বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পরিচয়ের খেঁাজে নারী

নতুনধারা
  ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

সাবিহা মালিহা

নারীর পূণর্তা নাকি মাতৃত্বে। নারীর নারীত্বের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিভিন্ন বই-পুস্তক ও সাহিত্যে বিভিন্নভাবে বণির্ত হয়েছে। কিন্তু যারা মা হতে পারবেন না তারা আর যত যাই হোন না কেন তাদের নারী জীবন কী বৃথা! তাদের জীবন অপূণর্? কিংবা যারা মা হতে চান না তারা নারী নন?

পুরুষের কাছে নারীর বঁাধাধরা কয়েকটি রূপ আছে। মা, বোন, স্ত্রী এবং কন্যা। এর বাইরে যে কোনোরূপী নারী তার কাছে আর সাধারণ নারী নন। তারা হয়ে যান পরনারী। আর পরনারী মানেই নষ্টা, ভ্রষ্টা, অপয়া, দেহসবর্স্ব একটি সাকার অস্তিত্ব। নারী যেন সবকিছুর ঊধ্বের্ গিয়ে নিজের পরিচয়ে নারী হতেই পারেন না। চারিত্রিক স্খলন রোধে নারীকে তাই ডিফল্ট ফমের্ই হাজির হতে হবে পৃথিবীর মানুষের কাছে। পুরুষ নারীকে মানুষ হিসেবে ভালোবাসে না, ভালবাসে মাকে, ভালবাসে বোনকে, কন্যাকে। আর বিশেষ পরিস্থিতিতে স্ত্রীরূপের নারীকে। যত যাই হোক শরীরের অবদমন না করে যে নারীর কাছে সহজেই নিজের পুরুষালি অস্তিত্বের চচার্ করা যায় সে নারীকে কিছু সময়ের জন্য ভালোবাসতেই হয়।

এই সমাজে কোন নারী চোয়াল শক্ত করে বলতে পারেন না তিনি বাচ্চা চান না। পুরুষের একচ্ছত্র সিদ্ধান্তকে নারীর মাথানত করে গ্রহণ করতে হয়। নারীর যদি কিছু থেকে থাকে তো শুধু একটি রক্ত-মাংসের দেহ কিন্তু এই দেহকেও তার অন্যের মজির্মাফিক চালাতে হয়। নিজের শরীরের প্রতি নারীর নিজের কোনো অধিকার নেই। বিয়ে যতদিন না হচ্ছে ততদিন এই শরীর বাবা-মায়ের, বিয়ে হলে বরের। চুল কতখানি লম্বা রাখতে হবে, জামা-কাপড় কেমন পরবে, কীভাবে পরবে সকল সিদ্ধান্তই নারীর প্রভুদের। আর নারী জীবনের এক এবং একমাত্র লক্ষ্য বিয়ে করে স্বামী-সংসার ও সন্তান উৎপাদন। তারপর দিনের পর দিন ইচ্ছেয়-অনিচ্ছেয় শয্যাসঙ্গী হয়ে আরেকজনের ঘরে বেঁচে থাকা। এর অন্যথা কোনোভাবেই করা চলবে না, এটা যুগে যুগে পুরুষতন্ত্রের নিদের্শ। এ নিদের্শ অমান্য করলে চলবে না। এ নিয়মেই এত কাল সমাজ চলেছে। হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসা নিয়ম-নীতিকে মূখর্ ছাড়া আর কেই বা অপ্রয়োজনীয় বলে ঘোষণা করে!

পুরুষ বলেন ‘নারী মায়ের জাত’। এক মিনিট, আমার আপত্তি আছে; আমার সাথে আরো অনেকেরই আপত্তি আছে। নারী শুধু নারীর জাত। কোনো মায়ের জাত, বৌয়ের জাত, বোনের জাত, কন্যার জাত নয়। বেঁচে থাকার প্রয়োজনে নারীকে বিভিন্ন সম্পকের্র নারী হয়ে যেতে হয় কিন্তু আলাদা করে সে কোনো জাত নয়। সে কেবলি একজন নারী, একজন মানুষ। নিজের ইচ্ছের, পছন্দের, ভালোবাসার, সিদ্ধান্তের জাত। এখনো অনেক নারী এবং পুরুষও মনে করেন নারীবিষয়ক যে কোনো আলোচনা অশ্লীল, বিতকির্ত। নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলাও এই অশ্লীল, বিতকের্র অংশ।

বিভিন্ন ধমীর্য় পুস্তক ও মুণি-ঋষিদের পাÐুলিপিতেও নারী বিষয়ে একই ধারণা পোষণ করা হয়েছে। নারীর চারিত্রিক বিচার করার সম্মতি দেয়া হয়েছে সে কিভাবে কথা বলে, কোনো পরিচ্ছদে থাকে, কতখানি হাসে, কেমন শব্দ করে হঁাটে ইত্যাদি বিষয়ের ওপর নিভর্র করে। তার জ্ঞান-বুদ্ধি, মেধার কোনো প্রয়োজন হয় না এই বৈচারিক কাজে। সবোর্পরি নারীকে বিচার করতে হবে যৌন অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে। নারী যতদিন যৌনতার পঁাচিল টপকায়নি, কোনো পুরুষের সঙ্গে কথা বলেনি, একসাথে বসে হাসেনি ততদিন সে সতী-সাধ্বী স্ত্রীলোক। যে কোনো পুরুষ তাকে সম্মান দিয়ে আইন আর নিয়মনীতির সবোর্চ্চ প্রভাব খাটিয়ে সিদ্ধ করে ঘরের পরিচারিকা নিয়োগ করতে আগ্রহী হয়।

