিন আগের কথা, এক গাঁয়ে ছিল এক পিঁপড়া। তার মনে ছিল অনেক দুঃখ। তার স্বামী পিঁপড়ে একদিন খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে আর ফিরে এলো না। সে তার স্বামীর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে, পথের দিকে তাকিয়ে থাকে প্রতিদিন। কিন্তু দিন মাস বছর কেটে যায় স্বামী তার ফেরে না। একদিন পিঁপড়াটি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। প্রতিমধ্যে তার এক পিঁপড়া বন্ধুর সঙ্গে দেখা। সে রাজবাড়ি থেকে ফিরছিল। রাজবাড়িতে আজ ভোজ আছে, তাই সবে দলে দলে সেই দিকেই যাচ্ছে। পিঁপড়াটি মনস্থির করল সেও রাজবাড়িতে যাবে। রাজবাড়িতে আজ আশপাশের সব রাজ্য থেকে পিঁপড়ারা আসবে। সেখানে যদি সে তার স্বামীর দেখা পায়। রাজবাড়ি ছিল সেখান থেকে অনেক দূরে। পিঁপড়াটি যাচ্ছিল। যেতে যেতে সে একটি দীঘির পাড়ে এলো। দীঘির পাড়ে কতগুলো ঘাসফুল, দেখতে বেশ সুন্দর। ওরা সকালের আলোতে মাথা তুলে কোমর দুলিয়ে দুলিয়ে নাচছে। পিঁপড়াটি সে দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে অনেকক্ষণ তাদের নৃত্য দেখল। আরও একটু সামনে যেতে সে দেখল ঘাসফুলগুলো কাঁদতে শুরু করল। পিঁপড়াটি অবাক হলো। সে জিজ্ঞেস করল, ও ভাই ঘাসফুল, তোমরা এমন করে কাঁদছ কেন? ঘাসফুলগুলো সবাই একসঙ্গে বলল ওভাই পিঁপড়ে, তোমাকে বলে কী লাভ হবে? আমাদের যে অনেক দুঃখ। পিঁপড়াটি বলল, বলে দেখো না, যদি আমি তোমাদের কোনো সাহায্য করতে পারি। ঘাসফুলগুলোর মধ্যে সব চেয়ে বড় ঘাসফুলটি বলল, ভাই পিঁপড়া কী বলল দুঃখের কথা, আমাদের এই প্রান্তরে আমরা সুখে-শান্তিতে বসবাস করছিলাম কিন্তু কিছুদিন হলো এক দুষ্ট ইঁদুর এখানে এসে ঘর বেঁধেছে। সে প্রতিদিন আমাদের কাউকে না কাউকে তার ধারালো দাঁত দিয়ে চিবিয়ে খায়, আমাদের গায়ের উপর দিয়ে চলতে গিয়ে আমাদের মাড়িয়ে দেয়, আমাদের ফুল ছিঁড়ে ফেলে। আমরা প্রতিদিন ভয়ে থাকি, কোনদিন না কার পালা আসে। কার গায়ের উপর দিয়ে ওই হিংস্র হায়নাটি দৌড়ে যাবে। কাকে ধারালো দাঁত দিয়ে কেটে দেবে। আমরা সবাই তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ। সব ঘাসফুল গুনগুন করে কাঁদতে লাগল। দক্ষিণ থেকে মৃদু বাতাস বয়ে এলো। কিন্তু সে বাতাসে তারা কেউ হাসল না, কোমর দুলিয়ে নাচল না কেউই। পিঁপড়াটি ঘাসফুলগুলোর দুঃখ দেখে নিজের দুঃখের কথা ভুলে গেল। সে ভুলে গেল রাজবাড়িতে যাওয়ার কথা। সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল সে এই ঘাসফুলগুলোকে ওই দুষ্ট ইঁদুরটার কবল থেকে মুক্ত করবেই। পিঁপড়াটি কিছু বলছে না দেখে ঘাসফুলগুলো বলতে লাগল, ওভাই পিঁপড়া, আমাদের এই দুষ্ট ইঁদুরের কবল