বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আতা সরকারের উপন্যাস: পুষ্পকুন্তলা তুমি

করীম রেজা
  ১২ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

মাস্টারদা সূর্য সেন ইতিহাস বিদিত নন্দিত চরিত্র। জনপ্রিয়তা এই চরিত্রে দিয়েছে কিংবদন্তির গুরুত্ব। বিপস্নবী বীর হিসেবে এখনো পূজিত। ভক্তের সংখ্যা অগণিত। এমন ঐতিহ্যবাহী চরিত্র গল্পের আধারে এনে জীবন আরোপ করে, তাকে বা তাদের দিয়ে কথা বলানো, সাধারণ মানুষের মতো সুখদুখের দিনযাপনের কাল পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিস্থাপন করে, বাস্তবিক রকমে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা দুরূহ কাজ বৈকি। আতা সরকার তেমন কাজে এই সময়ের বারন্দায় দাঁড়িয়ে সেই সমাজকে আঁকার চেষ্টা করেছেন। তিনি সাহস করেছেন, দুঃসাহস নয় বরং অতি সাহস দেখিয়েছেন। ইতিহাসের পাতা থেকে তুলে এনে কথকথার কুশীলব বানিয়ে আমাদের মতো সাধারণ পাঠকের চোখের সামনে হাঁটা-চলা করিয়েছেন, কথা বলিয়েছেন, কাঁদিয়েছেন, হাসিয়েছেন। আবারও বলি কাজটি সহজ ছিল না মোটেই, তারপরও তিনি পিছু হটেননি, সাহস করে আড়ালের অবহেলিত সত্য উন্মোচন করেছেন আন্তরিকতা দিয়ে।

ইতিহাসের বীর চরিত্রের বিভিন্ন মাত্রা থাকে, যা কখনই একই সমান্তরালে প্রচার, জনপ্রিয় হয় না। বীরত্বগাঁথা ছাপিয়ে চরিত্রের অপর অস্তিত্ব প্রকাশের অন্তরালেই থাকে। কখনো কখনো তা পাদটিকার মত, তবে গুরুত্বহীনভাবে উলিস্নখিত হয় মাত্র। সাধারণ জনতার দৃষ্টি ঐতিহাসিক চরিত্রের নির্দিষ্ট পছন্দসই বৈশিষ্ট্য নিয়েই সীমাবদ্ধ থাকে। মাস্টারদা সূর্য সেনের জীবনেও ঠিক তাই ঘটেছে।

\হদেখা যায়, যিনি চিরকাল বীর পূজায় সমাজের সম্পূর্ণ মনোযোগ নিজের দিকে টেনেছেন, দেশপ্রেমিক অকুতোভয়ের পরাকাষ্ঠরূপে যুগে যুগে সংগ্রামে উদ্দীপনা যুগিয়েছেন, তার অন্তরের বেদনার কথা কেউ ভাবেনি। বীরের মনেও প্রেম, ভালোবাসা,ব্যথা-বেদনা, মান-অভিমান, সংসারের অন্য দশজনের মতো পরিবারের প্রতি অসামান্য আনুগত্য থাকতে পারে বা ছিল, বিষয়গুলো সাধারণ্যে তেমন আলোচিত ছিল না এবং আলোচনার বিষয় বলে প্রাধান্যও পায়নি কখনো।

'পুষ্পকুন্তলা তুমি' উপন্যাস সেই পরিপ্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী সৃষ্টি। গ্রন্থেও উপজীব্য ইতিহাস হলেও পরিপূর্ণ ঐতিহাসিক উপন্যাস নয়। বিপস্নবী মাস্টারদা সূর্য সেনের জীবনেও প্রেমছিল, বৈরাগ্য ছিল এই উপন্যাসের দ্বারা তা সবাই জানতে পারে। কঠিন বিপস্নবী চরিত্রের আড়ালে ভালোবাসা বহমান ছিল। কথাশিল্পী আতা সরকার একটি সুকঠিন কাজ করেছেন প্রচলিত ধারণার বিপরীতে বিপস্নবী চরিত্রে প্রণয় বৈশিষ্ট্য আরোপ করে। এই কাজে তার অসফল হওয়ারসমূহ সম্ভাবনা ছিল। সর্বজ্ঞ দৃষ্টিকোণে সুলিখিত উপন্যাসের পরিচ্ছেদগুলোতে তিনি সার্থকভাবে তা অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছেন।

উপন্যাসটি তিন ভাগে বিভক্ত। প্রথম ভাগের নামকরণ 'দরজায় বাজে কড়া : মন জুড়নো হাওয়ায়'। দ্বিতীয় ভাগের নাম 'আনন্দ-বেদনার কাব্য,' উপন্যাসের সর্ববৃহৎ পরিচ্ছেদ। শেষ ভাগের নাম 'ছায়া হয়ে পাশে পাশে'। হৃদয় দোলানো বাতাস ভরা সকালে প্রকৃতির ফুরফুরে আমেজে উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র পুষ্পকুন্তলার আবির্ভাব। যাকে ঘিরে আখ্যানভাগ রচিত হয়েছে তার সঙ্গে পাঠকের প্রাথমিক পরিচয় পর্বের সূচনা। মূলত ইতিাসের পেছনের চরিত্র পুষ্পকুন্তলার ত্যাগ এবং অতি নীরব প্রেরণা মাস্টারদার জীবনে যে সার্থকতা এনেছে, সেই অকথিত অজানা অধ্যায়ই উপন্যাসের উন্মোচিত হয়েছে। এই অংশেই বিয়োগান্ত ঘটনার একমাত্র নায়িকা পুষ্পকুন্তলা অতীত রোমন্থনের মাধ্যমে জীবনের চরম সত্যের মুখোমুখি নিয়ে দাঁড় করায় আমাদের। চতুর্দশী বালিকার স্বপ্নভূক দুইটি দীর্ঘ বৎসর অকস্মাৎ বিপস্নব-ঝড়ো বাতাসে এক ফুৎকারে নিভে যায়। ষোড়শী যুবতীর জীবনে উষার আগমনের সঙ্গেই ঘোর অমানিশার আবির্ভাব। চরম ট্র্যাজেডি বহন করে যাপিত জীবনের সমগ্র দায়টুকু একমাত্র নিজের কাঁধে নিয়ে তিল তিল করে বঞ্চনার সমুদ্র পাড়ি দিতে দেখি পুষ্পকুন্তলাকে নীরবে, নিভৃতে, কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ না তুলে, কাউকে দায়ী না করে। নিয়তির বিধানে যার মৃতু্যই ছিল ভবযন্ত্রণা থেকে মুক্তির একমাত্র উপায়।

দ্বিতীয়ভাগে ঔপন্যাসিক কাহিনীর মূলে যাবতীয় ঘটনা খুবই সচেতনতার সঙ্গে গ্রন্থ কলেবর বৃদ্ধি না ঘটিয়ে সংক্ষিপ্তভাবে বয়ান করেছেন। চরিত্র-চিত্রন কিংবা ঘটনার সংস্থাপনেও লেখক সতর্কতার সঙ্গে মিতবাক পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন। আবেগের ব্যাপক সম্প্রসারণ নেই কোথাও। বর্ণনার স্থূলতা, দীর্ঘতা নেই। কখনো মনে হতে পারে লেখক ধারাভাষ্যের মতো ইতিহাসের দীর্ঘ পর্যায়গুলোর নিরাসক্ত সাধারণ বিবরণ দিয়ে চলেছেন। চরিত্রসমূহের অন্তর্লোক উন্মোচনের দীর্ঘ, (অনেক ক্ষেত্রে বিরক্তিকর হওয়া) তেমন প্রচেষ্টা নেই। পাঠক খুব সহজেই লেখনীর জাদুকরী আকর্ষণে গল্পে নিজেকে সন্নিবিষ্ট করতে পারে।

