শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
গল্প

ঘরে ফেরার গানন

মনির জামা
  ০৫ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

সংসারী হওয়ার ইচ্ছাটাকে জলাঞ্জলি দিয়ে দিনে দিনে ‘একাকী একটা জীবন’কে ভালোবেসে নিয়েছি। লিখে যৎসামান্য যা মেলে তা দিয়ে মা-ছেলে ভালোভাবে চলে যাই। বয়স হয়ে গেছে আটচল্লিশ। নিজেকে নিয়ে নতুন কিছু ভাবি না। বুড়ি মা প্রায়ই বোনদের কাছে গিয়ে থাকে। টিভি-দেখিনা বিধায় নিঝুম বাসায় রান্না-বান্না, ধোয়া- পাখলÑ সব কাজ নিজে করি। পড়শীরা বিরক্ত করে না; বরং লেখক জেনে একটু যেন বেশি ভালোবাসে। ভাই-বোনরা আমার একাকী জীবনটাকে মেনে নিয়েছে হয়তো এই ভেবে যে, আমি কারো বোঝা নই। সংসারী বন্ধুদের এড়িয়ে কালে কালে আমি বোহেমিয়ান লোকজনের সঙ্গে মিশতে পছন্দ করি। আড্ডাই আমার কাছে সংসারের বিকল্প। তারপরও সংসার করার জন্য কেউ তাগাদা দেয় না, তা নয়। কাতিের্কর ঝরো ঝরো বাতাসে গাছে পাতা বুকপিঠ দু’টোই দেখায়। আমার বন্ধু চঞ্চল ভালোবেসে শিখাকে বিয়ে করেছিল। একটা ফুটফুট মেয়েও আছে ওদের। কিন্তু ও না-সাংসারী না বোহেমিয়ান। আমাকে প্রায়ই বলে ভালোই আছিস খোকন। সংসার হলো নরক, কত আর মানিয়ে গুছিয়ে নেয়া যায়। একেক সময় তোর মতো হয়ে যেতে ইচ্ছে করে ...। আমি হাসি। হেসে বলি একা থাকা সহজ না। একা থাকলে ভূতে ধরে।

মধুর কেন্টিনটা মজাদার জায়গা। ছাত্রজীবন থেকে যেতে যেতে এখনও যাই। সন্ধ্যা নামলে বন্ধু বান্ধবরা পিলপিল করে চলে আসে। মানুষ অনেকসময় পিঁপড়ার মতো। যারা আসে তাদের কেউ অধ্যাপক, কেউ সরকারি কমর্কতার্, কেউ সাংবাদিক, অনেকে এনজিও কমীর্। পাবলিক প্লেস ছাড়া বেকারদের যাওয়ার জায়গা নেই। বয়স বেড়ে গেলে জুনিয়ররা বন্ধু হয়। অপু আসে নদীকে নিয়ে। ওরা সহপাঠী ছিল। দম্পতি হয়েছে। একদিন আড্ডার মাঝে হাসতে হাসতে নন্দী বলেÑ খোকনদা মনে হয় অটিস্টিক। আমি মন্তব্য করি নয়। মানুষ কথা বলে পূবর্ধারণা থেকে। অথচ জীবনের প্রতিটি মুহ‚তর্ আসে নতুন রূপে। এই দুয়ের দ্ব›েদ্বর মীমাংসাই জ্ঞান। আমার বয়স আটচল্লিশ। অথচ সংসার করছি না। এটা ইউরোপ নয় মোটেই। তবে কী নারীদেহ আমাকে প্রলুদ্ধ করে না। নাকি নন্দী ঠিকই বলেছে পুরুষের সন্যাসপ্রিয়তা এক ধরনের অক্ষমতা। আবার ভাবী, পুরুষ হলেই কেন নারীসঙ্গ করতে হবে। পুরুষ মাত্রই সন্তান উৎপাদনে দায়বদ্ধ নয় মোটেই। একা থাকার অধিকার নারী-পুরুষ উভয়েরই থাকা উচিত। এতসব ভাবনার ভেতর অভ্যস্থ জীবনটাকেই মধুর মনে হয়।

