বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ডিগবাজি মারা কবুতর

শরীফ সাথী
  ০৮ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

বৈকালী হাওয়ায় পাটাচোরা তীরধরা দ্বীপে আমার প্রতিদিনই কাল্পনিক ও বাস্তবিক নদী তীরে বসা। প্রকৃতির মায়াময় নিদারুণ ছেঁায়ার শোভা বিস্তার করে আছে সেই দেখে আসা অতীত থেকে আজ অবধী। সবুজ শ্যামলের বিচরণ ক্ষেত্রে পাখির কলরব, নদীর কলতানে জেলে মাঝির হঁাক ডাক। দৈনন্দিন দৃশ্যে গড়া চারিপাশ। এক ঝঁাক কবুতর উড়ে যাওয়ার মুহ‚তের্ পাশে বসা কাপার্সডাঙ্গা বাজারের জীম ইলেকট্রনিক্সের মালিক মনিরুল স্মৃতি মেমরি খুলে বলল, ছোট্ট থেকেই আমার কবুতর পোষার শখ। বিভিন্ন রকমের কবুতর। আমার শতেক কবুতরের একটি ডিগবাজি মারা কবুতর ছিল। ঠিক আমার আয়ত্তে কবুতরটি পোষ মেনেছিল। হাত বাড়ালে আমার হাতে, কঁাধে ও ঘাড়ে এসে বসতো। দু’জনার বন্ধুসুলভ আচরণ ভালোলাগা ভালোবাসার অকৃত্রিম বন্ধন। কবুতরটির খুবই যতœ নিতাম। ব্যবসায়িক কারণে সময় অল্প হলেও রোজ দুপুরে বাসায় খেতে গিয়ে, কবুতরকে নিজ হাতে খাওয়াতাম। উপর আকাশে উড়াতাম এবং হাততালি দিলে অনবরত নানান ঢংয়ে কবুতরটি ডিগবাজি মারতো। আবার হাত বাড়ালে নেমে এসে হাতে বসতো। পোষ মানানো ডিগবাজি খাওয়া কবুতরটি দেখে অনেকেই খুব খুশী হতো এবং বলতো বাহ্ পাড়ায় অমুকের একটা পোষ মানা কবুতর আছে। আশপাশের গ্রামে ডিগবাজি মারা কবুতরের পাল্লা বা খেলার আয়োজন হলে আমার কবুতরটি সেরা বিবেচিত হতো।

কবুতরটি আমার বসত ঘরে, ঘুরে বেড়াতো। সরষে, চাল, চালের গুঁড়া খেয়ে খেয়ে ঘুরতো। মমতাময় মায়া জড়ানো কবুতরটি হঠাৎ করেই পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক খেঁাজাখুঁজি। কবুতর ঘরের সবির্দক, বাড়ির আঙ্গিনা, পাড়া গ্রাম যারা কবুতর পোষে সবার বাড়ি খুঁজলাম। কোথাও পেলাম না। ভাবলাম, তাহলে কি কোনো বিড়াল এসে কবুতরটি..... না... না ভাবতেই পারছি না। বুকের স্পন্দন কেঁপে উঠছে। দিন রাত চিন্তা করি, কি হলো তার?

দিন চারেক পর ঘরের পিড়ির কোণে উপোড় হয়ে থাকা কাঠা তুলতেই কবুতরটি {আগেকার দিনে বেতের তৈরি কাঠা বা ধামায় চাল রাখা হতো এবং কাঠায় মেপে হঁাড়িতে ভাত আকায় (চুলোয়) দেয়া হতো}। কবুতরটি হয়তো কাঠার কান্দায় বসতে কাঠার নিচে চাপা পড়েছে। কাঠার নিচে কতনা ঝাপট মেরেছে। কিভাবে বেরুনোর জন্য কতনা কষ্ট করেছে।

কবুতরটি কয়েকদিন কিছু না খেতে পেরে মাটিতে একেবারে চুপসে গেছে। কোন রকম দিব দিব করছে জানটি। এমন দৃশ্য দেখে আমার চোখের কোণে জলের বান এলো। কবুতরটি হাতে নিয়ে মাথায় পানি মুখে পানি দিলাম। সে এতটায় দুবর্ল হয়েছে যে, তাকে আর শত চেষ্টায়ও বঁাচাতে পারলাম না। ঊনিশ বছরের পোষ মানানো একান্ত ভালোবাসার প্রিয় কবুতরটি ধঁুকে ধুঁকে কয়েকদিন পর মারা গেল। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। তাকে চিরদিনের মতো হারিয়ে মনে হলে বেদনার দাবানলে আজো জ্বলি। আমি সে রকম কবুতর আজ অবধী আর একটিও করতে পারিনি।

এমন সময় মনিরুলের চোখের কোণে জল দেখে আমি বললাম, হাসি কান্নার মাঝেই জীবন চলেরে। আজ উঠা যাক অঁাধার নেমে আসছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<31044 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1