একজন খামার ব্যবসায়ী ছিল। নাম জিৎ। তার আর্থিক অবস্থা কিছুটা পড়ে এসেছিল। তার খামারের কাজে সহায়তার জন্য একজন সাহায্যকারীর প্রয়োজন হলো। কিন্তু লোক পাওয়া যাচ্ছিল না। কারণ সবাই খুব বেশি বেতন চাচ্ছিল কাজের জন্য। অত পরিমাণ বেতন দিয়ে জিতের পক্ষে কর্মচারী রাখা সম্ভব ছিল না।
একদিন তার কাছে এক আগন্তুক এলো। সে এখানে কাজের সন্ধানে এসেছে।
জিৎ তাকে জিজ্ঞেস করল, 'কাজের জন্য তুমি কত বেতন চাও?'
লোকটি বলল, 'আমাকে কোনো বেতন দিতে হবে না। শুধু থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলেই হবে। সঙ্গে পরার জন্য জামার কাপড়।'
জিৎ মনে মনে খুব খুশি হলো। তাকে রাখবে ভেবেই মনস্থির করে ফেলল।
লোকটি বলতে লাগল, 'তবে হুজুর একটি শর্ত আছে।'
'কী শর্ত?' বলল জিৎ।
'আমাকে প্রতি বছর একটি খারাপ কাজ করার অনুমতি দিতে হবে।'
জিৎ মনে মনে ভাবছিল, এত সস্তায় চাকর পাওয়া যাবে না। তাই সে তাকে ছাড়তে চাইছিল না। এ জন্য লোকটির খারাপ কাজের কথায় পাত্তাই দিল না। জিজ্ঞেসও করল না কী খারাপ কাজ। এভাবে লোকটি কাজ পেয়ে গেল।
লোকটি প্রচুর পরিশ্রম করতে পারত। তার পরিশ্রমের ফলে দিনে দিনে খামারের উন্নতি হতে লাগল। জিতের টাকা-পয়সা বাড়তে লাগল।
জিৎ এখন আগের তুলনায় বেশ ধনী। সে খুবই খুশি। তা ছাড়া তার ধারণা নতুন চাকর অপকর্ম করার কথা ভুলেই গেছে।
দেখতে দেখতে পাঁচ-ছয় মাস কেটে গেল। একদিন চাকর ভাবল, এখন অপকর্ম করার ঠিক সময়। এটি ভাবার কারণ, জিতের শ্যালক তাদের বাড়িতে কিছুদিনের জন্য বেড়াতে এসেছে।
একদিন জিৎ খামারের কাজের জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে। তখন চাকর জিতের স্ত্রীর কাছে এসে এমনভাবে কথা বলতে লাগল যেন সে খুব গোপনীয় কথা বলতে এসেছে। সে বলতে লাগল, 'রানী মা, হুজুরের খুবই কঠিন অসুখ হয়েছে। তিনি মনে হয় বেশিদিন বাঁচবেন না। তার এই রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। আপনি যদি আমার কথা না বিশ্বাস করেন, তাহলে নিজেই পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। যখন সে সন্ধ্যাবেলা গোসল করার জন্য প্রস্তুত হবে, তখন আপনি চুপি চুপি তার ঘাড় জিভ দিয়ে চেটে দেখবেন। আপনি দেখবেন, তার ঘাড় কেমন নোনতা নোনতা লাগে।'
চাকর কিছুক্ষণ পর জিতের কাছে গিয়ে বলল, 'হুজুর যদি কিছু মনে না করেন, তাহলে একটি কথা বলব।'
'কী কথা?'
'হুজুর, বেয়াদবি মাফ করবেন। আপনার স্ত্রী মনে হয় পাগল হয়ে গেছে। আপনি দয়া করে তার কাছ থেকে সাবধানে থাকবেন।
এরপর চাকর গেল জিতের শ্যালকের কাছে। শ্যালকের কাছে বলল, 'একটা কথা বলি ছোট হুজুর। আপনার বোনজামাই আপনার বোনের ওপর খুবই বিরক্ত। আমি যতটুকু জানতে পেরেছি, আজ সন্ধ্যাবেলা তিনি আপনার বোনকে ইচ্ছামতো পেটাবে। আপনি তখন আশপাশেই থেকেন। বড় কোনো অঘটন যেন না ঘটে।'
সন্ধ্যাবেলা জিৎ খামারের কাজ সেরে বাড়ি ফিরল।
বউকে জিজ্ঞেস করল, গোসল করার পানি দেয়া হয়েছে কি না?
বউ গরম পানি দেয়া হয়েছে জানালে, জিৎ আলনায় জামা খুলে রাখতে গেল।
বউ মনে মনে ভাবল, একবার দেখি তো পরীক্ষা করে, চাকরের কথা ঠিক কিনা?
সে তখন আস্তে আস্তে করে জিতের পেছনে গিয়ে দাঁড়াল। জিৎও আড় চোখে খেয়াল করছে বউ কী করে। বউ যখন হা করে মুখ থেকে জিভ বের করেছে ঘাড় চেটে দেখবে। জিৎ ভাবল, বউ হয়তো তাকে কামড় দিতে এসেছে।
তখন সে ঘুরে একটি লাঠি নিয়ে বউকে পেটাতে শুরু করল।
জিতের শ্যালক পাশের ঘরেই ছিল।
সে শুনল দুলাভাইয়ের পিটানো খেয়ে বোন হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করেছে, তখন সেও একটি লাঠি নিয়ে দুলাভাইয়ের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।
এবার জিৎ এবং তার শ্যালকের মধ্যে ভীষণ লাঠালাঠি শুরু হলো। কেউ কারও চেয়ে কম নয়। ভীষণ মারামারি, হইচইয়ের শব্দে আশপাশের দশ বাড়ির লোকজন ছুটে এসে তাদের থামালো। শান্ত করল। পরে সবাই যখন তিনজনের মুখে সব কথা শুনল, বুঝতে পারল এর জন্য দায়ী কে?
তখন এক দল গেল চাকরকে খুঁজে আনতে। তাকে ইচ্ছামতো পেটানোই হলো এর শাস্তি।
কিন্তু চাকর কোথায়?
এই ঘর, সেই ঘর, কোনো ঘরেই সে নেই। কোথাও নেই।
লোকজন আসতে দেখেই সে পালিয়েছে।