বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীনতা-উত্তর নাট্য আন্দোলনের পথিকৃৎ মমতাজউদদীন আহমদ

লেখালেখিতে তিনি কখনো সংবেদনশীলতাকে অতিক্রম করেননি। স্বাধীনতা-উত্তর নাট্য আন্দোলনের পথিকৃৎ তিনি। বাংলাদেশের নাটকের ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে তিনি অসামান্য অবদান রেখেছেন। 'বাংলাদেশের নাটকের ইতিবৃত্ত' বইটিই তার বড় প্রমাণ। লেখালেখির মাধ্যমে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। এ দেশে সাংস্কৃতিক জাগরণ ঘটানোর ক্ষেত্রে তার অবদান অপরিসীম।
সালাম সালেহ উদদীন
  ১৪ জুন ২০১৯, ০০:০০

চেতনায় দ্রোহী, লেখায় ক্ষুরধার আর অন্তরে প্রজ্ঞা যার, তিনিই মমতাজউদদীন আহমদ। তিনি একজন প্রখ্যাত নাট্যকার, অভিনেতা ও ভাষাসৈনিক। সর্বপরি তিনি একজন মানবতাবাদী ব্যক্তিত্ব। তিনি স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত। যিনি এক অঙ্কের নাটক লেখায় বিশেষ পারদর্শিতার স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি ১৯৩৫ সালের ১৮ জানুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের অন্তর্গত মালদহ জেলার হাবিবপুর থানার আইহো গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দেশ বিভাগের পর তার পরিবার তদানীন্তন পূর্ববঙ্গে চলে আসে। তার পিতার নাম কলিমুদ্দিন আহমদ ও মাতার নাম সখিনা বেগম।

তিনি মালদহ আইহো জুনিয়রর স্কুলে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে ১৯৫১ সালে ভোলাহাট রামেশ্বর পাইলট মডেল ইনস্টিটিউশন থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীকালে রাজশাহী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বি.এ (অনার্স) ও এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ৩২ বছরের বেশি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি কলেজে বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি ও ইউরোপীয় নাট্যকলায় শিক্ষাদান করেছেন। ১৯৬৪ সালে তিনি চট্টগ্রাম কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে শিক্ষকতা শুরু করেন। তিনি জগন্নাথ কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের খন্ডকালীন অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি ১৯৭৬-৭৮ সালে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রণয়নে একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি ভারতের দিলিস্ন জয়পুর এবং কলকাতায় নাট্যদলের নেতা হিসেবে ভ্রমণ ও নাট্য মঞ্চায়ন করেন। তার লেখা নাটক 'কী চাহ শঙ্খ চিল' এবং 'রাজা অনুস্বরের পালা' রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে তালিকাভুক্ত। তিনি শিক্ষক ও লেখক হিসেবে পরিচিতি পেলেও থিয়েটারের মাধ্যমে তার কর্মজীবনকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তিনি সংস্কৃতি অঙ্গনের একজন কর্মী হিসেবে বাংলা ভাষা আন্দোলন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এ ছাড়াও স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলনেও তিনি সক্রিয়ছিলেন। মমতাজউদদীন ১৯৭৭-৮০ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক ছিলেন। তিনি জাতিসংঘের বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে সংস্কৃতিবিষয়কমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

