শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কৈশোরে আত্মহত্যা প্রবণতা

কিশোরীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা এত বেশি হওয়ার পরও তা কেন সবার নজরে আসছে না? কারণ হিসাবে দেখা যায় ‘বেশির ভাগ সময়ই এ ধরনের মৃত্যুকে আত্মহত্যা হিসেবে রেকডর্ করা হয় না। অনেক সময় মৃতের পরিবারের অনুরোধে আবার কখনও কখনও পরিবারের অনুভ‚তিকে আঘাত না করতে আত্মহত্যার বিষয়টি অনুল্লেখ থেকে যাচ্ছে।’ ধমীর্য় গোড়ামি আর রক্ষণশীলতার কারণেই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এমনটি ঘটছে...
কামাল হোসেন আরিফ
  ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০
বতর্মান সমাজে ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে বিলাসিতা আর ভোগের প্রবণতা। সামান্য পাওয়ার লোভে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হচ্ছে মানুষ ছবি : ইন্টারনেট

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা-ডবিøউএইচওর প্রকাশ করা প্রতিবেদনে বলা হয়, বতর্মান বিশ্বে কিশোরী মৃত্যুর অন্যতম কারণ আত্মহত্যা। প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী তরুণীরা বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি কিংবা গভর্ধারণজনিত মৃত্যু কিংবা দুঘর্টনায় মৃত্যুর চেয়ে আত্মহননে মারা যায় বেশি। কেন এ আত্মহত্যা? কেনইবা তারা আত্মহত্যা করছে তা আমাদের নজরে আসছে না?

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, সারাবিশ্বে বতর্মানে প্রতি বছর গড়ে দশ লাখ লোক আত্মহত্যা করছে। আর যারা আত্মহত্যা করবার চেষ্টা করে কোনো না কোনো কারণে ব্যথর্ হয়, তাদের সংখ্যা আত্মহত্যাকারীদের বিশগুণ।

বতর্মান সমাজে ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে বিলাসিতা আর ভোগের প্রবণতা। সামান্য পাওয়ার লোভে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হচ্ছে মানুষ। মানবতা বোধ লুপ্ত প্রায়। হতাশা বঞ্চনা থেকে মুক্তির উপায় না পেয়ে কিশোরী কিংবা তরুণীরা বেছে নিচ্ছে আত্মহননের পথ। অনেক আত্মহত্যাকারীর পরিবার, আত্মীয়স্বজনরা আত্মহত্যার সংবাদ গোপন রাখে সামাজিক মান-মযার্দা নষ্ট হয়ে যাবার ভয়ে। আত্মহত্যার কারণ নিয়ে আমাদের দেশে কোনোরকম সচেতনতা কিংবা প্রচারণা নেই। প্রচার-প্রচারণা থাকলে হয়তো অনেকখানি কমে যেত আত্মহত্যার প্রবণতা। কারও কারও ইচ্ছাকৃত হীনলালসা চরিতাথর্ করার চেষ্টা অন্যের জীবনে টেনে আনছে চরম হতাশা ও বিষাদ।

কিশোরীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা এত বেশি হওয়ার পরও তা কেন সবার নজরে আসছে না? কারণ হিসাবে দেখা যায় ‘বেশিরভাগ সময়ই এ ধরনের মৃত্যুকে আত্মহত্যা হিসেবে রেকডর্ করা হয় না। অনেক সময় মৃতের পরিবারের অনুরোধে আবার কখনও কখনও পরিবারের অনুভূতিকে আঘাত না করতে আত্মহত্যার বিষয়টি অনুল্লেখ থেকে যাচ্ছে।’ ধমীর্য় গোড়ামি আর রক্ষণশীলতার কারণেই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এমনটি ঘটছে।

বাংলাদেশের মতো রক্ষণশীল দেশে আত্মহত্যাকে কেন্দ্র করে পরিবারের উপর কালিমা লেপনের প্রবণতা বেশি তাই এ ধরনের মৃত্যুর সত্যিকার কারণ রেকডর্ রাখার নমুনা খুবই কম। গ্রামাঞ্চলে দেখা যায় বেশিরভাগ পরিবার কিশোরী বয়সে মেয়েদের স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দেয়। স্কুল বাদ দিয়ে তাদের গৃহস্থালির কাজকমর্ করতে দেয়া হয়। নিজেদের সব ইচ্ছা আর উচ্চাকাক্সক্ষা বিসজর্ন দিতে হয় অনেক কিশোরীকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের জোর করে বিয়েও দেয়া হয়। বিয়ে ভেঙে যাওয়া এবং বিয়ে না হওয়ার সম্ভাবনার সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটি পুরো পরিবারের জন্য বোঝা হয়ে যায়। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জন্য তাহা লজ্জার কারণ হয়ে দঁাড়াচ্ছে। পরিবারকে লজ্জার হাত থেকে মুক্তি দিতে এবং বিভিন্ন কটুকথার হাত থেকে রেহাই পেতে মেয়েটি আত্মহত্যা করে। যৌতুকের কারণেও অনেকেই আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছে। কারণ এই বয়সে এত বেশি মানসিক আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা থাকে না। শ্বশুরবাড়ির সবার নিযার্তন কিংবা স্বামীর নিযার্তনের হাত থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই আত্মহত্যা করে। পরীক্ষার ফলাফল খারাপ করেও অনেকে আত্মহত্যা করে। আবার অনেকে বতর্মান সময়ে কৃত্রিম প্রেমজালে আবদ্ধ হয়ে যখন সবর্নাশের চরম সীমায় পেঁৗছে তখনি আত্মহত্যা করার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

প্রকৃত বিচারের এ ধরনের অপরাধের জন্য মেয়েটির হয়তো কোনো দোষই নেই। অথচ শেষ পযর্ন্ত পরিস্থিতির শিকার ভুক্তভোগী কিশোরীটি আত্মহত্যা করে। এ অবস্থার পরিবতের্নর জন্য সরকার এবং বিভিন্ন নারী সংগঠনদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন। কিশোরীদের সাবির্ক নিরাপত্তা ও মযার্দার বিষয়টি প্রাধান্য দেয়া দরকার। বতর্মান সময়ে আধুনিক উন্নত তথ্য প্রযুক্তির কারণেও আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। মোবাইল, ইন্টারনেট, ভিডিও ক্লিপের মাধ্যমে অনেকের সুন্দর জীবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আমরা সেটা দেখতে পাচ্ছি না। অভিযুক্ত অপরাধীদের উপযুক্ত বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে। যাতে করে ভবিষ্যতে অন্য কেউ এরকম জঘন্য কাজ করতে উৎসাহিত না হয়। পাশাপাশি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি নারীদের প্রতি ইতিবাচক পরিবতর্ন করতে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। অস্বাভাবিক মৃত্যু এখন আমাদের অন্তরকে খুব বেশি আলোড়িত করে না। কারণ প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই এরকম খবর আমাদের পড়তে হয়। এর জন্য সঠিক বিচারহীনতার সংস্কৃতি দায়ী।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<13873 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1