থেকে মুক্ত করে দাও, আলস্নাহ তোমার ভালো করবে। সবাই আবার গুনগুন করে কাঁদতে শুরু করে দিল। পিঁপড়াটি বলল ঠিক আছে, আমি তোমাদের ওই দানবটার হাত থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করব। আমি আমার দলের কাছে গিয়ে তোমাদের দুঃখের কথা জানাবো। তাহলে আমি এখন যাই, আবার তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে। ঘাসফুলগুলো সবাই একসঙ্গে বলে উঠল, আমরা অপেক্ষায় থাকব। বিদায় বলে পিঁপড়াটি ফিরে যেতে লাগল। কিছুদূর যাওয়ার পরে সে দেখতে পেল পিঁপড়ে রাজা তার সৈন্য-সামন্ত দল-বল নিয়ে রাজবাড়ির দিকে চলছে। পিঁপড়াটি দৌড়ে গিয়ে পিঁপড়া রাজের সামনে হাজির হলো, মহারাজ মহারাজ! পিঁপড়া রাজা অবাক হলো, বলল- কী রে পিঁপড়ে তুই এমন করে দৌড়াচ্ছিস কেন? তোর আবার কি হলো। বল, খুলে বল দেখি। পিঁপড়াটি বলল মহারাজ দীঘির পাড়ের প্রান্তরে এক দুষ্ট ইঁদুর এসে বাসা বেঁধেছে। সে প্রতিদিন ঘাসফুলদের মাড়িয়ে ফেলে, ধারালো দাঁত দিয়ে কেটে দেয়, চিবিয়ে খায়। রাজ্যের সব ঘাসফুল ইঁদুরটির অত্যাচারে অতিষ্ঠ। ঘাসফুলগুলো আমাদের কাছে সাহায্য চায়। পিঁপড়া রাজা হুংকার ছেড়ে বলল, কী আমার রাজ্যে এত বড় অন্যায়। না হতে পারে না, হতে পারে না, এ কিছুতে হতে পারে না। ওই পাজি ইঁদুরকে আমি শায়েস্তা না করে ছাড়ছি না। পিঁপড়া রাজা হুংকার দিয়ে বললেন, সেনাপতি, চলো দেখি ওই পাজি বজ্জাতটার কাছে। পিঁপড়া সেনাপতি গোঁফে হাত বুলিয়ে বললেন- মহারাজ বলছিলাম যে, রাজবাড়ির ভোজটা সেরে গেলে হয় না? পিঁপড়া রাজা বললেন, না না হয় না, এ হয় না। আমার রাজ্যে কেউ বিপদে থাকবে, আর আমি করব ভোজ। না এ অন্যায়। এক্ষনি চলো আর দেরি নয়। ঘাসফুলগুলোকে এক্ষনি মুক্ত করতে হবে যে। পিঁপড়া রাজা তার সৈন্য-সামন্ত নিয়ে এগিয়ে চলল। এদিকে ইঁদুরটি তার গর্তে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিল। পিঁপড়া রাজাকে দেখে ঘাসফুলগুলো আনন্দ ধ্বনি দিয়ে উঠল। পিঁপড়া রাজা স্বয়ং এসেছে তাদের সাহায্য করতে। তারা তো মহাখুশি। তাদের হইচই শুনে ইঁদুরটির ঘুম ভেঙে গেল। রেগে গিয়ে বলল, তবে রে? আজ তোদের মজা দেখাবো। সব বেটাকে মাড়িয়ে দিব, জ্যান্ত চিবিয়ে খাব। সে ফুঁসতে ফুঁসতে গর্ত থেকে বাইরে বেরিয়ে এলো। ইঁদুরটিকে দেখে ঘাসফুলগুলো সুরে সুরে বলতে লাগল- পাজি ইঁদুর দুষ্ট ইঁদুর দেখবি কেমন মজা/ পিঁপড়া রাজা আসছে আজি দিতে তোরে সাজা। ইঁদুরটি দেখল স্বয়ং পিঁপড়া রাজা তার সৈন্য-সামন্ত নিয়ে হাজির। ইঁদুরটি অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। পিঁপড়া দেবে আমায় সাজা? হাহা কী মজা, কী মজা। এত ছোট পিঁপড়া আসছে আমার মতো বিশাল দেহি