বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
শিশুতোষ গল্প

নিউরিনের ভুল

আহমদ জুয়েল
  ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

সেদিন পিঁপড়ার দল খুব বড় একটা খাদ্য ভান্ডারের খোঁজ পেল। পিঁপড়া সরদার পিপিগুনি সবাইকে প্রস্তুত হতে বললেন। পালাউ এলাকায় নাকি অনেক ফড়িং পড়ে রয়েছে। যা সবাই মিলে আনতে পারলে কয়েক মাসের খাদ্য হয়ে যাবে। সরদারের কথামতো সবাই প্রস্তুত হয়ে খাবার সংগ্রহের জন্য পালাউ গ্রামের দিকে যাত্রা শুরু করল। পালাউ গ্রাম অনেক দূরে। তবুও তারা পিছপা না হয়ে গন্তব্যে গিয়ে পৌঁছালো। পৌঁছে তো সবাই অবাক! তারা অনেক ফড়িং পড়ে থাকতে দেখল। তাই তারা আর দেরি না করে ফড়িংগুলোকে সংগ্রহ করতে লাগল। সবার মতো নিউরিন পিঁপড়াটাও ফড়িং কুড়োচ্ছিল। যে খুব চালাক ও দ্রম্নতগামী ছিল। যার কারণে অনেক ফড়িং দ্রম্নত সংগ্রহ করে নিল। ফড়িং সংগ্রহ করতে গিয়ে তার হঠাৎ বাকি পিঁপড়েদের প্রতি নজর পড়ল। দেখতে পেল বাকিরা তার চেয়ে কম সংগ্রহ করেছে। তা দেখে তার মনে মনে লোভ জন্ম নিল। সে ভাবল, যদি সে একা একা ফড়িংগুলো নিয়ে নেয় তাহলে তো অনেক ফড়িং পাবে। কিন্তু দলবদ্ধভাবে নিল তো বেশি সংগ্রহ করেও কম পেতে হবে। তাই সে নিজে নিজে সংগ্রহ করতে লাগল। একপর্যায়ে দেখতে পেল তার কাছে অনেক ফড়িং জমা হয়ে গেছে। তাই সে একা একাই চলে যাবে বলে ভাবল। যেমন ভাবনা তেমন কাজ! পিঁপড়া সরদারকে না বলে যে সব খাবারগুলোকে নিয়ে একা একা ছুটতে লাগল। এদিকে তার এরকম একা একা চলে যাওয়ার সময় পিঁপড়া সরদার তাকে দেখে ফেলে। তাই সরদার ডাক দিয়ে ওঠে,

- এই নিউরিন, এইগুলো নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস?

- আমি বাসায় চলে যাচ্ছি। আপনাদের সঙ্গে আমি কাজ করব না। আমি একা একাই খাদ্যগুলো নিয়ে যাবো।

নিউরিনের কথায় পিঁপড়া সরদার পিপগুনি খুব রাগান্বিত হলেন। আর বললেন,

- 'কী বললে? তুমি আমাদের দলে নেই? একা একা চলে যাবে? আচ্ছা যাও। আজ থেকে তুমি আমাদের দলে নেই। এই সবাই শুনে রাখো, আজ থেকে নিউরিন আমাদের দলে নেই। তোমরা কেউ তাকে আর কোনো সাহায্য করবে না'। কথাগুলো পিঁপড়া সরদার অন্য পিঁপড়াদের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলেন। অন্য পিঁপড়ারাও সরদারের কথায় রাজি হয়ে মাথা নাড়ল। এদিকে নিউরিন সরদারের এ সব কথায় কান না দিয়ে সে তার একা একা বাসার দিকে হাঁটতে লাগল। তাই পুরো পিঁপড়া টিম নিউরিনের দিকে সময় না দিয়ে নিজেরা ফড়িং সংগ্রহ করতে লাগল।

সব পিঁপড়া মিলে অনেক ফড়িং সংগ্রহ করেছে। এখন সবাই মিলে-মিশে নিজেদের মধ্য বণ্টন করে বাসায় ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। কিন্তু মাঝপথে গিয়ে তারা বড় একটা ঝড়ের মধ্য পড়ল। খুব বাতাস হচ্ছে। সব কিছু উড়িয়ে নিয়ে যাবে এমন অবস্থা। তাই তারা তাড়াহুড়ো করে একটা জায়গায় আশ্র?য় নিল। উপরে কিছু না থাকায় তারা সবাই নিজেরা নিজেদের শরীর দিয়ে ঢেকে নিয়ে খাদ্যগুলোকে বাতাসের হাত থেকে রক্ষা করল। এদিকে, যে নিউরিন খুব বিপদে পড়ে গেল। আশপাশে কোথাও আশ্রয় নিতে পারছিল না। কারণ তার হাতে অনেক খাবার ছিল। যেগুলো নিয়ে কোথাও দৌড়াতে পারছিল না। কী করবে সে ভাবতে পারছিল না। সব খাবারকে নিজে ঢেকেও রাখতে পারছিল না। তাই ঝড়ের কারণে তার বেশির ভাগ খাবার তার বাতাসের সঙ্গে উড়ে গেল। অল্প কিছু খাবার নিজের কাছে রেখেছিল। যা ঝড়ের পরে খেয়ে শেষ হয়ে যায়। এখন তার হাতে কোনো খাবার নেই। নিউরিন বুঝতে পারছিল না কী করবে। অন্যসময় কী খাবে তাও চিন্তা করে পাচ্ছিল না।

একটু পরে নিউরিন দেখতে পেল পিঁপড়া সরদার পিপিগুনির নেতৃত্বে সব পিঁপড়া খাদ্য সঙ্গে নিয়ে বাসায় ফিরছে। তাদের মেজাজ খুব ফুরফুরা। পিঁপড়া দল নিউরিনের কাছে এলো। কিন্তু কেউ নিউরিনকে কোনো কথা জিজ্ঞেস না করে তার পাশ দিয়ে চলে যেতে শুরু করল। দেখে মনে হচ্ছিল কেউ তাকে চেনে না। নিরুপায় না পেয়ে নিউরিন নিজের সরদারকে ডাক দেয়। সরদার ডাক শুনে দাঁড়ান। নিউরিন কাছে যায়। গিয়ে বলে, 'সরদার আমাকে কী আবার দলে নেওয়া যায় না?'

সরদার জোর গলায় বলে ওঠেন, 'না, আমরা তোমাকে দলে নেবো না। তুমি আমাদের ছেড়ে চলে এসেছো।'

নিউরিন এবার কান্না করে বসে। আর ঝড়ের সব ঘটনা খুলে বলে। নিউরিনের কান্না দেখে ও ঝড়ের সব কথা শুনে সরদারের মন নরম হয়ে যায়। তাই তিনি বলেন, 'যদি দলের সবাই তোমাকে ক্ষমা করে তাহলে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেবো। তোমরা কী চাও নিউরিনকে ক্ষমা করে দিই?' প্রশ্নটা তিনি বাকি সব পিপঁড়াদের উদ্দেশ্য বললেন। সব পিঁপড়া একরম গুঞ্জন শুরু করে দিল। সবার একটাই কথা, প্রথমবার হিসেবে ক্ষমা করে দেওয়া হোক। তাই সবার মতের ওপর ভিত্তি করে সরদারও নিউরিনকে ক্ষমা করে। আর ভবিষ্যতে এমন না করার জন্য নিউরিনকে বললেন। নিউরিনকেও এরকম দল ছেড়ে আসবে না বলে জানালো। সব কিছু শেষ করে নিউরিনের কাছে কোনো খাবার না দেখে সরদার দলের সবাইকে তাদের নিজেদের অংশ থেকে একটু একটু করে নিউরিনকে দেওয়ার জন্য বললেন। সবাই একটু একটু খাবার নিউরিনকে দেওয়ায় নিউরিনের অনেক খাবার হয়ে যায়। তখন নিউরিন অনেক খুশি হয়। আর তার নিজের ভুল বুঝতে পারে। আর এই ভুল বুঝতে পারা থেকে সে চিন্তা করে এরকম লোভে পড়ে দল ছেড়ে আর কখনো একা একা কাজ করবে না। একটু পরে পিঁপড়া সরদার পিপিগুনি সবাইকে রওনা হওয়ার জন্য আদেশ করেন। তাই সেই আদেশে নিউরিনসহ সব পিঁপড়ারা খুশিমনে ফিরতে থাকে বাসার দিকে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<78729 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1