শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আইন মেনে চলুন

অ্যাডভোকেট মো. সাইফুদ্দীন খালেদ
  ০৭ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের সবারই উচিত দেশের প্রচলিত আইন মেনে চলা। এতে আমাদের সবারই মঙ্গল। দেশে আইন আছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আছে, আদালত থাকলেও আইনের শাসন মানার সংস্কৃতি পুরোপুরি গড়ে ওঠেনি। দেশের প্রচলিত আইন অমান্য করলে, উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে।

আইন না মানার কারণে বাড়ছে সামাজিক-রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা। সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে বাড়ছে অপরাধপ্রবণতা। তাই দেশের নিয়ম-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং দেশের উন্নয়নের স্বার্থে আমাদের সবারই উচিত দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং আইন মেনে চলা। এতে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে এবং দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি হবে। সবাইকেই আইন মেনে চলতে হয়। কেউ যদি আইন মেনে না চলেন বা আইন ভঙ্গ করেন বা আইন ভঙ্গের হুকুম দেন তখন সমাজের, দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয় ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। আর সে আইন যদি সমাজের, দেশের কোনো জনপ্রতিনিধি বা নেতৃস্থানীয় কোনো ব্যক্তি ভঙ্গ করেন বা আইন ভঙ্গের হুকুম দেন তাহলে তা জনগণের মাঝে আরও নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে।

দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশের মানুষ আইনের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল নয় এবং তারা যখন ইচ্ছা তখন আইন অমান্য করে। সচেতনতার অভাব আর যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় সমাজে বাড়ছে আইন না মানার প্রবণতা। শিক্ষিত-অশিক্ষিত সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যেই এটি দেখা যায়। আইন অমান্য করার সংস্কৃতি আমাদের দেশে একদিনে গড়ে ওঠেনি বরং দীর্ঘদিন ধরে এই সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। কাজেই এই সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আর আমরা যদি আইন অমান্য করি, তবে দেশে বিশৃঙ্খলা ক্রমেই বৃদ্ধি দেবে। কাজেই আমাদের নিজেদের স্বার্থে এবং দেশের স্বার্থে প্রচলিত আইন মানতে হবে। আইন যেমন সবাইকে সমান অধিকার দিয়েছে মানুষ হিসেবে, তেমনই তা মেনেও চলতে হয় সবাইকে। আইন কেউ মানবে না, আবার কাউকে মানতে বাধ্য করা হবে জোরপূর্বক এমনটা নয়। যারা আইন মানতে চান না, নিজের সুখ-সুবিধাকে বড় করে দেখেন, প্রয়োজনে অন্যকে মেরে-ধরে নিজের ইচ্ছাকে পূরণ করতে চান অন্যায়ভাবে, তাদের জন্যই তৈরি হয় আইন-আদালত বা বিচারব্যবস্থা।

বিচারব্যবস্থা হচ্ছে সভ্যতার অবদান। আইন দেশের শৃঙ্খলা রক্ষা ও অর্থনৈতিক ভিত্তি দৃঢ়করণের চালিকাশক্তি। আমাদের দেশে সড়ক পথে চলাচলের জন্য যেসব আইন-কানুন আছে, পরিবহণ মালিক ও শ্রমিকরা সেগুলো যথাযথভাবে মানেন না। আবার সাধারণ জনগণ সিগন্যাল না মেনে রাস্তায় চলাচল, ওভার ব্রিজ থাকার পরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় ব্যারিকেড পার হওয়া, ফুটপাতে মোটরসাইকেল চালানো নিষেধ হলেও অবাধে চালানো ইত্যাদি। তাই সড়ক পথে দুর্ঘটনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং মানুষের জান-মালের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। যেন আইন ভাঙার প্রতিযোগিতা।

অন্যদিকে আমাদের দেশের এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে, সেই ঋণ আর ফেরত দেন না এবং গোপনে বিদেশে অর্থ পাচার করছেন। যার ফলে দেশের ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে এবং দেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড ভেঙে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা দেশের প্রচলিত আইন অমান্য করে এহেন অপকর্ম করছেন।

সমাজ পরিবর্তন ও আধুনিকায়নে আইন গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। আইন নিঃসন্দেহে সমাজের শ্রেণিবৈষম্য দূর করতে এবং দুর্বল ও অসহায় শ্রেণির নিরাপত্তায় মুখ্য ভূমিকা পালন করে। সমাজ পুননির্মাণের অর্থ, সমাজের বিশ্বাস, মূল্যবোধ, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ের পরিবর্তন। আইন তখনই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে, যখন তা সমাজের সমর্থন লাভে সক্ষম এবং তা মেনে চলে। সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টির পেছনে বহুবিদ কারণ থাকে। এর মধ্যে আইনের প্রতি আস্থাহীনতা অন্যতম বড় কারণ।

আইন অমান্য করার সংস্কৃতি থেকে আমাদের সবারই বেরিয়ে আসতে হবে। আইনের শাসন বাস্তবায়নে নজরদারির পাশাপাশি পাঠ্যপুস্তকে এ সম্পর্কিত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। সমাজের সর্বত্র আইন মানার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দায়দায়িত্ব যাদের, তাদের ন্যায়নিষ্ঠ ভূমিকা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন জরুরি। একই সঙ্গে সামাজিক উদ্যোগও দরকার। সমাজ প্রতিনিধিদের সম্মিলিত কার্যক্রম সমাজের বৈরিতা নিরসনে সহায়ক হতে পারে। সবকিছুর ঊর্ধ্বে হলো আইনের প্রতি সবার শ্রদ্ধা ও আস্থা রাখা।

লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<83214 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1