কথা শিল্পী আতা সরকার চরিত্রের মনোজগতের বিপুল বিস্তার সন্তর্পণে গোপন রেখেছেন। সংসার তথা স্ত্রী কিংবা স্বামীর পারস্পরিক আকর্ষণ-বিকর্ষণ, মানসিক অস্থিরতা, অন্তর্দহনে পীড়িত মুহূর্তগুলো শব্দ-বাক্যে প্রকাশ না করে পাঠকের কল্পনার সামর্থ্যের কাছে গচ্ছিত রেখেছেন। কলেবর বৃদ্ধি হয়নি, বাগাড়ম্বের দংশন-পীড়ন নেই, সরলভঙ্গিতে কাহিনী বর্ণিত হয়েছে, অনেকাংশেই নিরাসক্ত, ঔপন্যাসিকের ব্যক্তি নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে। চরিত্র ও পাঠকের মাঝখানে তথাকথিত সেতুবন্ধ তৈরির সুবাদে লেখক স্বয়ং হাজির হয়ে পাঠকের বিরক্তির উদ্রেক করেননি।

ইতিহাসের পরিচিত চরিত্রগুলোকে গল্পের অংশ হিসেবে নির্মাণ করার মতো কঠিন এবং জটিল কাজ আতা সরকার করেছেন। উপন্যাসের কাহিনী সরল। গল্প বলায় পাঠককে ঘটনার চড়াই-উৎরাইয়ের মুখোমুখি কম হতে হয়েছে।

উপন্যাসের রচনাভঙ্গির কারণে পাঠকের মনোজগতের ঘটনা ও চরিত্রের পারিপার্শ্বিকতা কোনো গভীর আবেগ সৃষ্টি করে না। ভাবানুভাব দীর্ঘতর হয়ে মোক্ষণ করে না, তবুও একদমে উপন্যাসখানি পাঠ করে ফেলা সম্ভব। তাছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে চরিত্র বিকাশের ধারা সরল রৈখিক। চরিত্রসমূহের অন্তর্লোকের ব্যবচ্ছেদ কিংবা টানাপড়েন নিয়ে উপন্যাস বিস্তৃত নয়, আমরা তা আগেও উলেস্নখ করেছি। যাতে করে চরিত্রের ক্রমবিকাশ অর্থাৎ অন্তর্লোকে ঘটে যাওয়া পরিবর্তন অথবা বাইরের ঘটনার অবশ্যম্ভাবী আন্দোলনে ভেতরে বাইরে স্বভাবের বদল, উন্নতি বা পরিবর্তন পাঠকের চোখে অস্পষ্ট থেকে যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পাঠক পুষ্পকুন্তলাকে শিশুদের সঙ্গে খেলাধূলায় ব্যস্ত কিশোরী রূপে প্রথম দেখতে পায়। অতঃপর মানসিক বিকাশের স্তরটি অনালোকিত থাকে, পাঠক পুষ্পকুন্তলাকে দ্বিতীয়বার আবিষ্কার করে- ধীরস্থির সংসার অভিজ্ঞা, জগতৎ সম্পর্কে জ্ঞানী একজন স্ত্রী রূপে।

বাসর ঘরে নববধূ স্বামীর ব্রহ্মচর্য পালনের অভিপ্রায় জানার পরে কিংবা স্বামীর বিপস্নবী পরিচয় পাওয়ার পরে সংসার অনভিজ্ঞ কিশোরী বধূর সহজাত আবেগঘন প্রতিক্রিয়া আমরা পাই না। পুষ্পকুন্তলা এখানে শরৎচন্দ্রীয় নায়িকাদের মতো বয়সে নবীনা হয়েও আচরণে প্রবীণা। কাহিনী অকারণে প্রলম্বিত না করে স্বল্প আয়তনের মধ্যে পুষ্পকুন্তলার বিয়োগান্তক জীবন চিত্রায়িত করার চেষ্টা এ ক্ষেত্রে যুক্তি হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে। সাক্ষ্যরূপে দাবি করা যায় যে, আখ্যানের প্রয়োজনে তিনি চরিত্র আমদানি করেছেন। মনে রাখতে হবে কোনো চরিত্রই ইতিহাসের বাইরের কেউ নয়। সীমিত কয়েকটি চরিত্রের মাধ্যমে আতা সরকার মূল আরাধ্য ঘটনা নির্মাণ করেছেন দক্ষতার সঙ্গে।

