রূপান্তর- দীপঙ্কর মাহমুদ
ঘুমোতে গেলেই আমি শুধু জেগে উঠি
আমি তাকাই না কোনো দৃশ্যে,
দৃশ্যই তাকিয়ে দেখে আমার চেহারা;
আমি কখনো নড়ি না, পায়ের নিচের মেঝেটাই আমাকে নড়ায়,
আমি কখনো দর্পণে দেখি না নিজেকে, দর্পণের ভিতরের 'আমি'
দেখে আমার চেহারা;
আমি বলিনাকো কথা, কথারা আমাকে করে উচ্চারণ;
আমি জানালায় গেলে, আমাকে কে যেন খোলে।
উঠে দাঁড়ালেই আমি নুয়ে পড়ি:
আমি খুলি না আমার দু'টি চোখ, চোখ-ই আমাকে খোলে;
আমিতো শুনি না কোনো ধ্বনি, ধ্বনিরা আমাকে শুনে;
আমি পান করি না কখনো জল, জল-ই আমাকে করে পান,
আমি কখনো ধরি না কোনো বস্তু, বস্তুরা আমার দিকে বাড়ায়
তাদের হাত;
আমি পোশাক খুলি না, পোশাক আমাকে খুলে ফেলে;
আমি শব্দ দ্বারা নিজেকে করি না প্ররোচিত, শব্দেরা আমাকে
প্ররোচিত করে নিয়ে যায়;
আমি দরজার দিকে যাই, হাতল আমাকে করে হতাশ, বিষণ্ন্ন,
জানালার খড়খড়ি তোলা হয়, রাত্রি নামে, বাতাসকে ধরবো বলে
আমি জলে ডুবাই নিজেকে।
পাথুরে মেঝেতে হাঁটি, গোড়ালি পর্যন্ত ডুবে যায়;
একটি গাড়ির চালকের সিটে বসে
এক পায় সামনে রাখি আরেক পা;
ছাতা হাতে এক মহিলাকে দেখে আমার শরীর হতে ঝরে পড়ে
রাত্রির ঘামের বিন্দু,
বাতাসের দিকে বাড়াতেই হাত- বাতাসে আগুন ধরে যায়;
একটি আপেলের দিকে হাত বাড়াতেই
সে আমাকে কামড়ে দেয়;
আমি হাঁটি খালি পায়ে, তবু মনে হয় আমার জুতোর মধ্যে
কে যেন রেখেছে নুড়ি;
ক্ষত থেকে যেই পস্নাস্টার উঠিয়ে ফেলি-পস্নাস্টারের সঙ্গে
ক্ষত উঠে আসে;
খবরের কাগজ কিনলে-খরাদি নজর বুলিয়ে নেয় আমার ওপর;
কাউকে ভয় দেখিয়ে মারলে বাকরুদ্ধ হই নিজে,
আমি নিজ কানে তুলো দিয়ে চিৎকার করি;
জলপরীদের তীক্ষ্নকণ্ঠ শুনতেই আমার ভিতর দিয়ে বয়ে যায়
খ্রিস্টমাস মিছিলসমূহ;
যখন ফুটাই ছাতা, পায়ের তলায় পুড়তে থাকে মাটি;
আমি ছুটে মুক্ত প্রান্তরে গেলেই বন্দি হয়ে যাই।
কাঠ বসানো মেঝেতে কেবল হোঁচট খেতে থাকি।