আমার মা স্কুল টিচার ছিল। এখন তার অবসর জীবন। তার মতো গোছালো মানুষের ছেলে মনের ভেতর এতখানি সন্যাসী ভাবতেই পারত না; কিন্তু সময় পেরিয়ে গেছে ভেবে এখন আর বিয়ের জন্য তাগাদা করে না। বরং বলে বিয়ে না করেও ভালো থাকা যায়। কখনো মা আমাকে বড় বড় চিরকুমার মণিসীদের নাম শোনায়। অনেক কথার পর অনেক সময় কৌতুক করে বলে আমার লেখক ছেলে, একটা কথা মনে রাখিস, একা থাকলে ভূতে ধরে। আমি রেগে গিয়ে বলি ভূত মনে কী। খারাপ মেয়ে? আমি বাজে মেয়েদের খপ্পরে পড়ব বলছো? মা হাসেÑ ধরলেই বুঝবি। তখন মা’র কথা ভুলে যাস না যেন...।

মেয়েরা যে আমার পিছু নেয়নি, তা নয় মোটেই। শেলি, বেলি চামেলিরা হাল ছেড়ে সংসারী হয়ে যাওয়ার পর আমার বিকাল থেকে রাত কাটত ছবির হাটে। ছবির হাটের সঙ্গে বিশাল পাকর্। সন্ধ্যা নামলে ছোটছোট চা দোকানগুলোতে আলো জ্বলে ওঠে। টিমটিমে আলোর মায়াবি পরিবেশে অনেক মেয়েই আড্ডা দেয়। এরা ছেলেদের সমান তালে চলতে পছন্দ করে। এদেরও আমার মতো একাকী একটা জীবন। আমরা চা দোকানের বেঞ্চে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। আড্ডার সময় গিলে যায় কুমিরের মতো। কানিজ সিগারেট ধরিয়ে একগাল ধুঁয়ো ছেড়ে বলেÑ খোকনদা, বিরাট সমস্যা, আমার হোস্টেলের গেট তো বন্ধ হয়ে গেছে। এক রাতের জন্য তোমার বাসায় যেতে পারি? আমি দ্বিধা করি না। দ্বিধাহীন জীবনটাইতো যাপন করতে চাই। আমার বাসায় এসে মেয়েটা অবাক হয়ে যায় একজন অবিবাহিত পুরুষের এমন গোছানো ফ্ল্যাট। রান্না ঘরটাও এত ঝকঝকে! মা বলে ছেলে আমার সোনার টুকরা। শুধু একা থাকতে চায়, এই যা...। মা ওকে আদর করে খাওয়ায়। সুন্দর কয়েকটা শাড়ি উপহার দেয়। রাতভর গল্প করে আমার খাটে অঘোরে ঘুমায় কানিজ। হয়তো ঘুমটুকু ওর খুব প্রয়োজন ছিল। পরে অনেকবার ও আমার বাসায় এসেছে। কিন্তু স্থায়ী সম্পকের্ জড়াতে চায়নি। ওর একটাই জবাব ওয়ান টু ওয়ান রিলেশন আমার ভাল্লাগে না। আমি জানতে চাই বাকি জীবন? কানিজ হাসে জীবনে বাকি বলে কিছু নাই। সবই নগদ। আমি বিদেশে চলে যাব...। আসলে সম্পকের্র সনাতন ধারণাগুলো ভেতর থেকে এমনভাবে ভেঙে যাচ্ছে যে, আমরা সাদা চেখে তা দেখি না। যখন দেখি, কেউ রোগ ভোগ করছে সমাজিক সংকট কাউকে নিঃস্ব রিক্ত করে দিচ্ছে তখন মনে হয় বেঁচে থাকাটাই আনন্দের। যখন নিস্তব্ধ ঘরে লেখার টেবিলে বসে একটার পর একটা বাক্য সাজাই তখন যে অনুভ‚তি, দেহ মনে ছড়িয়ে পড়ে তার থেকে তৃপ্তির আর কিছুই পাই না। আরও মনে হয় এ জগতে কেউ তো আর একা না। একাকিত্ব জমে জমে গায় হয় মানুষের চেতনায়; নিদেনপক্ষে দেয়ালের টিকটিকি আর স্টোর রুমের তেলাপোকাও নড়েচড়ে জানান দেয়- ভয় পেও না, আমরা তো আছি...।

