ধান ভানলে কুড়ো দেব, মাছ কাটলে মুড়ো দেব ছড়াটি বাস্তব চিত্র পাওয়া গেছে গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার চান্দার বিল এলাকার শুঁটকিপল্লীতে। তবে মাছ কাটলে মাছের মুড়ো (মাথা) নয়, মজুরি হিসেবে দেয়া হয় মাছের তেল। আর নারী শ্রমিকরা টাকার চেয়ে তেলের বিনিময়ে কাজ করতে আগ্রহী। দেখা গেছে, বতর্মান সময়ে চান্দার বিল এলাকার লোকেরা শুঁটকি তৈরির কাজে ব্যস্ত। শুঁটকি শুকানোর জন্য তৈরি করেছে ছোট-বড় মিলে প্রায় ২ হাজার মাচা। বঁাশের খুঁটি ও পাটাতনে তৈরি এসব মাচা বা ডাঙ্গির উচ্চতা প্রায় ৬ ফুটের মতো। শিকারি পাখিরা যাতে ছেঁা মেরে মাছ নিতে না পারে সে জন্য মাচা ঢেকে দেয়া হয়েছে জাল দিয়ে। মাছের অঁাশ ও পচা মাছের গন্ধে মাছি সবসময় ভনভন করে। এরকম পরিবেশেই ভোর থেকে কাটতে আসে প্রায় ৫ হাজার নারীশ্রমিক। প্লাস্টিকের বস্তায় স্তূপাকারে রাখা হয় কাটার জন্য আনা মাছ। এক-একটি শুঁটকির মাচার পাশে গোল হয়ে দা-বঁটি নিয়ে মাছ কাটতে বসে যায় তারা। তারা কাটে ছোট প্রজাতির টেংরা খৈলসা, পুঁটি, টাকি, মেনি, শিং, মাগুর মাছ। মাছ কাটতে আসা বাসন্তী বিশ্বাস জানান, ভোর থেকে ৯-১০টা পযর্ন্ত মাছ কাটি। এ সময়ে তিনি ৮-১০কেজি মাছ কাটতে পারেন। বিনিময়ে মজুরি হিসেবে পান কম-বেশি ৫০ থেকে ৬০ টাকার মতো। যদি টাকা না নেন তবে তারা পান কাটা মাছের নাড়িভুঁড়িসহ (পেটা) ১ কেজি থেকে দেড় কেজি মাছের তৈল, ২-৩ দিনে এক-দেড় কেজি তৈল সংগ্রহ করতে পারেন। স্থানীয় শুঁটকি প্রস্তুতকারীরা তাদের কাছ থেকে তা কিনে নেন ১৩০-১৫০ টাকা কেজি দরে। তিনি আরও জানান, টাকার চেয়ে তেলের বিনিময়ে মাছ কাটলে তাদের জন্য ভালো। কিন্তু শুঁটকি প্রস্তুতকারীরা সবসময় তেলের বিনিময়ে মাছ কাটতে চায় না। এত কম পারিশ্রমিকে কেন কাজ করেন জানতে চাইলে তারা জানান কী করব? আমরা গরিব, হাতে কোনো কাজ নেই, বেকার বসে থাকার চেয়ে যা পাই তাতে তো নিজের খোরাক হয়। নারীশ্রমিকদের কম মজুরি প্রসঙ্গে শুঁটকি প্রস্তুতকারী দীনবন্ধু দাস জানান, আমরা ছোট ব্যবসায়ী, ছোট ব্যবসা করি, পুঁজি কম তাও লগ্নির টাকা। নিজের ব্যবসারই কোনো লাভ-লোকসান বুঝি না, করার জন্য করি। তাই তাদের ন্যায্য মজুরি দেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না।