বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শব্দ দূষণের আইনি প্রতিকার

সরকার মারুফ
  ০১ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

শব্দ দূষণ সমস্যা নগরীর জনজীবনের প্রতিদিনের সঙ্গী হয়ে দঁাড়িয়েছে। নগরীর রাস্তায় যানবাহনগুলোর হনর্ বাজানোর প্রতিযোগিতা চলে হরহামেশা। পথচারী আর যাত্রীরা এই নিষিদ্ধ প্রতিযোগিতার শিকার। রাস্তায় বেরুলেই যানবাহনের বিকট শব্দ শুনে সুস্থ মানুষও অসুস্থ ভঙ্গিতে শব্দ এড়াতে কানে চেপে ধরেন দু’হাত। অসহনীয় মাত্রার এই শব্দ দূষণে পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গে মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেনÑ শব্দ দূষণ কেবল পরিবেশকেই দূষিত করছে না; শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে নগরীর অধিবাসীদেরও। বাড়ছে নানা রোগ-বালাই। এ অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আগামী ৫-৭ বছর পর যেসব শিশু জন্মগ্রহণ করবে, তারা শ্রবণজনিত সমস্যা নিয়ে জন্মাবে বলে তাদের আশঙ্কা।

নগরীর শব্দ দূষণ সৃষ্টিকারী উপাদানগুলোর মধ্যে শীষের্ রয়েছে যানবাহনের হনর্। নগরীর টামির্নালগুলোতে এর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি হলেও ব্যস্ততম এলাকাগুলোতেও হনের্র অবিরাম শব্দ উল্লেখ করার মতো। এ ছাড়া মাইকিং, কলকারখানা ও জেনারেটরের শব্দেও অতিষ্ঠ করে তুলছে নগরবাসীর প্রাত্যহিক জীবনযাত্রা। চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুসারে, মানুষের শ্রবণের সহনীয় মাত্রা হচ্ছে ৪৫ ডেসিবল। কিন্তু পরিবেশবিদরা বলছেন, ১০০ ডেসিবল মাত্রারও বেশি বিকট শব্দ নগরবাসী প্রতিনিয়ত সহ্য করে যাচ্ছে। ফলে, নগরবাসীর মধ্যে শ্রবণসমস্যা, হৃদরোগ ও রক্তচাপসহ নানা রোগ-বালাই দেখা দিচ্ছে।

গাড়ির বিকট শব্দের শিকার প্রধানত ট্রাফিক পুলিশ, গাড়ির চালক, হেলপার এবং পথচারীরা। নগরীর কয়েকজন ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দিনভর রাস্তায় কতর্ব্য পালনের খাতিরে বাধ্য হয়েই বিকট শব্দ সহ্য করতে হয় তাদের। গাড়ির হেলপার ও ড্রাইভাররা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত শব্দ দূষণ ক্রমেই তাদের শ্রবণ শক্তিকে হ্রাস করে দিচ্ছে। এ ছাড়া সারাদিনের কোলাহলপূণর্ পরিবেশে থেকে মেজাজের ভারসাম্য ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে বলে এসব লোকের পারিবারিক সম্পকের্রও অবনতি হচ্ছে বলে তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। পথচারী ও যাত্রীরাও এ শব্দ দূষণের শিকার। প্রতিদিনের কাজে তাগিদে যাদের বেরুতে হয় তাদের অনেকেই জানিয়েছেন যে, যানবাহনের বিকট শব্দে তারা হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, মাথাধরাসহ নানা রোগে ভুগছেন। রাজধানীর রাস্তায় বের হওয়া অনেকের কাছেই তাই এখন এক চরম বিরক্তিকর বিষয়।

আবাসিক এলাকা, হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও শব্দ দূষণ থেকে রেহাই পাচ্ছে না। নগরবাসী বলছেন, কেবল রাস্তায় বেরুলেই নয়, বাসায় অবস্থানকালেও বিকট শব্দ তাদের কাজকমের্ বিঘœ ঘটাচ্ছে। শিক্ষাথীর্রা বলছেন, যানবাহনের বিকট শব্দ ক্লাসে তাদের মনোসংযোগ ব্যাহত করছে। দেখা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের আশপাশে রাস্তার ধারে ‘হনর্ বাজানো নিষেধ’ সংবলিত সাইনবোডর্ থাকলেও চালকরা তা মেনে চলছেন না।

শব্দ দূষণ রুখতে ২০০৪ সালে শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা প্রণয়নের কাজ হাতে নেয়া হয়। দীঘর্ যাচাই-বাছাইয়ের পর ২০০৬ সালে এ বিধিমালা চ‚ড়ান্ত করা হয়। কিন্তু বিধিমালা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারের কোনো কাযর্কর পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি এর পর। ওই বিধিমালা অনুযায়ী যানবাহনে ক্ষতিকারক হাইড্রোলিক হনর্ বাজানো পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কোনো যানবাহন এর লঙ্ঘন করলে তার লাইসেন্স বাতিল করার বিধানও রাখা হয়েছে এ বিধিমালায়। হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে হনর্ বাজানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু যানবাহনগুলো এ বিধি মানছে না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরেরও তেমন কোনো কাযর্কর পদক্ষেপ এ ব্যাপারে পরিলক্ষিত হচ্ছে না। শাহবাগ মোড় থেকে বিমানবন্দর পযর্ন্ত রাস্তা হনর্মুক্ত ঘোষণা করা হলেও হনর্ বাজছে হরদম।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<29923 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1