বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শারদীয় দুগোর্ৎসবের আনন্দ অনাবিল

অতুল কৃষ্ণ দাস
  ১৬ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

হিন্দু ধমার্বলম্বীদের দুগার্পূজার আগমনটি অনেক প্রত্যাশার অনেক আনন্দের। শারদীয় দুগোর্ৎসব আনন্দের, সাম্যের, পুণ্যের এবং সহানুভূতির বাতার্ নিয়ে আসে। এ উৎসব বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধমীর্য় উৎসব। বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় এ শারদোৎসব অত্যন্ত মযার্দা ও জঁাকজমকের সঙ্গে পালন করে। অনেক প্রাচীনকাল থেকেই হিন্দু সম্প্রদায় দেবদেবী নিয়ে তাদের ধমর্ বিশ্বাস। আধুনিককালে বাঙালি হিন্দুদের সবের্শ্রষ্ঠ উৎসব শারদীয় দুগার্পূজা তাদের জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। বোধন থেকে বিসজর্ন পযর্ন্ত যেমন ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ও দশমী পূজা পঁাচ দিন পযর্ন্ত এক অনন্যরূপে তাদের জীবনকে আন্দোলিত করে। প্রাচীনকালে প্রথমে বসন্তকালে বাসন্তী দুগার্ পূজা হতো। রাজা সুরথ তার রাজ্য উদ্ধারের জন্য বসন্তকালে বাসন্তী পূজা করেন। বতর্মানে দুগার্পূজা শরৎকালে হয় বলেই একে শারদীয় দুগোর্ৎসব বলে। অযোদ্ধার রাজা শ্রীরামচন্দ্র সীতাকে উদ্ধার করার জন্য লংকার রাজা রাবণকে বধ করার নিমিত্ব শরৎকালে দেবী দুগার্র অকাল বোধন করেন বলেই একে শারদীয় দুগোর্ৎসব বলে। যে দেবী মহিষ মদির্নী, মহাশক্তি তিনি চÐী দেবী। মহিষাসুর প্রপীড়িত দেবতারা সবাই যখন এক যোগে পরিত্রাণের জন্য সংকল্প গ্রহণ করলেন তখন তাদের প্রত্যেকের দেহ থেকে দিব্যতেজ প্রকাশ পেতে থাকে। তখন সকলের তেজে সম্মিলিত হয়ে জ্যেতিমর্য়ী মহাশক্তি আবিভ‚র্ত হলেনÑ তিনিই দুগির্ত নাশিনী দুগার্, পদতলে নিহত মহিষাসুর, সিংহবাহিনী অসুর সংহারে সমুদ্যত। হিন্দু সম্প্রদায়ের মন মায়ের আগমনের আশায় উন্মুখ হয়ে থাকে। শরৎ ঋতুতে অপরূপ সাজে সজ্জিত হয়ে দেব-দেবীকে অভ্যথর্না জানানোর জন্য প্রস্তুত। সে সময় থেকেই শারদীয় মহোৎসবের সূচনা। শারদোৎসবে সকল হিন্দুর মনে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়। হিন্দুদের পুরাণের কাহিনী হলো যুদ্ধ বিগ্রহের ঘটনায় পরিপূণর্। অথচ বাঙালি হিন্দুরা ‘শিবের ঘরণী’ দুগাের্দবীর গৌরীরূপকে ভুলতে নারাজ। সুতরাং রণচÐীর পাশেই যুদ্ধ ক্ষেত্রে তার পুরো পরিবারটি এনে বাঙালি স্থাপন করেছেন-দুগার্র ডানে ধনের অধিষ্ঠাত্রী ল²ী দেবী, বামে বিদ্যাদায়িনী সরস্বতী, বীরযোদ্ধা কাতির্ক, সিদ্ধিদাতা গণেশ কেহই বাদ পড়েনি। মাথার ওপর প্রছন্ন মহেশ্বর, আর গণেশের পাশে তার কলাবৌটি অবস্থিত। দুগার্পূজা শাস্ত্র বিধি মতে শরৎ আশ্বিনের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে দেবীর বোধন ও পূজার সূচনা হয়। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী, দশমী পযর্ন্ত পঁাচ দিনব্যাপী এ দুগার্পূজা অনুষ্ঠিত হয়। পূজার এ কয়েক দিন শঙ্খ, ঘণ্টা, কাশি, বঁাশি ঝঁাজ, ঢাক-ঢোল নাগরা প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্র ও মাইকের শব্দে লোকজনের নৃত্য ও আনন্দ কোলাহলে পূজা মন্দির মুখরিত হয়ে থাকে। পুরোহিত পূজামন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে ভক্তিসহ দেবীর উদ্দেশ্যে নানা পুষ্পাঘর্্য নিবেদন করে পূজা করেন। প্রতি সন্ধ্যায় দেবী প্রতিমার সামনে ঢাক বাদ্য বাজিয়ে সন্ধ্যারতি অনুষ্ঠিত হয়। পূজা বাড়িতে বহু লোক নিমন্ত্রিত হয়ে নানা ধরনের উপাদেয় খাদ্যসামগ্রী ভোজন করে পরিতৃপ্ত হয়। বোধন থেকে বিসজর্ন পযর্ন্ত এক অনন্যরূপে তাদের জীবনকে আন্দোলিত করে। নায়রে বা পিত্রালয়ে দেবী কয়েকদিন অবস্থান করে পূজা গ্রহণ করে। আবার কৈলাশে শিবের কাছে চলে যাওয়া যেন ¯েœহময়ী কন্যার বিদায় বেদনায় স্পন্দিত। দশমিতে প্রতিমা জলে বিসজর্ন দিয়ে ফিরে এসে শত্রæ-মিত্র ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে পরস্পরকে যথাযোগ্য প্রণাম, নমস্কার, অভিবাদন ও স্নেহালিঙ্গন করেন। একে বলা হয় বিজয় দশমী-এটি বাস্তবিকই বিজয় উৎসব।

বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজা সাম্য নীতির আদশের্ অনুপ্রাণীত করে। মানুষে মানুষে গড়ে তোলে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন। হিংসা, বিদ্বেষ, ঘৃণা, ক্রোধ, মন-মালিন্য ইত্যাদি ভুলিয়ে মানুষকে সুন্দর জীবনের পথ দেখায়। মতের্্যর এ পৃথিবীতে দুগার্পূজা এনে দেয় সুখময় স্বগের্র মহিমা। ¯েœহ-প্রীতি, প্রেম শুভেচ্ছা, সম্প্রীতি, সৌহাদর্, আশীবার্দ আর ঐক্যের সুরধনি তোলে শারদীয় দুগোর্ৎসবে ভরে তোলে অনাবিল আনন্দ।

উপদেষ্টা

জেজেডি ফ্রেন্ডস ফোরাম

কাশিয়ানী, গোপালগঞ্জ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<17648 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1