ইঁদুরের সঙ্গে যুদ্ধ করতে, হা হা হা, বড়ই মজা বড়ই মজা। তার কথা শুনে ঘাসফুলগুলো হতাশ হয়ে পড়ল। পিঁপড়া রাজা হুংকার দিয়ে বলল, ওহে পাজি ইঁদুর তুই এখান থেকে চলে যা। না হলে তোকে শাস্তি পেতে হবে। আমি তোরে চরম শাস্তি দেবো। পিঁপড়া রাজের কথা শুনে ইঁদুরটি রেগে গেল, এবং তেড়ে এলো। পিঁপড়া করবে আমায় রাজ্য ছাড়া, তবে রে? তোদের আস্ত গিলে খাব রে। তমুল যুদ্ধ শুরু হলো। অনেকক্ষণ ধরে যুদ্ধ চলল। ইঁদুরটি হাঁফিয়ে উঠল। এমনিতেই সে পরের খাদ্য চুরি করে খেয়ে খেয়ে অলস হয়ে গেছে। এক সময় পিঁপড়ারা ইদুরটিকে ঘিরে ফেলল। এবং অবিরত কামড়াতে থাকল। ইঁদুরটি ছুটতে লাগল এবং চিৎকার করতে লাগল। কিন্তু পরিশ্রমী পিঁপড়ারা ছাড়তে রাজি নয়। তারা কামড়াতে কামড়াতে এক সময় ইঁদুরটি মেরে ফেলল। ঘাসফুলগুলো পিঁপড়া রাজাকে ধন্যবাদ দিল। ঘাসফুলগুলো ওই পিঁপড়াটিকে ধন্যবাদ দিল যাকে তারা তাদের দুঃখের কথা বলেছিল। পিঁপড়া রাজা তার দল-বল নিয়ে ফিরে গেল। শুধু ওই পিঁপড়াটি রয়ে গেল। সে ঘাসফুলগুলোর সঙ্গে গল্প করতে লাগল। হঠাৎ করে তার চোখে পড়ল একটি পিঁপড়া মরার মতো পড়ে আছে কিছুদূরে। পিঁপড়াটি এগিয়ে গেল সেদিকে। কাছে গিয়ে পিঁপড়াটি অবাক হলো। একি? এ তো তার হারিয়ে যাওয়া স্বামী। একি অবস্থা হলো তার? নিশ্চয়ই সেও এই ইঁদুরটির সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল। তাই তার এ হাল হলো। পিঁপড়াটি মাথায় হাত দিয়ে কাঁত লাগল। তাকে কাঁদতে দেখে ঘাসফুলগুলো বলল, একি বন্ধু তুমি কাঁদছ কেন? পিঁপড়াটি বলল এই পিঁপড়াটি আমার হারিয়ে যাওয়া স্বামী। তাকে খুঁজতেই আমি রাজবাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম। পতিমধ্যে তোমাদের সঙ্গে দেখা। আমার স্বামী বোধ হয় মরে গেছে। হায় একি হলো। ঘাসফুলগুলো বলল, কেঁদো না বন্ধু, তুমি আমাদের অনেক উপকার করেছ। আমরা তোমার উপকার করব। তোমার স্বামীকে এনে আমাদের ফুলের নিচে রাখো। সন্ধ্যায় শিশির যখন আমাদের গায়ে এসে পড়বে, তখন আমরা সেই শিশির তোমার স্বামীর গাঁয়ে ছিটিয়ে দিলে তোমার স্বামী ভালো হয়ে যাবে। শুনে পিঁপড়াটি খুব খুশি হলো। সে তার স্বামীকে নিয়ে ঘাসফুলের নিচে রাখল। সন্ধ্যা নেমে এলো। শিশির পড়ল ঘাসফুলের বুকে। ঘাসফুলগুলো সেই শিশির ছিটিয়ে দিল পিঁপড়াটির গায়ে। পিঁপড়াটি সুস্থ হয়ে উঠল। উঠে স্ত্রীকে কাছে দেখে সে আনন্দ ধ্বনি করে উঠল। তারা অনেকদিন পর একে অন্যকে ফিরে পেল। তারা ঘাসফুলগুলোর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলো। পিঁপড়াটি বলল- অন্যের উপকার করলে নিজেরই উপকার হয় বটে।