আর বাকি পরনারীদের অবস্থা শোচনীয়। সুযোগ পেলেই তার চুল কামিয়ে, দোররা মেরে, চরিত্রের ওপর বিশেষ সীল-মোহর মেরে, পাথর নিক্ষেপ করে, উদোম করে, মুখে চুন-কালি মাখিয়ে সমাজের কাছে উপস্থাপন করা হয়। তখন আর নারী মায়ের জাত নয়। তার স্তন, কোমর, তলপেট, উরু হয়ে যায় কামনার বিষয়বস্তু। নারীর জীবনকে তাই পরিচালিত করতে হবে শতর্সাপেক্ষে। কোথায় কতটুকু মিশতে হবে, হাসতে হবে, কথা বলতে হবে, হঁাটতে হবে সব কিছুর পরিমাপক থাকবে। নারীকে মাপজোক নিয়ে তারপর পা ফেলতে হবে।

নারীর কোনকিছুই নারীর জন্য নয়। তার সময় একান্ত তার নয়, সে তার নিজের সময় ব্যবহার করে নিজের জন্য কিছু করার বৈধতা পায় না। তাই নারী অচল হলে, শরীর না চললে পুরুষকে অন্য নারীর সন্ধানে বেরুতে হয়। বাধ্য হয়ে তাই নারীকে অন্যের জন্য সচল ও সক্ষম হয়ে থাকতে হবে, নিজের জন্য নয়। আবার পুরুষের নিজের শরীর না চললেও সন্ধান করতে হয় অন্য নারীর। নারীর কাজই হচ্ছে অন্যের জন্য বেঁচে থাকতে হবে, নিজের জীবন বিলিয়ে দিতে হবে। এর অন্যথা চিন্তা করলে নারী অচল হলে নারীকেও পুরুষের সন্ধানে বের হতে হতো। কিন্তু সমাজ নারীকে সে স্বীকৃতি দেয়নি। সে অচল হলে তার জন্য কাজের লোকের ব্যবস্থা করা হয় যাতে সে কাজের লোক তার শুশ্রƒষা করতে পারে কিন্তু পুরুষের জন্য কাজের লোক থাকুক বা না থাকুক স্ত্রী লাগবেই। স্বামী অথার্ৎ প্রভুর সেবাই পরম ধমর্! সুলিখিত বিধি মেনে ঘরে তুললেই অলিখিত নীতিতে স্বামী একজন সেবাদাসী পেয়ে যান।

নারীকে ভালোবেসে বা না বেসে দু’ভাবেই শরীরের প্রয়োজনে পাওয়া যায়, পুরুষ পেয়ে যায়। নারীকে তাই পুরুষের দরকার সেবাময়ী মা হিসেবে যার অঁাচল থাকবে কপালের ঘাম মোছার জন্য, স্ত্রী হিসেবে যার শরীরকে যখন যেভাবে খুশি পাওয়া যাবে, বোন হিসেবে যার নারীজন্ম ভাইয়ের মঙ্গল কামনা করবে, কন্যা হিসেবে যার অফুরন্ত সময় শুধু বাবার ওষুধ/পত্রের খেঁাজ রেখে, ভেজা তোয়ালে যতœ করে শুকোতে দেয়ার কাজেই ব্যবহৃত হবে। আর পরনারীদের যেহেতু সব পুরুষ এইভাবে পান না তাই তারা শুধু পুরুষের চরিত্রই স্খলনের কাজে লাগেন, এর বাইরে তারা আর কোনো কাজে লাগেন না।

তাই নারী হবে শুধু মায়ের জাত। স্পষ্টতই তার কাজ মা হওয়া, এর বাইরে তার আর কোনো অস্তিত্ব নেই। এবং কথায় কথায় যারা শুধু ‘নারীকে মায়ের জাত বলে সম্মান করি’ বলেন তারা নারীকে কীভাবে কোন ছবিতে দেখেন তা বোঝাই যায়। নারী তাদের চারিত্রিক স্খলন ঘটান কিন্তু তা ঘটলেও ঘটে না। তারা একইরকম শৌযের্-বীযের্ পুরুষই থাকেন, কোন ব্যত্যয় ঘটে না কখনোই। পুরুষ তাই কোন জাত হিসেবে পরিচিত হন না, পরিচিত হবার কোনো সমাথর্ক শব্দও নেই। এক অথের্ তারা শুধুই পুরুষ হন, পুরুষ হয়েই থাকেন!

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<10360 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1