বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বঁাশের নান্দনিক কারিগর

জিল্লুর রহমান মÐল
  ০২ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

গাইবান্ধার যমুনা নদীবেষ্টিত ফুলছড়ি ইউনিয়নের মধ্য দেলুয়াবাড়ী চরের বঁাশের কারিগর আনেরা বেগম। যিনি এক সময় নিজের জীবন-জীবিকার তাগিদে গৃহপরিচারিকার কাজ করতেও বাধ্য হয়েছেন। তিনি নিজ চেষ্টায় বঁাশের বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করে আত্মনিভর্র হয়ে দারিদ্র্র্য বিমোচনে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। উল্লেখ্য, দেলুয়াবাড়ী চরের মোট জনসংখ্যা ২ হাজার ৫০০। তাদের মধ্যে অধিকাংশ লোক দিনমজুর এবং মৎস্যজীবী। তবে কিছুসংখ্যক লোক কাঠ এবং বঁাশের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

এদের মধ্যে আনেরা বেগম তেমনি একজন বঁাশের দক্ষ কারিগর। সে জানায়, তার বিয়ে হয় দরিদ্র কৃষকের সঙ্গে ৩০ বছর আগে। ৩ মেয়ে আর ২ ছেলে নিয়ে নদীর ভাঙাগড়ার সঙ্গে চরের মানুষের জীবনের ভাঙাগড়া একাকার হয়ে মিশে অতিকষ্টে তার দিন চলছিল। নদীভাঙনের ফলে তার সামান্য কিছু জমি-জমাও নদীগভের্ বিলীন হয়ে যায়। বার বার বাড়ি-ঘর বিভিন্ন জায়গায় স্থানান্তরিত করার কারণে তাদের পরিবারে নেমে আসে চরম দুভোর্গ। এক বেলা দু’মুঠো ভাতের সংস্থান করা খুবই কষ্টকর হয়ে পড়ে। পরিবারের অন্ন জোগানোর জন্য সে অন্যের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করত। রিলিফের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ধরনা দিত এবং তার স্বামী কাজের সন্ধানে বিভিন্ন শহরে চলে যেত। এত করেও কোনোভাবেই সংসারের অভাব দূর করতে পারছিল না আনেরা বেগম।

এমনি এক সময় ফুলছড়ি ইউনিয়নে দেলুয়াবাড়ী গ্রামে রি-কল প্রকল্পের কাযর্ক্রম শুরু হয়। এখানে নারী-পুরুষের সমন্বয়ে একটি সিবিও কমিটি গঠন করা হয় এ কমিটি একদিন আনেরা বেগমের সঙ্গে কথা বলে তাকে ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য কিছু টাকা প্রদানের চিন্তা-ভাবনা করে এবং আনেরা বেগম কমিটির এ প্রস্তাবে রাজি হয়। সিবিও কমিটি তাকে বঁাশের কাজের জন্য ১৬ হাজার ৫০০ টাকা রি-কল প্রকল্পের মাধ্যমে আথির্ক সহায়তা প্রদান করে। এ টাকা দিয়ে আনেরা বেগম কিছু বঁাশ এবং কাজের যন্ত্রপাতির মধ্যে দা, করাত, চাকু, গুনার তার, সুতলি, রং ক্রয় করে। আনেরা বেগম বঁাশ দিয়ে ডালি, কুলা, চালন ঘরের সিলিং, মাছার ঝঁাপ, চাটাই, মাছের খলাই ইত্যাদি তৈরি করে এবং তার স্বামী বিভিন্ন হাট-বাজারে এবং গ্রামগঞ্জে বিক্রি করে। আনেরা বেগমের স্বামী নূর ইসলাম এ ব্যাপারে তাকে সহায়তা করতে এগিয়ে আসে। সে বঁাশের উৎপাদিত পণ্য হাট-বাজারে গিয়ে বিক্রি শুরু করে।

এরপর আনেরা বেগম ও তার পরিবারকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এ থেকেই সে পেয়ে যায় জীবন গড়ার নতুন পথের দিশা। এখন সে প্রতিদিন ৩০০ টাকা আয় করে। বতর্মানে বিভিন্ন জায়গা থেকে বঁাশের কাজের অডার্র আসতে শুরু করেছে। এ ব্যবসার পাশাপাশি বাড়িতে হঁাস-মুরগি পালনসহ শাক-সবজি চাষ করেও বাড়তি অথর্ উপাজর্ন করছে সে। ফলে এক সময়ের গৃহপরিচারিকা এখন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে সে গ্রামের সবার দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে