শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তঃদেশীয় বিচারে ভিডিও কনফারেন্স

ডয়েচে ভেলে অবলম্বনে
  ২৬ জুন ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ২৬ জুন ২০১৮, ১১:০৫

নিজের দেশে নিরাপদে বসেই নেহা মালদার তাকে জোর করে যৌন ব্যবসায় বাধ্যকারীদের শনাক্ত করেছিলেন। মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত ওই ব্যক্তিরা ছিলেন ভারতে। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে নেহা তাদের শনাক্ত করেছিলেন। নেহার বাড়ি যশোরে। সেখান থেকে প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দূরে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর মুম্বাইয়ে ওই ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছিলেন নেহা। যশোর মানবপাচারের অন্যতম প্রধান রুট। নেহা বাতার্ সংস্থা রয়টাসের্ক তার সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি ভিডিওতে আমাকে পাচার করা ব্যক্তিদের দেখেছি, এবং তাদের শনাক্ত করতে মোটেও ভয় পাইনি। আমি নিশ্চিত ছিলাম বারের পেছনেই তাদের দেখতে পাবো।’

নেহা যশোরেই একটি বিউটি পালার্র চালান এখন। অথচ তাকে যখন ভারতের যৌনপল্লী থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল, তখন তিনি পাচারকারীদের শনাক্ত করতে ভীত ছিলেন। এমনকি ভারতের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে মিথ্যাও বলেছেন, পাছে আবারও পাচারকারীরা ক্ষতি করে সেই ভয়ে, পাশাপাশি বিচার প্রক্রিয়ার দীঘর্সূত্রতার কথা চিন্তা করে।

মানবপাচারকারীরা কাজের নানা রকম প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশ ও নেপালে গরিব পরিবারের মেয়েদের ভারতে নিয়ে যায়। পরে যৌন ব্যবসায় জড়াতে বাধ্য করে। জোর করে যৌন ব্যবসায়ে জড়ানোর পেছনে যারা আছে, তাদের শনাক্ত করতে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের সাহায্য নেয়া একটি যুগান্তকারী ও ইতিবাচক পরিবতর্ন আনবে বলে মনে করছেন সেবাকমীর্রা।

মানবপাচার প্রতিরোধে কাজ করা সেবাকমীর্রা বলছেন, এর ফলে অপরাধীরা সহজেই সাজা পাবেন এবং তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হবে। ২০১৬ সালে এরকম এক অপরাধীকেই ধরে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। তখন ঢাকা থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমেই অপরাধীকে আদালতের সামনে শনাক্ত করার প্রক্রিয়া চলেছিল। এ ধরনের অপরাধের বিচার হয় মূলত ভারতের আদালতেই। তার মানে হচ্ছে অভিযোগকারীকে বিচার চলাকালীন দীঘর্ সময় সে দেশেই নিরাপত্তা হেফাজতে থাকতে হয়।

জোর করে যৌন ব্যবসায় জড়িত হয়েছেন, এমন ব্যক্তিদের উদ্ধার করতে কাজ করে যাচ্ছে ভারতের দাতব্য সেবা প্রতিষ্ঠান রেসকিউ ফাউন্ডেশন। সংস্থাটির কৌঁসুলী শাইনি পাডিয়ারা বলেন, ‘উদ্ধারের পর ভুক্তভোগীরা সবসময়ই তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে উতলা হয়ে দেশে ফিরতে চান এবং অপরাধীদের শনাক্তের জন্য আর কখনই ফেরত আসেন না।’

তিনি জানান, ভিডিও কনফারেন্সিং এই প্রক্রিয়া সহজ করেছে। অপরাধী শনাক্ত এবং ভুক্তভোগীদের বয়ান নিতে আরও অন্তত ১০টি এমন ঘটনায় বাংলাদেশ থেকে ভিডিও কনফারেন্সিং করে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের এই ব্যাপারটি পুরোদমে চালু হলে অপরাধীদের বেকসুর খালাস পাওয়ার হার অনেক কমে যাবে।’

তা ছাড়া ঘণ্টার পর ঘণ্টা জেরা করে ভুক্তভোগীদের অপরাধী পক্ষের উকিল যে নাজেহাল করেন, তার পরিমাণও কমে আসবে। যেমনটি মালদারের ক্ষেত্রে হয়েছিল, বিরোধী উকিলের তিন ঘণ্টা জেরায় অতিষ্ঠ হয়েই এক সময় তিনি নিজের পরিচয় সম্পকের্ মিথ্যা বলেছিলেন।

মাগুরার তারা খোকন মিয়া, তার ২৭ বছর বয়সী মেয়েকে প্রস্তুত করছেন ঢাকায় বসে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ভারতে সাক্ষী দেয়ার জন্য। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি আমার মেয়েকে চিরজীবনের জন্য হারিয়েই ফেলেছিলাম।’ খোকন মিয়ার মেয়ে গামের্ন্টকমীর্। ভারতে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে পাচার করা হয়। সেখানে একবছর আটকে রেখে তার ওপর চলে নিযার্তন, ধষর্ণ এবং মারধর। প্রায় এক বছর পরে উদ্ধার হয় মেয়েটি। খোকন মিয়া বলেন, ‘তারা যা করেছে ক্ষমার অযোগ্য।’

এ ঘটনার আইনি প্রক্রিয়া ২০১৩ সাল থেকে চলছে। যশোরের একটি সমাজসেবা সংগঠন এ ব্যাপারে সহায়তা করছে। সবচেয়ে ভালো দিক হলো মেয়েটির সঙ্গে তার পরিবার সহযোগিতা করছে। ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে ২০১৫ সালে এবং নেপালের সঙ্গে ২০১৭ সালে মানবপাচারের অপরাধগুলোর দ্রæত বিচার নিয়ে চুক্তি করে।

যশোরের বিচারক কেএম মামুন বলেন, ‘ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত স্বচ্ছ। আমি সাধারণত উপস্থিত থাকি এবং ভুক্তভোগীরা খুব সহজেই অপরাধীদের শনাক্ত করতে পারে।’ পুরো প্রক্রিয়াটি গোপনে চলে বলে ভুক্তভোগীরাও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তবে ভিডিও কনফারেন্সিং করে এরকম বিচারের একটি সমস্যা হলো ইন্টারনেট সংযোগের দুবর্ল অবস্থা। মাঝে মধ্যেই সংযোগ দুবর্ল হলে দুদেশের মধ্যে এটি বন্ধ হয়ে যায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে