বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রামের বাড়ির পিঠা

শরিফুল ইসলাম
  ১১ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

প্রধান শহর থেকে শত মাইল দূরে সবুজ অরণ্যে মোড়ানো ছোট্ট একটি গ্রাম। কাদামাখা, ধুলো ওড়া ছোট্ট ছোট্ট আইলের ছড়াছড়ির পরে আর চতুর্দিকে ছোটখাটো ডোবা বিলের মাঝখানে যেন কোনো এক দ্বীপের মধ্যে বাস করত কয়েকটি পরিবার, যার নাম পূর্বপুরুষরা দিয়ে যান ভিয়াইল। গ্রামের চতুর্দিকে ডোবা আর বিল এবং গ্রাম থেকে বের হওয়ার জন্য অসংখ্য ছোট-বড় আইল, মনে হয় এই বিল আর আইল মিলিয়েই পূর্বপুরুষরা এই পাড়াটির নাম দিয়েছিলেন ভিয়াইল।

এই গ্রামের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে ছোট্ট একটি খাল, নাম তার ঝিনাই।

ঝিনাইয়ের পানি দিয়েই চাষাবাদ করেন গ্রামের কৃষকগোষ্ঠী তাদের সব জমাজমি। ফসল ফলায় ধান, গম, পাট ও সরিষা। যখনি হেমন্ত এসে ডাক দেয় তখনি শুরু হয় মাঠে মাঠে আমনের ধান কাটা, তখনি অগ্রহায়ণে হেমন্তের নবান্ন উৎসব লাগে, এই সময় যেন গ্রামে ঈদের আমেজ শুরু হয়, শুরু হয় পূজার মতো ফুর্তি, আড্ডা। ঘরে ঘরে নতুন চালের পিঠা, নতুন চালের পায়েস, আহ্‌ কি যে স্বাদ! হেমন্ত যতই বিদায়ের বার্তা জানান দেয় শীত ততই আগমনী সুরে হিমের বুড়িকে কাঁপিয়ে তোলে। শীতের প্রকোপ বাড়তে থাকলে বাড়তে থাকে বাড়ি বাড়ি শীতের পিঠার প্রকোপ। পিঠার সাগরে ভেসে যায় গ্রামের প্রতিটি ঘর। পিঠার সাগরে প্রতিটি ঘর ভেসে গেলেও যেন গ্রামের ছেলেমেয়েদের মন ভরে না পিঠা দেখে। সেদিন তো আমি পাকঘরে ঢুকেই মাটির হাঁড়ি থেকে চারটা পুলিপিঠা বের করেই মুখের ভিতর ঢুকিয়ে দিলাম যেন পুরোপুরি তিনটা পুলি।

ভাগ্যিস মা দেখেনি! যদি দেখত তাহলে আর আস্ত রাখত না, মেরে হাড় থেকে মাংস আলাদা করে ফেলত। অবশ্য পিঠা খাওয়ার জন্য কিছু বলত না, বলত শুধু একবারে এতগুলো পিঠা একসঙ্গে মুখের ভিতরে দেওয়ার জন্য। যদি গলায় আটকে যায়। আরও বলত, এত খাসনে বাপ! পেটে সইবেনে! আমি কিছুই মানতাম না। তারপরেও প্রতিবারই মা পিঠা তৈরি করার সময় আমাকে তার চুলার পাড়ে বসিয়ে রাখে, আর বলে খা, যত পারিস খা! তবে নষ্ট করা যাবে না। আমিও প্রচুর খেতাম, এখনো খাই কিন্তু তার পরেও যে একটা লোভ থেকেই যায়।

মা কখন বাড়ির বাইরে যাবে? মা কখন বাহির বাড়ি কাজ করতে যাবে?

যখনি মা একটু অন্যমনস্ক হয় তখনি আমি চুপিচুপি পাকঘরের দরজা ফাঁক করে ঢুকে যাই রান্নাঘরের ওই মাটির হাঁড়ির কাছে। চোখ বন্ধ করে বের করি কয়েকটা পিঠা।

কখনো তেলের পিঠা, কখনো গোস্ত পুলি আবার কখনো উট পিঠা। তবে দুঃখের বিষয় এটাই দুধ চিতই, দুধ পুলি, সই পিঠা, কলা পিঠা এগুলো চুরি করে খাওয়া খুব রিস্কি হয়। এগুলো তরলজাতীয় বলে মনের সুখে চুরি করে খেতে পারিনি। সত্যি চুরির জিনিসে মজা বেশি, তবে এটাও ঠিক চুরির জিনিসে সাজাও একটু বেশি। তেমনি আজ আবার অন্যসব দিনের মতোই চুপিচুপি ঢুকে পড়েছি পাকঘরে, পিঠা চুরি করার প্রত্যয় নিয়ে। তাই তো ধীরগতিতে এগিয়ে যাচ্ছি রান্নাঘরের সেই পিঠার মাটির হাঁড়িটির দিকে। হাঁড়ির পাশে গিয়ে কোনো দেরি নেই! ঢাকনাটি বাম হাত দিয়ে সরিয়ে ডান হাত ঢুকিয়ে দিলাম হাঁড়ির ভিতর!

এমা, একি! না এটা কি করে হলো?

পিঠা কই? পিঠা কোথায় গেল?

এদিক দিয়ে দেখি মা দরজা হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে কুটিকুটি হাসছে, তখনি বুঝতে পারলাম ঘটনা কি! প্রতিদিন পিঠা কমে যায় হাঁড়ি থেকে, অবশ্যই মা বুঝে গেছে এটা পিঠা চুরের কাজ। মা এটা বুঝতে পেরে পিঠাগুলো সরিয়ে ফেলেছে। এখন আর কি করার, ধরা তো খেয়েই গেলাম, মা ধাপ করে এসে কানে ধরে নিয়ে গেল আমাকে, আমিও বেরিয়ে এলাম।

এভাবেই শেষ হলো পিঠা চুরির পর্ব।

তার পরেই তো চলে এলাম যান্ত্রিক সেই ইটপাথরের শহরে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<83741 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1