বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সৃজনশীলতাই হোক লক্ষ্য

মনিকা আহমেদ
  ০২ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

সৃজনশীলতা বতর্মান যুগের একটি বহুল ব্যবহৃত শব্দ । মোটামুটি সবাই আজকাল এই শব্দটির সঙ্গে পরিচিত। খুব সহজ ভাষায় শব্দটিকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়, আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কাজ-কমের্র সঙ্গে নতুন কিছু কল্পনা বা নিজস্ব মতামত বা ধ্যান ধারণা যুক্ত করে সম্পূণর্ নিজের মতো করে, নতুন কিছু সৃষ্টি করার যে দক্ষতা, সেটাই হলো ক্রিয়েটিভিটি বা সৃজনশীলতা। সাধারণত সৃজনশীলতা তাদের ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয়, যারা বাহিরে অথার্ৎ অফিস আদালতে, শিল্প প্রতিষ্ঠান, স্কুল কলেজ বা অন্যান বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাকুরি বা কাজ করে। কিন্তু একজন গৃহিনী বা মা যারা ঘরের ভিতর থাকে, সারাদিন সংসারের কাজ কমর্ করে, তিন বেলা রান্নাঘর সামলিয়েও সন্তানদের দেখাশোনা করে, তাদের স্কুল, টিচার, পড়াশোনা নিয়ে গলদ্ঘমর্ হয়ে পরে , তদুপরি আত্মীয়স্বজন পরিবার এমনকি বাসার অসুস্থ সদস্যটিরও দেখাশোনার যাবতীয় দায়িত্ব যার ওপর ন্যস্ত থাকে, তার ক্ষেত্রে দেখা যায় ক্রিয়েটিভিটি শব্দটি অচল। কারণ আমাদের সমাজে এমন একটা ধারণা প্রচলিত আছে যে, একজন গৃহিণীর তো এগুলো নিত্যদিনের কাজ। এগুলো তাকে করতেই হবে! এগুলোর মধ্যে ক্রিয়েটিভিটির কি আছে!

অনেক সময় দেখা যায় পরিবারের মধ্যে কোনো গুরুত্বপূণর্ সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারেও একজন মা বা গৃহিণীর মতামতের গুরুত্ব দেয়া হয় না! সমস্ত সিদ্ধান্ত নেন বাড়ির কতার্ ব্যক্তিটি। গৃহিণীদের আবার মতামত কিসের? তাদের কাজ হলো ঘর-দোর আর পরিবার দেখভাল করা। এটাই যেন নিয়মে পরিণত হয়ে দঁাড়িয়েছে। সংসারে তার আবেগ, অনুভ‚তি অবহেলিতই থেকে যায়। এত কিছু করার পরও যখন কারও কাছে থেকে সামান্য একটা প্রশংসা ব্যাক্যও শুনতে পায় না, স্বাভাবিকভাবেই তার মন ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে।

আমি নিজে একজন গৃহিণী হিসেবে অনুভব করি একটা সংসারের মূল চাবিকাঠি হলো একজন মা বা গৃহিণী। পরিবারের সদস্যদের এই ধরনের অবজ্ঞা বা অবহেলার কারণে মন খারাপ করে না থেকে জীবনটাকে সমৃদ্ধশালী করে তুলতে পারি! নিজেদের বদলাতে পারি, নিজের ভেতরে পরিবতর্ন আনতে পারি। দরকার শুধু আমাদের চিন্তা ভাবনার একটু প্রসার ঘটানো। আমরা জানি না যে একজন মা ও গৃহিণী সকাল থেকে সন্ধ্যা পযর্ন্ত এই ক্রিয়েটিভিটি শব্দটার মধ্যেই বসবাস করে। কেমন করে? সেটাই বলছি। এখানে গৃহিণীদের ক্রিয়েটিভিটি নিয়ে ছোট্ট একটা আলোচনা করা হলো ।

একজন গৃহিণীর প্রধান কাজ কী? পরিবারের জন্য রান্নাবান্না, তাইতো? এ রান্নটাই হলো ক্রিয়েটিভিটি, অনেক বড় একটা সৃজনশীলতা। প্রতিদিনের সাধারণ রান্নার সঙ্গে নিজেদের একটু ভাবনা যোগ করে আমরা অসাধারণ কিছু তৈরি করে ফেলতে পারি। নিত্যদিনের রন্ধন পদ্ধতির পরিবতর্ন করে খাদ্যে আনতে পারি নতুনত্ব। এই যে কিছু বদলানোর চেষ্টা, নুতন কিছু করে দেখানো, এটাই ক্রিয়েটিভিটি। হোক না তা ঘরে!

নিজের বাড়িটাকেও সুন্দর ভাবে গুছিয়ে রাখাও কিন্তু একটা সৃজনশীল কাজ। ছোট ছোট জিনিস দিয়ে নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে অতি সাধারণ ঘরকেও করে তোলা যায় সৌন্দযের্র আধার। এই তো একজন গৃহিনীর ক্রিয়েটিভিটি!

কিচেন গাডের্ন করে সেখানে ধনেপাতা , লেটুস, পুদিনা লেবু ইতাদি লাগিয়ে দৈনন্দিন চাহিদা মেটানো যায়। গৃহিণীরা খুব সহজেই এই কাজ করতে পারে। গৃহিণীদের জন্য গাডেির্নং খুব ভালো একটা সৃজনশীল কাজ। হোক না তা স্বল্পপরিসরে! সংসারের একটা বাজেট তৈরি করা, সন্তানদের নতুন কিছু শেখানো, তাদের জন্য ঘরে বসেই নিজস্ব ডিজাইন দিয়ে নিজের হাতে জামা-কাপড় বানিয়ে দেয়া, পরিবারের সদস্যদেরকে হাসি খুশি রাখা বা আনন্দ দেয়া, এগুলোও একজন মা ও গৃহিণীর ক্রিয়েটিভিটি। আমরা মেয়েরা খুব ছোট ছোট কাজেই আনন্দ পেয়ে থাকি। সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য এ ধরনের ছোট ছোট আনন্দই যথেষ্ট।

সবশেষে মা ও গৃহিণীদের বলব, আপনার ত্যাগ-তিতীক্ষা বা কাজের প্রশংসা কে করল বা কে করল না, এগুলো নিয়ে মন খারাপ করে না থেকে নিজে কিছু করার চেষ্টা করুন, নতুন কিছু করার চেষ্টা। হোক না হয় আপনার ছোট্ট ঘরখানিতে! নিজের কাজেই নিজে খুশি থাকুন, আনন্দে থাকুন আর পরিবারের সদস্যদেরকেও সেই আনন্দের ভাগীদার করুন। এটাই হলো একজন গৃহিণীর সবচেয়ে বড় ক্রিয়েটিভিটি ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে