বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

একটি স্বপ্নের দীঘর্শ্বাস

আহমেদ উল্লাহ্
  ১৮ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল ললিতার, শোয়া থেকে উঠে বসে ঘুমজড়ানো চোখে এদিক ওদিক তাকায়! চেহারায় বিষণœতার ছাপ! আচমকা ভ‚মিকম্পের পর মুষড়ে পড়া ছন্দহারা পৃথিবীর মতো নিবার্ক ঝিম ধরে তাকিয়ে আছে ললিতা। হলুদ ডিমলাইটটি জ্বলছে নিঘুর্ম। খাটের পাশে টি- টেবিলে মুখ ঢাকা কঁাচের জগ এবং পাশেই নিচের দিকে মুখ করে উল্টো হয়ে দঁাড়িয়ে আছে কঁাচের গøাসটি। গøাসের ভেতরটা পরিষ্কার রাখার জন্য সবসময় গøাসটিকে উল্টে রাখে ও। ঘুমানোর পর একাধিকবার ঘুম থেকে উঠে পানি পান করতে হয় ললিতাকে, এই অভ্যাস ওর শৈশব থেকে। তাই ঘুমানোর আগে যতœ করে প্রতিরাতে জগভতির্ পানি ও গøাস হাতে কাছে রেখে দেয়।

ফ্যাকাশে চেহারায় এদিক ওদিক তাকানোর মাঝে জগের ওপর দৃষ্টি পড়াতেই কম্বল ছেড়ে উঠে এসে একগøাস পানি ঢেলে আনমনাভাবে অধের্ক পানি পান করে বাকি পানিভতির্ গøাসটি যথাস্থানে রেখে বিড়বিড় করতে থাকল...

এ কী স্বপ্ন দেখলাম আমি! মুসাফিরকে তো অনেক আগেই ভুলে গেছি, ইদানিং ভুল করেও ওকে আর মনে পড়ে না। ওকে নিয়ে এ কী ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখলাম আমিÑ যা কখনো বাস্তবে সম্ভব নয়!

স্বপ্নের ঘোরে ললিতার মস্তিষ্কের সেরিব্রাল কটের্ক্স আন্দোলিত হতে থাকল, মনে হচ্ছে ঘুমের ঘোরে ওই স্বপ্নটি বিদ্যুৎ প্রবাহের মতো সেরিব্রাল কটেের্ক্স অপসৃত হওয়া মুসাফিরের স্মৃতিগুলো জীবন্ত করে তুলেছে।

কিন্তু আমি তো মুসাফিরের কথা একেবারেই ভুলে গেছি, ভুল করেও ওর কথা আর মনে পড়ে না। ওর কথা ভাবা কি চিন্তার কোনো কারণই নেই, আমার অথচ ওকে নিয়ে কেন এমন বিপজ্জনক একটা স্বপ্ন এখন দেখলাম? আমিইবা কেন দেখলাম? না-জানি কেমন আছে ও? কোথায় আছেইবা কে জানে? ওর সঙ্গে যোগাযোগের যবনিকা প্রায় পঁাচ বছর আগে।

মুসাফির আমার আত্মীয় কেউ না। ওর সংগীত চচার্র প্রতিভাটা তখন এলাকা ছাড়িয়ে জাতীয় পযাের্য় কড়া নাড়ছিল। ওই সময়ে উপজেলা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ওর একক গানের সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করেছিল, শিল্পকলা একাডেমির অডিটোরিয়ামে। ওই অনুষ্ঠানের দাওয়াতপত্র ফারিয়া নামের এক ছাত্রী যখন আমার হাতে দিয়ে বলেছিল, ম্যাডাম, আমার মামার একক সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় আপনি থাকবেন শিল্পকলা একাডেমিতে।

আমি রীতিমতো পিলে চমকে গেছিলাম; আজো পাড়াগঁায়ে এমন একজন গুণী মানুষ রয়েছে অথচ আমি জানি না। মুসাফিরের সঙ্গে কথা বলা, একনজর দেখার কৌত‚হলটা ক্রমেই যখন বাড়তে থাকে, ফারিয়ার মাধ্যমে ওর মুঠোফোনের নম্বরটা সংগ্রহ করে ওর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় ও কথা হয়।

ফোন দিয়েছিলাম সন্ধ্যার কিছুটা পর। জানি এ সময়টায় সে অবসর থাকে। এ ছাড়া দিনের বেলায় বেশি সময় নিয়ে কথা বলার সুযোগ নেই ওর সঙ্গে। প্রথম ডায়ালেই রিসিভ করে ও বলল, শুভসন্ধ্যা! কে বলছেন প্লিজ?

পরিচয়টা না হয় পরেই দিই, আপনার লেখা ওই আধুনিক গানের কথাগুলো দারুণ হয়েছে!

ধন্যবাদ! কোন গানটির কথা বলছেন আপনি?

ওই যে, স্থায়ীটা ছিল এরকমÑ ‘আমি পথের ধুলায় ঝরেপড়া বনফুল, কেউ দেখে না কান্না আমার বেদনা অক‚ল’। দারুণ গানটির ভাবের স্রোত! তবে, আপনার একক অনুষ্ঠানে যেভাবে উপস্থাপনের কথা সেভাবে গানটি গাইতে পারেনি শিল্পী। আমাকে কি আপনি চিনতে পেরেছেন?

আপনাকে না দেখে কীভাবে বলব?

কল্পনায় ডুব দিয়ে দেখুন তো!

আমতা আমতা স্বরে মুসাফির বলে, না, চেনা মনে হচ্ছে না।

আপনার কণ্ঠও কি আপনার চেনা মনে হচ্ছে না?

তবে, আপনার কণ্ঠটা মনে হচ্ছে চেনা চেনা!

এর পর থেকে প্রায়ই ওর সঙ্গে কথা হয়। শুনেছিÑ বেচারা শৈশব থেকেই ছন্নছাড়া স্বভাবের। পারিবারিক চাপে পড়ে বিয়ে করেছিল। ছয়-সাত বছর সংসারে তখনো সন্তান হয়নি বলে ওর এতটুকুও দুঃখ ছিল না। সব শ্রেণির মানুষের স্বতঃস্ফ‚তর্ অংশগ্রহণে উপচেপড়া মানুষের ভিড় হয়েছিল মুসাফিরের একক সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায়। বাস ভাড়া করে ওর গ্রাম থেকেও ওর অগণিত শুভাকাক্সক্ষীরা এসেছিল, কিন্তু ওর স্ত্রী আসেনি। ওর স্ত্রীর অনুপস্থিতি ওর মনে এতটুকুও শূন্যতার ছাপ না ফেললেও অনেকের মনেই নেতিবাচক গুঞ্জন ধ্বনিত হয়েছিল।

পরে জানতে পেরেছি, কয়েক বছর ধরে স্ত্রী ওর কাছ থেকে দূরে, ছাড়াছাড়ির পথ অনেকটা এগিয়ে আছে। একদিন মোবাইলে কথোপকথনের সময় বেশ সাহস করে ওর ব্যক্তিগত প্রসঙ্গে কথা বলতে কৌত‚হলি হলাম। কথা বলে জানতে পেরেছি, প্রচÐ অভিমানী, রাগী ও একরোখা স্বভাবের মানুষ মুসাফির। ব্যক্তিগত মতামত কিংবা আনন্দ উদ্দীপনায় কেউ মতবিরোধ করলেই ও তিরিক্ষি হয়ে ওঠে।

আমার বায়বীয় সম্পকর্টা ওর কাছাকাছি নিতে চেষ্টা করলাম এ জন্য যে, ওর সংসারটা যেন অন্তত না ভাঙে! ছাড়াছাড়ির অদেখা যন্ত্রণায় যেন ওর প্রতিভটা নেতিয়ে না পড়ে। আমি এর ভুক্তভোগী। স্বামীহারা যন্ত্রণার নেমির তলে আমিও পিষ্ট হয়ে মরছি। অবশ্য না বোঝে রাগের বশবতীর্ হয়ে আমিই তালাকনামা পাঠিয়ে দিয়েছিলাম মুকুলকে। মুকুল ছিল একটা বদ্ধ উম্মাদ, কুলাঙ্গার আর নেশাগ্রস্ত বখাটে ছেলে। বিয়ের আগে ও যখন আমাকে দেখতে আসে, তখনই ওকে দেখে একদম পছন্দ হয়নি আমার। বিয়েতে অমত করেছি বরাবর। কিন্তু পুরুষশাসিত সমাজে বাঙালি নারীর নিজস্ব মতামতের মূল্যায়ন সব পরিবারে হয় না, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারে হয় না বলেই চলে। ভাইদের ঘাড়ের বোঝাটা কঁাধ থেকে নামাতে গিয়েই বাধ্য হয়ে বিয়ের মন্ত্রটুকু পড়তে হয়ছিল আমাকে। বাবা-মায়ের অবাধ্য সন্তান মুকুল, সবসময় নিজের খেয়াল খুশি মতো চলতো। ওর চলাফেরাটাই ছিল যত আজেবাজে নেশাখোর ও বখাটেদের সঙ্গে। সকালে বাড়ি থেকে বেরুত, রাত এগারো বারোটার আগে ফেরা হতো কম। কখনো কখনো ভোর হয়ে যেত। এতরাত অবধি সে কোথায় থাকে, কী করে? জিজ্ঞেস করলেই ভীষণ রেগে ওঠতো মুকুল, অশ্লীল গালাগাল করতেও ছাড়েনি, খানকি, মাগী, ছিনাল, বৈতাল এ ধরনের অকথ্য শব্দ উচ্চারণ করত! কিন্তু অভাগীর কপালে সৌভাগ্যের তিলক লাগবে কোত্থেকে? জন্মই যার দুখীর বীজ দিয়ে।

বাবাও ছিলেন দুখী মানুষ। অভাবের সংসারে বড় হতে গিয়ে একাডেমিক শিক্ষার দৌড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখার আগেই উপাজের্ন মনোনিবেশ করতে হয়েছিল। ভূমি অধিদপ্তরে কেরানির চাকরিটা আকড়ে ধরে কায়ক্লেশে জীবন যাপন। টানাপোড়েনের সংসারটা বেখেয়ালিভাবে ধীরে ধীরে বড় হয়ে ওঠে। চার ছেলে চার মেয়ের সংসার, ওদের লালন-পালন পড়াশোনার খরচ জোগাতে গিয়ে তিনি হঁাপিয়ে ওঠতেন। ভেবেছিলেন, ছেলেরা বড় হলে স্বচ্ছলতার মুখ দেখবেন। কিন্তু বিধিবাম। ছেলেরা একে একে বড় হতে থাকে, পড়ালেখা শেষ করে উপাজের্নর পথ ধরতে দেরি হয়েছে, কিন্তু বিয়ে করে সংসার নিয়ে আলাদা হতে দেরি হয়নি। এর মধ্যে মেয়েদের বিয়ের বোঝাটা নিজেকেই সামলাতে হয়েছে। ছেলেরা উপস্থিত হয়ে সুস্বাদু খাদ্যের ভাগীদার হয়েছে অথচ আথির্ক সহযোগিতার ভাগীদার কেউ হয়নি। মেয়েদের বিয়ের বোঝাটা নামাতে গিয়ে শেষ সম্বল মহেশপুরের পিতৃসম্পত্তিটুকুও হাতছাড়া করতে হয়েছে তাকে। বাবা পেনশনের টাকা পেয়ে চারদিকের ঋণ পরিশোধ করে উপজেলার উপকণ্ঠে তিন শতক ভ‚মি কিনে টিনশেডের ছোট বাড়িটি ছাড়া ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কথা ভাবতেই পারেননি।

বাধ্য হয়ে সামান্য বেতনে আমি মাধ্যমিক স্কুলে জয়েন করি, খÐকালীন শিক্ষক হিসেবে। স্কুলের নিজস্ব ফান্ড থেকে যৎসামান্য বেতন আমাকে দেয়া হতো, পাশাপাশি টিউশনি করে যা উপাজর্ন হতো, তা দিয়ে আমার নিজস্ব খরচের পাশাপাশি বাবাকে কিছু দিতে পারতাম। এভাবেই অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত আমার জীবন। আমার মতো অন্যান্য মেয়েদের সুন্দর সাজানো সংসার দেখে আমার হিংসা হতো না, কিন্তু নিজেকে খুবই ছোট মনে হতো! হতাশার প্লাবনে হাবুডুবু খেয়ে গতিময় জীবন ছুটছে অলক্ষ্যে।

মুসাফিরকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে সংসারের ভাঙনটা রোধ করতে সক্ষম হয়েছি ঠিকই, কিন্তু এর বদৌলতে একটা তিক্ত স্বাদ আমাকে গ্রহণ করতে হয়েছিল। পরে বদলি হয়ে ও ঢাকায় চলে যাওয়ার পর আমার সঙ্গে ওর যোগাযোগটা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসে। একবার একটা উড়োখবর শুনেছিলাম, ও নাকি আরেকটা বিয়েও করেছিল, একজন তরুণ বাচিক শিল্পীকে। মেয়েটি হিন্দু ছিল বলে, পরিবারের সবাই ওর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়, এমনকি ওর প্রথম স্ত্রী ওকে ছেড়ে গিয়ে মামলা দায়ের করে। মামলার রায় কী হয়েছিল, তা জানার কৌত‚হল আমার মাঝে আর ছিল না। এখন তো ও একজন বিখ্যাত ব্যক্তি।

এত অল্প বয়সে মুসাফির তো মরার কথা না, কিন্তু আমি কেন স্বপ্নে দেখলাম ও মুত্যুমুখে? এমনকি স্বাভাবিক ও অত্যন্ত দৃঢ়স্থিরে সংসার থেকে বিদায় নিচ্ছে ও। চারদিকে স্বজন ও ভক্তদের আহাজারি। এর মধ্যে একটি নাকটীয় ঘটনা ঘটছে। অথার্ৎ ওর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, ক্যাশ ও যাবতীয় ব্যাংক ব্যালেন্স ভাগবাটোয়ারা চলছে। উইলের যাবতীয় কাগজপত্রাদি নিয়ে দঁাড়িয়ে আছে উকিল। একদিকে মৃত্যুর শ্বাশত আতর্নাদ, অন্যদিকে ভাগবাটোয়ার অতৃপ্ত দ্ব›েদ্ব অন্ধ হয়ে আছে মুসাফিরের উত্তরসুরীরা।

অত্যন্ত আশ্চযের্র বিষয় হচ্ছে আমি ওই সম্পদ ও যাবতীয় টাকার একজন ভাগীদার। সমস্ত সম্পত্তি ও জমানো টাকা তিনভাগে ভাগ হওয়ার কথাবতার্ চলছে। একভাগ ওর স্ত্রী, একভাগ ওর ভাইবোন এবং অপর একভাগ মুসাফিরের শেষ ইচ্ছানুযায়ী একটি বৃদ্ধ ও অনাথ আশ্রমের জন্য যখন সিদ্ধান্ত হচ্ছে ঠিক এমন সময় কে একজন পেছন থেকে বলল, ললিতার জন্য একটা অংশ যদি না রাখা হয় তবে, এটা বড়ই অবিচার হয়ে যাবে।

সমাগত লোকজন প্রশ্নবিদ্ধ চাহনিতে একে অপরের মুখের দিকে হতবাক চাহনিতে তাকাচ্ছেÑ কে ওই ললিতা?

পেছন থেকে কে একজন আমাকে ধাক্কা মেরে বলল, এই ললিতা, কথা কস না কেন? লজ্জায় মুখ লুকাইয়া রাখলে, বাকি কপালটাও পুড়ব তর।

মাথা উঁচু করে আমাকে দঁাড়াতে দেখেই বিস্ময়ের আবেশেজড়ানো হই চই শুরু হয়ে গেল সবারর মাঝে...

উকিল সাহেব সবার সামনে দঁাড় করিয়ে বললেন, আপনিই ললিতা? কিন্তু কে আপনি? কোন সূত্রে আপনি মুসাফিরের সম্পত্তির ভাগীদার?

