শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
জলবায়ু পরিবতর্ন চুক্তি

প্যারিস থেকে পোল্যান্ড

জলবায়ু পরিবতর্ন বা বৈশ্বিক উষ্ণয়ন, যে নামেই ডাকি না কেন, আজকের বিশ্বের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো পৃথিবীর ক্রমাগত তাপমাত্রা বৃদ্ধি। পরিবেশ দূষণ এবং অন্যান্য মানবসৃষ্ট কারণে বিশ্বের জলবায়ু পরিবতর্ন হচ্ছে অত্যন্ত দ্রæততার সঙ্গে, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হচ্ছে প্রচÐ হুমকির সম্মুখীন। প্রাকৃতিক দুযোর্গ হচ্ছে আরও ঘন ঘন, বাড়ছে বিধ্বংসী শক্তিতে। কিন্তু এই বিশাল দুযোের্গর কারণ যে মানবসৃষ্ট দূষণ ও পরিবেশ ধ্বংসলীলা, তা কিন্তু বিন্দুমাত্রও কমেনি, বরং বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। লিখেছেন আব্দুল্লাহ আল-আরীফ
নতুনধারা
  ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

জলবায়ু পরিবতের্নর প্রভাব শুধু তাপমাত্রা বৃদ্ধিতেই সীমাবদ্ধ না, জলবায়ু পরিবতের্নর ফলে দুই মেরুর বরফ গলে বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা, নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে কৃষি খাতে, উপক‚লীয় এলাকায় বাড়ছে লবণাক্ততা, নাব্য হারাচ্ছে নদ-নদী, জীববৈচিত্র্য পড়ছে হুমকির মুখে। কিন্তু জলবায়ু পরিবতের্ন মানবজীবনের ওপরে প্রভাব পড়বে সবচেয়ে বেশি। ক্রমাগত পরিবেশ বিপযের্য়র ফলে জীবিকা হারা এবং বাস্তুহারা হয়ে ২০৫০ সালে উদ্বাস্তু হতে পারে প্রায় ১০০ কোটি মানুষ।

বিজ্ঞানীরা সতকর্বাণী দিয়েছেন, আগামী এক দশকের মধ্যে যদি আমরা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের লাগাম টেনে ধরতে পারি তাহলে অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হবে বিশ্ব। কিন্তু জলবায়ু পরিবতের্নর মোকাবেলার প্রচেষ্টা কোনো একক দেশ বা জাতির পক্ষে সম্ভব নয়, প্রয়োজন সারা বিশ্বের সব জাতির সম্মিলিত ঐকান্তিক প্রচেষ্টার।

বিশ্বব্যাপী একক জলবায়ুনীতি এবং জলবায়ু চুক্তির এই প্রয়োজনীয়তা থেকেই ২০১৫ সালে প্যারিস অ্যাকডর্ স্বাক্ষরিত হয়, যার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবতর্ন কাযর্ক্রমকে একটি একক আইনি কাঠামোর মধ্যে আনা হয়। ১৯৬টি দেশের প্রতিনিধিরা স্বাক্ষর করে অঙ্গীকারাবদ্ধ হন বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিকে কমিয়ে একটি নিদির্ষ্ট সীমার মধ্যে রাখতে। আর এই প্যারিস অ্যাকডের্ক কাযর্কর করতে সুনিদির্ষ্ট স্ট্র্যাটেজি ও লক্ষ্যমাত্রা চ‚ড়ান্ত করতে সবের্শষ ২০১৮ সালের ১৫ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত হয় ঈঙচ ২৪ চুক্তি।

