শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

স্বপ্নডুবি

নাহিদ হাসান রবিন
  ১৩ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

একটু আগে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। বৃষ্টিতে ধোয়া গাছ-গাছালির সবুজ পাতাগুলি একেবারে তরতাজা মনে হচ্ছে। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে জানালার গ্রিল ধরে দঁাড়িয়ে তিথি প্রকৃতির সৌন্দযর্ দেখছিল, এমন সময় ভেতর থেকে তিথির মা ডাকলেনÑ তিথি তুমি কি ঘুম?

Ñ না মা জাগা পেয়েছি।

Ñ এ দিকটায় একটু আসতো মা।

Ñ বাথরুম সেরে আসছি মা।

বাথরুম থেকে বেরিয়ে তিথি রান্নাঘরে মায়ের কাছে যায়। তিথিকে দেখে মা বলেÑ দেখতো মা হিজল ছেলেটার কি অবস্থা।

Ñ কেন হিজলের কি হয়েছে মা?

Ñ দুপুরে বলছিল শরীরটা ভালো লাগছে না। খাওয়ার জন্য ডাকলাম, এলো না। ঘরে গিয়ে দেখি ঘুমিয়ে আছে। কাজের চাপে ছেলেটার কাছে আর যেতে পারিনি। কেয়াকে ডাকলাম, বলল আসছি, একঘণ্টা হয়ে গেল এখনো আসার কথা নেই। তুমি একটু দেখে আসতো মা।

হিজল তিথির ফুফাতো ভাই। তিথি ও হিজল সমবয়সী। হিজলের বাসা জয়পুরহাটে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনাসের্ ভতির্ হওয়ার পর মামার বাসায় থেকে পড়াশোনা করে। তিথির মা রাজিয়া বেগমের কোনো ছেলে সন্তান না থাকায় তিনি হিজলকে খুব আদর করেন। রাজিয়া খাতুনের দুই মেয়ে তিথি ও কেয়া। তিথি হিজলের সঙ্গে একই ইয়ারে পড়ে, তবে সাবজেক্ট আলাদা। তিথি ইংরেজিতে আর হিজল বাংলায়। কেয়া তিথির দুই বছরের ছোট, এবার আইএ ফাইনাল দেবে।

মায়ের মুখে হিজলের শরীর খারাপের কথা শুনে তিথি অস্থির হয়ে ওঠে। কারণ মনে মনে তিথি হিজলকে খুব ভালোবাসে। যা তিথি এখনো হিজলকে বলতে পারেনি। দরজা ঠেলে হিজলের ঘরে ঢোকে তিথি। জানালা দুটি বন্ধ করে রেখেছে। ঘরটা একেবারে অন্ধকার হয়ে আছে। সুইচ টিপে আলো জ্বালায়। হিজল খাটে শুয়ে আছে। ধীর পায়ে হিজলের কাছে যায়। হিজল ঘুমের মধ্যে একটু একটু কাতরাচ্ছে। মনে হয় শরীরে জ্বর উঠেছে। হিজলের কপালে হাত রাখে। গায়ে অনেক জ্বর। হিজলের এমন অবস্থা দেখে তিথির ভীষণ সেবা করতে ইচ্ছে করছে। বিছানার ওপর থেকে ভঁাজানো কম্বলটা মেলে হিজলের গায়ের ওপর ছড়িয়ে দেয়। একটা তোয়ালে ভিজিয়ে এনে কপালের ওপর লাগিয়ে দেয়। মাকে গিয়ে বলেÑ হিজলের গায়ে অনেক জ্বর। ঘুমিয়ে আছে।

Ñ তুমি যাওতো মা, গিয়ে ওকে ডেকে তুলে কিছু খেতে দাও।

তিথি আবার হিজলের কাছে যায়। মাথার কাছে বসে। কপাল থেকে ভেজা কাপড়ের তোয়ালেটা সরে নেয়। তিথির স্পশর্ পেয়ে ঘুম ভেঙে যায় হিজলের। চোখ খুলে দেখে তিথি পাশে বসা। আবেগে তিথির একটা হাত টেনে নেয় বুকে। হিজলের এমন আচরণে তিথি অনেকটা অপ্রস্তুত হয়ে যায়। বাধা দিতে পারে না। হিজলের চোখে চোখ রাখে। হিজলের ছেঁায়ায় এক অজানা ভালোলাগা অনুভব করে। হিজলকে বলেÑ সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে একটু উঠে বসো। দুপুরে কিছু খাওনি। আমি নাস্তা নিয়ে আসছি, তুমি একটু ফ্রেস হয়ে নাও।

Ñ একদম খেতে ইচ্ছে করছে না।

Ñ ইচ্ছে না করলেও খেতে হবে, একথা বলেই তিথি ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।

নাস্তার ট্রে হাতে ঘরে ঢুকে দেখে হিজল বিছানাতেই আছে। হাত থেকে ট্রে টেবিলে রাখে। খাটের পাশে গিয়ে হিজলের একটা হাত ধরে টেনে তুলে বসায়। হিজল তিথির চোখের দিকে তাকিয়ে ওর অস্থিরতা বুঝতে পেরে বলেÑ তুমি সামান্যতেই ব্যস্ত হয়েছ তিথি। সামান্য জ্বর, এমনিতেই সেরে যাবে।

Ñ থাক এসব, তুমি ওঠোতো একটু খাবে।

তিথির পীড়াপীড়িতে হিজল উঠে বসে। দুতিনটা লুচি আর একটু পায়েস মুখে দেয়।

তিথি ও ঘর থেকে একটা প্যারাসিটামল এনে বলেÑ এটা খেয়ে নাও।

হিজল প্যারাসিটামলটা খেয়ে আবার শুয়ে পড়ে।

রাতে সবাই খাবার টেবিলে বসেছে। হিজল সকাল থেকে এখনো ঘরের বাহির হয়নি। তিথির মা হিজলের ঘরে যায়। মায়ের পিছু পিছু তিথিও ঘরে ঢোকে। হিজল খাটের বক্সের সঙ্গে বালিশ লাগিয়ে আধা শোয়া হয়ে আছে। মামিকে দেখে সোজা হয়ে বসে।

Ñ এখন কেমন লাগছে বাবা?

