শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
নিরামিষভোজীদের ডায়েট

স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে

নিরামিষভোজীদের ডায়েট বা খাদ্যাভ্যাস হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে দিলেও বাড়িয়ে দেয় স্ট্রোকের ঝুঁকি। সম্প্রতি প্রকাশিত হওয়া এক গবেষণায় এমনটাই বলা হয়েছে।
নতুনধারা
  ১৬ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

নিরামিষভোজীদের ডায়েট বা খাদ্যাভ্যাস হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে দিলেও বাড়িয়ে দেয় স্ট্রোকের ঝুঁকি। সম্প্রতি প্রকাশিত হওয়া এক গবেষণায় এমনটাই বলা হয়েছে। ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত ওই গবেষণাটি, ১৮ বছর ধরে ৪৮ হাজার মানুষের ওপর পরিচালনা করা হয়েছে। প্রতি এক হাজার জনের মধ্যে নিরামিষভোজীদের মধ্যে করোনারি হৃদরোগীর সংখ্যা মাংসাশীদের তুলনায় ১০ জন করে কম পাওয়া গেছে। কিন্তু স্ট্রোকের ঝুঁকি রয়েছে এমন মানুষের সংখ্যা তিনজন করে বেশি পাওয়া গেছে।

ডায়েট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের খাদ্যাভ্যাস যেমনই হোক না কেন, বিভিন্ন ধরনের বৈচিত্র্যময় খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য বেশি ভালো।

গবেষণায় নতুন কি পাওয়া গেছে?

এপিক-অক্সফোর্ড স্টাডি মূলত একটি দীর্ঘ মেয়াদি গবেষণা প্রকল্প- যা দীর্ঘ সময় ধরে মানুষের খাদ্যাভ্যাস এবং স্বাস্থ্য নিয়ে পরীক্ষা চালায় তাদের তথ্য নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে এই গবেষণায়।

১৯৯৩ থেকে ২০০১ সালের মধ্যে গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অর্ধেকই ছিলেন মাংসাশী। ১৬ হাজারের কিছু বেশি ছিলেন নিরামিষভোজী। আর সাড়ে সাত হাজার অংশগ্রহণকারী জানান যে, তারা আহার হিসেবে মাছ খেতেন।

অংশগ্রহণের সময় এবং ২০১০ সালে আবার নতুন করে এসব অংশগ্রহণকারীদের খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

তাদের স্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্য, ধূমপান এবং শারীরিক কর্মকান্ডের বিষয়গুলোও আমলে নেয়া হয়েছিল।

সব মিলিয়ে, করোনারি হৃদরোগ বা সিএইচডির সংখ্যা মেলে ২৮২০টি, স্ট্রোকের সংখ্যা ১০৭২টি, যার মধ্যে ৩০০টি মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোকের ঘটনাও রয়েছে। মস্তিষ্কের দুর্বল শিরা ছিঁড়ে গিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হলে এ ধরনের স্ট্রোক হয়।

মাংসাশীদের তুলনায় মাছভোজীদের মধ্যে সিএইচডির ঝুঁকি ১৩ ভাগ কম ছিল।

আর নিরামিষভোজীদের মধ্যে এই হার ২২ ভাগ কম ছিল। কিন্তু যারা উদ্ভিদ ও শাকসবজি খেয়ে জীবন ধারণ করেন বা যারা নিরামিষভোজী, তাদের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি ২০ ভাগ বেশি ছিল।

গবেষকদের ধারণা, ভিটামিন বি১২ এর অভাবের কারণে এই ঝুঁকি বেড়ে যায়।

তবে তারা বলেন যে, এর প্রকৃত কারণ খুঁজে পেতে হলে আরো গবেষণার দরকার রয়েছে।

এমনও হতে পারে যে, খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে আসলে এর কোনো সম্পর্ক নেই। বরং যারা মাংস খায় না তাদের জীবনের অন্যান্য কারণের জন্যই হয়তো এই ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। প্রতিরাতে শুধু মাংস আর আলু নয় বরং বৈচিত্র্যময় খাবার খেতে হবে।

তার মানে কি নিরামিষভোজী অস্বাস্থ্যকর?