মা যখন দিনের পর দিন বোনদের বাসায় থাকে, তখন প্রায়ই বন্ধু বান্ধবরা বাসায় আসে। খায়-দায়-ঘুমায়। মাঈন আমার অনেক জুনিয়র। কিন্তু হঠাৎ করে বন্ধুত্ব বেড়ে গিয়েছিল। ছেলেটা কবিতা লেখে আর টিভি নাটকে সহকারী পরিচালকের কাজ করে। খুব বোহেমিয়ান হওয়ায় মঝে মধ্যে আমার বাসায় এসে থাকত আর রাতে ঘুমের ঘোরে পাছাটা আমার কোলের মধ্যে গুঁজে দিত। ওর দেহটাও ছিল মেয়েদের মতো একচিলতে। সমকামিতা এমন এক প্রবণতা, যা সে কিছুতে এড়াতে পারে না। আমি জানতে চেয়েছি তুমি আমাকে বেছে নিলে কেন। মঈন বলেছিল আপনি তো একা। হি-হি-হি।

রাদ অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে গিয়েছিল। ব্রথেল মালিকের কারপাকের্ পাটর্টাইম কাজ করত। এখান থেকে মদ খাওয়ার মজাটা রপ্ত করেছে। দেশে ফেরার পর মদের দোকানে ওর সন্ধ্যা কাটে। আর প্রতি সন্ধ্যায় আমাকে ফোন দেয় হ্যালো, খোকনদা, এত লেখালেখির করে কী হবে! এখন আর অমরত্বের যুগ নাই। চলে আসেন, প্লিজ। আমরা পিকক বারে বসে অনেক রাত পযর্ন্ত মদ্য পান করি আর উত্তরাধুনিক সাহিত্য নিয়ে কথা বলি। উত্তরাধুনিকতার সঙ্গে নাকি শেকড়ে ফেরার প্রবণতা জড়িত। অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরে রাদ পাবর্তীপুরের প্রত্যন্ত গ্রামে একটা কৃষি খামার করেছে। আমি জানতে চেয়েছি এটা কেন! রাদ বলেছে শেকড়ে ফেরার চেষ্টা। পাবর্তীপুরের খামারবাড়িতে রাদ ইভাকে নিয়ে উঠেছিল। এখনো ইভাকে নিয়ে হাতিরপুলের ভাড়া বাসায় থাকে। রাদ আমার কাছে জানতে চায় মেয়েমানুষ ছাড়া রাতে থাকেন কীভাবে? কেন! কাইৎ হয়া, রানের চিপায় বালিশ দিয়া। কোনো ক্যাচড়ম্যাচড় নাই...। হুইস্কির প্রভাবে আমরা মিটমিটি করে হাসি। রাদ বলে এটা ভালো। একা থাকলে ঘুম ভালো হয়।