উপন্যাসের শেষে করুণ রসের প্রয়োগে পাঠকের মনে পুষ্পকুন্তলার আত্মবির্জনের আবেগ বিধূরতা স্থায়ী হতে পারত। তা হয়নি, পরিবর্তে বীর রসের আধিক্য আমরা দেখতে পাই। মাস্টারদাসূর্য সেন বিপস্নবী চেতনায় সমাপ্তি ভাগের অধিকাংশ বেদনা অচকিত করে রাখেন। পুষ্পকুন্তলার মৃতু্যর পর তার সামান্যতম দায়বোধ-ভাব অবশিষ্ট থাকে না। বৌদি এবং দাদার প্রতি যে সাংসারিক দায়বোধটুকু আমরা প্রথম দিকে দেখতে পাই, এক্ষণে তাও তার কাছে অপার্থিব, মূল্যহীন। তিনি কোনো পিছুটান নেই বলে দেশমাতৃকার উদ্ধারে সকলের দৃষ্টির আড়ালে উধাও হয়ে যান। এভাবেই ঔপন্যাসিক পুষ্পকুন্তলা উপন্যাসের যবনিকা নির্মাণ করেন।

উপন্যাসের শুরুতে একটি উপসর্গপত্র যুক্ত করেছেন। যা থেকে আমরা মাস্টারদা সূর্য সেনের সংসারে পুষ্পকুন্তলার গুরুত্ব ও অবস্থান বুঝতে পারি। সংসারে থেকেও যিনি সংসার বঞ্চিত ছিলেন। ছিলেন স্বামীবিহীন স্বামী থাকার পরেও। পুষ্পকুন্তলার ত্যাগ, বিসর্জন বিপস্নবীর জীবনে কি পরিমাণ সহায়ক ছিল, তা লেখক বর্ণনা করেননি বটে কিন্তু পাঠকের বুঝে নিতে কোনোই অসুবিধা হয় না। কারণ একজন কিশোরী বধূ যখন সংসার জীবনের সূচনা লগ্নেই চির বঞ্চনার বার্তা অবগত হলেন তিনি নির্বিকারভাবে তা নিয়তি বলে মেনে নেন।

পুষ্পকুন্তলা ভারতবর্ষের মুক্তি সংগ্রামের বিপস্নবী ইতিহাসের উপেক্ষিত, অবহেলিত, অনালোচিত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। পুষ্পকুন্তলাকে নিয়ে কোন ইতিহাস চর্চা হয়নি। তার দেশপ্রেম-চেতনাবোধ সম্মানিত হয়নি। তার আত্মত্যাগ ইতিহাসে কোনো প্রকারেই উলেস্নখিত, আলোচিত ও কৃতিত্ব হয়নি। আমরা দেখতে পাই উপন্যাসের শুরুতে কৈশোরের বন্ধুমহলে কিশোরসুলভ খেলাধূলায় ব্যস্ত কিশোরী পুষ্পকুন্তলা। নিয়তির অমোঘ বিধানে যখন এমন এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হলেন যে কোনো যুক্তিতেই যা ছিল অভাবিত। বাসর রাতেই জানতে পারলেন সংসারী হয়েও বিবাগী, বিরহী জীবনযাপন তার একমাত্র অপরিবর্তনীয় নিয়তি। তিনি কোনো প্রতিবাদ না করে, বিনা বাক্যব্যয়ে সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে তিলে তিলে আত্মবিসর্জনের পথে এগিয়ে যান। কারণ তিনিও চান দেশমাতৃকা ভারতবর্ষ বিদেশি শাসন-শোষণ তথা ইংরেজ মুক্ত হোক। তার আচরণে কৈশোরের চপলতা নিমেষেই দূর হয়। একজন প্রাজ্ঞ সংসার অভিজ্ঞ পরিণত রমনীর মতই স্থিতধী হয়ে ওঠেন। মনে মনে লোকচক্ষুর আড়ালে গোপন বিপস্নবী নারীতে রূপান্তরিত হয়ে ওঠেন। এক কথায় পুষ্পকুন্তলার এই পরিবর্তন, মানসিক স্থিরতা অবিস্মরণীয়, অভূতপূর্ব। স্বামী সূর্য সেনকে সাংসারিক অবস্থান থেকে কায়মনে সহযোগিতা না দিলেসূর্য সেন বিখ্যাত বিপস্নবী হতে পারতেন কিনা, এমন সন্দেহ কোনোভাবেই অমূলক নয়।

