বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দেওয়ানি মোকদ্দমার আগাগোড়া

দেওয়ানি মামলা বিচারে কয়েকটি ধাপ আছে এবং প্রতিটি ধাপের জন্য আইনের কিছু নিদির্ষ্ট বিধান রয়েছে। একজন সচেতন নাগরিকের এসব পযার্য় সম্পকের্ প্রাথমিক ধারণা থাকা দরকার। বিষয়টি নিয়ে লিখেছেন আবরার মাসুদ
নতুনধারা
  ১৩ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

মামলা দায়ের ও আরজি গঠন : দেওয়ানি মামলা শুরু হয় আরজি গ্রহণের মাধ্যমে। দেওয়ানি মামলার পূবর্ শতর্ আরজি গঠন। বাদির নালিশের লিখিত বিবরণকে আরজি বলা হয়। আরজিতে থাকে : আদালতের নামÑ যেখানে মামলা করা হচ্ছে; বাদি ও বিবাদির নাম, পরিচিতি এবং বাসস্থান; বাদি কিংবা বিবাদি নাবালক/ মানসিক বিকারগ্রস্ত হলে সেই বিষয়ে বিবৃতি; মোকদ্দমার কারণ; আদালতের এখতিয়ার রয়েছে এ মমের্ প্রতীয়মান তথ্য; বাদির দাবিকৃত প্রতিকার; যে ক্ষেত্রে বাদি পারস্পরিক দায়শোধ অনুমোদন করে অথবা দাবির কোনো অংশ পরিত্যাগ করে, তখন যে অংশ অনুমোদন কিংবা পরিত্যাগ করা হয়েছে; মামলার বিষয়বস্তুর মূল্য সম্পকের্ বিবৃতি- যাতে আদালতের অধিক্ষেত্র ও কোটর্ ফি নিরূপণ করা যায়; অথের্র মোকদ্দমায় দাবিকৃত অথের্র যথাযথ পরিমাণ; মামলার বিষয়বস্তু স্থাবর সম্পত্তি হলে সম্পত্তির সীমানা ও নম্বরসহ বিস্তারিত বণর্না ইত্যাদি।

আরজি ফেরত বা প্রত্যাখ্যান : আরজি ফেরত বা প্রত্যাখ্যান হওয়া উচিত মনে করলে সেরেস্তাদার তা বিচারকের কাছে উল্লেখ করবেন। সাধারণত যেসব কারণে আরজি প্রত্যাখ্যান হতে পারে সেগুলো হলো : আরজিতে মোকদ্দমার কারণ উল্লেখ না থাকলে দাবিকৃত প্রতিকার কম মূল্যায়িত হলে এবং আদালত কতৃর্ক নিধাির্রত সময়ের মধ্যে বাদি তা শুদ্ধ করতে ব্যথর্ হলে; আরজি প্রয়োজনের চেয়ে কম মূল্যের স্ট্যাম্পযুক্ত কাগজে লেখা হলে এবং মোকদ্দমাটি কোনো আইন দ্বারা বারিত হলে।

এসব ক্ষেত্রে বিচারক আইন অনুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন (সিআরও, ভলিউম-১, বিধি-৫৫)। কোনো কারণে আরজি সঠিকভাবে মূল্যায়িত না হলে তা সংশোধনের জন্য পক্ষকে নিদের্শ দেয়া হয় যার সময়সীমা ২১ দিন।

সমন জারি : একটি মামলা দায়েরের পরের ধাপ সমন জারি। সমন দুভাবে জারি করা হয়। আদালতের জারিকারকের (পদাতিকের) মাধ্যমে এবং আদালতের সেরেস্তা কতৃর্ক ডাকযোগে।

জবাব দাখিল : বিবাদি মামলার প্রথম শুনানির তারিখ বা এর আগে বা আদালতের অনুমোদিত সময় দুই মাসের মধ্যে লিখিত জবাব দাখিল করবেন (দেওয়ানি কাযির্বধি, আদেশ-৮, বিধি-১)। তা না হলে মামলাটি একতরফা শুনানির জন্য নিধাির্রত হবে। তবে দেওয়ানি কাযির্বধির ৮০ ধারার নোটিশ জারি না হলে সরকার জবাব দাখিলের জন্য ৩ মাস সময় পাবে। বিবাদি যদি তার দাবির সমথের্ন কোনো দলিলাদির ওপর নিভর্র করে, তবে তা ফিরিস্তিসহকারে ওই দলিলাদি দাখিল করবেন।

