শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রাবণে বৃষ্টি

শারমিন সুলতানা রীনা
  ১৯ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

যে রাতে মোর দুয়ারগুলি ভাঙলো ঝড়ে

জানিনাইতো তুমি এলে আমার ঘরে...

গুন গুন করে গান গাওয়া বৃষ্টির অভ্যাস। সব সময় তার কণ্ঠে গান লেগেই থাকে।

আজ কদিন ধরে এক নাগারে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, থামার কোনো লক্ষণই নেই। মাঝখানে একটু থেমে সন্ধ্যা থেকে আবার শুরু হয়েছে টিপ টিপ বৃষ্টি। বৃষ্টি যেন ওর কণ্ঠে সুরের নতুন মাত্রা এনে দেয়। আনমনে গাইছিলো রবিঠাকুরের গান। হঠাৎ দরজায় টোকা পরে ওর গান থেমে যায়। দরজা খুলতেই অবাক হয়ে যায় সে অপরিচিত একজনকে দেখে। ঠিক যেন রবিঠাকুরের গল্পের নায়কের মতো দেখতে ভদ্রলোক। কাকে চাই? জানতে চাইলে, বিনয়ীভাবে ছেলেটি জানালো সে এদিক দিয়ে বাড়িতে যাচ্ছিলো হঠাৎ গাড়ি নষ্ট হয়ে যাবার কারণে কোথাও কোনো গ্যারেজ বা থাকার জন্য হোটেল পাচ্ছিলো না। আজ রাতে যদি আপনাদের বাসায় থাকতে দেন কৃতজ্ঞ হই। একটু ওয়েট করুন। দরজা বন্ধ করে মায়ের সাথে ব্যাপারটি শেয়ার করে। মায়ের মন তার একটিমাত্র ছেলে প্রবাসী মনটা হু হু করে ওঠে ছেলের জন্য। মা আবার দরজা খুলে সব শুনে ছেলেটিকে ভিতরে নিয়ে আসে। সৌম্য শান্ত চেহারায় একটা আভিজাত্যের ছাপ। বৃৃৃষ্টি একটা টাওয়েল ও ভাইয়ের ড্রেস এনে ছেলেটিকে দেয় আপনি ফ্রেস হন। আমি আসছি। বাবার শরীরটা তেমন ভালো নেই তিনি ঘুমাচ্ছেন। মা বাবাকে ডেকে আর বিরক্ত করে না।

কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি চা ও নাস্তা এনে বসে। আপনার ড্রাইভারকে ফোন দিয়ে আসতে বলেন ও খেয়ে যাক।

ঃ তার প্রয়োজন হবে না। গাড়িতে খাবার আছে। রাতটুকু সে গাড়িতেই পাড় করবে সকাল হলে কোনো গ্যারেজ থেকে গাড়িটা ঠিক হলেই চলে যাবো।

: তাতো যাবেনই আপনাকে আটকে রাখার কথাতো বলিনি। দুজনেই শব্দ করে হেসে ওঠে।

: কি নাম আপনার

: বৃষ্টি

: আমি শ্রাবণ চৌধুরী। দুজনের নামের বেশ মিল আছে। শ্রাবণ এলেই বৃষ্টি নামে।

: হুম ঠিক তাই। তবে আপনাকে দেখে কিন্তু আমি নেমে আসিনি।

: বাহ দারুণ বললেন।

: আপনি খুব সুন্দর গান গাইতে পারেন।

: না না এ কি বলছেন। গুন গুন করে একটু গাইছিলাম। আপনি কিভাবে শুনলেন?

: আমি অনেকক্ষণ ধরে দঁাড়িয়ে ছিলাম, দরজা নক করতে সাহস হয়নি তখন আপনার গান শুনলাম।

: লুকিয়ে কারো গান শোনা ভারি অন্যায়।

: ওকে ক্ষমা চাইছি। আপনি চাইলে অন্যভাবে শোধ করে দিতে পারি।

: বুঝিনি

: আমি আপনাকে কবিতা শোনাতে পারি।

: দারুণ তো! আপত্তি নেই শোনান।

গল্পে বেশ সময় কেটে যায়। বুয়া এসে খাবার দিয়ে যায়।

খাবার শেষে বৃষ্টি বিদায় নেয় আপনি ঘুমান, আমার ঘুম পাচ্ছে। বিদায় নিয়ে রাত্রি বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ শ্রাবণের কথা ভাবে। অনেক কিছুই জানা হলো হলো না। সকাল হলে সব জানা যাবে। ততক্ষণে ঘুমের আলিঙ্গনে সপে দেয় নিজেকে।

সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙে তার। তড়িঘড়ি করে গতরাতের অতিথির খবর জানতে চায়। সে তো চলে গেছে তোর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে বলে, বলে যায়নি।

চলে গেছে? বুকের ভিতরে একটা ধাক্কা খায় বৃষ্টি। তাকে না বলেই চলে গেল? নাম জানা ছাড়া শ্রাবণের সম্বন্ধে কিছুই জানা হয়নিÑ এমনকি ফোন নংটাও নেয়া হয়নি।

সারাদিন বৃষ্টির মনটা শ্রাবণের আকাশের মতো থমথমে হয়ে থাকে। কিছুই ভালো লাগছে না তার। গতরাতের কথা ভেবে মনটা অভিমানে ভরে যায় অন্তত তাকে বলে যেতে পারতো অথবা মায়ের কাছে ফোন নংটাও দিতে পারতো।

সেই থেকে বৃষ্টি কাউকে খুঁজে বেড়ায় দেখা হলে শুধু একবার জানতে চাইবে মানুষ এমন হয়? একটা রাতের স্মৃতি তার মনটাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। ভালোলাগা আর অভিমানে ভরে আছে মন।

বেশ কিছুদিন পর পত্রিকায় একটি চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে ইন্টারভিউ দিতে এসেছে। তার আগে কয়েকজনের ইন্টারভিউ হয়ে গেছে। অবশেষে বৃষ্টির পালা চাকরিটা হবে কিনা ভাবতে ভাবতে দুরু দুরু বুকে বৃষ্টি ভিীতে ঢুকেই আচমকা ধাক্কা খায় ইন্টারভিউ বোডের্ অনেকের সাথে শ্রাবণ চৌধুরী। দেখা মাত্রই তার শরীর উত্তেজনায় কেঁপে ওঠে কী বলবে সব ভুলে যায়।

একটা খুশির আবেশও তাকে ছুঁয়ে যায়।

বসুন মিস বৃষ্টি। সম্বিত ফিরে পায় বৃষ্টি। কোনো ফরমালিটি আর মনে আসেনা। সরি বলে চেয়ারে গিয়ে বসে।

: কেমন আছো? খালাম্মা কেমন আছে?

: ভালো, আপনি?

: আমি ভালো আছি।

বোডের্র সবার কৌত‚হলী চোখ তাদের দিকে কেউ কিছু বলার আগেই আপনার চাকরিীহয়ে গেছে শ্রাবণ চৌধুরীর কথায় বাকিরা অবাক হয়।

: চাকরি হয়ে গেছে মানে? কিছুইতো জানতে চাইলেন না।

: জানার কিছু নেই। সেদিন আপনি আর আপনার মা আমার যে উপকার করেছেন তা শোধ হবার নয়।

: মানে?

: মানেটা পরে বলছি। বোডের্ যারা ছিল তাদের উদ্দেশ করে বলে প্লিজ কিছু মনে করবেন না আপনারা একটু আসুন আমি পরে আপনাদের ডেকে নেব। সবার কৌত‚হলী দৃষ্টি কিন্তু কেউ কিছু না বলে উঠে যায়। ওকে স্যার আসছি।

বৃষ্টি নিচের দিকে তাকিয়ে আছে লজ্জা, অভিমান সবকিছু মিলিয়ে ও ভাবতে পারছেনা কি বলবে?

: কিছু ভাবছেন?

: হুম বলে পরক্ষণে নিজেকে সামলে নেয়, কই কিছু নাতো। পরক্ষণে বৃষ্টির জড়তা কিছুটা কেটে যায়। একটা প্রশ্নের উত্তর দেবেন? সবাইকে চলে যেতে বললেন কেন, আর চাকরিটা হয়ে গেছে মানে কি?

