শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পরিচিতজন

নাহিদ হাসান রবিন
  ১৫ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

বিক্ষিপ্তভাবে তার দু-একটা লেখার সঙ্গে আমার বেশ আগে থেকেই পরিচয় ছিল। কোথায় পড়েছি, সে কথা ঠিক মনে করতে পারছি না। কোনো দৈনিক পত্রিকা বা লিটলম্যাগ হবে নিশ্চয়। লেখার গভীরতার কথা মনে না থাকলেও ‘রহমান এমিলি’ নামে একজন লেখক আছে, এ কথা মনে পড়ছে। অনেক লেখকের লেখার সঙ্গে পরিচয় থাকলেও, সরাসরি লেখকের সঙ্গে পরিচয় নেই। রহমান এমিলি তাদেরই একজন। তার সঙ্গে পরিচয় থাকতে হবে বা থাকাটা দরকার এমন কখনোই ভাবিনি। ভাবার কথাও না। রহমান এমিলির মতো কত লেখক আছে, কে রাখে কার খবর। হয়তো তার কোনো একটা লেখা ভালো লাগার কারণে নামটা মনে আছে। আবার এমনও হতে পারে নামটা সুন্দর হওয়ার কারণে মনে আছে। এমন কিছু একটা হবে নিশ্চয়।

সারাদিনের কমর্ব্যস্ততা শেষ করে রাতে বিছানায় শুয়ে মোবাইল ফোনে ফেসবুকে একটু সময় কাটানো বলা চলে একরকম নেশাই হয়ে গেছে। সেখানে মনযোগ সহকারে কারো লেখা না পড়া হলেও, চোখ বুলিয়ে যাই একটু। সেদিন রাতে এমনভাবেই রহমান এমিলির সঙ্গে পরিচয়ের সূত্রপাত ঘটে।

হেমন্তের বিদায় লগ্ন। সন্ধ্যার পরে একটু শীত অনুভব হয়। রাতে বুকের ওপর হালকাভাবে পাতলা একটা কঁাথা রেখে খাটের বক্সের সঙ্গে বালিশ ঠেকিয়ে আধাশোয়া হয়ে মোবাইলে ফেসবুক দেখছিলাম। রহমান এমিলির একটা পোস্টের ওপর চোখ পড়ে। কবিতা, গল্প বা প্রবন্ধ নয়। তবে, কবিতার পঙক্তিমালা বলা যায়। কয়েক লাইন লেখা বেশ ভালো লেগে যায়। কোনো কিছু না ভেবেই তার প্রোফাইলে ঢুকি। তার বেশ কিছু লেখা ও পেপার কাটিং চোখে পড়ল। এক ঝলক চোখ বুলিয়ে নেই সেখানে। বেশ তো, শব্দচয়ন, রচনা শৈলী চমৎকার। বেচারীকে জানতে ইচ্ছে করল। দ্বিধা, সংকোচ উপেক্ষা করে তার ম্যাসেঞ্জারে লিখে দিলামÑ আসুন, দুজন দুজনকে জানি।

সকাল দশটা থেকে এগারোটা, এই সময়টা সাধারণত ফ্রি কাটাই। নিয়মিত এই সময়টাতে ফেসবুকে ঢোকা না হলেও, মাঝে মাঝেই ঢুকি। সেদিন ফেসবুকে ঢুকতেই রহমান এমিলির ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট ভেসে উঠল। সেইসঙ্গে ম্যাসেঞ্জারেও লেখাÑ জানতেই পারি। সেই থেকে শুরু হলো দু-জন দু-জনকে জানা। নিজ থেকেই এমিলি অনেক কিছু জানিয়েছে। আমিও প্রয়োজন মতো কিছু জানিয়েছি। ম্যাসেঞ্জারে লেখালেখির মাধ্যমে দুজনের চেনা জানা বা পরিচয় হলেও, দুজনের মোবাইল নাম্বার কাছে থাকার পরও কণ্ঠের সঙ্গে এখনো পরিচয় হয়নি। কখনো যে ইচ্ছে জাগেনি, তা নয়। একদিন কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলাম। সে ছোট্ট করে লিখেছিলÑ পরে। পরে আর সেরকম আগ্রহ জাগেনি। একবার কেন যেন মনে হয়েছিল, মহিলা বুঝি বোবা। যা হয় হোক, তাতে আমার কিছু যায় আসে না। তাই ওসব নিয়ে পরে আর ভাবিনি। তা ছাড়া কণ্ঠের সঙ্গে পরিচয় হতেই হবে, এমন তো নয়। ইতোমধ্যে দুজনের লেখার সঙ্গেও অনেকটা পরিচয় হয়েছে। বেশ ভালো লেখে এমিলি। বড় কথা এমিলি বেশ পড়াশোনা করে। অনেক নামকরা বই তার পাঠ করা আছে। তার এই গুণটা আমার ভালো লেগেছে। কারণ, আমারও পড়ার একটা বদ নেশা আছে।

