শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশ গাড়ি আটক করলে করণীয়

চলছে ট্রাফিক সপ্তাহ। গাড়ির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকলে পুলিশ কাগজপত্র জব্দ করে মামলা দিয়ে থাকে বা কখনো কখনো গাড়িটিই আটক করে বসে। গাড়ি বা কাগজপত্র ছাড়িয়ে আনা একটু ঝামেলার কাজ। আইনি পদ্ধতি অনুসরণ করে গাড়ি ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে। দেশের সচেতন নাগরিকদের এসব নিয়মকানুন জানা উচিত।
মো. রায়হান ওয়াজেদ চৌধুরী
  ০৭ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

সড়কে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার স্বাথের্ যানচলাচলে ট্রাফিক আইনসহ বেশকিছু নিয়মনীতি মেনে গাড়ি চালাতে হয়। এসব নিয়ম না মানলে আইন ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। অপরাধীকে জরিমানাসহ মামলা দায়ের করতে পারে। প্রয়োজনে পুলিশ গাড়ি আটক করতে পারে। গাড়ি আটক হলে অনেকেই ঘাবড়ে যান, এ ক্ষেত্রে আপনার সব কাগজপত্র যদি ঠিক থাকে তাহলে বিচলিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। মনে রাখবেন গাড়ি ছাড়িয়ে আনা একটু ঝামেলার কাজ। এ সময় মাথা ঠিক রেখে সতকর্ হয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। আইনি পদ্ধতি অনুসরণ করে গাড়ি ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে। বিষয়টি সম্পকের্ অনেকেই ভালোভাবে অবগত নন। নিয়মকানুন না মানার ফলে সড়কে বিশৃঙ্খলা, ট্রাফিক সিস্টেমে অব্যবস্থাপনা দেখা যায়। যে কারণে প্রতিদিন সড়কে ঘটছে অস্বাভাবিক মৃত্যু ও সড়ক দুঘর্টনা। আসুন এই সম্পকের্ প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নিই। দেশের সব নাগরিকের এসব নিয়মকানুন জানা উচিত। যাতে নিজে এবং অন্যকে ট্রাফিক আইন ভঙ্গ হতে বিরত রাখতে পারে।

যেসব কারণে গাড়ি আটক হতে পারে

পুলিশ বিভিন্ন কারণে আপনার গাড়ি আটক করতে পারে, যেমনÑ গাড়ির রেজিস্ট্রেশন সাটিির্ফকেট, ফিটনেস সাটিির্ফকেট, ট্যাক্স টোকেন, ইন্স্যুরেন্স কাগজপত্র, সাধারণ পরিবহনের জন্য রুট পারমিট, চালকের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদি বৈধ কাগজপত্র না থাকলে মামলা হতে পারে। ট্রাফিক সিগন্যাল/ লাইট না মেনে গাড়ি চালানো, বিপজ্জনকভাবে দ্রæতগতিতে গাড়ি চালানো, যখন-তখন লেন পরিবতর্ন করা, গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা বলা, হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল চালানো, ওভারলোড বহন ইত্যাদি ভুলের কারণে ট্রাফিক পুলিশে মামলা দিতে পারে। যানবাহনের বিভিন্ন ত্রæটি যেমন হেডলাইট না জ্বলা বা না থাকা, ইন্ডিকেটর লাইট না থাকা বা না জ্বলা, সাধারণ পরিবহন/ গাড়ির বডিতে পাটির্কুলার বা বিবরণ না থাকা, মালিক বা মালিকের নাম-ঠিকানা না থাকা, গাড়িতে অতিরিক্ত আসন সংযোজন অথবা গাড়িতে বিআরটিএ অনুমোদন ছাড়া কোনো সংযোজন বা পরিবতর্ন করা, ইত্যাদি ত্রæটির কারণে ট্রাফিক পুলিশ মামলা দিতে পারে। এ ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন না করা, বিমার মেয়াদোত্তীণের্র জন্য, সঠিক জায়গায় গাড়ি পাকর্ না করা, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, চালাতে গিয়ে পুলিশের নিদের্শনা না মানা, আদেশ অমান্য, বাধা সৃষ্টি ও তথ্য প্রদানে অস্বীকৃতি, নিষিদ্ধ হনর্ কিংবা শব্দ সৃষ্টিকারী যন্ত্র লাগানো, নিধাির্রত গতির চেয়ে দ্রæতগতিতে গাড়ি চালনা, ইত্যাদি কারণেও মামলা করতে পারে ট্রাফিক পুলিশ।

যা করতে হবে

গাড়ি আটক করার সময় পুলিশ আপনার কাগজ জব্দ করবে এবং আপনাকে একটি রশিদ প্রদান করবে। তবে দুঘর্টনার ক্ষেত্রে মোটরযান আইন ছাড়াও নিয়মিত মামলা হতে পারে। যদি মামলা দেয় তাহলে ফটোকপি নিতে হবে। কী অপরাধে জরিমানা করা হলো, কে জরিমানা করলেন, কোথায় করা হলো, কত তারিখের মধ্যে হাজির হতে হবে সবকিছু লিখে দেয়া হয় রসিদটিতে। কোন জোনের ট্রাফিক পুলিশ আপনার গাড়িটি আটক করল সেটি ট্রাফিক পুলিশের প্রদত্ত রসিদের পেছনে লেখা থাকে। উল্লিখিত সেই জোনের অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করতে হবে। রশিদের পেছনে জোনভিত্তিক উপস্থিতির সময়ও লেখা থাকে। কাজেই সে অনুযায়ী গেলে আপনার সময় বঁাচবে। এসব ক্ষেত্রে আপনার অনুক‚লে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে সব কাগজপত্র দাখিল করতে পারেন। সংশ্লিষ্ট জোনের ডেপুটি কমিশনার জরিমানা নিধার্রণের মাধ্যমে বিষয়টির নিষ্পত্তি করে থাকেন। ডেপুটি কমিশনার পূণর্ জরিমানার চার ভাগের এক ভাগ পযর্ন্ত জরিমানা নিধার্রণ করতে পারেন। ডেপুটি পুলিশ কমিশনার অফিস থেকে জরিমানা প্রদানের জন্য আরেকটি রশিদ দেয়া হবে আপনাকে। জরিমানা পরিশোধের পরপরই জব্দ হওয়া ডকুমেন্ট এবং আপনার প্রদত্ত সব কাগজপত্র বুঝে নেবেন। অনেক সময় ডেপুটি কমিশনার আপনার জরিমানা মওকুফও করে দিতে পারেন।

উল্লেখ্য, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় এখন ট্রাফিক পুলিশ কতৃর্ক আরোপিত জরিমানার টাকা সহজেই ইউক্যাশের মাধ্যমে পরিশোধ করা যায় এবং এভাবে জরিমানার অথর্ পরিশোধ করা হলে জব্দকৃত কাগজ কুরিয়ার সাভিের্সর মাধ্যমে ফেরত দেয়া হয়।

জরিমানা না দিলে বা জোন অফিসে যথাসময়ে হাজির না হলে প্রতিবেদন সহকারে মামলাটি আদালতে পাঠানো হতে পারে। আদালত ওয়ারেন্ট ইস্যু করতে পারে। আদালতে মোটরযান মামলাসংক্রান্ত শাখা রয়েছে। মোটরযানসংক্রান্ত মামলায় সাধারণত জরিমানা হয়ে থাকে। এ জরিমানার টাকা আদালতে জমা দিলে মামলা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

পুলিশ যদি কোনো কারণে গাড়ি অহেতুক আটক করে তাহলে আইনজীবীর মাধ্যমে উপযুক্ত প্রমাণাদি আদালতে উপস্থাপন করে গাড়িটি নিজের জিম্মায় নিতে আপনি আবেদন করতে পারেন। সাধারণত প্রাথমিক শুনানি শেষে আদালত মামলার তদন্তকারী কমর্কতাের্ক (আইও) বিআরটিএ (বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোটর্ অথোরিটি) থেকে গাড়ির মালিকানা নিরূপণ করে কোনো অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা, তা যাচাই করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য আদেশ দিয়ে থাকেন। এরপর প্রতিবেদন থানা থেকে আদালতে পাঠানো হলে আইনজীবী নথি পযের্বক্ষণ করে দেখবেন যে তা নথির সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে কিনা। আইনজীবী একটি দরখাস্তের মাধ্যমে আদালতকে অবহিত করবেন যে বিআরটিএ থেকে গাড়ির মালিকানা নিরূপণ করা হয়েছে। আদালত বিআরটিএ প্রতিবেদন, তদন্তকারী কমর্কতার্র প্রতিবেদন ও আইনজীবীর শুনানিতে সন্তুষ্ট হলে থানা কতৃর্পক্ষকে আদেশ দেবেন আটক গাড়িটি জিম্মায় দেয়ার জন্য। পরবতীর্ সময়ে তদন্তকারী কমর্কতার্র সঙ্গে দেখা করে গাড়ি নিজের জিম্মায় নিতে পারবেন এই শতের্ যে পরবতীর্ সময়ে মামলার তদন্তের স্বাথের্ প্রয়োজন হলে তিনি তা থানায় হাজির করবেন।

আইন অমান্যকারীদের শাস্তি হিসেবে মোটরযান অধ্যাদেশ এবং দÐবিধিসহ প্রচলিত বিভিন্ন আইনে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদÐ বা বিভিন্ন পরিমাণের জরিমানা অথবা উভয়বিধ শাস্তি দিয়ে থাকে।

লেখক : শিক্ষানবিস আইনজীবী, চট্টগ্রাম জজ কোটর্। ষষনৎধরযধহ@মসধরষ.পড়স

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<6781 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1