শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
হৃদরোগ

খাদ্যসংক্রান্ত কিছু প্রশ্নের আলোচনা

অনেক সময় দেখা যায় মূলত জেনেটিক বা বংশগত কারণে কিছু কিছু রোগে কোনো কোনো ছোট বাচ্চাদের শরীরে, চামড়ায়, চোখের কোণায় কোলেস্টেরলের আস্তর জমা পড়ে, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা অনেক বেশি থাকে, এমনকি এনজিওগ্রামে দেখা যায় হৃদযন্ত্রের করোনারি রক্তনালিতে অনেক অনেক বস্নক। তাই মূলত জেনেটিক বা বংশগত কারণে এ সমস্যা দেখা যায়, খাবারের চর্বির সঙ্গে তাই রক্তের চর্বির সম্পর্ক কম
নতুনধারা
  ০৮ মে ২০১৯, ০০:০০
তাজা ও রঙিন শাক-সবজি ও ফলমূল, সালাদ, বিভিন্ন ধরনের মাছ বিশেষত সামুদ্রিক মাছ ও মাছের তেল, প্রোটিন বা আমিষ জাতীয় খাবার, উদ্ভিদজাত ননট্রপিক্যাল তেল বেশি বেশি খেতে হবে

জনাব র চৌধুরী ৪৭ বছর বয়স, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল রোগে ভুগছেন গত কয়েক বছর ধরে, ধূমপান করেন ৫ বছর। সম্প্রতি তীব্র বুকে ব্যথা হলে এসেছেন হৃদরোগের বিভিন্ন পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে হৃদরোগ আছে কিনা নিশ্চিত হওয়ার জন্য। তার ইসিজি ও ইকোকার্ডিওগ্রাম পরীক্ষার রিপোর্ট স্বাভাবিক থাকলেও ইটিটি পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ। তাকে নিয়মিত ওষুধ খাওয়ার পাশাপশি সুস্থ জীবনযাত্রার জন্য ও ধূমপান ত্যাগের পরামর্শ দেয়া হলো। তিনি খাদ্যসংক্রান্ত কিছু পরামর্শ চান।

১. কি কি খাবার কম খেতে হবে?

অধিক তৈলাক্ত বা চর্বিযুক্ত খাবার, অধিক কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার যাতে ক্যালোরি বেশি থাকে যা ওজন বাড়ায় তা বর্জন করতে হবে।

২. কি কি খাবার বেশি খেতে হবে?

যেসব খাবার কম ক্যালোরিযুক্ত যেমন- তাজা ও রঙিন শাক-সবজি ও ফলমূল, সালাদ, বিভিন্ন ধরনের মাছ বিশেষত সামুদ্রিক মাছ ও মাছের তেল, প্রোটিন বা আমিষজাতীয় খাবার, উদ্ভিদজাত ননট্রপিক্যাল তেল বেশি বেশি খেতে হবে।

৩. গরুর বা খাসির বা মহিষের গোশত কি একদম নিষেধ?

গরুর বা খাসির বা মহিষের গোশত একদম নিষেধ নয়, তবে বেশি পরিমাণ খাওয়া যাবে না, মাঝেমধ্যে অল্প পরিমাণ খাওয়া যাবে।

৪. যারা একদম গরুর বা খাসির বা মহিষের গোশত খান না, তাদের কি হার্টের করোনারি রক্তনালিতে বস্নক হয় না?

হঁ্যা, যারা একদম গরুর বা খাসির বা মহিষের গোশত খান না, তাদেরও হার্টের করোনারি রক্তনালিতে বস্নক হতে পারে বা হয়।

৫. গরু বা ছাগল বা মহিষ তো ঘাস বা লতাপাতা খায়, কখনোই তৈলাক্ত খাবার খায় না কিন্তু মাংসে বা পেটের ভিতরে এত চর্বি কীভাবে হয়? তা হলে কি তৈলাক্ত বা চর্বিজাতীয় খাবার একদম না খেলেও কি রক্তে শরীরে চর্বি হতে পারে?

হঁ্যা, গরু বা ছাগল বা মহিষ ঘাস বা লতাপাতা খায়, কখনোই তৈলাক্ত খাবার খায় না কিন্তু মাংসে বা পেটের ভিতরে এত চর্বি হয় তার মানে ঘাস বা লতাপাতা প্রয়োজনের বেশি খেলে তা চর্বিতে রূপান্তরিত হতে পারে, তেমনি কোনো ব্যক্তি যদি চর্বি বা তৈলাক্ত খাবার নাও খায় কিন্তু শর্করা বা কার্বোহাইড্রেটজাতীয় খাবার প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খেলে তা চর্বি আকারে আমাদের তলপেটে বা নিতম্বে বা খাবারের নালির বা অন্ত্রের পাশে পেটের ভিতরে জমা হতে থাকে ও ওজন বাড়তে থাকে। তাই অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার পরিহার করার পাশাপাশি অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেটজাতীয় খাবার যেমন ভাত, রুটি, আলু, চিনি, মিষ্টি, কোমল পানীয় পরিহার করতে হবে।

৬. বাঘ বা সিংহ বা অন্যান্য মাংসাশী প্রাণী তো মাংস ছাড়া অন্য কিছু খায় না, এমনকি চর্বিসহ একেবারে অনেক পরিমাণে মাংস খায় তাদের তো শরীরে কোনো মেদ নেই, বরং দেখতে অনেক স্স্নিম আবার তৃণভোজী প্রাণী যেমন- গরু, মহিষ, হাতি যারা ঘাস বা লতাপাতা বা কলাগাছ খায় তারা অনেক ওজন বেশি ও মোটা তাহলে কি মাংস খেলে ওজন বাড়ে না বরং কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবার খেলে ওজন বা শরীর ভারী হয়?

