শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিয়ে নিবন্ধিত না হলে প্রমাণের উপায়

আদৌ বিয়ে হয়নি অথচ বিয়ে হয়েছে, এরকম মিথ্যা প্রমাণ দেখিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মতো সংসার করতে থাকে অনেকেই। পরে মেয়েটিকে আর ভালো না লাগলে কিংবা মেয়েটি গভর্বতী হয়ে পড়লে ছেলেটি বিয়ে অস্বীকার করে থাকে। এ ধরনের ঘটনায় বিয়ের নিবন্ধন বা কাবিননামা না থাকলে বিয়ে প্রমাণ কঠিন হয় বলে মেয়েটি নানা ধরনের প্রতিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে লিখেছেন আবরার মাসুদ
নতুনধারা
  ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

দৃশ্যপট-১

রাসেল ও শায়লা মুসলিম ধমর্মতে বিয়ে করেন। তাদের পঁাচ বছরের একটি মেয়ে আছে। বিয়ের চার বছর পর শায়লার সম্মতি না নিয়েই রাসেল আরেকটি বিয়ে করেন। শায়লাকে দেনমোহর, ভরণপোষণ কিছুই দেন না রাসেল। এখন হঠাৎ করেই রাসেল বিয়েটা অস্বীকার করছেন, কারণ তাদের বিয়েটা রেজিস্ট্রি করা হয়নি। তাই শায়লা মামলা করার কথা বললে রাসেল বিয়েটা সম্পূণর্ অস্বীকার করেন এবং তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। শায়লা খুব অসহায় হয়ে পড়েন।

দৃশ্যপট-২

প্রথম দিকে শাহানা তার স্বামীর প্রেমের প্রস্তাবে রাজি ছিলেন না। তাকে প্রথমে এড়ানোর চেষ্টা করলেও শেষের দিকে শাহানা দুবর্ল হয়ে পড়েন। বিয়েতেও রাজি হয়ে যান। তার স্বামীর এক বন্ধুর বাসায় এক মৌলভি ডেকে তাদের বিয়ে হয়। তখন একটি কাগজে শাহানাকে সই দিতে বলা হয়। কোনো কিছু যাচাই না করে সই করে দেন তিনি। বিয়ের বিষয় স্বামীর কথামতো গোপন রাখেন শাহানা। বিয়ের পর যে যার বাসায় থাকছিলেন তারা। তার স্বামী বলেছিল পড়াশোনা শেষ করেই তিনি শাহানাকে নিয়ে নতুন বাসায় উঠবেন। প্রায় কয়েক মাস পড়াশোনা শেষ করার পর থেকে তাকে নতুন বাসা ঠিক করে শাহানা নিজেকে তুলে নিতে বলেন। কিন্তু ততদিনে তার স্বামী বদলে গেছেন। ফোন দিলে ধরেন না। দেখা করেন না, কথাও বলেন না। লোকজনকে বলে বেড়ান, শাহানার সঙ্গে নাকি তার বিয়েই হয়নি। এখন স্বামী স্বীকৃতি না দিলে শাহানা কীভাবে আইনের আশ্রয় নিতে পারে?

এ ধরনের সমস্যায় বিয়ে প্রমাণ করার জন্য প্রথমেই যেটি দরকার, সেটি হচ্ছে বিয়ের নিবন্ধন বা কাবিননামা। কোনো কারণে যদি কাবিননামা না থাকে বা কোন কাজী অফিসে বিয়ে হলো, এটা জানা না থাকে, তাহলে বিয়ে প্রমাণ করাটা একটু কষ্টসাধ্য হয়ে দঁাড়ায়।

বিয়ের রেজিস্ট্রেশন কী?

রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে তালিকাভুক্তি। আইনের দ্বারা নিধাির্রত তথ্যাবলি দিয়ে নিদির্ষ্ট ফরম পূরণ করে সরকারিভাবে বিয়ে তালিকাভুক্তি করাই হচ্ছে বিয়ে রেজিস্ট্রেশন। ১৯৭৪ সালের মুসলিম বিয়ে ও তালাক (নিবন্ধন) আইন অনুযায়ী, প্রতিটি বিয়ে সরকার নিধাির্রত কাজী দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা আবশ্যক। বিয়ে রেজিস্ট্রেশন না করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ১৮৭২ সালের খ্রিস্টান ম্যারেজ অ্যাক্ট অনুযায়ী, খ্রিস্টানদের বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক। খ্রিস্টান বিয়েতে রেজিস্ট্রেশন বিয়ের একটি অংশ হওয়ায় প্রায় সব বিয়েরই রেজিস্ট্রেশন হয়ে থাকে।

মুসলিম আইনে বিয়ে রেজিস্ট্রেশন

মুসলিম পারিবারিক আইনে বিয়ের রেজিস্ট্রেশন একটি প্রামাণ্য দলিল হিসেবে কাজ করে। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া বিয়ে প্রমাণ করা কঠিন। রেজিস্ট্রেশন করা না থাকলে মেয়েরা প্রতারিত হতে পারে। সব বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা আবশ্যক। দেনমোহর, ভরণপোষণ, উত্তরাধিকার নিণর্য়, সন্তানের পিতৃত্ব ইত্যাদি ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রিকৃত কাবিননামা একটি আইনগত দলিল। বিয়ে রেজিস্ট্রেশন না করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কেউ যদি বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের বিধান লঙ্ঘন করেন, তাহলে তার দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদÐ বা তিন হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দÐ হতে পারে। তবে রেজিস্ট্রেশন না হলে বিয়ে বাতিল হবে না। বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে উভয়ের ওপর কিছু দায়-দায়িত্ব বতার্য়।

