মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নন-পলিটিক্যাল জীবন

হারুন পাশা
  ২৬ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

রওনক, দ্যাখ বৃষ্টির পর ফকফকা আসমান। পাই-ধইরা বাতাস আইতাছে। টাটকা অক্সিজেন। শহরে পাইবি এইসব?

তা পাওয়া যাইব না, ঠিক পয়েন্টে টোপ ফালাইছস, মাহিন। আমরা তো ফরমালিন খায়া বঁাইচা থাকা মানুষ।

তুই খালি শক্ত শক্ত কথা কছ। হালকা কর।

হালকা হইল, আমরা যে মানুষগুলারে দেখি এ্যাগোর প্যঁাচ খুলবার গেলে বাইর হয় কাউয়ার বাসা।

কাউয়ার বাসায় কি কোকিল ডিম পাড়ছে?

না, সময় বদলানির কারণে কাউয়ার বাসায় কাউয়াই ডিম পাড়ে।

টিভি-টুবি দেখছ, না খালি ফেসবুক পড়ছ?

দুইটাতেই আছি। ক্যান?

গোবিন্দগঞ্জের খবর-টবর জানছ?

জানি। আমি গেছিলাম ওইখানে। ম্যালা চাইল।

মানে?

চাইল হইলো সরল বিশ^াস নিয়া।

খুইলা বল।

খুলতে গেলে তো অনেক ভঁাজ খুলুন লাগে, তা তো জানছই।

মজা না নিয়া ঘটনার ভঁাজ খুল।

এই ঘটনার পিছনে আছে ভোটের রাজনীতি।

ক্লিয়ার কর।

সঁাওতালপুত্রের ফেসবুক স্ট্যাটাস পড়। আশা রাখছি ক্লিয়ার হবি।

কী লিখছে?

নিজে পইড়া দেখ, কী লিখছে।

জলে ভাসা পদ্ম আমরা

আমি সঁাওতালপুত্র। সুশীলরা বলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী। আমার কলেজের বন্ধুরা জানতে চায়, কী এমন ঘটেছিল সেদিন, যার জন্য নিজ দেশেও উদ্বাস্তুর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। আমিও উত্তর খঁুজি। কারমাইকেল কলেজের পাশ দিয়ে যাওয়া রেললাইনে হঁাটি আর ভাবি। পথ অন্ধকার হয়ে আসে কিন্তু চিন্তা আলো পায় না। আমরা তো সহজ পথে দিন পার করে তৃপ্তি পাই। আমাদের কঠিন আর জটিল হিসাবের প্রয়োজন নাই। আমাদের জোর-জবরদস্তি করার মতো ক্ষমতা নাই। আমরা নিরীহর থেকেও বেশি নিরীহ। সারাদিন মাঠে কাজ করার পর যা পাই তা দিয়েই আমাদের দিন চলে যায়, চালিয়ে নেই। একদিন স্যার ক্লাসে বলেছিলেন, এদেশে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী সমাজ, রাজনীতি, অথর্নীতি, সংস্কৃতি থেকে বঞ্চিত। নিযাির্ততও। বলেছিলেন দেশের যে কোনো ইস্যুর প্রভাব তাদের ওপর পড়ে। ভোট কিংবা অভোট নিয়ে জাতীয় ক্যাচালের প্রভাবও পড়ে। আগুন লাগাও। ঘর পোড়াও। জমি দখল করো। বড় একটা প্রক্রিয়া চলতেই থাকে ক্ষুদ্রের ওপর। আঘাতের পুরনো চিহ্ন না শুকাতেই নতুন চিহ্ন যোগ হয়। সেদিন স্যারের কথা শুধুই শুনেছি। তখন স্কুলে ছিলাম তো, অতটা বুঝিনি। এখন তো আরো দুইধাপ পার হয়েছি। এখন বুঝি। এখন তো আমি অনাসর্ প্রথম বষের্র ছাত্র। আমি নিজেই বিশ্রি এক ঘটনার প্রমাণ। গ্রামে ভোট শুরু হলে চেয়ারম্যান মঈনুল হাসান আসে, ভোট চায়। কী মিনতি! হাতে ধরবে না পায়ে পড়বে তার ঠিক নাই। ওয়াদা করে চেয়ারম্যান মঈনুল হাসান। বলে, আপনাদের জমি আমি ফিরিয়ে দেব। আপনারা বাংলাদেশের নাগরিক না! আপনারা বাপ-দাদার সম্পত্তি পাবেন। আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। প্রয়োজনে রক্ত দিব। জীবন দিব। আর আমি যদি বিশ^াসভাঙ্গি তাহলে আপনারা আমার গলায় জুতার মালা পড়াবেন। আমরা গাইবান্ধায় লংমাচর্ করেছি, আপনারা জমি পাবেন। মঈনুল আমাদের মা-চাচিদের মধ্য থেকে একজনকে ধমর্ মা বানালেন। আহারে, ভোট পাবার লাভে কত কিছুই না করতে চাইলেন। বোঝাতে সক্ষম হলেন তিনি বেশ ভালো মানুষ। বঞ্চিত আমাদের জন্য কাজ করবেন। তার মন্ত্রে অবশ হয়ে আমরা মঈনুলের পক্ষ থেকে প্রচারণা করি মুখে মুখে, মাইকে মাইকে। বলি ভোট যেন মঈনুল হাসানকেই দেয়।

আমাদের এলাকার সব ভোটারকে কেন্দ্রে নিয়ে যাই। আমরাই পাহারা দেই কেন্দ্র। সকাল থেকে কোনো রকমে দুপুর হয়। সময় আর আগাতে চায় না। আমরা অপেক্ষা করতেই থাকি। মোবাইল বের করে দেখতে থাকি। না যাওয়া সময় পার হওয়ার পর সেন্টার থেকে খবর আসে মোরগ মাকার্ জিতেছে। চেয়ারম্যান হয়েছে মঈনুল হাসান। আমরা আনন্দ মিছিল বের করি। মঈনুল হাসানের গলায় ফুলের মালা পরাই। সেও খুশিতে আমাদের সঙ্গে বুক মেলায়। হোটেল রিজাফ করে। বলে, যার যতখুশি খাও। বেয়ার নিয়ে আসে তার সাঙ্গপাঙ্গরা। আমরা খাই পেটখুলে। বাড়িতে ফিরতে ফিরতে রাত অনেক হয়। আমরা ঘুমাই। পড়শির চিৎকারে ঘুম ভাঙে।

বুঝলি কিছু মাহিন?

পুরাটাই জানা লাগবে।

জানাব। অর পরের স্ট্যাটাস আছে, পাবি পড়তে। তারপর বল, কেমন আগাচ্ছে দিনকাল?

আগায় না রে রওনক। খালি পিছায় আর ভাবায়।

কি এমন ভাবনা, বল তো শুনি?

আমি একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে টিএসও পোস্টে চাকরি করি। ওইখানে আমার অধীনে থাকে দশজন লোক। দশজনে সারাদিন এইখানে ওইখানে ঘুইরা মাল ব্যাচা-বিক্রি করে। আমি হিসাব লই। মাঝেমধ্যে ফিল্ডে খেঁাজ নিতে যাই। তাতেই পাই ত্রিশ হাজার। আর হ্যারা পায় মাত্র আঠারো হাজার টাকা। আমি লাঞ্চ আর যাতায়াত খরচ পাই। হ্যাগোর আঠারো হাজার থাইকাই সব কিছু করা লাগে। ক, এই শহরে আঠারো হাজারে কিছু হয়? চলে?

না। চলে না। এইটাই তো নিয়ম। জীবন চলব কিন্তু শান্তি আসব না, যেরকম আমরা চাই।

রওনক, আজ উঠতে হবে রে। রাত হয়ে গেছে অনেক।

তুই আমার বাসাতেও থেকে যেতে পারিস।

না রে। আজ যাই। কাল দেখা হবে।

রওনক, সঁাওতাল পুত্রের আরেকটা স্ট্যাটাসের কথা বলছিলি।

বলেছিলাম, কিন্তু মনটা খারাপ। খালি খারাপ না, খারাপের ওপর স্কয়ার।

আমি তো জানতাম তুই বাংলাদেশের সবচায়া সুখি মানুষ। তাইলে তরও এমন হয়? কারণ কি?

বাইরে থাইকা দেখা মানুষ আর ভিতরের মানুষ কিন্তু এক না, এইটা তো জানা কথা।

হুম। মন খারাপের কারণটা বলবি তো।

বাবা অসুস্থ। হাসপাতালে ভতির্। নতুন প্রোডাকশন নামানোর লাইগা কাজ আগাইবার চাই। কিন্তু শক্তি পাই না। বাপের অসুখ হওয়ার সংবাদ শক্তিরে উয়িক কইরা দিছে।

তর ওই কবিতাটার কথা মনে আছে?

কোনটা?

দুঃখ করো না, বঁাচো।

বল।

অইখানের একটা লাইন এমন, ‘দুঃখকে স্বীকার করো না, সবর্নাশ হয়ে যাবে।’

গুণের?

হুম, নিমের্লন্দু গুণের।

বুঝতে পারছি।

রওনক, তুই তো জানিস, জীবন একটা আজব জিনিস। কত কিছুর লগে মানায়া-চিনায়া জীবন তার নাউ কিনারে পেঁৗছাইবার চায়। মাঝেমধে কিনারের দেখা পায়, আবার পায় না। এ্যার মধ্যে ব্যস্ততা, নাগালের বাইরে থাকা সময় প্যারা আর পীড়া তো দেয়ই।

আজ দেখছি তুই কঠিনভাবের ডিকশনারি খুইলা দিলি।

না রে দোস্ত। তা না। একটা চাকরি করি জানোস তো। ওইখানে যায়ুন লাগে সকাল সাড়ে সাতটায়। ফিরতে ফিরতে রাইত আটটা-নয়টা বাজে। সারাদিন অফিসের প্যারায় কাইটা যায়। টাকা কামাই করি নিজের ভালোর লাইগা। ভালোটা কই থাইকা আসে? বউরে সময় দিবার পাই না। বাপ-মায়ের লগে তো মাসে একবার আলাপ হয়। এই যদি হয় জীবন, তাইলে এত কামাই কইরা হইতাছে কিছু?

মাহিন, সময় আর ব্যস্ততারে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এইটা করতে পারলে দেখবি সব ঠিকঠাক। আপসেট হইছ না। সঁাওতালপুত্রের স্ট্যাটাসের কথা বলছিলি। পড়বি আজ?

আজ, না, থাক। কালকে পড়ি।

আচ্ছা।

আগুন আর বন্দুকের নলে দম

সঁাওতালপুত্র বলছি। দ্বিতীয় পোস্ট। তারপর চোখ কচলাতে কচলাতে বাইরে বেরুলে দেখতে পাই জমিনে আগুন দেয়া হচ্ছে। সেখানে যাওয়ার পর দেখি ঘরে আগুন দিচ্ছে। সঙ্গে র‌্যাব, পুলিশ, ইউএনও, আমাদের এমপি আর চেয়ারম্যান মঈনুল হাসান। মঈনুলের চরিত্র বোঝার চেষ্টা করি। গতরাতেও যে আমাদের লোক ছিল, সে আজ ওই দলে। চিন্তায় খেঁাচা দিতে থাকি। না, কিছু বের হচ্ছে না। আমার পাশের একজন বলল, আমরা যখন খাচ্ছিলাম তখন চেয়ারম্যান ফিসফিসিয়ে বলছিল খায়া নাও আজকাই, পরে আবার সুযোগ পাও না, না পাও। তার ফিসফিসানির মানে বুঝতে পারলাম। আগুনে জ¦লছে ঘর আর আবাদের জমিনে। আমরা নেভাতে যাই। নিভে না আগুন। দুনিয়ার সমস্ত আগুনের তেজ নিয়ে জ¦লছে। ক্ষমতার চাপে বেরুচ্ছে আর জ¦লছে। আমাদের বুক-পঁাজর পুড়তে থাকে আগুনের তাপে। ভেতরে শক্তি জোগাড় হতে থাকে। একসাথে হতে থাকি আমরা। নিজেদের নিরাপদ রাখতে বশার্, ফলা ঢেলাতে থাকি। আবার এটাও ভাবি ঘরে মা-চাচি-বোন, ছোট বাচ্চারা আছে। তাদের কথা মনে আসায় আমরা ক্ষ্যান্ত দেই। অনুরোধ করি আগুন না দিতে। দ্বিজেন দা স্যালেন্ডারে ভঙ্গিতে এগিয়ে যায়। তারা এ ভঙ্গি বোঝা সত্তে¡ও গুলি চালায়। বৃষ্টির মতো করে শরীরে লাগতে থাকে ছররা গুলি। চোখ-মাথায় গুলি লাগার পর দাদা মাটিতে পড়ে যায়। এরপরও তার পিঠ আর কোমর বরাবর গুলি করা হয়। গুলি করে তো একজনের মাথার খুলিই উড়িয়ে নিয়েছে।