পুষ্পকুন্তলা উপন্যাসের কাহিনী শুরু থেকেই ট্র্যাজেডি ধারণ করে আবর্তিত ও প্রবাহিত। নাম চরিত্র পুষ্পকুন্তলা তিলে তিলে পরিবার, সমাজ, এমনকি স্বামীর অজান্তে নিজেকে দেশমাতৃকার যুপকাষ্ঠে বলি দিয়েছেন। এখানেই পুষ্পকুন্তলা চরিত্রের মাহাত্ম্য, গৌরব এবং অন্যান্য সাধারণ ঐশ্বর্য নিহিত রয়েছে। পুষ্পকুন্তলার আত্মত্যাগ ও গোপনে নিজেকে একজন বিপস্নবী ভেবে যে আচরণ তিনি করেছেন তার তুলনায় মাস্টারদার বিপস্নবী অনেকাংশেই ম্স্নান ও অগৌণ বলে পাঠকের কাছে প্রতীয়মান হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

পুষ্পকুন্তলার এই মহান আত্মত্যাগ পাঠকের মনে রেখাপাতে আরও গভীরতা সৃষ্টি করতে পারত। পারত বিপস্নবী মাস্টারদার স্বামী কিংবা দেশপ্রেমিক উপলব্ধির টানাপড়েনও। এই সমস্ত উপাদান ব্যবহার ছাড়াই এই উপন্যাস নির্মিত হয়েছে। কাহিনীর প্রবহমানতা উপন্যাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

তা ছাড়া ভাষা নির্মাণেও কথাশিল্পী দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। অন্তত একটিমাত্র বাক্যের ব্যবহার কষ্টকল্পিত বাহুল্য বিচেনা করা যেতে পারে। লেখক যেস্থলে পুষ্পকুন্তলার মায়ের সঙ্গে পাঠকের পরিচয় করিয়ে দেন। ভদ্রমহিলা যে পুষ্পের মাতৃদেবী তা তার কথা ও আচরণেই পাঠক বুঝে নিতে পারত। লেখক আগ বাড়িয়ে তা না বললেও পারতেন।

শব্দ প্রয়োগে, পরিবেশ বর্ণনায়, প্রতিবেশ নির্মাণে মাস্টারদাসূর্য সেন আমলের আবহ পাঠকের মনশ্চক্ষে ফুটিয়ে তোলায় ঔপন্যাসিক আতা সরকার যত্নবান থেকেছেন। কথোপকথনে চরিত্রের ভাষা নির্মাণ পরিবেশানুগ এবং চরিত্রের স্বভাবানুগ। তৎকালীন পরিবার বা সমাজের মেজাজের সঙ্গে সঠিকভাবে পাঠককে সংশ্লিষ্ট করতে পেরেছেন ভাষাভঙ্গির দ্বারা। ক্ষুদ্র বাক্য প্রয়োগে কাহিনী সহজ, সরল ও তরতরিয়ে এগিয়ে যাওয়া নিশ্চিত করেছেন- যা এই উপন্যাসের অন্যতম প্রাণশক্তিও বটে।

গ্রন্থের ছাপা ও বাঁধাই আকর্ষণীয়, বইটি ডিমাই আকারের হওয়াতে সহজে বহন করায় আছে অতিরিক্ত সুবিধা। পুষ্পকুন্তলা তুমি উপন্যাসের বহুল প্রচার ও শতভাগ পাঠক নন্দিত হওয়ার প্রত্যাশা থাকল। ধন্যবাদ শক্তিমান কথা শিল্পী আতা সরকারকে ইতিহাসের অনালোকিত কিন্তু মনোময়, বেদনাময় ও হৃদয়স্পর্শী কথাবস্তুর এই গ্রন্থের উপজীব্য করার মত সাহস দেখানোয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<57733 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1