বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ফুসফুসের ক্যান্সার

যাযাদি হেলথ ডেস্ক
  ৩০ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

মানবদেহের মারাত্মক ও জটিল ব্যাধির মধ্যে ক্যান্সার অন্যতম। মানবদেহের কোষগুলোর অতিমাত্রায় বৃদ্ধি ও আকৃতিগত পরিবর্তনের কারণেই ক্যান্সার নামক রোগটির সূত্রপাত। স্বাভাবিকভাবেই ক্যান্সার নামক শব্দটি আমাদের কাছে একটি ভীতিকর শব্দ। মরণঘাতক হিসেবে এইডসের পরই ক্যান্সারের অবস্থান। দেহের অন্যান্য স্থানের ক্যান্সারের মতো ফুসফুসের ক্যান্সারও একটি ভয়াবহ ব্যাধিই, শুধু নয়, বরং আরো বেশি মারাত্মক ও জটিল। প্রতিবছর বিশ্বের উলেস্নখযোগ্যসংখ্যক মানুষ ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। যদিও মহিলাদের চেয়ে পুরুষরাই এ রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে, ইদানীং মহিলাদের চেয়ে পুরুষের ধূমপানের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় মহিলারাও অধিকসংখ্যক হারে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। ফুসফুসের ক্যান্সার কোনো জীবাণুঘটিত রোগ নয়- বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি থাকলেও এ রোগ থেকে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভের কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি আজ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। যদি একেবারে প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ে তবে তা থেকে মোটামুটি আরোগ্য লাভ করা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নিরূপণ দুঃসাধ্যই বলা চলে। জীবাণুঘটিত রোগ না হওয়ায় এর বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রতিরোধক বা প্রতিষেধক আবিষ্কারে বিজ্ঞানীরা সাফল্য অর্জনে সক্ষম হননি। তাই জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে যতটা সম্ভব প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় ও সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে মৃতু্যহার কমাতে হবে। এ রোগের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক বিপন্নতা কমানোর চেষ্টা সামাজিক আন্দোলনে রূপান্তরিত হচ্ছে। ক্রমে ফুসফুসের ক্যান্সারের জন্য অন্যতম দায়ী ধূমপানের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় উলেস্নখযোগ্য হারে এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ধূমপায়ী ব্যক্তিই এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন বেশি। তবে অধূমপায়ীদের যে এ রোগ হতে পারে না তা কিন্তু নয়। নগরায়নের এ বিশ্বে শিল্প-কারখানা ও গাড়ির নির্গত কালো ধোঁয়াও ফুসফুসের ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ যেমন- ক্রোমিয়াস, ক্যাডমিয়াম, অ্যাসবেটপস ইত্যাদি এ রোগ সৃষ্টি করতে পারে। ফুসফুসের ক্যান্সারের সৃষ্টিকে অ্যাসবেটপসের প্রভাব এত বেশি যে সমসাময়িক কালে জাহাজশিল্পে অ্যাসবেটপসের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বর্তমান উন্নত বিশ্বে পারমাণবিক বর্জ্য ও ক্যান্সারের একটি বড় কারণ হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। ভুপাল কিংবা চেরনোবিল গ্যাস দুর্ঘটনার পর বর্তমান সময়ে সেসব অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। ফুসফুসের প্রদাহজনিত রোগ যেমন- যক্ষ্ণা, নিউমোনিয়া ভালো হওয়ার পর ফুসফুসের আক্রান্ত স্থানে ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে। এ রোগের উপসর্গ বা লক্ষণ সবার ক্ষেত্রে এক রকম হয় না। সাধারণভাবে এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি, কাশি, কাশির সঙ্গে কফ বা রক্ত, শ্বাসকষ্ট, আক্রান্তের দিকে বুকের ব্যথা হালকা, জ্বর, খাদ্যে অনীহা, ওজন হ্রাস ইত্যাদি উপসর্গ বা লক্ষণ নিয়ে হাজির হতে পারে। অনেক সময় এ রোগ শরীরের অন্যান্য স্থানেও ছড়িয়ে পড়ে। সে ক্ষেত্রে রোগী উপরোক্ত লক্ষণগুলোর সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া অঙ্গগুলোর কারণে সৃষ্ট উপসর্গ বা লক্ষণ নিয়েও হাজির হতে পারে। যেমন- শরীরের ঘাড়ে গলায়, বগলের নিচে চাকার মতো দেখা দিতে পারে, ফুসফুসের আবরণী পর্দায় পানি জমতে পারে, গলায় স্বর ফ্যাসফ্যাসে হতে পারে, অঙ্গগুলোর অগ্রভাগ স্ফীত হতে পারে, রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে, প্রস্রাবের সঙ্গে অতিমাত্রায় প্রোটিন যেতে পারে, শরীরের মাংসপেশিগুলো দুর্বল হয়ে যেতে পারে, অনেক স্থানের হাড় দুর্বল হয়ে অল্প আঘাতে ভেঙে যেতে পারে, এমনকি মস্তিষ্কে ছড়িয়ে গেলে রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। এ রোগ নির্ণয়ের জন্য উপসর্গ বা লক্ষণ রোগের ইঙ্গিত হলে আমরা সাধারণভাবে রোগীর কফ পরীক্ষা ও বুকের এক্স-রে করে থাকি। সুনির্দিষ্টভাবে রোগ নিরূপণে ব্রংকোসকপি ও সিটি স্ক্যানের সাহায্য নেয়া হয়ে থাকে। চিকিৎসার সুবিধার্থে চিকিৎসকরা এ ব্যাধিটিকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করে থাকেন। স্মলসেল কারসিনোমা ও নন স্মলসেল কারসিনোমা। বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে সার্জারি, রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপি। নন স্মলসেল কারসিনোমা প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় করা সম্ভব হলে সার্জারির মাধ্যমে এ রোগের চিকিৎসা করা যায়। এর সঙ্গে রেডিওথেরাপি বা কেমোথেরাপি প্রয়োজন অনুযায়ী প্রয়োগ করলে রোগ নিরাময়ের মাত্রা বা হার অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। তবে স্মলসেল কারসিনোমার চিকিৎসায় সার্জারির বিশেষ কোনো ভূমিকা নেই। কেমোথেরাপি রেডিওথেরাপির মাধ্যমে এর চিকিৎসা দেয়া হয়, যদিও তার ফলাফল আশাব্যঞ্জক নয়। বর্তমানে টেক্রোটিয়ার নামে একটি নতুন ওষুধ ফুসফুসের ক্যান্সারে চিকিৎসায় ব্যবহার করা হচ্ছে। অন্যান্য কেমোথেরাপির তুলনায় এটি অনেক বেশি ক্রিয়াশীল ও কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াসম্পন্ন হলেও অত্যধিক দামি হওয়ায় তা এখনো সাধারণের নাগালের বাইরে। ফুসফুসের ক্যান্সার নিরাময়যোগ্য না হলেও এর কারণটি প্রতিরোধযোগ্য। ধূমপান এর অন্যতম প্রধান কারণ। জনসেচতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে ধূমপান প্রতিরোধ করা গেলে এ রোগের উদ্ভবও প্রতিরোধ করা যাবে বহুলাংশে। এ ছাড়া শিল্প-কারখানায় স্বাস্থ্যসম্মত প্রতিরোধক ব্যবহারের মাধ্যমে কাজ করলেও ফুসফুসের ক্যান্সার হার অনেক কমিয়ে আনা যাবে। কাজেই সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে এ রোগ বিষয়ে সচেতনতা তৈরির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<43122 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1