শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কলকাতা হাইকোর্টে প্রথমবারের মতো মামলার শুনানির সরাসরি সম্প্রচারিত হবে

অনেক ক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক কথা আলোচিত হয়। এতে অপরাধের শিকার যিনি, তার সামাজিক সম্মান ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। শুনানি সরাসরি সম্প্রচারের ফলে বিচারপ্রক্রিয়া অনেকটাই স্বচ্ছ হবে বলে মনে করছেন আইনজীবীরা। দূরত্বের কারণে আন্দামানের কোনো মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে করা হয়।
য় আইন ও বিচার ডেস্ক
  ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

ভারতীয় বিচার ব্যবস্থায় মামলার শুনানি গোপনীয়তায় ঘেরা থাকে। বিচারপ্রক্রিয়া চলাকালে আদালত কক্ষে জনতা উপস্থিত থাকে, কিন্তু উপস্থিতির হার খুবই সীমিত। ফলে কোনো গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি হয়ে যায় প্রায় অগোচরে। অভিযোগকারী বা অভিযুক্তের পক্ষে কী সওয়াল রাখা হলো, তা পুঙ্খানুপুঙ্খ জানা সম্ভব হয় না। সংবাদমাধ্যমে উঠে আসা খবরে শুনানির সারসংক্ষেপ থাকে বটে, কিন্তু তাতে মামলার গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে সামগ্রিক ধারণা গড়ে ওঠে না। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট একটি মামলায় রায় দেয়, আদালতের শুনানির সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে। তারপর দেড় বছর কেটে গেলেও ভারতের কোনো আদালতে এখনো শুনানির সরাসরি সম্প্রচার হয়নি। কলকাতা হাইকোর্ট এ ক্ষেত্রে পথ দেখাতে চলেছে। ভারতে কলকাতা হাইকোর্টে প্রথমবার একটি মামলার শুনানির সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।

কলকাতা হাইকোর্টের এই যুগান্তকারী পদক্ষেপের নেপথ্যে রয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় রীতিসংক্রান্ত একটি মামলা। পার্সি সম্প্রদায়ের এক মহিলা বিয়ে করেছিল অ-পার্সি এক পুরুষকে। সম্প্রদায়ের রীতি অনুযায়ী, এই দম্পতির সন্তান উপাসনাস্থল অগ্নিমন্দিরে প্রবেশের অধিকারী নয়। পার্সি মহিলা এই অধিকার দাবি করে মামলা করেছেন।

মামলার একটি পক্ষ পার্সি সম্প্রদায়ের সংগঠন আদালত বলে, এই মামলার বিষয়বস্তু গোটা পার্সি সমাজের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা পার্সিরা আদালতে এসে এই শুনানিতে অংশ নিতে পারবেন না। তাই পুরো সওয়াল-জবাব সবার কাছে পৌঁছে দিতে শুনানির সরাসরি সম্প্রচার করা হোক। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি কৌশিক চন্দের ডিভিশন বেঞ্চ শুনানি সরাসরি সম্প্রচারের অনুমতি দিয়েছে। আদালত সূত্রে খবর, এই মামলার লাইভ স্ট্রিমিং হবে ইউটিউবে। খরচ দেবে পার্সি সংগঠনটি।

কলকাতা হাইকোর্টের এই নির্দেশকে যুগান্তকারী হিসেবে দেখছে আইনজীবী মহল। দুই শীর্ষস্থানীয় অভিজ্ঞ আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ ও বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। অরুণাভ ঘোষ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, 'আমাদের দেশে ওপেন ট্রায়াল বা খোলাখুলি বিচারপ্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী হত্যা মামলার শুনানি হচ্ছিল তিহার জেলে। কারাগারে ওপেন ট্রায়াল না হওয়ায় তখন আইনজীবী রাম জেঠমালানি এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সুতরাং শুনানির সরাসরি সম্প্রচার করলে অনেক মানুষের কাছে এই প্রক্রিয়া পৌঁছে যাবে। এজলাসে বসে ৫০ জন যা দেখতো, তা এখন হাজার হাজার মানুষ দেখতে পাবে।'

ইন ক্যামেরা বিচার প্রক্রিয়া অর্থাৎ শুনানির ভিডিওগ্রাফি নতুন কিছু নয়। তবে সরাসরি সম্প্রচার একেবারেই নতুন পদক্ষেপ। বিকাশরঞ্জনের বক্তব্য, 'আইনজীবীরা কী সওয়াল করলেন, বিচারপতি কতটা মন দিয়ে শুনলেন, সেটা সরাসরি মানুষ দেখতে পাবে। কেউ যদি তার ভিত্তিতে কোনো বক্তব্য রাখতে চান, পরে সেটাও রাখতে পারবেন। ফলে মামলা ঘিরে রহস্যময়তা অনেকটাই কেটে যাবে।' তবে ধর্ষণ বা পারিবারিক বিবাদসংক্রান্ত মামলার শুনানি সরাসরি জনতার কাছে পৌঁছে যাওয়ার দরকার নেই বলেই মনে করেন এই দুই আইনজীবী।

ত্রিপুরার প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল বিকাশঞ্জনের মতে, 'এসব মামলায় একান্ত ব্যক্তিগত কথা আলোচনায় উঠে আসে। অনেক ক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক কথা আলোচিত হয়। এতে অপরাধের শিকার যিনি, তার সামাজিক সম্মান ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে।' শুনানি সরাসরি সম্প্রচারের ফলে বিচারপ্রক্রিয়া অনেকটাই স্বচ্ছ হবে বলে মনে করছেন আইনজীবীরা। দূরত্বের কারণে আন্দামানের কোনো মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে করা হয়। কোনো মামলায় সাক্ষীকে হাজির করা না গেলে একই পদ্ধতি নেয়া হয়। তাহলে সুপ্রিম কোর্ট রায় দেওয়ার পরও কেন আজ পর্যন্ত দেশের কোনো আদালতে লাইভ স্ট্রিমিং করা হলো না কেন? অরুণাভ ঘোষের বক্তব্য, 'সরাসরি সম্প্রচারের জন্য যে পরিকাঠামো দরকার, তা সব আদালতে নেই। আর্থিক সমস্যা রয়েছে। নতুন কর্মী নিয়োগ করা দরকার। তবে দেরিতে হলেও নতুন পদ্ধতি শুরু করা দরকার।'

ডয়েচে ভেলে অবলম্বনে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<89877 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1