বাবার আদুরে মেয়ে তাইফা। ওর সাত বছর শেষ হল। কদিন পরেই ক্লাস টুতে উঠে যাবে। সে সারাদিন নানারকম বায়না করে। পূরণ না হলেই শুরু হয় তার অভিমান। আজকে সে বায়না ধরেছে ইলিশ মাছ ভাজা খাবে। তাইফার বাবা অফিস থেকে ফেরেনি তাই মা অনেক গল্প করে কোলে বসিয়ে তাকে ভাত খাইয়ে দিল। বাবার অফিসে অনেক কাজ। রাতে বাবা ফিরতেই দৌড়ে বাবার কাছে গেল তাইফা। কিন্তু মাছের কথা বলতেই বাবার মুখটা শুকিয়ে গেল।
তাইফার মা বলল কি গো তুমি চুপ করে গেলে কেন?
ইয়ে মানে এখন তো ইলিশ মাছ খাওয়া যাবে না।
তাইফা করুণ স্বরে জানতে চাইল-
কেন বাবা?
প্রতিবছর এ সময় তো ইলিশ মাছই ধরা নিষেধ করে সরকার। খবরে শোনোনি?
বলেই ক্লান্তিতে বসে পড়লেন তাইফার বাবা।
তাইফা এতকিছু বুঝতে চায় না। সে কেবল মাছ খেতে চাইছে। কাল স্কুল থেকে ফেরার পথে মোড়ের হোটেল থেকে কি সুন্দর ভাজা ইলিশের গন্ধ পেয়েছে সে। তখনই ভেবে নিয়েছে বাবাকে বলবে। এখন বাবার কথা শুনে তার মনটাই খারাপ হয়ে গেল। গাল ফুলিয়ে কিছু না খেয়েই সে ঘুমিয়ে পড়ল। মায়ের চিন্তিত মুখ দেখে বাবা বললেন ভেবো না কাল আমি বুঝিয়ে দেবো।
খুব সকালে তাইফার ঘুম ভেঙে গেল। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ভাবল সে আজ স্কুলে যাবে না। একটু পরেই মনে পড়ল, আজ তো শুক্রবার। এমনিতেই ছুটির দিন। ধুর, অভিমানটা দেখানো গেল না। কিছুক্ষণ পরে বাবা মসজিদ থেকে ফিরে মজার খবর দিলেন। সবাই মিলে বেড়াতে যাবে ছোটখালার বাসায়। খুশিতে ডগমগ হয়ে তাইফা মায়ের কাছে তৈরি হতে গেল।
ছোট খালার বাসায় খালাতো বোন ঝুমুরের সঙ্গে সারাদিন খুব আনন্দ হলো; কিন্তু খাবারের মেনু্যতে ইলিশ মাছ না দেখে মনটা চুপসে গেল তাইফার। বাসার পাশে ছোট্ট একটা নদী। নদীর পাড়ে সবাই মিলে ঘুরতে বের হলো। বাবা তাইফার হাত ধরে হাঁটছেন। তারা পানির খুব কাছে পৌঁছে গেল। নদীর কিনারে ছোট ছোট মাছেরা খেলছে। ওরা ঝুঁকে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ খেলা দেখল। সেই সুযোগে বাবা বলতে লাগলেন- মাছেরা ডিম পাড়ে আর সেই ডিম ফুটে বাচ্চা হয়। তাই নাকি বাবা? তাহলে ইলিশ মাছও ডিম পাড়ে? হঁ্যা মামণি। ইলিশ মাছ তো সাগরে থাকে। আশ্বিন মাসের পূর্ণিমার সময় মা ইলিশরা ডিম ছাড়তে নদীতে আসে।
আর তখনই জেলেরা তাদের ধরে নেয়। ভাবো তো আমরা যদি লাখ লাখ ডিমসহ সেই ইলিশ খেয়ে
ফেলি তাহলে ইলিশের বাচ্চা হবে না আর সেগুলো বড় না হলে পরের বছর আমরা বড় ইলিশ কোথায় পাবো?তাই তো
তাহলে তো এ সময় ইলিশ মাছ ধরাই উচিত নয়।
হঁ্যা মামণি, একদম ঠিক ভেবেছো। সেজন্য আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার এই দশদিন ইলিশ মাছ ধরা নিষেধ। আর আমরা যদি না কিনি তাহলে জেলেরা মাছ আর ধরবেই না।
হঁ্যা, পরে আমরা বড় ইলিশ খেতে পারব। একেবারে হাততালিতে নেচে উঠল তাইফা। শব্দ শুনে মাসহ সবাই এগিয়ে এলো। কি ব্যাপার কি নিয়ে এত হাততালি?
মা জানো, আমি আর ইলিশ মাছের জন্য মন খারাপ করব না।
মা আড়চোখে বাবার দিকে তাকাতেই বাবা কাঁধ ঝাঁকিয়ে বোঝালেন কাজ হয়ে গেছে।
তবু অবাক হয়ে বললেন তাই নাকি?
হঁ্যা মা। আমি তো এখন জানি, ডিমসহ ইলিশ মাছ ধরে ফেললে মা ইলিশ অনেক কাঁদবে। ইলিশের বংশই শেষ হয়ে যাবে। বাবা আমাকে সব বুঝিয়ে দিয়েছেন।
আমি স্কুলে গিয়ে সবাইকে বলব-
'ইলিশ খেতে কাঁদব না
\হডিমওয়ালা মাছ মারব না।'