শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সুখবিলাসী মন

য় শফিকুল ইসলাম শফিক
  ১৬ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে চাকরির জন্য মহাসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। জীবনে কখনও ভাবিনি যে, ঘুষ দিয়ে চাকরি করব। সে জন্য কখনও হতাশ হইনি। চাকরির সংগ্রাম চলবেই। একবার এক বড়ভাই ব্যাংকে চাকরির অফার দিলেন। বললেন, মাত্র সাত লাখ টাকার প্রয়োজন। আমাকে অফিসারর্ যাঙ্কে নিয়োগ দেয়া হবে। তাকে বললাম, এত টাকা থাকলে এতদিন কোনো ব্যবসা করে কোটিপতি হতাম। বড়ভাই সেই থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। আগের মতো আর কোনো যোগাযোগ নেই। চাট্টিখানি কথা নয়। এত টাকা দেবই বা কোত্থেকে?

এরপর কলেজের এক বন্ধু সরকারি চাকরির অফার দিলেন। এতদিন তার চরিত্র ফাঁস করার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু আজ এমন একজন বিখ্যাত চাপাবাজের পরিচয় তুলে ধরলাম। আমি তো আগে থেকেই একটু বেশি সহজ-সরল। কখনও বুঝিনি যে, সে আমার মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাবে। কেন জানি তাকে খুব বিশ্বাস করলাম। তার কথায় চাকরি পাওয়ার ওয়ারেন্টি-গ্যারান্টি পেলাম। সে বলল, আমার চ্যানেলের নেটওয়ার্ক খুবই শক্তিশালী। আজ অবধি চাকরি ছাড়া কেউ খালি হাতে ফিরে যায়নি। পকেটে নাকি তিনটা মন্ত্রী থাকে! আমিও ভাবলাম, মন্ত্রী যার, চাকরি তার। নয় লাখ টাকা মিটমাট করে নিলাম। বাপের দুই বিঘা জমি বন্ধক রেখে দুই লাখ টাকা অগ্রিম দিলাম। চাকরি না হলে টাকা ফেরত দিতে বাধ্য থাকবে। এমনকি সে বলল যে, এবার নাকি তারও একটা বড় কোনো চাকরি হবে! আমিও খুশিতে আত্মহারা। ভাবলাম, এবার চাকরি ঠেকায় কে? কখনও ভাবিনি যে, চাকরি অত সোজা নয়।

অন্য যে কেউ চাপাবাজ হলে দাঁতের ওপর দাঁত দিয়ে সহ্য করা যায়। আর যদি কাছের কোনো বন্ধু চাপাবাজ হয়, তা কখনও সহ্য করা যায় না। যাহোক, আবেদনের আড়াই বছর পরে চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার কার্ড ছাড়ল। দিনের পর দিন আমি আরও হতাশ হয়ে যাচ্ছি। কী ব্যাপার! সবাই কার্ড পেল, আমি কেন পেলাম না? বন্ধুকে জানিয়ে দিলাম। সে বলল, আজকের মধ্যেই অফিসে দেখা কর। একটা ফুঁয়ের কাজ। সারাদিন অফিসে ঘুরঘুর করলাম। তবু পরীক্ষার কার্ড এনে দিতে পারল না। কিছুক্ষণ পর সে আমাকে রেখে নিরুদ্দেশ হলো।

দেখতে দেখতে নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা হলো। আমার নিয়োগ তো দূরের কথা, সে পরীক্ষা দেয়ার কোনো ব্যবস্থাই করতে পারল না। দিনের পর দিন আমি পরিবারের ওপর ভারী বোঝা হয়ে দাঁড়ালাম। বাবা বারবার বললেন, জীবনে কেউ আমার একটা টাকাও নিতে পারেনি। অথচ আজ তোর বন্ধুর জন্য এতগুলো টাকা গচ্চা দিলাম। তাকে আপন ছেলের মতই বিশ্বাস করতাম। এ নিয়ে এখন আফসোস করেই বা কি লাভ? পাপের ধন প্রায়শ্চিত্তে যায়।

আমারও কপাল খারাপ। ঘরে মা অসুস্থ। টাকার অভাবে তার সুচিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছে না। টাকার জন্য বন্ধুকে প্রায়ই ফোন দেই। প্রতিবারই সে আশ্বাসের বাণী শুনিয়ে দেয়। আমার মন মানলেও বাবার মন তো মানে না। বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে তিন-চারবার বন্ধুর বাড়িতে গিয়েছি। আজ অবধি সে ঘুরিয়ে দিচ্ছে। টাকার টেনশনে আমিও হতবাক হয়ে গেছি। মা-বাবা আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে যাচ্ছেন। বাবা বললেন, টাকার টেনশন আমি ছেড়েই দিয়েছি। তুমি সুস্থ থাক, ভালো থাক। রীতিমতো পড়াশোনা চালিয়ে যাও। একদিন তোমার চাকরি হবেই ইনশাআলস্নাহ। আমি যেন পৃথিবীতে তোমার সুখ দেখে যেতে পারি।

কনইল, নওগাঁ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<45488 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1