অনেক অনেক দিন আগের কথা, এক গাঁয়ে ছিল এক পিঁপড়া। তার মনে ছিল অনেক দুঃখ। তার স্বামী পিঁপড়ে একদিন খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে আর ফিরে এলো না। সে তার স্বামীর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে, পথের দিকে তাকিয়ে থাকে প্রতিদিন। কিন্তু দিন মাস বছর কেটে যায় স্বামী তার ফেরে না। একদিন পিঁপড়াটি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। প্রতিমধ্যে তার এক পিঁপড়া বন্ধুর সঙ্গে দেখা। সে রাজবাড়ি থেকে ফিরছিল। রাজবাড়িতে আজ ভোজ আছে, তাই সবে দলে দলে সেই দিকেই যাচ্ছে। পিঁপড়াটি মনস্থির করল সেও রাজবাড়িতে যাবে। রাজবাড়িতে আজ আশপাশের সব রাজ্য থেকে পিঁপড়ারা আসবে। সেখানে যদি সে তার স্বামীর দেখা পায়। রাজবাড়ি ছিল সেখান থেকে অনেক দূরে। পিঁপড়াটি যাচ্ছিল। যেতে যেতে সে একটি দীঘির পাড়ে এলো। দীঘির পাড়ে কতগুলো ঘাসফুল, দেখতে বেশ সুন্দর। ওরা সকালের আলোতে মাথা তুলে কোমর দুলিয়ে দুলিয়ে নাচছে। পিঁপড়াটি সে দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে অনেকক্ষণ তাদের নৃত্য দেখল। আরও একটু সামনে যেতে সে দেখল ঘাসফুলগুলো কাঁদতে শুরু করল। পিঁপড়াটি অবাক হলো। সে জিজ্ঞেস করল, ও ভাই ঘাসফুল, তোমরা এমন করে কাঁদছ কেন? ঘাসফুলগুলো সবাই একসঙ্গে বলল ওভাই পিঁপড়ে, তোমাকে বলে কী লাভ হবে? আমাদের যে অনেক দুঃখ। পিঁপড়াটি বলল, বলে দেখো না, যদি আমি তোমাদের কোনো সাহায্য করতে পারি। ঘাসফুলগুলোর মধ্যে সব চেয়ে বড় ঘাসফুলটি বলল, ভাই পিঁপড়া কী বলল দুঃখের কথা, আমাদের এই প্রান্তরে আমরা সুখে-শান্তিতে বসবাস করছিলাম কিন্তু কিছুদিন হলো এক দুষ্ট ইঁদুর এখানে এসে ঘর বেঁধেছে। সে প্রতিদিন আমাদের কাউকে না কাউকে তার ধারালো দাঁত দিয়ে চিবিয়ে খায়, আমাদের গায়ের উপর দিয়ে চলতে গিয়ে আমাদের মাড়িয়ে দেয়, আমাদের ফুল ছিঁড়ে ফেলে। আমরা প্রতিদিন ভয়ে থাকি, কোনদিন না কার পালা আসে। কার গায়ের উপর দিয়ে ওই হিংস্র হায়নাটি দৌড়ে যাবে। কাকে ধারালো দাঁত দিয়ে কেটে দেবে। আমরা সবাই তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ। সব ঘাসফুল গুনগুন করে কাঁদতে লাগল। দক্ষিণ থেকে মৃদু বাতাস বয়ে এলো। কিন্তু সে বাতাসে তারা কেউ হাসল না, কোমর দুলিয়ে নাচল না কেউই। পিঁপড়াটি ঘাসফুলগুলোর দুঃখ দেখে নিজের দুঃখের কথা ভুলে গেল। সে ভুলে গেল রাজবাড়িতে যাওয়ার কথা। সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল সে এই ঘাসফুলগুলোকে ওই দুষ্ট ইঁদুরটার কবল থেকে মুক্ত করবেই। পিঁপড়াটি কিছু বলছে না দেখে ঘাসফুলগুলো বলতে লাগল, ওভাই পিঁপড়া, আমাদের এই দুষ্ট ইঁদুরের কবল থেকে মুক্ত করে দাও, আলস্নাহ তোমার ভালো করবে। সবাই আবার