হঁ্যা, প্রোটিনজাতীয় খাবারে ওজন বাড়ে না বরং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে আর শর্করা বা কার্বোহাইড্রেটজাতীয় খাবার বেশি খেলে ওজন বাড়ে ও শরীর মোটা হয়। আর মাংসাশী প্রাণী একবারে অনেক মাংস খেলেও তারা পরিশ্রমী ও কম চর্বিযুক্ত মাংসে ক্যালোরি কম, ওজন বাড়ায় না।

৭. আমাদের পূর্ব পুরুষরা তো অনেক পরিমাণে খেতেন তবুও তাদের রোগ-বালাই কম হতো আবার বেশিদিন সুস্থভাবে বাঁচতেন কেন?

আমাদের পূর্ব পুরুষরা অনেক পরিমাণে খেতেন তবুও তাদের রোগ-বালাই কম হতো আবার বেশিদিন সুস্থভাবে বাঁচতেন কারণ তারা ভেজালমুক্ত খাবার খেতেন ও অনেক শারীরিক পরিশ্রম করতেন, ফলে শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমা হতো না, ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকতো, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কম ছিল।

৮. অনেক সময় দেখা যায় ১০-১২ বছরের বাচ্চাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে যেমন চেহারায় বা হাতে কোলেস্টেরল বা চর্বির বড় বড় চাকা জমা হয় ও রক্তে কোলেস্টেরল ও অন্যান্য চর্বির মাত্রা অনেক বেশি, তাদের বুকে ব্যথার জন্য এনজিওগ্রামে দেখা যায় অনেক বস্নক, কিন্তু তারা তো জীবনে আর কতটুকুই বা তৈলাক্ত বা চর্বিজাতীয় খাবার খেয়েছে যে তাদের রক্তের চর্বির মাত্রা এত বেশি ও হৃদযন্ত্রের রক্তনালিতে অনেক বস্নক?

অনেক সময় দেখা যায় মূলত জেনেটিক বা বংশগত কারণে কিছু কিছু রোগে কোনো কোনো ছোট বাচ্চাদের শরীরে, চামড়ায়, চোখের কোণায় কোলেস্টেরলের আস্তর জমা পড়ে, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা অনেক বেশি থাকে, এমনকি এনজিওগ্রামে দেখা যায় হৃদযন্ত্রের করোনারি রক্তনালিতে অনেক অনেক বস্নক। তাই মূলত জেনেটিক বা বংশগত কারণে এ সমস্যা দেখা যায়, খাবারের চর্বির সফঙ্গ তাই রক্তের চর্বির সম্পর্ক কম।

৯. যারা একদম পশুর মাংস বা পাখির মাংস খান না, এমনকি ভেজেটারিয়ান বা ভেগান তাদেরও দেখা যায় হৃদযন্ত্রের করোনারি রক্তনালিতে অনেক বস্নক এবং তাদের করোনারি ধমনিতে রিং বা স্টেন্ট বসানো বা বুক কেটে বাইপাস সার্জারি করা, এমনটা কেন হয়?

যারা একদম পশুর মাংস বা পাখির মাংস খান না, এমনকি ভেজেটারিয়ান বা ভেগান তাদেরও দেখা যায় হৃদযন্ত্রের করোনারি রক্তনালিতে অনেক বস্নক এবং তাদের করোনারি ধমনিতে রিং বা স্টেন্ট বসানো বা বুক কেটে বাইপাস সার্জারি করা, এমনটা হতে পারে যদি কেউ অতিরিক্ত ক্যালোরিযুক্ত খাবার যেমন কার্বোহাইড্রেটজাতীয় খাবার বেশি খান বা অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার খান ও কায়িক বা শারীরিক পরিশ্রম না করে বা পর্যাপ্ত পরিমাণে না করে তবে এই অতিরিক্ত ক্যালোরি চর্বি আকারে শরীরে জমা হবে, ফলে শরীরের ওজন বাড়বে ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়বে, ফলে হৃদরোগ ও হৃদযন্ত্রের করোনারি ধমনিতে বস্নক হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। তা ছাড়া রক্তের চর্বির মাত্রা মাত্র ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে খাবার চর্বি থেকে আসে, বাকি রক্তের চর্বির ৯০ শতাংশই শরীরের বিভিন্ন জায়গায় যেমন যকৃতে বা লিভারে ও অন্যান্য কিছু অঙ্গে জেনেটিক বা বংশগত সমস্যার কারণে প্রয়োজনের চেয়েও বেশি বেশি পরিমাণে চর্বি তৈরি হয় এবং তা রক্তে সরবরাহ করে তার ফলে রক্তে চর্বির মাত্রা বাড়ে ও হৃদযন্ত্রের করোনারি ধমনিতে বস্নক তৈরির ঝুঁকি বাড়ায়।

প্রফেসর (ডা.) মো. তৌফিকুর রহমান (ফারুক)

এমবিবিএস (ডিএমসি), এমডি (কার্ডিওলোজি), এফসিপিএস (মেডিসিন), এফএসিসি (আমেরিকা), এফএসিপি, এফএএসই, এফআরসিপি, এফসিসিপি, এফইএসসি, এফএএইচএ, এফএপিএসআইসি

অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান- কার্ডিওলোজি,

মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসেস

মালিবাগ মোড়, ঢাকা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<48345 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1