মমতাজউদদীন আহমদ অবিভক্ত বাংলার মালদহ জেলায় জন্মগ্রহণ করলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলায় তার শৈশব অতিবাহিত করেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে অংশ নেন। রাজশাহীর ভাষা আন্দোলন কর্মী গোলাম আরিফ টিপুর সঙ্গে তিনি রাজশাহীতে ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি রাজশাহী কলেজে বাংলাদেশের প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণেও ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫৪, ১৯৫৫, ১৯৫৭ ও ১৯৫৮ সালে তিনি রাজনীতির কারণে কারাবরণ করেন। তার উলেস্নখযোগ্য অবদান গবেষণা ও প্রবন্ধ- বাংলাদেশের নাটকের ইতিবৃত্ত, বাংলাদেশের থিয়েটারের ইতিবৃত্ত, প্রসঙ্গ বাংলাদেশ, প্রসঙ্গ বঙ্গবন্ধু। তার উলেস্নখযোগ্য নাটক- নাট্যত্রয়ী, হৃদয়ঘটিত ব্যাপার স্যাপার, স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা, কী চাহ শঙ্খ চিল, প্রেম বিবাহ, সুটকেশ, জমিদার দর্পণ, রাজা অনুস্বরের পালা, ক্ষত-বিক্ষত, রঙ্গপঞ্চাদশ, বকুল পুরের স্বাধীনতা, সাত ঘাটের কানাকড়ি ও রাক্ষসী। গদ্য রচনাসমগ্র- চার্লি চ্যাপেলিন, ভাঁড় নয় ভব ঘুরে নয়, আমার ভিতরে আমি, জগতের যত মহাকাব্য, হৃদয় ছুঁয়ে আছে, লাল সালু ও সৈয়দ ওয়ালীউলস্নাহ, শাহনামা কাব্যের গদ্যরূপ, সাহসী অথচ সহাস্য নেকাবী এবং অন্যগণ, জন্তুর ভিতর মানুষ, ভালবাসিলেই, সজল তোমার ঠিকানা, এক যে জোড়া এক যে মধুমতি, অন্ধকার নয় আলোর দিকে। তার সাত ঘাটের কানাকড়ি নাটক সবচেয়ে মঞ্চসফল। ১৯৭৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩০০ বারের বেশি মঞ্চস্থ হয়েছে, যা অন্য কোনো নাটক হয়নি। সাত ঘাটের কানাকড়ি এক অনবদ্য ও হৃদয়ছোঁয়া নাটক। এই নাটকে যেমন স্বৈরাচারী শাসকের চরিত্র এসেছে, একইভাবে এসেছে আত্মবিশ্বাসহীন বুদ্ধিজীবী এবং শাসকের ষড়যন্ত্রের জালে আটকে নষ্ট হয়ে যাওয়া বিপস্নবী চরিত্র। এসেছে এ দেশের সোনার ছেলেদের পথভ্রষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা। মিথ্যা বানোয়াট ঘটনায় জীবন দেয়ার কথা। সর্বপরি আছেন একজন মা। একাত্তরে যার স্বামী জীবন দিয়েছেন স্বাধীনতার জন্য। তিনি নিজে হয়েছেন ধর্ষিতা। জন্ম দিয়েছেন যুদ্ধ-শিশু। জননী একা দাঁড়িয়ে আছেন, তার সাতটি সন্তান এক এক করে হারিয়ে গেছে। নাটকের শেষে এসে মা কেবল সাতটি সন্তানের নয় কোটি সন্তানের জননী হয়ে যান। কখনো মনে হয় তিনি মানবী, আবার কখনো মনে হয় তিনিই বাংলাদেশ। এ এক অসাধারণ চিত্রায়ণ, অসামান্য দলিল। তার ক্ষত-বিক্ষত নাটক এখনো দর্শকের হৃদয়ে দাগ কেটে আছে। তার নাটকে হাস্যরসের মধ্যে গভীর বেদনা লুকিয়ে থাকে। শেষ জীবনে উপন্যাস রচনার দিকে ঝুকে পড়লেও তেমন সফলতা অর্জন করতে পারেননি তিনি।

সম্মাননা ও পুরস্কার- শিল্প ও সাহিত্যে অনন্য অবদানের জন্য তিনি জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন। বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৬) একুশে পদক (১৯৯৭)। নাট্যকলায় অবদানের জন্য ২০০৮ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃক বিশেষ সম্মাননা। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও আলাউল সাহিত্য পুরস্কার।

১৯৯২ সালের কথা, আজকের কাগজের পক্ষ থেকে তার সাক্ষাৎকার নিতে গেলাম আজিম পুরে। তিনি তখন সরকারি জগন্নাথ কলেজের অধ্যাপক। প্রথম পরিচয়েই ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠলাম। সাক্ষাৎকারটি তখন দেশব্যাপী বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এরপর তিনি আমার অনুরোধে আজকের কাগজের সাহিত্য পাতায় ধারাবাহিকভাবে লিখলেন 'আমার ভিতরের আমি।' তারও পরে লেখা শুরু করলেন কলাম। আজকের কাগজ ও জনকণ্ঠে তিনি নিয়মিত কলাম লিখতেন। তার কলাম ছিল গণতন্ত্র ও মানবতার পক্ষে, ক্ষুরধার ও রসবোধ সম্পন্ন। আমাকে তিনি প্রায়ই বলতেন, সালাম তুমিই আমাকে গদ্য লেখায় অনুপ্রাণিত করলে। ধীরে ধীরে তার সঙ্গে আমার পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে উঠলো। আমার প্রার্থনার দুই পর্ব গল্পটি নিয়ে নাটক বানাতে চেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তা হয়ে ওঠেনি। ওই গল্পটি তার খুব পছন্দ ছিল। একবার তাকে ঢাকার দোহার উপজেলায় নিয়ে গেলাম প্রধান অতিথি করে, কৃতী ছাত্রদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে। এই ধরনের অনুষ্ঠানে দোহার গিয়েছেন সিদ্দিকুর রহমান, সৈয়দ আবুল মকসুদ ও অসীম সাহা। তার বক্তৃতায় সবাই মোহিত হলেন। তার উপস্থাপন কৌশল ও শব্দচয়ন ছিলো অসাধারণ, যা আবেগে ঠাসা। অনুষ্ঠান শেষে তাকে আমাদের বাড়ি নিয়ে গেলাম। তখন সন্ধ্যা, এলাকায় বিদু্যৎ ছিল না। দোহার এমনিতেই ছায়াঢাকা, তারপর অন্ধকার। চারদিকে এক ধরনের ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। তিনি বেশ অস্বস্তি প্রকাশ করছিলেন। ফেরার পথে তিনি বারবার বলতে লাগলেন, তোমার মতো একজন সাহিত্যিক এমন এলাকায় থাকে। আমি তার কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারলাম না। আমার কোথায় থাকার কথা তাও মাথায় ধরলো না। ভাবলাম তিনি একজন সাহিত্যের অধ্যাপক ও ঝানু অভিনেতা তার মূল্যায়ন অন্যরকম তো হবেই।

