বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
জন্মদিনের শুভেচ্ছা

মঈনুদ্দিন কাজলের উপন্যাস মুক্তিযুদ্ধে মায়াবতী

অসীম সাহা
  ১৬ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

বাংলাদেশের কথাসাহিত্যে মঈনুদ্দিন কাজল একটি পরিচিত নাম। বিশেষত নিজে অস্ত্র হাতে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন বলে নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় জারিত হয়ে তিনি এ পযর্ন্ত বেশ কটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গল্প ও উপন্যাস লিখে ফেলেছেন, যা কথাসাহিত্যপ্রীত পাঠকদের কাছে একটি ভিন্ন ব্যঞ্জনায় অভিষিক্ত হয়েছে।

‘মুক্তিযুদ্ধে মায়াবতী’ তেমনি একটি উপন্যাস, যেটির কাহিনী আবতির্ত হয়েছে একটি সত্যি ঘটনা অবলম্বন করে। বৃহত্তর ফরিদপুরের ভাটিয়াপাড়া অঞ্চলে এক দুঃসাহসী বীর নারী মায়াবতীর মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের এবং তার স্বামী অনিলের আত্মোৎসগের্র মমাির্ন্তক ও মমর্স্পশীর্ ঘটনার শিহরণ জাগানিয়া কাহিনীর এই উপন্যাসকে একটি ভিন্নমাত্রা দান করেছে। অনিল গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান। মায়াবতীর মতো রূপসী কন্যাকে বধূ করে ঘরে তুলে আনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার কয়েক মাস আগে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পাকসেনা এবং রাজাকাররা একদিন অনিলের বাড়িতে আক্রমণ চালিয়ে রূপসী মায়াবতীকে সেখান থেকে তুলে নিয়ে যায়। সে সময় অনিল ক্ষেতে কাজ করছিল। একটি শিশু ছুটে গিয়ে এই খবর অনিলকে জানালে রাজাকারদের পথরোধ করে দঁাড়ায়। কিন্তু রাজাকাররা অনিলকে আঘাতে আঘাতে জজির্রত করে তাকে মৃত ভেবে ফেলে রেখে জোর করে মায়াবতীকে তুলে নিয়ে যায়। কিন্তু অনিল মরেনি। একটু পরে সম্বিৎ ফিরে পেলে সে একলাফে উঠে পড়ে দ্রæত বাসায় ছুটে গিয়ে খেজুরগাছ কাটার বড় আকারের একটি ছেনি আর পাট কাটার একটা হাসৈ নিয়ে বিদ্যুৎগতিতে দৌড়ে গিয়ে খানসেনারা নদী পার হওয়ার আগেই একটি ছোট্ট ডিঙিতে নদী পার হয়ে অন্য পারে গিয়ে ধানক্ষেতে লুকিয়ে থাকে। তারা অতি সন্তপের্ণ ক্ষেতের আইল ধরে দৌড়াতে থাকে। খানসেনারা মায়াবতীকে নিয়ে অন্য পারে গেলে অনিল সেই ছেনি আর হাসৈ দিয়ে তিন তিনজন খানসেনাকে পাগলের মতো এলোপাতাড়ি কোপাতে কোপাতে নদীর পানিতে ফেলে দিয়ে মায়াবতীকে নিয়ে ঢুকে পড়ে ধানক্ষেতে। তারপর নদী পার হয়ে দুজনে মিলে পাশের একটি প্রত্যন্ত গ্রাম ইটনায় গা ঢাকা দেয়। অনিলের এই বীরত্বের কাহিনী সারা গ্রামে ছড়িয়ে পড়ার পর ধন্য ধন্য পড়ে যায়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকেও প্রচারিত হয় অনিলের বীরত্বকাহিনী। কিন্তু গ্রামের মানুষ জানতো, এর ফল ভালো হবে না। খানসেনারা নিশ্চয়ই এর প্রতিশোধ নিতে গ্রাম জ্বালিয়ে দেবে, শত শত মানুষকে খুন করবে। রাজাকাররা অনিলকে মেরে ফেলে রেখে যাওয়ার পরও কোনো আজব শক্তিতে সে বেঁচে উঠে তিনজন পাকসেনাকে খতম করতে পারলো, এ নিয়ে খানসেনাদের মনে রাজাকারদের প্রতি সন্দেহ জাগে। তখন বিব্রত রাজাকাররা প্রতিশ্রæতি দেয়, যে করেই হোক, অনিল ও মায়াবতীকে খানসেনাদের সামনে হাজির করবেই। তারা সিদ্ধান্ত নেয় গ্রামবাসীদের ওপর অত্যাচার চালালেই তারা অনিল ও মায়াবতীর খবর জানিয়ে দেবে। কিন্তু তারাও সত্যি জানত না, অনিল ও মায়াবতী কোথায়? আর জানলেও গ্রামবাসী অনিলকে জীবন গেলেও ধরিয়ে দিত না। কারণ তারা অনিলকে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসতো। ওদের দুজনকে না পেয়ে রাজাকাররা গ্রামবাসীর ভাবনামতোই ভাটিয়াপাড়া আক্রমণ করে অনিল আর মায়াবতীকে খুঁজতে থাকে আর তাদের না পেয়ে গ্রামের পর গ্রামে সব রকমের নিযার্তন, অত্যাচার ও খুনের উৎসব চালাতে থাকে।

এই খবর অনিলের কানে যায়। তার একার জীবনের জন্য গ্রামের শত শত মানুষের জীবন যাবে, এটা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। মায়াবতীকে বুঝিয়ে সে পাকসেনাদের কাছে আত্মসমপের্ণর সিদ্ধান্ত নেয়। সে ভাটিয়াপাড়া যাওয়ার আগে মায়াবতীকে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং ক্যাম্পে দিয়ে আসে। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য ট্রেনিং নেয়ার কথা বলে মায়াবতীকে রেখে অনিল ভাটিয়াপাড়া এসে খানসেনাদের কাছে আত্মসমপর্ণ করে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<22613 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1