: মুচকি হেসে শ্রাবণ চৌধুরী জানায় অফিসটা তারই। তাই কিছু জানতে চাইনি।

: সরি, বলে বৃষ্টি জিজ্ঞেস করে সেদিন আমাকে বলে আসেন নি কেন? আরও কিছু বলার আগেই শ্রাবণ চৌধুরী বলে ওঠে রাগ করেছেন নাকি।

: সেটাকি স্বাভাবিক নয়?

: আপনার সব প্রশ্নের উঃ দেবো আগে আমার কথাটা শুনুন। ভুল হয়ে গেছে কিন্তু কিছু করার ছিল না আপনি ঘুমিয়েছিলেন বলে আর ডিস্টাবর্ করিনি। তাছাড়া সে রাতে আমার ওয়াইফ আর একমাত্র মেয়ে সারারাত টেনশনে ছিল। আমি সব বুঝিয়ে বলার পরও মেয়ের কান্না সে তার বাপি ছাড়া কিছু বোঝেনা। বৃষ্টি স্তব্ধ হয়ে যায় ও বিবাহিত। আর কিছু শোনার ক্ষমতা সে মুহ‚তের্ হারিয়ে ফেলে। অভিমানের আকাশ ঘিরে একরাশ বেদনা তাকে ঘিরে ধরে। আর কি জানতে চাইবে সে। এক কথায় সব বুঝে নিয়েছে। তার প্রথম ভাললাগার সমাপ্তি এভাবে ঘটলো। যাকে কিনা দিনের পর দিন খুঁজেছে। যখন দেখা পেলো তখন সে অন্য কারো।

: কিছু ভাবছেন?

বৃষ্টি কিংকতর্ব্যবিমূঢ়। কোনো কথা খুঁজে পাচ্ছে না।

: আমার ওয়াইফকে আপনার ও আপনার মায়ের গল্প করেছি। এমন মহৎ দুজন মানুষকে সে দেখতে চেয়েছে। কিন্তু কাজের চাপে আমি আর আপনাদের ওখানে যেতে পারিনি। ভুলে ফোন নংটাও দিতে পারিনি আর আপনার নংটিও নেয়া হলো না। ভোরে গাড়ি ঠিক করেই ড্রাইভারের ফোন পেয়ে বেড়িয়ে আসি। এবার নিশ্চয়ই আপনার আর রাগ নেই।

: রাগ? কার উপরে করবে যেখানে অধিকার নেই সেখানে রাগ অভিমান? বুকের মধ্যেখানে যেন একটা পাথর চেপে আছে।

আর কিছু শুনতে তার মন চাইছে না। আজ আসি বলেই বৃষ্টি দঁাড়িয়ে পরে।

: একটু বসুন কফি খাই দুজন একসাথে। আর আমার ওয়াইফের সাথে কথা বলিয়ে দেই।

: না আজ আর নয় অন্যদিন কথা বলবো। ঘেমে যাচ্ছে বৃষ্টি। জীবনের প্রথম ভালোলাগাতেই সে ভুল করে ফেলেছে। আর ভালোবাসা এখন অলীক স্বপ্ন।

: শুনুন মি. শ্রাবণ চাকরিটা আমি করছিনে।

: কেন করবেন না? এমন চাকরি কেউ হাতছাড়া করে। তাছাড়া অনেক ধরনের সুযোগ সুবিধা আছে এখানে। আর আপনার বেলায়তো কথাই নেই।

: আমার কোনো সুযোগ সুবিধার প্রয়োজন নেই। অনেক ধন্যবাদ ভালো থাকবেন। বৃষ্টি পিছনে আর ফিরে তাকায় না। বুকের ভিতরে ঝড় বইছে। চোখ ঝঁাপসা হয়ে যাচ্ছে। কোনোদিন শ্রাবণকে আর বলা হবে না তার জমে থাকা মনের হাজার কথা মালা। শ্বাস উঠানামা করছে। খুব দ্রæত হেঁটে মূল রাস্তায় চলে এসেছে। চোখ দুটো জলে ঝঁাপসা হয়ে গেছে। লুকাতে পারছে না। একবার আকাশের দিকে তাকায়। রোদে জ্বল জ্বল করছে আকাশ। তার চোখের অশ্রæ লুকাতে একটু বৃষ্টির বড় প্রয়োজন।।।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<18148 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1