বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নিখেঁাজের দুই বছর পর বৃদ্ধা মাকে ফিরে পেলেন ছেলে

নন্দিনী ডেস্ক
  ০২ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

হারিয়ে যাওয়ার ২২ মাস পর পরিবারের কাছে ফিরে আসলেন মানসিক ভারসাম্যহীন বৃদ্ধা হেনা বেগম (৬০)। ২২ জুন সন্ধ্যায় মানবাধিকার সংগঠন ‘রাইটস’ যশোর বৃদ্ধাকে তার ছেলের কাছে হস্তান্তর করে। হেনা বেগম টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলার পাহাড়পুর এলাকা থেকে ২০১৬ সালের ১৫ আগস্ট হারিয়ে যান।

রাইটস যশোর ও বৃদ্ধার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে ২০১৬ সালের ১৫ আগস্ট হেনা বেগম টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলার পাহাড়পুরের নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরতে পারেননি। তার সন্তান ও পরিজনেরা স্থানীয়ভাবে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাকে না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন।

এদিকে, ২০১৭ সালের ১১ নভেম্বর যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষ্ণনগরে হেনা বেগমকে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরতে দেখে আশ্রয় দেন স্থানীয় জনৈক জনি হোসেন। পরে বৃদ্ধাকে মানসিক রোগী বুঝতে পেরে স্থানীয়রা ঝিকরগাছা সমাজসেবা অফিসারের সহযোগিতায় তাকে ঝিকরগাছা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। পুলিশ হেনা বেগমের সঠিক ঠিকানা জানার চেষ্টা করে সফল না হওয়ায় মানবাধিকার সংগঠন রাইটস যশোরের সাথে যোগাযোগ করেন। রাইটস যশোর বৃদ্ধাকে থানা থেকে জিডি মূলে জিম্মায় গ্রহণ করে এবং স্থানীয় ঢাকা আহছানিয়া মিশনের শেল্টার হোমে রাখার ব্যবস্থা করে। এরপর রাইটস যশোর বৃদ্ধা হেনাকে কাউন্সিলিং করার মাধ্যমে তার কাছ থেকে সঠিক ঠিকানা বের করে পরিবারের সাথে যোগাযোগ শুরু করে। এ কাজে নাগরপুর থানার অফিসার ইনচাজর্ ও এসআই শংকর নন্দী সহযোগিতা করেন।

সংবাদ পেয়ে বৃদ্ধা হেনা বেগমের ছেলে সোনালি ব্যাংক কমর্কতার্ বাবুল হোসেন স্বজনদের নিয়ে রাইটস যশোর কাযার্লয়ে আসেন। এরপর সব প্রমাণপত্র যাচাই শেষে শুক্রবার বৃদ্ধা হেনা বেগমকে তার ছেলের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় রাইটস যশোরের নিবার্হী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মলিক, প্রোগ্রাম ম্যানেজার এসএম আজহারুল ইসলাম, ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং অফিসার তৌফিকুজ্জামান ও হেনা বেগমের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। মাকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরেন ছেলে। দু’জনের চোখেই জল গড়িয়ে পড়ে। এ সময় এক আবেগময় পরিবেশ তৈরি হয়। এ বিষয়ে রাইটস যশোরের নিবার্হী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক বলেন, রাইটস যশোর মানবাধিকার রক্ষা ও প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে। এ কাজ তারই ধারাবাহিকতা। সরকারিভাবে শেল্টার হোম না থাকার কারণে রাইটস যশোর বৃদ্ধার দায়িত্ব নেয়।

প্রায় আট মাস ধরে তার পরিবারের সন্ধান চালানো হয়। অবশেষে নাগরপুর থানার মাধ্যমে বৃদ্ধার ছবি তার বাবার বাড়িতে পাঠালে তার ছেলে এসে মাকে গ্রহণ করে। মা আর সন্তানের দীঘর্ বিচ্ছেদের পর যে মিলন দেখলাম তাতে এ কাজের আগ্রহ আরও বেড়ে গেল।

মাকে কাছে পেয়ে আপ্লুত কণ্ঠে ছেলে বাবুল হোসেন বলেন, কত আনন্দ লাগছে তা ভাষায় বুঝাতে পারছি না। আমার মাথার ওপর ছায়া ছিল না, অনেকদিন পর সেই ছায়া পেলাম। আর কোনো শূন্যতা আমাকে কষ্ট দেবে না। আজ যেন সব খুঁজে পেলাম।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে