শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সুইসুতায় পাল্টে যাচ্ছে জীবন

মোস্তাফিজুর রহমান
  ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০
পুঁতি আর সেলাইয়ের কাজে ব্যস্ত নারী

‘এ বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অধের্ক তার করিয়াছে নারী অধের্ক তার নর।’ নারী জাগরণ ও নারী মুক্তির সংগ্রামে অনন্য ভ‚মিকা রাখা বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার কবিতায় বলেছিলেনÑ এ পঙ্ক্তিগুলো। কবির কথার যথেষ্ট যুক্তি-প্রমাণ তিনি সমাজের চোখে আঙুল দিয়ে দেখালেও সমাজ তা মানতে নারাজ। পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকেই নারী-পুরুষ সমান পরিশ্রম করে জীবনের ধারা, পরিবেশ সব কিছু বদলে দিয়েছেন। কিন্তু নারীর সেই অবদান পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কখনো মানতে চায় না। নারীকে তারা শুধু ব্যবহার করে নিজের ভোগ-বিলাসের জন্য। আবার প্রয়োজন ফুরালেই তাকে ভুলে অন্যত্র চলে যায়। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীকে এখন পযর্ন্ত তার সঠিক মযার্দা দেয়নি। নারীরা পদে পদে অবহেলার শিকার হয়ে অনেকটা পুরুষের হাতের পুতুল হয়ে বেঁচে আছে। শত কষ্ট, দুঃখ আর যন্ত্রণা বুকে লালন করতে করতে কেউ হারিয়ে যায় না ফেরার দেশে, কেউ বা হয়ে ওঠে বিদ্রোহী। নিজের দক্ষতা আর পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে সমাজে মাথা উঁচু করে বঁাচার চেষ্টা করে তারা। যেখানে পুরুষরা নিবার্ক থাকে, তাদের সহধমির্ণীদের সাফল্যে। স্বীকার করতে না চাইলেই অস্বীকার করার তো কিছুই নেই। যার যা প্রাপ্য তাকে তো তা দিতেই হবে। নিজেদের ভাগ্য পরিবতের্ন পুরুষতান্ত্রিক সমাজের খোলস থেকে বেরিয়ে নিজের পরিশ্রমে সৎপথে উপাজর্ন করে সমাজে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে নারীরা। নারীরাও পারে দারিদ্র্যের অন্ধকারে স্বপ্নের ফুল ফোটাতে। তেমনিভাবে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নারীরা নিজের মুক্তির সংগ্রামে সৎপথে পরিশ্রম করে জরি, পুঁতি আর সেলাইয়ের কাজ করে নিজের ভাগ্য পরিবতর্ন করতে চলেছেন। নিজেদের সংসারের কাজের ফঁাকে হাতের কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের পল্লী নারীরা। কুটিরশিল্পের কাজে এগিয়ে এসেছেন তারা। নিপুণ হাতে সুই-সুতা দিয়ে তৈরি করছেন নকশা করা শাড়ি, থ্রি-পিস, লেহেঙ্গা ও ওড়না। কেউ সংসারের কাজের ফঁাকে আর কেউ বা পড়ালেখার পাশাপাশি এ কাজ করে বাড়তি আয় করছেন।

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ, রাজিবপুর ও বড়হিত ইউনিয়নের প্রায় ১০টি গ্রামের দুই শতাধিক নারী এখন হাতের কাজ করে বাড়তি আয় করছেন। শাড়ি ও সালোয়ার-কামিজে জরি ও পুঁতি বসানোর কাজ করে সংসারের অভাব ঘোচানোর পাশাপাশি স্বাবলম্বী হচ্ছেন ওইসব সংগ্রামী নারী। শুধু তাই নয়Ñ অথার্ভাবে যেসব শিক্ষাথীর্ লেখাপড়া করতে পারছেন না কিংবা যাদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে তারাও যুক্ত হয়েছেন জরি, পটুতি বসানোর কাজে। আবার স্বামীহারা ও স্বামী পরিত্যক্তা নারীর থেমে যাওয়া জীবনের চাকা ঘোরাতে নেমে পড়েছেন এ কাজে। এতে অনেকের সংসারে স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে এসেছে। তাদের পাশাপাশি এলাকার অন্যরাও এ কাজে আগ্রহী হয়ে পড়েছেন। স্থানীয় গ্রামীণ উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি সংগঠন এ কাজের সাবির্ক তদারকিসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জোগান দিচ্ছেন ওই সংগ্রামী নারীদের।

মাইজবাগ গ্রামের নাগির্স আক্তারের স্বামী গত ৪ বছর আগে দুরারোগ্য ব্যাধিতে মারা গেছেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর ২ ছেলে ১ মেয়ে নিয়ে বিপাকে পড়েন তিনি। অভাবের সংসারে দুবেলা দুমুঠো খাবার জোগাড় করা তার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। এক প্রতিবেশীকে শাড়িতে জরি, পুঁতি বসানো কাজ দেখে তিনি উৎসাহী হন। তিনিও শুরু করেন জীবনসংগ্রাম। প্রথমে কষ্ট ও সময় বেশি লাগলেও এখন ৫-৬ দিনে একটি শাড়ির জরি ও পুঁতির কাজ করে আয় করছেন ৫ থেকে ৬০০ টাকা। নাগির্স আক্তার আরও জানান, এ কাজ হাতে না নিলে হয়তো মানুষের কাছে হাত পাততে হতো। একই গ্রামের লুৎফুন্নাহার ষষ্ঠ শ্রেণিতে এলাকার মাইজবাগ বিদ্যালয়ে ও মাহফুজা স্থানীয় কলেজে পড়েন। সংসারে অভাব-অনটন থাকায় তাদের লেখাপড়ার খরচ চলে না। তাই তারাও যুক্ত হয়েছে জরি, পুঁতি বসানোর কাজে। আর তা থেকে যা আয় হচ্ছে তা দিয়ে লেখাপড়াও চলছে আবার সংসারের অভাব মেটাতেও যোগ হচ্ছে। বতর্মানে তাদের মতো অনেক ছাত্রী এ ধরনের কুটিরশিল্পে যুক্ত হয়ে নিজেদের লেখাপড়ার খরচ জোগাচ্ছে বলেও জানায় তারা।

মাইজবাগ ইউনিয়নের বৈরাটি গ্রামের সাইফুল ইসলাম আজাদী নামের এক উদ্যোক্তা জানান, তিনি গ্রাম উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি। তার সংস্থায় এলাকার প্রায় শতাধিক নারী সদস্য শাড়ি ও পুঁতি নিয়ে কাজ করছেন বিভিন্ন বøকে। তিনি জানান, এক সপ্তাহে একজন নারী একটি শাড়ির নকশার কাজ শেষ করতে পারেন। এতে মজুরি পান ৬ থেকে ৮০০ টাকা। অন্যদিকে একটি জামায় নকশা করে পান ৪০০ টাকা। তাদের তৈরি এসব শাড়ি বিক্রি হয় ৫ থেকে ১৫ হাজার ও জামা বিক্রি হয় ২ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা পযর্ন্ত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<10361 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1