কণ্ঠের সঙ্গে পরিচয় না হয়েও আমরা দুজনকে অনেকটাই জেনেছি। ফেসবুকে ছবি দেখা থেকে মনেই হয় না, সরাসরি কখনো দেখা হয়নি দুজনের। বরং একেবারে চেনা মানুষের মতো মনে হয়। শুভাকাক্সক্ষী বললেও খুব বেশি ভুল হবে না। একদিন তো এমিলি জানিয়েই দিয়েছিলÑ আমাকে শুভাকাক্সক্ষী ভাবতে শুরু করেছে। তবে, তার আচরণে কখনো দূরত্ব আবার কখনো প্রশ্রয় খুঁজে পাওয়া যায়। এ থেকে তাকে বোঝাটা খুব সহজ মনে হয় না আমার কাছে। ম্যাসেঞ্জারে প্রতিদিন দুজনের লেখালেখির মধ্যে কখনো একটু আধটু অপছন্দের বিষয় থাকলেও, দুজন খুব অনায়াসেই তা মানিয়ে নিতে পারি। তা ছাড়া সে আমার ছোটখাটো আবদারও রাখে। এর মধ্যে আমি তো আপনি ছেড়ে তুমিতে চলে এসেছি। এতে এমিলিও মনে হয় খুশি। ওর আচরণে তেমনই মনে হয়েছে আমার কাছে। আবার নাও হতে পারে। তবে, মন খারাপ করেনি মোটেও। কখনো ওর ছবি দেখতে চাইলে কোনো আপত্তি না করে পাঠিয়ে দেয়। একদিন ওর একটা ছবি আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছিলাম। যতই দেখছিলাম, ততই হারিয়ে যাচ্ছিলাম ওর গভীরে। পরে মনে হয়েছিল, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি কোনো দুবর্লতা থেকেই মনে হয় এমনটা হয়েছিল। যাহোক, তখনই সেই আবেগকে বিদায় দিয়েছিলাম। তবে, মনের অজান্তেই কখন যেন প্রকাশ করে ফেলেছিলাম, তোমার ঠেঁাট দুটো সুন্দর। আমার কথার মধ্যে যেমন কোনো অশালীনতা বা অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না, তেমনি এমিলিও কোনো অভিযোগ না করে বরং অনেকটা প্রশ্রয় দিয়ে জানিয়েছিলÑ ঠেঁাট দুটো সুন্দর না বলে, চোখ দুটো সুন্দর বলতে পারতেন। এরপর অনেকবারই এমিলি তার ছবি আমাকে দিয়েছে। ওর ছবিগুলোতে একটা বিষয় আমি খেয়াল করেছিÑ সাজুগুজু পছন্দ করে না মহিলা। স্রেফ কানে একটা সোনার ছোট্ট বল। এই টুকুতেই ওকে একজন পরিপূণর্ নারী মনে হয়েছে আমার কাছে।

বিপরীত লিঙ্গের প্রতি মানুষের একটা অন্যরকম দুবর্লতা থেকেই যায়। আমি বা এমিলি এসবের বাইরের কেউ নই। ক্রমশ দুজনই মনে হয় অনেকটা আবেগী হয়ে উঠি। অবশ্য দুজনের কারোরই প্রকাশ নেই। তবে বুঝতে কারো কষ্ট হয় না। প্রতিদিন ম্যাসেঞ্জারে কিছু না লিখলে কেমন যেন অস্থিরতা কাজ করে। ওর বেলাতেও এমনটা বুঝতে পেরেছি আমি। এমনটা বুঝতে পেরে একটু কৌশলে দূরে থাকার চেষ্টা করেছি। তাতে অবশ্য কাজ হয়নি। একদিন ফেসবুক থেকে সাময়িক বিদায় নিয়েছিলাম। দুদিন পর জানতে পারলামÑ অনেক বন্ধুদের ভিড়ে এমিলি ফেসবুকে আমাকে খেঁাজে। জেনে এক অজানা আনন্দের ঢেউ খেলে গিয়েছিল মনে। কিন্তু এই আনন্দের হাওয়া মনে লাগাতে দেয়া যাবে না মোটেও। কারণ, এই আনন্দ একদিন বিষাদে পরিণত হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু বুঝতে পারা আর মেনে চলা এক নয়। আমিও মেনে চলতে হিমশিম খাই। নিকোটিনের নেশার মতো আসক্ত হয়ে যাই দুজনেই। তবে কোনো অশুভ চিন্তা কখনোই কাউকে স্পশর্ করেনি।

মাত্র দুমাস হবে দুজনের পরিচয়। এরই মধ্যে অনেক কাছাকাছি চলে এসেছি দুজন। এমন চলতে থাকলে যে কোনো সময় মানুষিকভাবে দুবর্ল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে অনেক। যা আমাদের কারো জন্যই মঙ্গলজনক নয়। এবার আমি দূরে যাওয়ার পথ খঁুজি। কিন্তু কোনো পথের নাগাল মেলে না। অনেক কষ্টে যদি কিছুটা সময় আড়ালে থাকিও, পরক্ষণেই বেশি আবেগী হয়ে পড়ি দুজনেই। এমিলির মধ্যে বহিঃপ্রকাশ একবারে কম। তবে তার দুবর্লতার বিষয়টি স্পষ্ট বোঝা যায়। অমঙ্গল নিশ্চিত জেনে নিজেকে শক্ত করে নেই। অনেক জেনেছি তাকে। আর নয়। দুজন দুই মেরুর বাসিন্দা। জীবনে কখনো দেখা বা সরাসরি কথা হবে এমনটি জোরালোভাবে বলা যায় না। তাই মিছেমিছি বন্ধু বা শুভাকাক্সক্ষী ভেবে হৃদয় নামক যন্ত্রটাকে বিকল করা বোকামি ছাড়া আর কিছুই না। সব আবেগকে উড়িয়ে দিয়ে হৃদয় নামক জায়গাটিতে অতি যতেœ শুধু একটি ছোট্ট শব্দ সেভ করে নেইÑ পরিচিতজন।

সাহিত্য সম্পাদক

জেজেডি ফ্রেন্ডস ফোরাম

শেরপুর, বগুড়া

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<32118 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1