বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শিশুর দঁাতের যতেœ করণীয়

শিশুর বয়স ৩ বছর পার হলে ধীরে ধীরে তাকে নরম ব্রিসেলযুক্ত শিশুর ব্যবহার উপযোগী টুথব্রাশ ও অল্প পরিমাণে টুথপেস্ট দিয়ে দঁাত পরিষ্কারে অভ্যস্ত করতে হবে...
যাযাদি হেলথ ডেস্ক
  ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

আমাদের শরীরের অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং গুরুত্বপূণর্ অঙ্গ হলো দঁাত। শিশুর সুস্থভাবে বঁাচার জন্য প্রয়োজন এই বিশেষ অঙ্গের উপযুক্ত পরিচযার্ ও সংরক্ষণ। বয়স ভেদে দঁাতের সাধারণ রোগের উপসগর্ এবং কারণ শিশুর জন্মের ৬ মাস পর থেকে দুধ দঁাত ওঠা শুরু হয় এবং প্রায় ৩ বছর বয়স পযর্ন্ত উঠতে থাকে। তাই ৬ মাস বয়স থেকেই দঁাতের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এসময় শিশুকে দুধের পাশাপাশি অন্যান্য নরম খাবার দেয়া হয়। ফলে ল্যাকটোজ, গøুকোজ ও অন্যান্য পলিস্যাকারাইড লম্বা সময় ধরে দঁাতের সংস্পশের্ থাকে। শিশুকে খাবার খাওয়ানোর পর ভালোভাবে পরিষ্কার না করলে ক্যালসিয়ামের সঙ্গে স্যালাইভা মিশে মিনারেল, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদির সংস্পশের্ এসে খাবারের ফামেের্ন্টশন হয়। এতে ল্যাকটিক এসিড তৈরি হয়, যা দঁাতের এনামেলের ক্ষতি করে। এভাবেই দঁাতে ক্যারিজ বা ক্ষয় শুরু হয় এবং পরে তা দঁাতের ডেন্টিন ও পাল্প পযর্ন্ত বিস্তার লাভ করতে পারে। শিশুর দঁাতে বাদামি বা কালচে দাগ দেখলে দ্রæত ডেন্টিস্টের পরামশর্ গ্রহণ করতে হবে। সাধারণত ৭-৯ বছরের শিশুদের সামনের দঁাতগুলোর কিছুটা ফঁাকা ফঁাকা হয়ে থাকে। এ বিষয় নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই, পামাের্নন্ট দঁাত উঠে গেলে তা আপনা আপনি সঠিক পজিশনে চলে যায়।

খাবার শরীরের স্বাভাবিক গঠন ও পুষ্টির জন্য সব ধরনের খাবার প্রয়োজন, তবে ক্যান্ডি, মিষ্টিজাতীয় খাবার, জুস ইত্যাদি সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। সাধারণত এসিডিক ফুড, যেমনÑ ল্যাকটিক এসিড যুক্ত খাবার দঁাত ক্ষয়ের প্রধান কারণ। অতিরিক্ত চকোলেট, আইসক্রিম খাওয়া যাবে না এবং এজাতীয় খাবার খাওয়ার পর দঁাত পরিষ্কার করা উচিত। সেটি সম্ভব না হলে মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়ারপর অঁাশজাতীয় ফল, যেমন- পেয়ারা, আপেল, নাশপাতি ইত্যাদি খাওয়া উত্তম। ফলে সহজে দঁাতে ক্যাভিটি সৃষ্টি বা ব্যাকটেরিয়া জমতে পারে না। দুই দঁাতের মধ্যবতীর্ ফঁাকে খাবার লেগে থাকলে দঁাতের ক্ষতি হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে ফ্লস ব্যবহার করতে হবে।

