মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন আইনজীবী

ভবিষ্যতের আইনচচার্ কেমন হবে?

তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের ডানায় ভর করে দুনিয়া যেভাবে আগাচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কম্পিউটার প্রোগ্রাম আর রোবট আমাদের অনেক পেশাকেই স্থান করে দেবে ইতিহাসের পাতায়। আইনজীবীরাও কি তাহলে এই রোবট আর কম্পিউটার দিয়ে প্রতিস্থাপিত হবে? কেমন হবে আগামীর আইনচচার্? লিখেছেন আব্দুল্লাহ আল-আরীফ
নতুনধারা
  ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কথা শুনলেই অনেকে আমরা অঁাতকে উঠি, মন ভরে ওঠে শঙ্কায়। হলিউডের কল্যাণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কথা উঠলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে টারমিনেটরের স্কাইনেট, ম্যাট্রিক্স আর মাভেের্লর আল্ট্রনের ছবি! কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হলো এক ধরনের কম্পিউটার প্রোগ্রাম যা মানুষের সাহায্য ছাড়াই তথ্য পযাের্লাচনা করে নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারে আর নিজের ভুল থেকে শিখে ভবিষ্যতে আরও নিখুঁতভাবে যে কোনো কাজ সম্পন্ন করতে পারে।

আইনজীবীর পরামশর্ পাওয়ায় সবচেয়ে বড় বাধা আইনজীবীর ফিস। আইন গবেষণা আইনচচার্র সবচেয়ে ব্যয়বহুল আর সময়বহুল অংশ। একজন আইনজীবী ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় আর অথর্ ব্যয় করেন আইন গবেষণার জন্য, তাই পারিশ্রমিক কম নেয়াও তার পক্ষে সম্ভব না। তাই আইনজীবীর ফিসের সঙ্গে আইন সেবার মান ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

কানাডিয়ান আইনজীবী এন্ড্রু আরুডা ও তার বন্ধুরা মিলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করে আইন গবেষণার খরচ কমিয়ে আইনজীবীর সাহায্যকে সবার নাগালের মধ্যে নিয়ে আসতে প্রতিষ্ঠা করেছেন তাদের কোম্পানি রশ ইন্টেলিজেন্স। তাদের একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন প্রোগ্রামের নাম ‘ইভা’। একজন আইনজীবী তার মামলার আরজি বা জবাব ইভার সাভাের্র লোড করলে মামলাসংক্রান্ত ঘটনা পযাের্লাচনা করে ইভা মিনিটের মধ্যেই ঘটনার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক সব মামলার নাম হাজির করে দিতে পারবে।

কিন্তু রশ ইন্টেলিজেন্সের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব পৃথিবীর প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন আইনজীবী ‘রশ’ সৃষ্টি করা। একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর মতোই রশ যে কোনো আইনবিষয়ক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। সেকেন্ডে দশ লাখ পৃষ্ঠা আইন পযাের্লাচনা করে মিনিটের মধ্যেই প্রাসঙ্গিক আইনের অনুচ্ছেদ হাইলাইট করে হাজির করতে পারে রশ। শুধু তাই না, একজন আইনজীবী তার যে কোনো আরজি, জবাব বা দরখাস্ত রসের কাছে জমা দিলে সে মিনিটের মধ্যে পযাের্লাচনা করে জানাতে পারবে আইনজীবীর ব্যবহার করা কেস রেফারেন্সগুলোর মধ্যে কোনগুলো বেশি গ্রহণযোগ্য হবে আদালতের কাছে।

রশ আর ইভার অন্যতম নিমার্তা এন্ড্রু আরুডা মনে করেন তাদের এই প্রযুক্তি আইন গবেষণাকে সব আইনজীবীর জন্য সহজ আর সাশ্রয়ী করে দিয়ে আইনচচাের্ক আরও গণতান্ত্রিক করে তুলবে। এতে বিচার প্রাথীর্রা সবচেয়ে উপকৃত হবেন।