ব্রিটিশ ডায়েটিক এসোসিয়েশনের ডা. ফ্রাঙ্কি ফিলিপস বলেন যে, এটা নাও হতে পারে। কারণ এই গবেষণাটি শুধুমাত্র একটি পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা মাত্র।

'তারা শুধু পর্যবেক্ষণ করেছে যে, মানুষ কি খায় এবং তাদের বছরের পর বছর ধরে অনুসরণ করেছে, এটা শুধু সম্পৃক্ততাই জানান দেয়, কারণ বা প্রভাব সম্পর্কে বিশ্লেষণ করে না,' তিনি বলেন। 'সবার জন্য বার্তা হচ্ছে, সবচেয়ে ভালো একটি পরিকল্পিত খাদ্যাভ্যাস এবং বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়া।'

'মাংসাশীরা সাধারণত বিভিন্ন ধরনের খাবার খায় না। কারণ তারা প্রতি রাতে খাবার হিসেবে মাংসই খায় এবং কোনো ধরনের শাকসবজি খায় না।' গবেষণা শুরুর পর থেকে কি মানুষের খাবারে পরিবর্তন এসেছে? ২০১০ সালে গবেষকরা আবার অংশগ্রহণকারীদের কাছে গিয়ে তাদের খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল।

কিন্তু ডা. ফিলিপস বলেন, নিরামিষভোজীদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তিত হয়েছিল। 'এই তথ্যগুলো কয়েক দশক আগে সংগ্রহ করা হয়েছিলো,' তিনি বলেন।

'স্বাভাবিকভাবেই আজ থেকে ২০ কিংবা ৩০ বছর আগে নিরামিষভোজীদের

সঙ্গে আজকের নিরামিষভোজীদের পার্থক্য তৈরি হয়েছে।'

'নিরামিষভোজীদের খাবারের পরিধি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এগুলো এখন মূল ধারার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।' আমরা এখন অনেক বেশি মাত্রায় প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং মাংস খাওয়া স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে অনেক বেশি জানি- যা অন্ত্রের ক্যান্সার তৈরি করে।

দিনে কমপক্ষে ৫ ভাগ ফল এবং শাকসবজি খান

মূল খাবার হিসেবে উচ্চমাত্রায় আঁশসম্পন্ন এবং শ্বেতসার বহুল খাবার যেমন আলু, রুটি, ভাত কিংবা পাস্তা রাখা উচিত।

প্রোটিন ভুলে গেলে হবে না- চর্বিহীন মাংস, মাছ, সামুদ্রিক খাবার, ডাল, তফু কিংবা লবণহীন বাদাম খেতে হবে।

দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার থাকতে হবে

* উচ্চ মাত্রায় চর্বিযুক্ত খাবার, চিনি কিংবা লবণ যত কমানো যায় ততই ভালো।

* কিন্তু যারা নিরামিষভোজী তাদের নির্দিষ্ট কিছু পুষ্টি গ্রহণ সম্পর্কে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।

* উদাহরণস্বরূপ, যারা মাংস, দুগ্ধজাত খাবার এবং মাছ খায় তারা পর্যাপ্ত ভিটামিন বি১২ পায়- যা স্বাস্থ্যকর রক্ত এবং স্নায়ুতন্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয়।

* যাই হোক, যদিও সকালের নাস্তার বিভিন্ন সিরিয়াল এবং ইস্টসমৃদ্ধ খাবারে ভিটামিন বি১২ থাকে তবুও নিরামিষভোজীদের মধ্যে এই ভিটামিনের অভাব দেখা দিতে পারে।

উদ্ভিদজাত খাবার থেকে আয়রনও কম পাওয়া যায়। যারা মাংস খান না তাই তাদের নিশ্চিত করতে হবে যে তারা যাতে নিয়মিত গমের রুটি, আটা, শুকনো ফল এবং ডাল খান। এ ছাড়া গত মাসে নিরামিষভোজীদের আহ্বান জানানো হয়েছিল, তারা যাতে মস্তিষ্কের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ভিটামিন কোলিন পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করেন।

য় সুস্বাস্থ্য ডেস্ক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<71261 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1