বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জামিন মঞ্জুরের পরও মুক্তি পেতে কেটে যায় অনেক সময়

জামিন পাওয়া অভিযুক্ত ব্যক্তির আইনি অধিকার। পৃথিবীজুড়ে সব দেশের বিচারব্যবস্থায় এ অধিকার স্বীকৃত এবং প্রতিষ্ঠিত। গ্রেপ্তার হওয়ার পর অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি এ অধিকার ভোগ করতে পারেন সুনিদির্ষ্ট আইনি কাঠামোর মাধ্যমেই। বিচারিক সবকিছু বিবেচনা করেই আদালত জামিন মঞ্জুর করেন। আর জামিন পাওয়ার পরও অভিযুক্তকে মেনে চলতে হয় নানা আইনি শতর্। বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় আদালত জামিন মঞ্জুর করলেই মুক্তি পান না অভিযুক্ত ব্যক্তি। এখানে জামিন মঞ্জুরের পর ছাড়া পেতে শুরু হয় নতুন গল্প। আইনজীবী হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা থেকে আইন ও বিচারের পাঠকদের জন্য লিখেছেন ফয়জুল্লাহ ফয়েজ
নতুনধারা
  ০১ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

জামিন পাওয়া অভিযুক্ত ব্যক্তির আইনি অধিকার। সারা পৃথিবীজুড়ে সব দেশের বিচারব্যবস্থায় এ অধিকার স্বীকৃত এবং প্রতিষ্ঠিত। গ্রেপ্তার হওয়ার পর অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি এ অধিকার ভোগ করতে পারেন সুনিদির্ষ্ট আইনি কাঠামোর মাধ্যমেই। বিচারিক সবকিছু বিবেচনা করেই আদালত জামিন মঞ্জুর করেন। আর জামিন পাওয়ার পরও অভিযুক্তকে মেনে চলতে হয় নানা আইনি শতর্। বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় আদালত জামিন মঞ্জুর করলেই মুক্তি পান না অভিযুক্ত ব্যক্তি। এখানে জামিন মঞ্জুরের পর ছাড়া পেতে শুরু হয় নতুন গল্প।

আদালত জামিন মঞ্জুর করার পর কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়াÑ এর মাঝখানে বেশকিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। বেইল বন্ড বা জামিননামা দাখিল করতে হয়। বিচারকের স্বাক্ষরযুক্ত জামিননামা কারাগারে পেঁৗছানোর আগে অভিযুক্ত ব্যক্তি মুক্ত হতে পারেন না।

দৃশ্যপট- এক : মিলন মিয়া (ছদ্মনাম) গ্রেপ্তার হওয়ার দেড় মাস পর ঢাকা মহানগর আদালতে এক অভিযুক্তের জামিন আবেদন করা হয়। অবকাশকালীন আদালত ছিল। শুনানি শেষ হয় বেলা ১১টায়। আদালত পরবতীের্ত সিদ্ধান্ত দেবেন বলে নথি রেখে দেন এবং বেলা ২টায় জামিন মঞ্জুর করেন। কিন্তু অভিযুক্তের আইনজীবী সন্ধ্যা পযর্ন্ত অপেক্ষা করেও আদালতের সিদ্ধান্ত জানতে পারছিলেন না। সন্ধ্যার পর তিনি জানালেন জামিন আবেদন মঞ্জুর হয়েছে। যেহেতু অবকাশকালীন আদালত, তাই পরের দিন হয়তো একই বিচারক থাকবেন না। আর বিচারকের স্বাক্ষর ছাড়া জামিননামা কোনো কাজে আসবে না।

জামিন আদেশ পরের দিনে কারাগারে পেঁৗছাতে হলে রাত ৮টার মধ্যে জামিননামা দাখিল করতেই হবে। এখানেই শুরু হয় নতুন গল্পের। গুনতে হয় টাকা। অনেক সময় দাখিলের পরও সময়মতো জামিন আদেশ পাঠানো হয় না কারাগারে। গুনতে হয় টাকা নতুবা লেগে যায় লম্বা সময়।

দৃশ্যপট- দুই : মানিক (ছদ্মনাম) একটি প্রতারণা মামলার আসামি। নিম্নআদালতে জামিন না পাওয়ায় দ্বারস্থ হন উচ্চ আদালতেরÑ জামিনের আবেদন করেন হাইকোটর্ বিভাগে। আদালত সন্তুষ্ট হয়ে জামিন মঞ্জুর করেন। ততদিনে কারাগারে কেটে গেছে চার মাস।

সমস্যা তৈরি হলো অন্য জায়গায়। আদালতের রায়ের যে অনুলিপি আইনজীবীরা পেয়েছেন তাতে মামলার থানার নামে ভুল রয়েছে। নিছক ছাপার ভুল। এক থানার নামের জায়গায় অন্য থানার নাম।

এর পরের গল্প আরও জটিল। ইতোমধ্যে হাইকোটর্ বিভাগের জামিন মঞ্জুর করা সেই বেঞ্চ ভেঙে গেছে। এরপরের প্রক্রিয়া হলোÑ প্রধান বিচারপতি বরাবর পিটিশন দাখিল করতে হবে তিনি যেন শুধু সেই মামলাটির জন্য বেঞ্চ পুনগর্ঠন করেন। প্রধান বিচারপতি শুধু এই মামলাটির জন্য বেঞ্চ পুনগর্ঠন করবেন, পরে মামলাটি শুনানির জন্য কাযর্তালিকায় আসবে, শুনানি হবে এবং ভুল সংশোধনের জন্য আদেশ দেবেন। স্পষ্টত বোঝা যাচ্ছে ব্যাপারটি অনেক সময়সাধ্য।

আদালতের নানা জায়গায় অনেক টাকার লেনদেনÑ বিষয়টি কারও অজানা নয়। তবু বিষয়গুলো নিয়ে লেখা যায় না। বিষয়টি সব সময় স্পশর্কাতর। আছে আদালত অবমাননার ভয়। আর অকাট্য প্রমাণ ছাড়া আদালত কারও বিচার করে না। আদালতের লম্বা বারান্দা, আইনের জটিল প্রক্রিয়া শেষ করে যদিও বা কারও জামিন মেলে; শুধু ‘কিছু’র অভাবে মুক্তি আর পাওয়া হয় না। আইনের খাতায় জামিন মিললেও বাস্তবে মেলে না মুক্তি।

আদালতের আদেশের অনুলিপিতে কোনো ভুল থাকলে (বেশির ভাগ সময়ই ছাপায় ভুল) সেটি সংশোধনের জন্য ক্ষমতা দেয়া যেতে পারে সমান এখতিয়ারের যে কোনো আদালতকেই। এতে কমবে দীঘর্সূত্রতা, ভোগান্তি। সমাধান আসতে পারে দ্বিতীয় দৃশ্যপটের মতো সমস্যাগুলোয়।

আর জামিন মঞ্জুর হওয়ার পর মুক্তি পেতে যে গল্প চলছে তা খুব সহজে সমাধানযোগ্য নয়।

ফয়জুল্লাহ ফয়েজ : আইনজীবী

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<29921 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1