Ñ একটু ভালো মামি।

Ñ দেখি জ্বর কেমন। রাজিয়া খাতুন হিজলের কপালে হাত দেয়। এখন জ্বর নেই। একটু কষ্ট করে এসো বাবা, খেয়ে এসে আবার শুয়ে পড়বে।

Ñ উঠতে ইচ্ছে করছে না মামি।

রাজিয়া খাতুন তিথিকে বলেÑ যাও তো মা হিজলের জন্য খাবার নিয়ে এসো। তিথি ডাইনিং রুমের দিকে যায়। রাজিয়া খাতুন হিজলের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলেÑ তিথি খাবার আনলে খেয়ে নেবে কিন্তু।

তিথি খাবার নিয়ে আসে। হিজলের খেতে ইচ্ছে করছে না, তিথির চোখের ব্যাকুলতা দেখে একটু খাবার খেয়ে রাতের ওষুধ খেয়ে নেয়। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় তিথি বলেÑ দরজা খুলে রেখো মাঝে মাঝে এসে দেখে যাব। আর যদি খারাপ লাগে আমাকে ডাক দিও।

তিথি ও কেয়া একই রুমে থাকে, তবে আলাদা খাটে। তখন গভীর রাত, সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। তিথির চোখে ঘুম নেই, বারবারই হিজলের কথা মনে পড়ছে। ইচ্ছে করছে রাতটা হিজলের কাছে কাটাতে। বেড সুইজটা অন করে আলো জ্বালায়। দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকায়, দুইটা দশ বাজে। খাট থেকে ওঠে দরজা খুলে হিজলের রুমের দিকে যায়। খোলা দরজার ফঁাক দিয়ে আলো দেখা যাচ্ছে। তিথি রুমে ঢোকে। হিজল চোখ খুলে তাকিয়ে আছে। তিথিকে দেখে বলেÑ তুমি এখনো ঘুমাওনি!

Ñ তোমার এ অবস্থা দেখে ঘুম আসছিল না।

তিথি হিজলের পাশে বসে কপালে হাত দেয়, এখন জ্বর নেই। হিজল খাট থেকে ওঠে দঁাড়ায়। তিথির সামনে যায়, ওর দুটি হাত টেনে নিয়ে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে। পুরুষালী দেহের বাহু বন্ধনে তিথি এক পরম সুখ লক্ষ্য করে। মাথা গুঁজে দেয় হিজলের বুকে। সে রাতে ওদের অনেক কথা হয়।

কয়েকদিন পরের কথা, রাতে বিছানায় শুয়ে তিথির ঘুম আসছিল না। হিজলের পুরুষালী ছেঁায়ার কথা মনে হচ্ছিল। যৌবনের আবেগ ধরে রাখতে না পেরে হিজলের রুমের সামনে যায়। দরজায় টোকা দেয়। হিজল দরজা খুলে দেয়। তিথিকে দেখে বলেÑ এত রাতে তুমি!

Ñ কেন এত রাতে আসা যাবে না বুঝি।

তিথি ঘরে ঢুকে বড় বাল্বটা অব করে ডিম লাইল জ্বালায়। নিস্তব্ধ রাত, প্রকৃতি নীরব। হিজল তিথিকে জড়িয়ে ধরে খাটের ওপর নিয়ে যায়। এরপর নারী দেহের সব গলিপথ ঘুরে বেড়ায়। হিজল মন খারাপ করবে ভেবে তিথি কোন বাধা দেয়নি, শুধু বলেছিলÑ নারী দেহের সব গলিপথ চিনলে, এর স্বাদ বুঝলে, কৃতজ্ঞ থেকো। হিজল কথা দিয়েছিল। এভাবে কেটে যায় কয়েক বছর।

কদিন থেকে তিথি অসুস্থ, শরীরটা প্রচÐ দুবর্ল। গভীর রাতে ঘুম থেকে জেগে বাথরুমে যাওয়ার জন্য বেড সুইচটা অন করে আলো জ্বালায়। কেয়ার খাটের দিকে তাকায়, খাটে কেয়া নেই। তিথি বুঝতে পারে না এত রাতে কেয়া কোথায় গেল। বারান্দা, বাথরুম কোথাও নেই। দরজার ফঁাক দিয়ে হিজলের রুমে আবছা আলো দেখা যাচ্ছে। দরজা ঠেলে ভেতরে যায় তিথি। হিজল লাফিয়ে উঠে নিজেকে গুছিয়ে নেয়। কম্বল দিয়ে শরীর পেঁচিয়ে নেয় কেয়া। মেঝেতে পড়ে আছে কেয়ার সালোয়ার, ঠিক এভাবেই একদিন কেয়া দেখেছিল তিথিকে।

নিজের রুমে ফিরে আসে তিথি। জ্যোৎস্নার আলো ঘরে ঢুকে আলোকিত হয়ে আছে। খোলা জানালা দিয়ে উতাল বাতাস ঘরে ঢুকে ক্যালেন্ডারের পাতার সঙ্গে ঝঁাপটে খেলা করছে। তিথির কপাল ভিজে ওঠে বিন্দু বিন্দু ঘামে।

সাহিত্য সম্পাদক

জেজেডি ফ্রেন্ডস ফোরাম

শেরপুর, বগুড়া

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<22195 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1