গুনগুন করে কাঁদতে শুরু করে দিল। পিঁপড়াটি বলল ঠিক আছে, আমি তোমাদের ওই দানবটার হাত থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করব। আমি আমার দলের কাছে গিয়ে তোমাদের দুঃখের কথা জানাবো। তাহলে আমি এখন যাই, আবার তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে। ঘাসফুলগুলো সবাই একসঙ্গে বলে উঠল, আমরা অপেক্ষায় থাকব। বিদায় বলে পিঁপড়াটি ফিরে যেতে লাগল। কিছুদূর যাওয়ার পরে সে দেখতে পেল পিঁপড়ে রাজা তার সৈন্য-সামন্ত দল-বল নিয়ে রাজবাড়ির দিকে চলছে। পিঁপড়াটি দৌড়ে গিয়ে পিঁপড়া রাজের সামনে হাজির হলো, মহারাজ মহারাজ! পিঁপড়া রাজা অবাক হলো, বলল- কী রে পিঁপড়ে তুই এমন করে দৌড়াচ্ছিস কেন? তোর আবার কি হলো। বল, খুলে বল দেখি। পিঁপড়াটি বলল মহারাজ দীঘির পাড়ের প্রান্তরে এক দুষ্ট ইঁদুর এসে বাসা বেঁধেছে। সে প্রতিদিন ঘাসফুলদের মাড়িয়ে ফেলে, ধারালো দাঁত দিয়ে কেটে দেয়, চিবিয়ে খায়। রাজ্যের সব ঘাসফুল ইঁদুরটির অত্যাচারে অতিষ্ঠ। ঘাসফুলগুলো আমাদের কাছে সাহায্য চায়। পিঁপড়া রাজা হুংকার ছেড়ে বলল, কী আমার রাজ্যে এত বড় অন্যায়। না হতে পারে না, হতে পারে না, এ কিছুতে হতে পারে না। ওই পাজি ইঁদুরকে আমি শায়েস্তা না করে ছাড়ছি না। পিঁপড়া রাজা হুংকার দিয়ে বললেন, সেনাপতি, চলো দেখি ওই পাজি বজ্জাতটার কাছে। পিঁপড়া সেনাপতি গোঁফে হাত বুলিয়ে বললেন- মহারাজ বলছিলাম যে, রাজবাড়ির ভোজটা সেরে গেলে হয় না? পিঁপড়া রাজা বললেন, না না হয় না, এ হয় না। আমার রাজ্যে কেউ বিপদে থাকবে, আর আমি করব ভোজ। না এ অন্যায়। এক্ষনি চলো আর দেরি নয়। ঘাসফুলগুলোকে এক্ষনি মুক্ত করতে হবে যে। পিঁপড়া রাজা তার সৈন্য-সামন্ত নিয়ে এগিয়ে চলল।

এদিকে ইঁদুরটি তার গর্তে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিল। পিঁপড়া রাজাকে দেখে ঘাসফুলগুলো আনন্দ ধ্বনি দিয়ে উঠল। পিঁপড়া রাজা স্বয়ং এসেছে তাদের সাহায্য করতে। তারা তো মহাখুশি। তাদের হইচই শুনে ইঁদুরটির ঘুম ভেঙে গেল। রেগে গিয়ে বলল, তবে রে? আজ তোদের মজা দেখাবো। সব বেটাকে মাড়িয়ে দিব, জ্যান্ত চিবিয়ে খাব। সে ফুঁসতে ফুঁসতে গর্ত থেকে বাইরে বেরিয়ে এলো। ইঁদুরটিকে দেখে ঘাসফুলগুলো সুরে সুরে বলতে লাগল- পাজি ইঁদুর দুষ্ট ইঁদুর দেখবি কেমন মজা/ পিঁপড়া রাজা আসছে আজি দিতে তোরে সাজা।

ইঁদুরটি দেখল স্বয়ং পিঁপড়া রাজা তার সৈন্য-সামন্ত নিয়ে হাজির। ইঁদুরটি অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। পিঁপড়া দেবে আমায় সাজা? হাহা কী মজা, কী মজা। এত ছোট পিঁপড়া আসছে আমার মতো বিশাল দেহি ইঁদুরের সঙ্গে যুদ্ধ করতে, হা হা হা, বড়ই মজা বড়ই মজা। তার কথা শুনে ঘাসফুলগুলো হতাশ হয়ে পড়ল। পিঁপড়া রাজা হুংকার দিয়ে বলল, ওহে পাজি ইঁদুর তুই এখান থেকে চলে যা। না হলে তোকে শাস্তি পেতে হবে। আমি তোরে চরম শাস্তি দেবো।

পিঁপড়া রাজের কথা শুনে ইঁদুরটি রেগে গেল, এবং তেড়ে এলো। পিঁপড়া করবে আমায় রাজ্য ছাড়া, তবে রে? তোদের আস্ত গিলে খাব রে। তমুল যুদ্ধ শুরু হলো। অনেকক্ষণ ধরে যুদ্ধ চলল। ইঁদুরটি হাঁফিয়ে উঠল। এমনিতেই সে পরের খাদ্য চুরি করে খেয়ে খেয়ে অলস হয়ে গেছে। এক সময় পিঁপড়ারা ইদুরটিকে ঘিরে ফেলল। এবং অবিরত কামড়াতে থাকল। ইঁদুরটি ছুটতে লাগল এবং চিৎকার করতে লাগল। কিন্তু পরিশ্রমী পিঁপড়ারা ছাড়তে রাজি নয়। তারা কামড়াতে কামড়াতে এক সময় ইঁদুরটি মেরে ফেলল। ঘাসফুলগুলো পিঁপড়া রাজাকে ধন্যবাদ দিল। ঘাসফুলগুলো ওই পিঁপড়াটিকে ধন্যবাদ দিল যাকে তারা তাদের দুঃখের কথা বলেছিল। পিঁপড়া রাজা তার দল-বল নিয়ে ফিরে গেল। শুধু ওই পিঁপড়াটি রয়ে গেল। সে ঘাসফুলগুলোর সঙ্গে গল্প করতে লাগল। হঠাৎ করে তার চোখে পড়ল একটি পিঁপড়া মরার মতো পড়ে আছে কিছুদূরে। পিঁপড়াটি এগিয়ে গেল সেদিকে। কাছে গিয়ে পিঁপড়াটি অবাক হলো। একি? এ তো তার হারিয়ে যাওয়া স্বামী। একি অবস্থা হলো তার? নিশ্চয়ই সেও এই ইঁদুরটির সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল। তাই তার এ হাল হলো। পিঁপড়াটি মাথায় হাত দিয়ে কাঁত লাগল। তাকে কাঁদতে দেখে ঘাসফুলগুলো বলল, একি বন্ধু তুমি কাঁদছ কেন? পিঁপড়াটি বলল এই পিঁপড়াটি আমার হারিয়ে যাওয়া স্বামী। তাকে খুঁজতেই আমি রাজবাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম। পতিমধ্যে তোমাদের সঙ্গে দেখা। আমার স্বামী বোধ হয় মরে গেছে। হায় একি হলো। ঘাসফুলগুলো বলল, কেঁদো না বন্ধু, তুমি আমাদের অনেক উপকার করেছ। আমরা তোমার উপকার করব। তোমার স্বামীকে এনে আমাদের ফুলের নিচে রাখো। সন্ধ্যায় শিশির যখন আমাদের গায়ে এসে পড়বে, তখন আমরা সেই শিশির তোমার স্বামীর গাঁয়ে ছিটিয়ে দিলে তোমার স্বামী ভালো হয়ে যাবে। শুনে পিঁপড়াটি খুব খুশি হলো। সে তার স্বামীকে নিয়ে ঘাসফুলের নিচে রাখল। সন্ধ্যা নেমে এলো। শিশির পড়ল ঘাসফুলের বুকে। ঘাসফুলগুলো সেই শিশির ছিটিয়ে দিল পিঁপড়াটির গায়ে। পিঁপড়াটি সুস্থ হয়ে উঠল। উঠে স্ত্রীকে কাছে দেখে সে আনন্দ ধ্বনি করে উঠল। তারা অনেকদিন পর একে অন্যকে ফিরে পেল। তারা ঘাসফুলগুলোর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলো। পিঁপড়াটি বলল- অন্যের উপকার করলে নিজেরই উপকার হয় বটে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<71674 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1