শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পেঙ্গুইন: কোটপরা ভদ্রলোক

আবু আফজাল সালেহ
  ৩০ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

পেঙ্গুইনকে তোমরা সবাই চেনো। পেঙ্গুইনরা পৃথিবীর সবচেয়ে শিশুদের প্রিয় পাখি। এই অদ্ভুত পাখিটি দুই পায়ে হেলে-দুলে বরফের মধ্যে হাঁটে আবার পানিতেও সাঁতার কাটে। ঠান্ডাজগতের বাসিন্দা এরা।

ছবিতে তোমরা দেখেছো দেহের তুলনায় এদের ডানা অতি ছোট। এ কারণে এরা উড়তে পারে না! সম্প্রতি একটি ঘটনার পর সবার এই ধারণা অনেকটা ভুল বলেই প্রমাণিত হয়েছে। সংবাদ সংস্থা বিবিসির একজন ক্যামেরাম্যান কিং জর্জ আইল্যান্ডের ওপর একটি তথ্যচিত্র বানানোর সময় হঠাৎ তার ক্যামেরায় দেখেন একঝাঁক পেঙ্গুইন তাদের ডানা মেলে উড়ে চলছে আকাশ দিয়ে! গবেষকরা ধারণা করছেন, এসব পেঙ্গুইনরা এভাবে উড়ে অ্যান্টার্কটিকা মহাসাগর থেকে উড়োপথে পাড়ি দিয়ে যায় আমাজনের রেইনফরেস্টে। বিশাল সেই থলথলে শরীরটা নিয়ে অমন ছোট্ট দুটি ডানা মেলে আকাশজুড়ে উড়ছে সাদাকালো সব পেঙ্গুইন! শুধু তাই নয়- তারা পাড়ি দিচ্ছে হাজার হাজার মাইল। তোমরা জানো যে, আমাজান হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক বনাঞ্চল। এখানে অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ আমাজানের অনেক গভীর বনাঞ্চল এলাকায় এখনো সূর্যের আলো পড়েনি!

উত্তর ও দক্ষিণ মেরু সংলগ্ন স্থানগুলোতে এরা বাস করে। পেঙ্গুইনের দেহের উপরিভাগটা কালো বা ধূসর এবং নিচের দিকটা ফকফকে সাদা। দাঁড়িয়ে থাকা একটি পেঙ্গুইনকে কোটপরা কোনো ভদ্রলোকের মতো দেখায়। দক্ষিণ মেরুর তীব্র শীতল পানি অথবা ঠান্ডা বাতাস থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য এদের দেহে ছোট ছোট উজ্জ্বল পালকের মতো আবরণ থাকে। এ আবরণ তাপ, শরীর থেকে বাইরে বা বাইরে থেকে শরীরে ঢুকতে বাধা দেয়। তোমরা জানো এ অবস্থাকে বিজ্ঞানের ভাষায় 'তাপ পরিবাহী' অবস্থা বলে। তোমরা জেনে অবাক হবে যে, এদের গায়ের চামড়ার নিচে দুই ইঞ্চির মতো পুরু চর্বির স্তর থাকে। এজন্য এরা এই সঞ্চিত চর্বি থেকে শক্তি বা ক্যালোরি গ্রহণ করে সপ্তাহের পর সপ্তাহ না খেয়ে থাকতে পারে!

মজার ব্যাপার হলো,সাঁতার কাটায় পেঙ্গুইনরা বেশ পটু। প্রতি ঘণ্টায় এরা প্রায় ৩০ মাইল পর্যন্ত সাঁতার কেটে যেতে পারে। আবার সাঁতারের পাশাপাশি এরা ভালো ড্রাইভও দিতে পারে। সাঁতারের সময় সামনের পা দুটি ব্যবহার করে এবং পা দুটি দিয়ে দিক পরিবর্তন করে থাকে। একটানা ২০ মিনিট পানিতে ডুব দিয়ে থাকা এদের কাছে তেমন কঠিন কোনো কিছু নয়!

আর একটা বিষয় তোমরা জেনে রাখো। এরা একা থাকতে পারে না, দলবদ্ধ হয়ে থাকে। এমনকি পানিতে নামার সময়েও এরা একা বের হয় না। অনেক সময় সুযোগসন্ধানী লেপার্ড সি এদের আক্রমণ করে। এ কারণে এরা সর্বদা সতর্ক থাকে। মজার ব্যাপার হচ্ছে- পানিতে ঝাঁপ দেওয়ার আগে পেঙ্গুইনরা সবাই মিলে পরামর্শ করে। একজনকে সবার আগে ঝাঁপ দেওয়ার জন্য নির্বাচন করা হয়। পরে বাকিরা একত্রে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

সমুদ্রের অনেক নিচে যা প্রায় ১৬০০ ফুট গভীরে এরা চলে যেতে পারে। এ অবস্থায় দম বন্ধ করে ১৫ মিনিট পর্যন্ত বা তার বেশি থাকতে পারে। পানির নিচে এরা ৬ থেকে ৯ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় সাঁতার কাটতে পারে। পাখি হয়ে পানির নিচে এতটা সময় থাকার সুবিধার্থে ওদের শরীরের হিমোগেস্নাবিন বিশেষ ধরনের হয়ে থাকে। এর ফলে ওদের রক্ত অনেকক্ষণ অক্সিজেন ধরে রাখতে পারে। এ ছাড়া যখন ওদের অক্সিজেন বাঁচিয়ে রাখতে হয় তখন ওরা শরীরের অপ্রয়োজনীয় অঙ্গ চিহ্নিত করে সেগুলোর কাজ কমিয়ে বা বন্ধ করে রাখে। এভাবে ওদের শরীরের শক্তি, তাপ, অক্সিজেন সবকিছুই সংরক্ষণ করে রাখার ব্যবস্থা আছে। এরা প্রায় ২০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। এরা মাছ বা প্রাণীর মাংস খেয়ে থাকে। অর্থাৎ মাংস খেয়ে বেঁচে থাকে বলে পেঙ্গুইনদের 'মাংসাশী প্রাণী' বলে।

অ্যান্টার্কটিকাতে পেঙ্গুইনের বেশ কয়েকটি প্রজাতি দেখা যায়। পেঙ্গুইনদের মধ্যে রাজা বা অ্যাম্পেরর পেঙ্গুইন হলো পৃথিবীতে বসবাসকারী পেঙ্গুইন প্রজাতিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে লম্বা ও স্বাস্থ্যবান। তাই তো এদের নামকরণ করা হয়েছে পেঙ্গুইন সম্রাট। তোমরা অভিযাত্রী জেমস কুকের নাম শুনেছো নিশ্চয়! তার সমুদ্র অভিযানে 'ফস্টার' নামে এক নাবিক ছিল। 'ফস্টারের' নামে 'অ্যাম্পেরর পেঙ্গুইন'-এর নামকরণ করা হয়। সর্ববৃহৎ প্রজাতির অ্যাম্পেরর পেঙ্গুইন উচ্চতায় ৪ ফুট। ওজনে প্রায় ৪৫ কিলোগ্রাম হতে পারে। 'অ্যাডেলি' নামক আরেক ধরনের পেঙ্গুইন আছে। এরা সংখ্যায় বেশি এবং অ্যান্টার্কটিকার মূল মহাদেশে থাকে। 'অ্যাডেলি' পেঙ্গুইন আকারে ছোট-প্রায় ২ ফুট।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<77677 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1