তার পড়ার ঘরটি ছিল খুবই চমৎকার। চারদিকে সেলফ ভর্তি বই আর মাঝখানে টেবিল। ভাড়াটে বাসায় এমন ধরনের ইচ্ছা পূরণ করা সম্ভব নয়, নিজের বাড়ি বলেই সম্ভব হয়েছে। সাহিত্য-সাধনা ছিল তার অস্থিমজ্জায়। নাটকের পাশাপাশি লিখেছেন প্রবন্ধ কলাম ও উপন্যাস। তার মতো অভিনেতা বাংলাদেশে বিরল। অভিনয়ই তাকে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা এনে দেয়। নাট্যকার হিসেবেও তিনি ছিলেন জনপ্রিয়। তিনি প্রায়ই আজকের কাগজে আসতেন। আমি ২০০৮ সালে যায়যায়দিনে যোগ দেয়ার পর এখানে এসেছেন বেশ কয়েকবার। তিনি আমার জন্মদৌড় উপন্যাসের ওপর অসাধারণ মূল্যায়ন করেছিলেন। একই উপন্যাসের ওপর লিখেছিলেন ড. ওয়াকিল আহমদ ও হায়দার আকবর খান রনো। তাদের মূল্যায়নও উৎকৃষ্ট, মনে রাখার মতো। শেষ জীবনে তিনি বাসা থেকে বের হতে পারতেন না, বার্ধক্যজনিত কারণে। মেয়ের নামে তার বাড়ির নাম ছিলো 'কুমোর বাড়ি'। কুমোকে তিনি খুব ভালোবাসতেন। শুনেছি ওই বাড়ি ভেঙে এখন উঁচু ভবন হচ্ছে।

শেক্সপিয়ারের নাটকের প্রতি তিনি ছিলেন ভীষণ অনুরাগী। হ্যামলেট, ম্যাকবেথ ও কিংলিয়ার নাটকের চরিত্রগুলোর কথা প্রায়ই আমাকে বলতেন। কখনো কখনো তাকেই আমার কিংলিয়ার মনে হতো। বিয়োগান্ত নাটক কেন তিনি পছন্দ করতেন তা বুঝতে পারতাম না। জীবন নাটকের অধিকাংশ অংকই ট্র্যাজেডির বা বিয়োগান্ত। এ নির্মম সত্য কেউ স্বীকার করেন আবার কেউ করেন না। ভেতরে ভেতরে গুমরে মরেন।

একবার বেইলি রোডের নাটকপাড়ায় তিনি আমাকে নিয়ে যান,থিয়েটারের এক অনুষ্ঠানে। তার প্রতি সবার আন্তরিকতা দেখে আমি মুগ্ধ ও মোহিত হই। আমার বক্তৃতায় সে কথা আমি বলি। তিনি ছিলেন বন্ধুবৎসল সজ্জন ব্যক্তি। সব সময় হাসিমুখে কথা বলতেন। সাহিত্যের অধ্যাপকদের যেমন অহঙ্কারী ভাব থাকে, তারা ছাড়া সাহিত্য আর কেউ বোঝে না, তার সেটা ছিল না। একেবারেই সাদামাটা জীবন ছিল তার, খুব সহজেই সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যেতে পারতেন তিনি। একজন গুণী ও কর্মবীর হিসেবে জাতীয়ভাবে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন তিনি। অসাম্প্রদায়িক উদার মানবতার প্রশ্নে তিনি ছিলে সর্বদায় আপসহীন।

লেখালেখিতে তিনি কখনো সংবেদনশীলতাকে অতিক্রম করেননি। স্বাধীনতা-উত্তর নাট্য আন্দোলনের পথিকৃৎ তিনি। বাংলাদেশের নাটকের ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে তিনি অসামান্য অবদান রেখেছেন। 'বাংলাদেশের নাটকের ইতিবৃত্ত' বইটিই তার বড় প্রমাণ। লেখালেখির মাধ্যমে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। এ দেশে সাংস্কৃতিক জাগরণ ঘটানোর ক্ষেত্রে তার অবদান অপরিসীম।

যার ভেতরে গভীর দেশপ্রেম রয়েছে তিনি তো মানুষের কল্যাণ চাইবেনই। দেশের সংস্কৃতি ও সাহিত্যের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ এ ব্যক্তিত্ব চলে গেছেন কিন্তু রেখে গেছেন তার অসংখ্য ভক্ত ও অনুরাগীদের। রেখে গেছেন তার অনন্য সৃষ্টিসম্ভার- যা দেশ ও জনগণের অমূল্য সম্পদ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<53400 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1