জবাবে থাকে : গুরুত্বপূণর্ ঘটনাবলি সম্পকের্ বিবৃতিÑ যার ওপর বিবাদি তার আত্মপক্ষ সমথের্নর ভিত্তি রচনা করেন; সব গুরুত্বপূণর্ ঘটনাবলি পযার্য়ক্রমে উল্লেখ করতে হবে; বিবাদি তার জবাবে আরজিতে উল্লিখিত সব অভিযোগের জবাব দেবেন এবং আইন ও ঘটনা উল্লেখ করে দেখাবেন যে আনীত মোকদ্দমাটি অচল; বিবাদি অবশ্যই তথ্য সম্পকির্ত প্রতিটি অভিযোগের বিষয়ে সুনিদির্ষ্টভাবে জবাব দেবে যে অভিযোগগুলোর সত্যতা সে স্বীকার করে না, তবে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি ছাড়া; বিবাদি আরজির তথ্য সম্পকির্ত কোনো অভিযোগ অস্বীকার করতে চাইলে সুনিদির্ষ্টভাবে করতে হবে। যে অভিযোগ সুনিদির্ষ্টভাবে অস্বীকার করা হয়নি, বিবাদি তা স্বীকার করে নিয়েছে মমের্ ধরে নেয়া হবে।

বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি : মামলার জবাব দাখিলের পর প্রতিদ্ব›িদ্বতাকারী পক্ষগণ যে কোনো সময় আপস নিষ্পত্তির জন্য আদালতের মধ্যস্ততায় বা আদালতের বাইরে আইনজীবীর মাধ্যমে বা লিগ্যাল এইড অফিসারের মাধ্যমে বসতে পারেন। দেওয়ানি কাযির্বধির ৮৯ক ধারা অনুযায়ী আপস-নিষ্পত্তির কথা বলা হয়েছে, যা এডিআর বা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি নামে পরিচিত।

প্রতিদ্ব›িদ্বতা বহিভর্‚ত শুনানি : বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যথর্ হলে শুনানি শুরু হবে। এ ক্ষেত্রে প্রথম শুনানির তারিখে যদি দেখা যায় যে, মামলার পক্ষদের মধ্যে কোনো বিরোধীয় বিষয় নেই তবে তা অবিলম্বে নিষ্পত্তি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মামলা মূলতবি করার কোনো সুযোগ নেই।

ইস্যু গঠন : মামলার প্রথম শুনানির তারিখ বা জবাব দাখিলের মধ্যে যেটি পড়ে, তা হতে ১৫ দিনের মধ্যে ইস্যু গঠন করতে হবে (দেওয়ানি কাযির্বধি আদেশ-১৪, বিধি-১)। যে সব বিরোধীয় বিষয়ের ওপর মামলা নিষ্পত্তি হবে সে সব বিষয়বস্তু নিয়ে ইস্যু গঠন করা হবে।

উদঘাটন ও পরিদশর্ন

ইস্যু গঠনের ১০ দিনের মধ্যে বাদি বা বিবাদি আদালতের অনুমতি নিয়ে অন্যপক্ষকে প্রশ্ন দাখিল করতে পারবেন। তবে একটি পক্ষকে একবারই লিখিত প্রশ্ন দাখিল করতে পারবেন (দেওয়ানি কাযির্বধি আদেশ-১১, বিধি-৮)।

৩০ ধারার তদবির : ইস্যু গঠনের পর উভয়পক্ষের কোনো তদবির আছে কিনা তার জন্য এই পযার্য়টি রাখা হয়। একপক্ষ অন্যপক্ষের তথ্য উদঘাটনের জন্য এ পযাের্য় পারস্পরিক তদবির চালিয়ে থাকে।

চ‚ড়ান্ত শুনানির তারিখ নিধার্রণ (এসডি) : ইস্যু গঠনের ১২০ দিনের মধ্যে মামলার চ‚ড়ান্ত শুনানির দিন ধাযর্ করতে হয় (দেওয়ানি কাযির্বধি- আদেশ-১৪, বিধি-৮)।

চ‚ড়ান্ত শুনানি : চ‚ড়ান্ত শুনানির (পিএইচ) তারিখ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে মামলার শুনানি শেষ করতে হয় (দেওয়ানি কাযির্বধি আদেশ-১৮, বিধি-১৯)। চ‚ড়ান্ত শুনানি (পিএইচ) ও পরবতীর্ চ‚ড়ান্ত শুনানি (এফপিএইচ) পযাের্য় বিচারক জবানবন্দি, জেরা, দলিলাদি গ্রহণ এবং যুক্তিতকর্ শুনবেন।

রায় ঘোষণা : মামলার শুনানি সমাপ্ত হওয়ার পরে অনধিক ৭ দিনের মধ্যে আদালত রায় ঘোষণা করবেন (দেওয়ানি কাযির্বধি আদেশ-২০, বিধি-১১)।

ডিক্রি প্রদান : রায় ঘোষণার তারিখ থেকে ৭ দিনের মধ্যে ডিক্রি প্রদান করতে হবে (দেওয়ানি কাযির্বধি আদেশ-২০, বিধি -৫)। তা ছাড়া মামলার যে কোনো পযাের্য় পক্ষগণ আরজি-জবাব সংশোধন, অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা, স্থানীয় পরিদশর্ন এবং স্থানীয় তদন্তের জন্য আদালতের দরখাস্ত প্রদান করতে পারবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<22190 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1