শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মিথ্যা মামলার প্রতিকারে ভুক্তভোগী পেতে পারেন ক্ষতিপূরণ

নতুনধারা
  ০৮ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক

ছোট্ট একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিবেশী রহিমা খাতুনের (ছদ্মনাম) সঙ্গে মকবুল হোসেনের (ছদ্মনাম) ঝগড়া হয়। সামান্য ঝগড়াঝাটির প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে মনগড়া ঘটনা সাজিয়ে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ এনে মকবুলকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালে মামলা দায়ের করেন। আদালত বাদিনী রহিমা খাতুনের জবানবন্দি গ্রহণান্তে ঘটনার সত্যতা ওই যাচাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট থানার ওসির ওপর তদন্ত দেন। আগে থেকেই শিখিয়ে-পড়িয়ে নেয়া লোকজন দিয়ে রহিমার পক্ষে একতরফা জবানবন্দি প্রদানের মাধ্যমে মামলাটি আমলে নেয়ার সব প্রক্রিয়া সম্পাদন করা হয়। এরপর ট্রাইবু্যনাল মামলাটি আমলে নিয়ে আসামি মকবুল হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

সারাদেশে এরকম বহু ঘটনাই ঘটছে, যেখানে মিথ্যা মামলা করে মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। তবে এতে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। এরকম মামলা হওয়ার পর ভুক্তভোগীকে প্রথমে জানতে হবে, মামলাটি থানায় নাকি আদালতে হয়েছে। এরপর আইনজীবীর মাধ্যমে কিংবা আসামি নিজেই মামলার আরজি বা এজাহারের কপি সংগ্রহ করতে হবে। মামলাটির ধারা বা অভিযোগ জামিনযোগ্য হলে সংশ্লিষ্ট আমলি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইতে পারেন মামলার আসামি।

মামলাটির ধারা বা অভিযোগ জামিন অযোগ্য হলে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে আগাম জামিন চাইতেও পারেন আসামি। তবে হাইকোর্ট বিভাগ আগাম জামিন সাধারণত নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত দিয়ে থাকেন। এ মেয়াদের মধ্যেই মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট আদালতে গিয়ে জামিননামা সম্পাদনের জন্য আবেদন করতে হয়। তবে আদালতে বিচার চলাকালে নির্দিষ্ট তারিখে অবশ্যই হাজিরা দিতে হবে। কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া অনুপস্থিত থাকলে আসামির জামিন বাতিল করে দিতে পারেন আদালত।

থানা কর্তৃক মামলাটি রেকর্ড হলে তদন্তকারী কর্মকর্তা আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগটির সত্যতা না পেলে আপনাকে নির্দোষ দেখিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন বা ফাইনাল রিপোর্ট আদালতে দাখিল করবেন (পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল এর প্রবিধান ২৭৫ অনুযায়ী)। সত্যতা পেলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারার বিধান অনুসারে আদালতে একটি চার্জশিট দাখিল করবেন। এরপর মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হবে।

এরপর আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পালা। মামলার নথি, দাখিল দলিলাদি এবং তৎসম্পর্কে আসামি ও অভিযোগকারী পক্ষের বক্তব্য শুনার পর আদালত যদি মনে করেন যে, আসামির বিরুদ্ধে মামলা চালাবার যথেষ্ট কারণ নেই, তাহলে আদালত আসামিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিবেন এবং তার কারণ লিপিবদ্ধ করে রাখবেন। (ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধি ধারা ২৪১(ক), দায়রা ও বিশেষ ট্রাইবু্যনালে ২৬৫গ)। তবে যদি অব্যাহতির পর নতুন সাক্ষ্য প্রমান উদঘাটিত হয়, তাহলে আসামির বিরুদ্ধে পুনরায় অভিযোগ ঘটন করা যায়।

অভিযোগকারী পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামির জবানবন্দি গ্রহণ এবং বিষয়টি সম্পর্কে অভিযোগকারী পক্ষ ও আসামি পক্ষের বক্তব্য শুনার পর আদালত যদি মনে করেন যে, আসামি অপরাধ করেছে বলে কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ নাই, তাহলে আদালত আসামিকে খালাস দেবেন এবং তা লিপিবদ্ধ করে রাখবেন। (ফৌজদারি কার্যবিধি ধারা- ২৬৫জ)

অন্যদিকে কোন আসামিকে বিচারে খালাস প্রদান করলে, পুনরায় তার বিরুদ্ধে একি অপরাধের অভিযোগ ঘটন করা যায় না। অব্যাহতির আদেশ আদালতের কোনো রায় নয়। কিন্তু খালাসের আদেশ আদালতের একটি রায়।

আর গ্রেপ্তার হলে সে ক্ষেত্রে আসামি আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের আবেদন করতে পারবেন। যদি পুলিশ রিমান্ড চায়, তাহলে আইনজীবীর মাধ্যমে রিমান্ড বাতিলের আবেদন করতে হবে। যদি আদালত জামিন দেন, তাহলে আদালতের আদেশ অনুযায়ী আসামিকে জামিননামা সম্পাদন করতে হবে। যদি জামিন না হয়, তাহলে পর্যায়ক্রমে উচ্চ আদালতে আবেদন করতে হবে।

আর যদি আদালতে সিআর মামলা হয়, তাহলে আদালত সমন দিতে পারেন কিংবা গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করতে পারেন। এ ক্ষেত্রেও আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইতে হবে। ক্ষেত্রবিশেষে হাইকোর্ট বিভাগে আগাম জামিন চাইতে পারেন।

আসামি আদালতে হাজির না হলে বিচারের জন্য পর্যায়ক্রমে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি হতে পারে। আসামির মালামাল ক্রোকের আদেশও হতে পারে এবং তার অনুপস্থিতিতেই বিচার হতে পারে।

তবে সাক্ষ্য প্রমাণে আসামি নির্দোষ প্রমাণিত হলে মিথ্যা অভিযোগকারী বা মামলা দায়েরকারীর বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনেই পাল্টা মামলা করা যাবে। দন্ডবিধির ২১১ ধারা অনুযায়ী মিথ্যা মামলা করা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ছাড়া ক্ষতিপূরণ চাইতে পারেন। মিথ্যা নালিশ আনয়নকারী সব ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যবিধি ২৫০ ধারা অনুযায়ী মিথ্যা মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের আদেশ করা যায়। নারী ও শিশু নির্যাতনের মিথ্যা মামলা বা অভিযোগের শিকার হলে আইনের মধ্যে থেকেই আদালতে লিখিত পিটিশন দায়ের করার মধ্য দিয়ে প্রতিকার পেতে পারেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৭ ধারায় মিথ্যা মামলা বা অভিযোগের দায়ে অপরাধীর সাত বছর পর্যন্ত কারাদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

আর দেওয়ানি মামলা হলে জবাব দাখিলের জন্য আদালত আসামির কাছে সমন পাঠাবেন। নির্ধারিত তারিখে হাজির হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে জবাব দাখিল করতে হবে। পরবর্তী সময়ে মামলা ধারাবাহিকভাবে চলবে।

লেখক : বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা।

ঊসধরষ:ংবৎধল.ঢ়ৎধসধহরশ@মসধরষ.পড়স.

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<70078 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1