মাইকে ঘোষণা চলছে, আগুন লাগাইছে, লুট করো। জঙ্গি, ভ‚মিদস্যু, আলবদর, আলকায়দা এখানে ঢুকে পড়েছে। তাদের উচ্ছেদ করা হোক। আমাদের উপর কত বড় মিথ্যা তকমা লাগানো হয়েছে। এদেশের নাগরিক হয়েও আমরা জঙ্গি খেতাব পাই। তাদের সঙ্গে আসা মানুষেরা সাধ্যমতো লুট করেছে। একটা সংসারে জিনিস কি কম থাকে? গরু-ছাগল-ভেড়াও বঁাচেনি। আগুন দেয়া আর গোলাগুলি চলে পরেরদিন সকাল এগারোটা পযর্ন্ত। আগেরদিন যেগুলো পুড়েনি পরেরদিন সেগুলো পুড়িয়েছে। ভিটার কোনো চিহ্নই রাখবে না। এই মতলবে ট্রাকটার দিয়ে জমিন চাষ করে। অন্য জায়গায় তারা চাষ করতে পারত, কিন্তু করেনি। আমাদের ভিটামাটিই আগে চাষ করে। তারা চেয়েছিল জয়ের ফুঁতেই নিশ্চিহ্ন করে দিবে আমাদের। ওই রাতে চেয়ারম্যান মঈনুল পায় কোটি টাকা। টাকার ঘোরেই দলবলসহ আসে পরেরদিন। যুক্ত করে নিজেকে মহৎ কাজে। তারা বড় বড় গাছেও আগুন দিয়েছে। পুকুরের উপর কয়েকটা সাদা বক উড়াউড়ি করছিল, তাদেরকেও সঁাওতাল মনে করে একজন বন্দুক উঠিয়েছিল। ঘটনার দিন ছোট ভাই অধের্ক খাওয়া অবস্থায় দৌড় দেয়। আগুনের দলা তার বুক বরাবর পড়ছিল। দাদি বিছানা থেকে উঠতে পারে না, এদিকে ঘরে আগুন দিয়েছে, সে ভয় পেয়ে ঝাপ দেয় নিজেকে বঁাচাতে। ভেঙে যায় তার পা। আমাদের কান্নার আওয়াজ আশপাশের কয়েক গ্রাম পযর্ন্ত পেঁৗছালে মানুষ জড়ো হয়। তারাও উপায়হীন। আমরা দেখছি, কঁাদছি আর ঈশ^রকে ডাকছি; যা গরিবের শেষ সম্বল।

আমরা যেখানে ঘর তুলেছিলাম, আবাদ করেছিলাম সেখানে কঁাটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলে। দেখে মনে হয়েছে এ যেন দেশের ভেতরেই আরেক দেশ। গোবিন্দগঞ্জের ইউএনও মন্নাফ বলেছেন, উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে গুলি ছোড়ার নিদের্শ দেয়া হয়েছিল। কি এমন উদ্ভূত পরিস্থিতি হয়েছিল? পরিস্থিতি তো সামাল দেয়ার ছিল, কিন্তু তারা সামাল দেয়নি। এটাও ছিল তাদের পরিকল্পনার অংশ।

মঈনুনের কথামতো বাপ-দাদার জমি ফেরত পাবার আশায় ধার-দেনা করে চালা ঘর তুলেছিলাম। আবার তার হুকুমেই চলে উচ্ছেদ। পুলিশ ছিল, তারপরও ঘরে আগুন দেয়া ঠেকায় নাই। কি আজব দেশ! আমরা সরল বলে আমাদের বিশ^াস নিয়ে অতীতে তারা ছ্যঁাচড়ামি করেছে এবং করছে এখনো। পুলিশ, র‌্যাব আমাদের সহযোগিতা না করে তারাও আগুন দেয়া শুরু করল। আশপাশের নেতারা আসছে, ছবি উঠাচ্ছে, দেখাচ্ছে তারা আমাদের সঙ্গে আছে। আল্টিমেটলি তারা আমাদের সঙ্গে নাই। তারা নিজেদের প্রচারণা বাড়াচ্ছে, র‌্যাংক আগাচ্ছে। বড় নেতাদের দেখাচ্ছে তারা সঙ্গে আছে। পরেরদিন পত্রিকায় বড় করে ছবি ছাপাবে। মিডিয়া কাভারেজ পাবে। আহা রে নেতা, উপনেতা, পাতি নেতা। আহারে চেয়ারম্যান, এমপি। তোমরা দীঘর্জীবী হও। তোমাদের তো আরও অনেক সময় বঁাচতে হবে। এই সঁাওতালদের আবার ছলনায় হারাতে হবে। সঁাওতাল না হোক অন্যদের জায়গা-জমিন থেকে উচ্ছেদ করতে হবে। এসব তো তোমাদেরই করতে হবে। তোমরাই করবা। নইলে কোটিপতি হবে কেমন করে? বড়নেতা হবে কেমন করে?

আমাদের ঘর পুড়েছে, মন পুড়েছে। পোড়া মনে শান্তি আসে না। আমরা বাড়ি ফিরি না, গ্রামে ফিরি না, ফিরি এক অন্ধকার ভবিষ্যতের ঘেরাটোপে। মা হাসে না, বাবা হাসে না, গ্রাম হাসে না। এ যেন ভ‚তের দেশ। ঘটনার পর ভিকটিমরা কিছুদিন চিকিৎসা আর ওষুধ পেয়েছে, কিন্তু এখন আর কেউ খোঁজ-খবর নেয় না। সময়টাই এমন। একটার পর একটা ঘটনা ঘটছে, আর মানুষ তাদের মনোযোগ নতুনটার দিকেই বাড়াচ্ছে। আগেরটা হারিয়ে ফেলে গুরুত্ব। হামলার পর অনেকে সুষ্ঠু বিচার, জমি উদ্ধারসহ হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, সুষ্ঠু তদন্তের জন্য উচ্চ আদালত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি হবে। সেই কমিটি আমাদের বেদনাতর্ চিত্র দেখে, যারা ঘটনাটা দেখেছে তাদের স্বাক্ষর নেয়। পরে তদন্ত প্রতিবেদন উচ্চ আদালতে গেলে পুলিশসহ জেলা প্রশাসককে সরিয়ে নেয়া হয়। বিচার এটুকুই। প্রন্তু যে বা যারা এই ঘটনা ঘটাল এবং হামলা করলো তারা ধরাছেঁায়ার বাইরেই রয়ে গেল। এটাই তো আমাদের দেশ। এটাই তো হবার কথা। আর কিছু লিখতে পারছি না। আগুন আর বন্দুকের নলে আটকে গেছে দম। কষ্টরা ফাল দেয়। জেগে ওঠে। ছটফটায়। কিন্ত্রু নিভিয়ে রাখতে হয়। সঁাওতালপুত্রের মন ভালো নেই। শরীর ভালো নেই। সে হেঁটেই যাচ্ছে রেললাইন ধরে।

রওনক, সঁাওতালপুত্র প্রথম স্ট্যাটাসে যে লিখল, ‘আপনারা বাপ-দাদার সম্পত্তি পাবেন’, ব্যাপারটা ক্লিয়ার করবি?

শিউর। ওই এলাকার মঈনুল হাসানরা একটা কমিটি করে ‘সাহেবগঞ্জ বাগদা ফামর্ ইক্ষু খামার ভ‚মি উদ্ধার সংহতি কমিটি’ নামে। যার সভাপতি হইলো মঈনুল। শাহজাহান মিয়া সাধারণ সম্পাদক। সহসভাপতি ফিলিমন বাস্কে। এই কমিটি বোঝায়, চিনিকল কতৃর্পক্ষ জমি অধিগ্রহণের সময় জমির মালিকদের সঙ্গে যে চুক্তি করে সেখানে উল্লেখ ছিল, কখনো ওইসব জমিতে আখ ছাড়া অন্য ফসলের চাষ হলে প্রকৃত মালিকদের জমি ফেরত দেয়া হবে। আর ওই জমির মালিক আছিল এই প্রজন্মের সঁাওতালদের বাপ-দাদারা। এইদিকে রংপুর চিনিকল কতৃর্পক্ষ কয়, ১৯৬২ সালে জমি অধিগ্রহণের সময় চুক্তিনামায় আছে, কখনো চিনিকল বা খামার বন্ধ হলে সেক্ষেত্রে ওই জমি সরকারের কাছে চলে যাবে। খামারে আবাদ হইত আখ। কয়েক বছর থাইকা আবাদ করে ধান আর তামাক। ভোটের সুবিধা পাইবার লাইগা মঈনুল তাদের উস্কায়া দেয় ওই কথার লগে আরও অনেক কথা যোগ কইরা। চেয়ারম্যান ২০১৪ সাল থাইকা সঁাওতালগোর আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়া আইতাছে। ভোটে জিতার পর অয় পাশকাটে। যা মারা খাওয়ার খায় সঁাওতালরা।

লোকটা তো সত্য সত্যই বদ।

তা কইবার পারছ। অবশ্য প্রতিবেশী দেশেও এসবই তো চলতাছে। ভারতে তো প্রত্যেকদিন এইসব ঘটতাছে। মিয়ানমার তো ধমীর্য় বোধ-বিশ^াস থাইকা আলাদা হউনের লাইগা রোহিঙ্গা মুসলমানদের দেশ থাইকাই বাইর কইরা দিল। আঙ্গোর নেতা-কমীর্রা মনে হয় এইখান থাইকা ধারণা পাইয়া নিজেগর পুংডামি আরও মজবুত করতাছে। দেখবি ১৯৪৭ সাল থাইকা ২০১৪; এই ৬৭ বছরে সঁাওতালগোর ৫ হাজার ১৯০ কোটি টাকার সম্পত্তি বেদখল হইছে। আর এই উচ্ছেদে ১৬টা আইটেম চালু রাখছে ওইসব সুবিধা আদায়কারী বদেরা। এইহানো যেমন করল চেয়ারম্যান। এই আগুন, লুটপাট আর গুলির তলে কত আশা, কত স্বপ্ন, কত ইচ্ছা, কত সম্ভাবনা যে চাপা পড়লÑ এইটা উপলব্ধির বাইরেই রইল চেয়ারম্যান মঈনুল হাসান, এমপি আর প্রশাসনের।

মাহিন, তর কেস ডিসমিস হইল?

চেষ্টা করতাছি সময়রে নিজের মতো ভাগ করার। ওইদিন তুই কিস্তু ভালোই বলছিলি। সময়রে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। জীবনের লাইগা ব্যস্ততা। ব্যস্ততাই যদি জীবনরে আহত কইরা তুলে তাইলে তো হইব না।

বাহ্, মনে হইতাছে ব্যাপক অগ্রগতিত আছস। গ্রেটম্যান।

তর ইম্প্রুভ হইল?

হালকা-পাতলা। বাপ সুস্থ হওয়ার পথে।

রওনক, সামনে চল। চা খাই।

আচ্ছা, চল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<19345 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1