লজ্জার আবেশেজড়ানো গলাভাঙা স্বরে বলতে বাধ্য হলাম, আমি সম্পত্তির ভাগ নিতে আসিনি, এসেছি কেবল মুসাফিরের জীবন সন্ধ্যায় শেষবারের মতো ওকে একবার দেখতে! কিন্তু যে কথাটা সবার জানা জরুরি, তা আর কতক্ষণ মুখথুবড়ে রাখব, আমার গভের্ মুসাফিরের সন্তান।

হোয়াট, হাউ ইটস পসিবল? চেঁচিয়ে ওঠলেন উকিল সাহেব। এডভোকেট মোশারফ হোসেন মুসাফিরের বাল্যবন্ধু এবং ব্যক্তিগত উকিল। মুসাফিরের অতীত জীবনের এমন কোনো বিষয় নেই যা মোশারফ সাহেবের অজানা। সুতরাং মুসাফিরের শেষ জীবনে এমন একটি কলঙ্কময় ঘটনা তিনি কিছুতেই মেনে নিতে না পেরে চেঁচিয়ে ওঠলেন, ওসব কী আবোলতাবোল বকছেন আপনি, যান, বের হয়ে যান এখান থেকে।

অন্যান্য ভাগীদাররাও গজর্ন করে ওঠে, আরে এসব কী আজেবাজে কথা বলছে রে, কোত্থেকে এসেছে এই অসভ্য মেয়ে। খানকি, বেশ্যা নয় তো? ওরে কিছুটা উত্তম-মাধ্যম দিয়ে বিদায় করো আগে।

আমার কাছে এসে উকিল সাহেব বললেন, আপনার গভের্ মুসাফিরের সন্তান? এটা কীভাবে সম্ভব?

নারী যেভাবে সন্তানসম্ভবা হয়, এর ব্যতিক্রম কিছু নয়।

আপনাকে কি গোপনে বিয়ে করেছিল মুসাফির? বিয়ের কাবিননামা কি দেখাতে পারবেন?

বাধ্য হয়ে আমি চুপ মেরে থাকলাম।

কিন্তু অনেকের মাঝে বিষয়টা অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। কিছুক্ষণ তকর্-বিতকের্র পর বিষয়টি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসার আগেই নিঃশব্দ মুসাফির হালকা চোখ মেলে তাকিয়ে ইশারা ইঙ্গিতে কী যেন বলতে চাচ্ছেন দেখে, সবাই চুপ করে রইল। পিনপতন শব্দ নেই ঘরের ভেতর!

সমাগত লোকদের ঠেলে মুসাফিরের সামনে এসে দঁাড়ালেন উকিল সাহেব। ও কী বলতে চায়, তা শোনা কিংবা বোঝার জন্য আগ্রহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে মনোযোগী হয়ে থাকলেন। ওনার সঙ্গে দঁাড়িয়ে থাকা অনেকেই বিস্ময়ের চাহনিতে তাকিয়ে আছে মুসাফিরের মুখের দিকে...

সাময়িক নিশ্চুপ থাকার পর ফিসফিস গলাভাঙা স্বরসহ ইশারায় মুসাফির বোঝাতে চেষ্টা করছেন যে, আমার একটা ভুল হয়ে গেছে, ওর জন্য একটা ভাগ যেন রেখে দেয়া হয়।

সমবেত লোকের গুঞ্জন ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে! যে যার মতো একে অপরের সঙ্গে ব্যক্তিগত মতামত বলে বেড়াচ্ছে!

মুসাফিরের স্ত্রীসহ ভাইবোনদের ডেকে কাছে নিয়ে উকিল কিছুটা চিন্তিত মনে কত কী বলে যাচ্ছেন! গম্ভীর স্তব্দতার আবেশে যখন চারদিক নিমজ্জিত, তখন উকিল সাহেব ডেকে আমাকে নিয়ে সবার সামনে দঁাড় করালেন। আচমকা ঘুম ভেঙে গেল।

দু-তিন মিনিট সময়ের একটা স্বপ্ন এতটা আবেগময় ও রহস্যঘন হতে পারে, এটা আগে বোঝতাম না।

পানিভতির্ গøাসটি পুনরায় হাতে নিয়ে ঢকঢক শব্দে গিলে ও ভাবছে মুসাফিরের সঙ্গে একটু কথা বলে দেখি। ওর মোবাইল নম্বরটা এখনো আমার কাছে আছে। চাজের্ লাগানো মোবাইলটি হাতে নিয়ে ফোনবুকে ঢুকে মুসাফিরের নম্বরটি খুঁজতে থাকে ললিতা...

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<32557 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1