মদ খেয়ে বাসায় ফিরতে বেশ ভালো লাগে। নিজেকে রাজা রাজা মনে হয়। কিন্তু পঁাচতলায় উঠতে গিয়ে সিঁড়ি যেন শেষ হয় না। অবস্থা বেসামাল দেখে বাড়িওয়ালা বলে, লোক সাহেব, বাসায় তো কেউ নাই। সিঁড়িঘরে একটু ঘুম দিয়া নেন। তারপর গিয়া তালা খুইলেন। আমি ঘোরের ভেতর গাইতে থাকি ভেঙে মোর ঘরের চাবি/নিয়ে যাবি কে আমারে ...। রাদের সঙ্গে আড্ডা দেয়ার পর থেকে অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটতে থাকে। আমি যেন একটু সন্দিহান প্রকৃতির হয়ে উঠি। সবার চোখ আমার প্রতি উপহাস লক্ষ্য করি। কারণে-অকারণে রেগে যাই। ক্ষুধা কমে যাচ্ছে। আর বাসায় এসে চেঞ্জ না করে সটান ঘুমিয়ে পরছি। যা আমার স্বভাববিরুদ্ধ। ইদানীং রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়, আর মনে হয়, কেউ যেন ঘরের মধ্যে হঁাটাহঁাটি করছে। আধোঘুম নিয়ে সারাঘর তন্নতন্ন করে খুঁজি। এঘরে এলে মনে হয় ও ঘরে। আরও মনে হয়, চেনা কোনো মেয়ে। একাকি জীবনযাপনটুকু ছাড়া অন্যসব বিষয়ে আমি খুব সচেতন। আমি টিপটপ থাকি। সময় জ্ঞানও আমার প্রখর। কিন্তু ইদানীং সব যেন ভেঙে যাচ্ছে মাকে বলি তুমি মিতুদের বাসায় আর কয়দিন থাকবা। ছেলের কথা কী ভুইলা গেছ! মা বলে, মিতুর বাচ্চা হইছে, জানস না! ক্যান কোনো সমস্যা? সমস্যার কথা মাকে বলি না। কিন্তু দিনের শেষে শূন্যঘরে ফিরে আসতে মন চায় না। রাদ আর আমি ইদানীং সুরিখানা থেকে বেরিয়ে শাহবাগের মোড়ে চলে আসি। শাহবাগ কখনো ঘুমায় না। রাতবাড়লে চৌরস্তার মোড়টা যেমন জেগে ওঠে, আমিও তেমনি চাঙ্গা হয়ে যাই। রাদ এক সময় বলে খোকন দা, বাসায় ইভা একা, আমি চললাম। কয়েকদিনেই বুঝতে পারি, এ-তো এক আশ্চযর্ জগত। চেনা-অচেনা রাত জাগা মানুষের হাট। এরা চা খায় আর দু’পায়ে দঁাড়িয়ে এত যে গল্প করে, যা শেষ হয় না। রাত গভীর হলে কোলাহল শেষ হয়। রাস্তায় যানবাহন কমে আসে। এ সময় মনে হয় চৌরাস্তার মোড়ে যারা দঁাড়িয়ে আছে এরা মানুষ না; মানুষের মতো দেখতে একদল ইঁদুর। এরা অন্ধকার ভালোবাসে; দিনের বেলায় দালান-কোঠায় লুকিয়ে থেকে এই এখন রাতের নিস্তব্ধতার সুযোগে খোলা হাওয়ায় এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে আর বলাবলি করছেÑ আহা, জীবন এত সুন্দর কেন। এত মিষ্টি হাওয়া কোন নদী থেকে আসে ...।

আমার অজান্তে আমার জীবনযাপন পাল্টে যায়। দিনের বেলায় ঘর থেকে বেরুই না। দু’য়েকটা লেখা যা ছাড়া হয়, ই-মেইলে পাঠাই। আমার দিন শুরু হয় সূযর্ ডোবার পর। মা বিচক্ষন এবং জ্ঞানসম্পন্ন মহিলা। তদুপরি মা বলে কথা; দেখিরে ছেলের মুখ, ঘুচে যায় সব দুঃখ। মিতুর বাসা থেকে এসে আমাকে কয়েপলক দেখে নিয়ে বলে- তুমি কী রাতজাগা রোগে ভুগছো! মা’র কথায় উত্তর না দিয়ে নানান বিষয়ে রাগারাগি শুরু করি। মা তাতে বিচলিত না হয়ে বরং শ্লেষ মিশিয়ে বলেÑ এত যে চিৎকার করছ, আমি যখন থাকবো না, তখন কিভাবে চলবা এখন থেকে ভেবে রেখো; মনে রেখো, জীবন দীঘর্; মৃত্যুর আগ পযর্ন্ত জীবন শেষ হয় না ...।

মা’র কথাই সত্য হয়। পত্রিকা অফিসে লেখা জমা দিয়ে এসে এক দুপুরে ফামের্গটে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। শরীরটা ভালো ছিল না। প্রখর রোদে মাথাটা হঠাৎ চক্কর মেরে জ্ঞান হারিয়ে ফুটপাতে পড়ে যাই। কয়েক সেকেন্ড মাত্র। তারপর ধীরে ধীরে সংজ্ঞা ফেরে। ততক্ষণে পথচারীরা ভিড় জমিয়ে নানান মন্তব্য জুড়ে দেয়। কেউ বলে হেরইনখোর। কেউ সমবেদনা জানিয়ে বলেÑ মলমপাটির্র খপ্পরে পড়েছিল মনে হয় ...।