সাধারণ মানুষের কাছে আইনসেবাকে আরও সহজ ও সুলভ করার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে কাজ করছেন ২১ বছর বয়সী ইংরেজ ছাত্র জশুয়া ব্রাউডার। তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘ডু নট পে’ নামক সেবার, যার মাধ্যমে যে কেউ বিনা খরচে আইনি ড্রাফটিং সেবা পেতে পারেন। ‘বট প্রযুক্তি’ ব্যবহার করে যে কেউ সাধারণ আইনি আবেদন যেমন ট্রাফিক আদালতে মামলা দায়েরের দরখাস্ত, তালাকের আবেদন, বাড়ি ভাড়ার চুক্তি তৈরি করিয়ে নিতে পারেন মিনিটেই। শুধু পক্ষদের নাম, ঠিকানা, প্রাসঙ্গিক তারিখ, স্থান ও অথের্র পরিমাণসহ কিছু তথ্য জমা দিলেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বট প্রযুক্তি তৈরি করে দেবে কাক্সিক্ষত আইনি দরখাস্ত।

ইতোমধ্যেই এই সেবা ব্যবহার করেছেন মাকির্ন যুক্তরাষ্ট্র আর যুক্তরাজ্যের প্রায় ১৭৫,০০০ মানুষ আর প্রায় ৫০ লাখ মাকির্ন ডলার পরিমাণের জরিমানা গোনা থেকে বেঁচে গেছেন তারা। জশুয়া ব্রাউডার এখন কাজ করছেন তার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রোগ্রামকে আরও জটিল ড্রাফটিং করা শিখাতে। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো আইনজীবীদের সব ড্রাফটিং এই বট প্রযুক্তির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কম্পিউটার করে দেবে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন আরেক প্রোগ্রামের নাম ‘কিরা’। ‘কিরা’ যে কোনো চুক্তি পড়ে পযাের্লাচনা করে মিনিটের মধ্যেই প্রতিবেদন তৈরি করে দিতে পারে। চুক্তির কোন কোন শতের্ দুবর্লতা রয়ে গেছে, কোন শতির্ট ভবিষ্যতে মক্কেলের জন্য অসুবিধার কারণ হয়ে দঁাড়াতে পারে, কোন কোন শতর্ প্রতিষ্ঠিত আইনি ভিত্তি অনুযায়ী ড্রাফট করা হয়েছে আর কোন শতর্গুলো পরীক্ষামূলক বা নতুন তা সহজেই জানা যাবে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে। কিরার প্রতিবেদন থেকে আগেই জানা যাবে একটি চুক্তি আইনগতভাবে কতটুকু দৃঢ় আর আদালতে কি ধরনের ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে।

অদূর ভবিষ্যতে এমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন আরও অনেক প্রযুক্তি চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে গতানুগতিক আইনজীবীদের আইনচচাের্ক। এসব প্রযুক্তি একদিকে যেমন আইন সেবার খরচ কমাবে তেমনি বাড়াবে আইনজীবীর সক্ষমতা। সাধারণ মানুষের বিচারিক অভিগম্যতা বাড়াবে এসব প্রযুক্তি। ফোবর্স ম্যাগাজিনের মতে ২০৩৬ সালের মধ্যে ১ লাখ আইনজীবীর জায়গা দখল করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি।

আইন পেশা আর আইনজীবীরা সব সময়ই নতুন প্রযুক্তির প্রতি সন্দীহান আর উদাসীন ছিলেন। ফলে অন্যান্য ক্ষেত্রে যেভাবে প্রযুক্তির কল্যাণে আধুনিক থেকে উত্তরাধুনিক হয়েছে, সেখানে আইনচচার্ আর আইন পেশা আটকে রয়ে গেছে অতীতের মাঝে। ২০২০ সালের মধ্যেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি উন্নয়নের এমনপযাের্য় চলে যাবে যে আইনজীবীরা এই প্রযুক্তির ব্যবহার শেখা ছাড়া ভবিষ্যতে আইনচচার্য় ভালো করতে পারবেন না।

এখানেই শেষ না, অক্সফোডর্ বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষক এবং ‘ভবিষ্যতের আইনজীবী’ বইয়ের গ্রন্থকার রিচাডর্ সাসকিন্ড মনে করেন, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বড় দাবাড়– যেমন দাবার সফটওয়্যারের কাছে পরাজিত হয়েছেন, তেমনি আইনজীবীরাও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির আইন খেঁাজা ও আইন পযাের্লাচনার অসীম ক্ষমতার কাছে পরাজিত হবেন যদি তারা এই প্রযুক্তি ব্যবহার শিখে নিজেরা আইনচচার্য় বৈপ্লবিক পরিবতর্ন না আনেন।

লেখক : শিক্ষানবিশ আইনজীবী

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<25320 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1