শিশুদের দঁাতের বিশেষ যতœ

দঁাতের যতেœর ক্ষেত্রে ৩ বছরের কম বয়সের শিশুকে খুব কোমল ব্রিসেলযুক্ত ব্রাশ বা পাতলা কাপড় ভিজিয়ে দঁাত পরিষ্কার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে টুথপেস্ট ব্যবহার ছাড়াই দঁাত ও মাড়ি পরিষ্কার করাতে হবে। এমনকি দঁাত ওঠার আগেও শিশুকে খাওয়ানোর পর আঙুলে পাতলা ভেজা কাপড় পেঁচিয়ে শিশুর মাড়ি ও জিহŸা আলতোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। শিশুর বয়স ৩ বছর পার হলে ধীরে ধীরে তাকে নরম ব্রিসেলযুক্ত শিশুর ব্যবহার উপযোগী টুথব্রাশ ও অল্প পরিমাণে টুথপেস্ট দিয়ে দঁাত পরিষ্কারে অভ্যস্ত করতে হবে। দঁাত নিদির্ষ্ট বয়সে স্বাভাবিকভাবে না পড়লে অবশ্যই ডেন্টিস্টের শরণাপন্ন হতে হবে। দুঘর্টনাজনিত কারণে শিশুর দুধ দঁাত পড়ে গেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দঁাতটি আবার স্থাপন করা যায়। এ ক্ষেত্রে, পড়ে যাওয়া দঁাতটিকে দ্রæত নরমাল স্যালাইন (০.৯% সোডিয়াম ক্লোরাইড) দিয়ে এবং তা না থাকলে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে যেখান থেকে দঁাতটি পড়েছে সেখানে কিছুক্ষণ চেপে ধরে রাখলে তা পুনরায় মাড়ির সঙ্গে আটকে যায়। শিশুর দুধ দঁাত সাধারণত ৬ বছর বয়স থেকে পড়া শুরু হয়, কোনো কারণে পামাের্নন্ট দঁাত উঠতে দেরি হলে এক্স-রের মাধ্যমে সমস্যা চিহ্নিত করা যায় এবং প্রয়োজনে দঁাত কৃত্রিম পদ্ধতিতে প্রতিস্থাপন করা যায়।

বিভিন্ন ঋতুতে দঁাতের বিশেষ যতœ

বিভিন্ন ঋতুতে দঁাতের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই শিশুর দঁাতে কোনো মাইক্রোস্কোপিক স্টোন জমা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে অভিভাবককে খেয়াল রাখতে হবে। দঁাতে ব্যথা বা শিরশির অনুভ‚ত হলে গরম পানিতে লবণ দিয়ে দিনে অন্তত ২-৩ বার কুলকুচা করতে হবে। ব্যথার তীব্রতা বেশি হলে যদি ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়া সম্ভব না হয়, তখন তাৎক্ষণিকভাবে ব্যথা কমানোর জন্য লবঙ্গ ছেঁচে সেটির রস নরম তুলো দিয়ে যেখানে ক্যারিজ হয়েছে, সেখানে লাগাতে হবে।

বজর্নীয়

অতিরিক্ত মিষ্টিজাতীয় খাবার, ক্যান্ডি, আঠালো বা দঁাতের গায়ে লেগে থাকে এমন খাবার প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাওয়ানো যাবে না এবং খাওয়ার পর ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। শিশুদের সাধারণ বদভ্যাসগুলো, যেমন- আঙুলচোষা, জিহŸাচোষা, ঠেঁাটচোষা, নখকামড়ানো ইত্যাদি দঁাতের স্বাভাবিক গঠনে প্রভাব ফেলতে পারে, তাই এসব থেকে শিশুকে বিরত রাখতে হবে।

বিশেষ সতকর্তা

অনেকেই দঁাতে ব্যথা অনুভ‚ত না হওয়া পযর্ন্ত ডেন্টিস্টের কাছে যান না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, দঁাতের রোগের কারণে চিকিৎসা করানো হয়; কিন্তু পরে নিয়মিত দঁাত পরিষ্কার না করার ফলে অন্যস্থানে অথার্ৎ পাশ্বর্বতীর্ দঁাত বা মাড়িতে আবার ক্ষতি হয়ে থাকে। তাই প্রতিদিন নিয়মিত দুবার দঁাত মাজার পাশাপাশি কুলকুচা এবং ফ্লসিংয়ের মাধ্যমে দঁাত পরিষ্কার রাখতে হবে। এ ছাড়া দঁাতের যে কোনো সমস্যার সমাধানে অবশ্যই বিডিএস ডিগ্রিধারী চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হতে হবে। নিয়মিত পরিচযার্ ও ৬ মাস অন্তর চেকআপের মাধ্যমে দঁাতের সুস্থতা বজায় রাখা সম্ভব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<11190 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1