এরপর আর কিছু মনে ছিল না। যখন চোখ মেলে তাকাই, দেখি মাথার কাছে মা বসে আছে। স্ট্যান্ডের ব্যাগ থেকে ফোটায় ফোটায় স্যালাইন আমার শরীরে প্রবেশ করছে। ডাক্তার বলেছেÑ পুষ্টিহীনতা থেকে এমন হয়। প্রেসার লো হয়ে মানুষ ভারসাম্য হারায়। টেক কেয়ার।

দুঘর্টনার কথা বন্ধুদের জানাই না। বিরাট প্রেস্টিজের ব্যাপার। ওদের উপহাস করুণার রূপ নিক তা চাই না। তাকিয়ে দেখি, এই অনিরাপদ সমাজে পরিবারই ভরসা। আমার দুদর্শা দেখে ভাই-বোনরা হাসেÑ বোহেমিয়ান লেখকদের এর চেয়ে ভাল কী হতে পারে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়তো মন্দ খেতে খেতে মরেই গেল! মা বলে এবার তোকে একটা বউ ধরিয়ে দিতে হয়। তা নাইলে লেখালেখি করবি ক্যামনে। কে তোকে দেখে-শুনে রাখবে! মার কথা শুনে এবার আর হৈচৈ করে উঠতে পারি না। ¤øান হেসে বলি মা শিমুকে একটা খবর দিবা।

শিমু আমাদের মধুর ক্যান্টিনের বন্ধু। মাস্টাসর্ পাস করে একটা ইংলিশ স্কুলে যোগ দিয়ে বহুবার বলেছে আমি যেন ওকে বিয়ে করি। কিন্তু তখন আমি বিয়েতে বিশ্বাস করতাম না। শিমু বিরক্ত হয়ে ওর থেকে জুনিয়ার এক সাংবাদিককে বিয়ে করে নিয়ে ছয় মাসও সংসার করতে পারেনি। ছেলেটা ছিল কুসংস্কারচ্ছন্ন। ওকে সন্দেহ করত। আমাদের সঙ্গে মিশতে দিত না। বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়ে মধুর ক্যান্টিনে এসে বলেছিল খোকন দা, তুমিই ঠিক আছ। দাম্পত্যজীবন একটা প্রহসন। একদম ফালতু...। কিন্তু এত বছর পর রোগসয্যায় শুয়ে মনে হচ্ছে শিমুরও তো এমন অসহায় দিন আসতে পারে। একাকী একটা জীবনের দুদর্শাও কম না। সন্ধ্যায় শিমু এসে আমার পাশে বসে হাসতে থাকে। কী লেখক সাহেব, একাকী একটা জীবনের জন্য এত যে পাগল ছিলেন; এখন বুঝতে পারলেন , একা থাকা যায় না! আমি হাসি। মা বলে তোমরা কী সবাই পাগল! শিমু বলে এবার পাগলামিগুলো ঠিক করে ফেলব আন্টি। আমি ওর হাত ধরে বলি চলো শিমু, আমরা সংসার করি। সংসার আমার দরকার। আমি অনেক কিছু লিখতে চাই অনেক লেখা বাকি আছে ...। আমার চুলে আঙুল ডুবিয়ে শিমু বলে Ñ বুঝতে পেরেছি। কিন্তু আগেতো সুস্থ হয়ে উঠতে হবে। সংসার করলে প্রতিদিন বাজার করতে হয়। বউকে নিয়ে ঘুরতে যেতে হয়। পারবা!

জীবন নিয়ত আনন্দের। কোনো ধরনের গøানি নিয়ে সে আনন্দ উপভোগ করা যায় না। আমি আনন্দটুকুই সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে চাই বাকি জীবনের প্রচেষ্টায়। শিমু বলে, ও আমার সঙ্গিনী হবে। হাত ধরে স্বগের্ নিয়ে যাবে!

এও কী সম্ভব!

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<15760 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1