প্যারিস অ্যাকডের্র মাধ্যমে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার লক্ষ্যমাত্রা নিধার্রণ করা হয় গ্রিন হাউস গ্যাসের এবং কাবর্ন নিঃসরণ কমানোর মাধ্যমে। এই চুক্তির অধীনে প্রত্যেক দেশের ওপর জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা নিরূপণের দ্বায়িত্ব দেয়া হয় যার মাধ্যমে প্রত্যেক রাষ্ট্র তাদের নিঃসরণের মাত্রা একটি নিদির্ষ্ট সীমার মধ্যে নামিয়ে আনবে। এই অ্যাকডের্র অধীনে সদস্য উন্নত দেশেরা অঙ্গীকার করে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি অজের্ন উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা করতে। একই সঙ্গে অঙ্গীকার করে জীবাশ্ম জ্বালানি (খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা ইত্যাদি) থেকে সরে এসে নবায়নযোগ্য জ্বালানি (সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি ইত্যাদি) ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে কাবর্ন নিঃসরণ কমানোতে বৈশ্বিক সহায়তা বৃদ্ধি করতে। প্যারিস অ্যাকডের্র মাধ্যমে গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণবিষয়ক প্রকল্প এবং নীতি উন্নয়নে অথার্য়নে এবং কারিগরি সহায়তা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

কিন্তু প্যারিস অ্যাকডর্ স্বাক্ষরিত হওয়ার পরে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে দেখান যে জলবায়ু পরিবতের্নর হার এবং বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার আগের আশঙ্কার চেয়ে আরও ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছে গেছে এবং পরিবেশ বিপযর্য় ঠেকাতে আরও কঠোর লক্ষ্যমাত্রার প্রয়োজন। এ ছাড়া প্যারিস অ্যাকডর্ বাস্তবায়নের জন্য নীতিমালা তৈরি গুরুত্বপূণর্ হয়ে ওঠে।

প্রখ্যাত ব্রিটিশ পরিবেশবিদ স্যার ডেভিড এটেনবরো (প্ল্যানেট আথর্) তার বক্তৃতায় বলেন, ‘আজ যদি আমরা কোনো পদক্ষেপ নিতে ব্যথর্ হই, তাহলে সময়ের দিগন্তে অপেক্ষা করছে মানব সভ্যতার বিপযর্য় আর প্রাকৃতিক জগতের চ‚ড়ান্ত বিলুপ্তি।’ তাই ২০১৮ সালের ২ থেকে ১৫ ডিসেম্বর পযর্ন্ত পোল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ঈঙচ ২৪-এ একটি নতুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির অধীনে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির নতুন লক্ষ্যমাত্রা নিধার্রণ করা হয় ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার। এই চুক্তির মাধ্যমে আরও নিধার্রণ করা হয় প্যারিস অ্যাকডের্র এবং পোল্যান্ড চুক্তির নিঃসরণ লক্ষ্যমাত্রা কীভাবে নিরূপণ করা হবে।

প্যারিস এবং পোলান্ডের এই চুক্তির পরেও অনেক পরিবেশবিদ হতাশা প্রকাশ করেন জলবায়ু বিপযর্য় রোধের ভবিষ্যৎ সম্পকের্। তাদের ভয় এই চুক্তি যথাসময়ে কাযর্কর ভ‚মিকা রাখতে ব্যথর্ হবে। মাকির্ন যুক্তরাষ্ট্র, পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণকারী দেশ, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে প্যারিস অ্যাকডর্ থেকে বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন ২০১৭ সালে। অন্যান্য অন্যতম দূষণকারী দেশ চীন এবং ভারতও তাদের প্রতিশ্রæতিমতো নিঃসরণ কমাতে পারবে কিনা তা নিয়েও অনেক বিশেষজ্ঞ সংশয় প্রকাশ করেন। জলবায়ু পরিবতের্ন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশের মতো দরিদ্র, নিচু, ছোট, সমুদ্রের ক‚লঘেঁষা দেশগুলো। ইতোমধ্যে জলবায়ু পরিবতের্নর বিরূপ প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রকাশ্য হয়ে উঠছে। এই ক্রমধারা যদি চলতে থাকে, তাহলে বাংলাদেশের জনগণের একটি বিশাল অংশ হারাবে তাদের জীবিকা আর বসবাসের জমি। বাংলাদেশ উন্নয়নের বতর্মান ধারা যদি অক্ষুণœ রাখতে চায় তাহলে পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য দেশব্যাপী সবুজ বিপ্লব সাধন করতে হবে। শুধু আমাদের বতর্মান জীবন-জীবিকাই নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অস্তিত্বও নিভর্র করছে আমাদের আজকের সাফল্যের ওপর।

লেখক : শিক্ষানবিশ আইনজীবী।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<36280 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1