ছবি দিয়ে বিয়ে প্রমাণ

ছবি দিয়ে বিয়ে প্রমাণ করা সম্ভব। কিন্তু বিয়ে নিবন্ধন করা সবচেয়ে ভালো প্রমাণ। তাহলে এত সমস্যা পোহাতে হয় না। কাবিননামা বা নিবন্ধন না থাকলে তখন বিয়ের সময় কারা উপস্থিত ছিল, তাদের বক্তব্য কিংবা বিয়ের কোনো ছবি বা অন্য কোনো দলিল থাকলে তা প্রমাণ হিসেবে আদালতে দঁাড় করানো যায়। আদালত তখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখে যে বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার জন্য যাবতীয় উপাদান সঠিকভাবে পালন হয়েছে কিনা।

কাবিন বা নিবন্ধন না থাকলেও ছবি কিংবা অন্য সাক্ষীদের সহায়তায় বিয়ে প্রমাণ করা যায় এবং পারিবারিক আদালতে সংক্ষুব্ধ নারী তার ও তার সন্তানদের ভরণপোষণের জন্য মামলা করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আদালতে শাহানাকে তাদের বিয়ের ছবি দেখাতে হবে। আদালতে মামলা দায়েরের পর শাহানার স্বামীর কাছে আদালত থেকে সমন পাঠানো হবে। তখন মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত শাহানার অনুক‚লে রায় দেবে বলে আশা করা যায়।

যা করণীয়

বিয়ে পারিবারিকভাবে কিংবা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ীই হোক না কেন, প্রত্যেকেরই নিজের কাছে কাবিননামা সংগ্রহে রাখা উচিত। আর নিজেদের উদ্যোগেই বিয়েটি কোন কাজীর মাধ্যমে হলো, কোন কাজী অফিসে হলো, তা জেনে নেয়া উচিত। পরে কাবিননামা উঠিয়ে রাখা উচিত। কাবিননামার ওপর কাজীর সিল-স্বাক্ষর আছে কিনা, যাচাই করে নিতে হবে। স্বাক্ষর দেয়ার সময় একটু সতকর্ হয়ে দেখা উচিত এটার ওপরে ‘নিকাহনামা’ লেখা আছে কিনা। মুসলিম বিয়ে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। এটা স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই মনে রাখতে হবে। বতর্মানে হিন্দু বিয়ের নিবন্ধনও ঐচ্ছিক করা হয়েছে। অনেকে বিয়ের হলফনামাও সম্পন্ন করে থাকেন। নোটারি পাবলিক কিংবা প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে এই হলফনামা দেয়া যায়। এটিও ভবিষ্যতে বিয়ে প্রমাণ করার একটি দলিল হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

বিয়ে অস্বীকার করলে ফৌজদারি মামলা

বিয়ে নিয়ে প্রতারণার ঘটনা প্রায়ই ঘটতে দেখা যায়। অনেক সময় দুজন ছেলেমেয়ে নিজেদের ইচ্ছায় বিয়ে করেন। বিয়ের কথা পরিবারের কাউকে জানান না। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই ছেলে বা মেয়ে বিয়ের কথা গোপন রেখে অন্য কোথাও পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী বিয়ে করে ফেলেন। আবার দেখা যায় দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পকর্ কোনো কারণে ভেঙে গেলে কোনো পক্ষ ভুয়া কাবিননামা তৈরি করে স্বামী বা স্ত্রী হিসেবে দাবি করতে থাকে। আবার এমনও দেখা যায় আদৌ বিয়ে হয়নি অথচ বিয়ে হয়েছে, এ বলে মিথ্যা প্রমাণ দেখিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মতো সংসার করতে থাকেন। মেয়েটিকে আর ভালো না লাগলে কিংবা মেয়েটি গভর্বতী হয়ে পড়লে ছেলেটি বিয়ে অস্বীকার করতে থাকে। এ ধরনের ঘটনাগুলোই বিয়ে-সংক্রান্ত অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।

কাবিননামা সম্পন্ন না করে বিয়ে করে পরে তা অস্বীকার করলে সংক্ষুব্ধ পক্ষ দÐবিধির অধীনে ফৌজদারি আদালতেরও আশ্রয় নিতে পারে। দÐবিধির ৪৯৩ ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি কোনো নারীকে প্রতারণামূলকভাবে আইনসম্মত বিবাহিত বলে বিশ্বাস করান, কিন্তু আদৌ ওই বিয়ে আইনসম্মতভাবে না হয় এবং ওই নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পকর্ করেন, তবে অপরাধী ১০ বছর পযর্ন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদÐ এবং অথর্দÐে দÐিত হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<14043 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1