শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উপলক্ষবিহীন মায়ের ভালোবাসা

মা পৃথিবীর যাবতীয় ভাষার সেরা একটা শব্দ। যা উচ্চারণে প্রশান্তির প্রলেপ মাখায় দেহমনে। সবর্কালে সবের্দশে এ ডাকের বিকল্প নেই। বিকল্প নেই তেমন মায়ের ভালোবাসার। তার অঁাচলে মোড়ানো মমতার। ঝুরঝুর করে ঝরে পড়া সে শিউলি ফুলের মমতা। কুড়িয়ে নিয়েও ফুরোয় না যেন। কোচর ভরে উঠে। মন প্রাণ উন্মন হয় এমন মায়াময় মমতায়। লিখেছেন রুমানা নাওয়ার
নতুনধারা
  ১২ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০
শত ঝড় ঝঁাপটায় মা তার সন্তানকে আগলে রাখে ছবি : ইন্টারনেট

শিশু প্রাণ থেকে শুরু করে মধ্যবয়সী সন্তানটাও মায়ের ভালোবাসায় সিক্ত হয়। মুখিয়ে থাকে সন্তান মাত্রেই। মা তো অবারিত হাতে বিলোয় তার ফল্গুধারা। কখনো মায়ায়, কখনো ছায়ায়, কখনো বা ভালোবাসায়। দেয়াতেই তার যত সুখ। কোন বিনিময়বিহীন এ দেয়া। কিছুই চায় না বিনিময়ে। শুধু প্রিয় সন্তান ভালো থাকুক। দুধে ভাতে দিন কাটাক, এটায় চায়। সুসন্তান হিসেবে বেঁচে থাকুক সমাজে। রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিতে পারে একমাত্র মা-ই। অসুখ হলে বা বড় কোনো অঘটন হলে, আগে জানতে পারে মা। মুখ কালো হলে ভেতর ঘরের খবর জানতে পারে মা। চোখের নিচের কালি জমার কাহিনী বলতে পারে মা-ই। একজন সন্তানকে মানুষ করতে কি পরিমাণ শ্রম এবং কষ্ট পোহাতে হয়। সেটা মা ছাড়া দ্বিতীয় কেউ জানে না। বাবাও তার সারথি হয়। তবুও মার তুলনায় তা কম। মা সন্তানের চোখে স্বপ্ন দেয়। বুকে ভালোবাসা দেয়। সারাজীবনের আগামীর পথে ফুলেল বিছানা বিছিয়ে দেয়। নিজের কাছে গচ্ছিত রেখে সব দুঃখ সুখ কিনে দেয় পরম আত্মজকে। কোনো অভাব অভিযোগে সন্তান যেন বিভ্রান্তিতে না পড়ে। সে দিকটায় সজাগ দৃষ্টি রাখে বাবা মা।

সারাজীবন দেখলাম, মা ভালো খাবারটা নিজে না খেয়ে বাবাকে আর তার সন্তানদের খাওয়াতে। উচ্চিষ্ট বাসী খাবার খেতে পারে মা-রাই। শতেক ছেঁড়া তালি দেয়া কাপড় পড়তে পারে মা। কঠিন ব্যামো হাসিমুখে সইতে পারে মা। শুধুই সন্তানের ভালো হোক এ চিন্তায়। সন্তানের ভালো পজিশনে যাওয়ার পেছনে বাবা মার অবদান অনস্বীকাযর্। প্রতিটি সন্তানের সাফল্য গাথায় মাকে জড়িয়ে। গভর্ধারণ থেকে শুরু করে সন্তান প্রতিষ্ঠিত হওয়া পযর্ন্ত মা-রই কষ্টে ধৈযের্্যর দিনযাপন। একদÐ সময় অপচয় করে না নিজের জন্য। তার ধ্যান জ্ঞান সব তখন তার নাড়িছেঁড়া ধনÑ তার সন্তান। একটু ব্যথায়েও যে ব্যথিত হয়। মুষড়ে পড়ে।

মা পাখিটার মতো আগলে রাখে শত ঝড় ঝঁাপটায়। একটুও অঁাচড় লাগতে দেয় না সন্তানের গায়ে। সুসন্তান হয়ে বেড়ে উঠুক প্রিয় সন্তান প্রতিটি মা বাবাই কামনা করে। বিদ্যা বুদ্ধি ধনে মানে প্রতিষ্ঠা পাওয়া সে সন্তানরা আজ বাবা মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাচ্ছে। সমাজের রাষ্ট্রের উচ্চ পদে আসীন এসব সুসন্তান ভুলে যায় অতীত দিনের মা বাবাকে। নাড়িছেঁড়া সম্পকর্টাকে। নতুন সম্পকের্ নতুন মায়ের আগমনে সব ভুলে যায় আহাম্মক সন্তান। বৌয়ের ঈশারায় যন্ত্র দানব বনে যায় এসব তথাকথিত শিক্ষিতরা। তাকে ভালোবাসে প্রচুর। কমতি নেই তার। কিন্তু বৃদ্ধ মা বাবাকে ভালো লাগে না, ভালোবাসে না। দুরদুর করে তাড়ায় সব সময়। ওইসব ভদ্র ঘরের ললনারা বুঝতে চায় না তার স্বামী নামক ব্যক্তিটিকে আজকের অবস্থানে পাওয়ার পেছনে ওই বুড়ো মা বাবার পুরো অবদান। যাদের গায়ের চামড়া হয়তো কুচকে গেছে। বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়েছে। চোখ দুটোয় ভালোয় দেখতে পায় না আজকাল। লাঠিতে ভর করে চলা এ সময়টায় যারা তাদের একমাত্র অবলম্বন হওয়ার কথা ছিল। তারা তা না হয়ে অন্ধকারে অনাত্মীয় পরিবেশে ছুড়ে ফেলে মা বাবাকে। সন্তানের প্রতিষ্ঠায় মানুষ করার সে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া সৈনিক মা-বাবারাই পরাজিত হয় শেষ বয়সে। অথচ যারা ছিটেফেঁাটা সাফল্যেও ভাগীদার না সে মানুষগুলো সুখের নহরে ভাসতে থাকে, তার উপাজের্ন তার আয় রোজগারে। সুখ যখন কানায় কানায় সন্তানের যাপিত জীবনে। যার সোপান তৈরি করেছিল মা বাবা। তার সুফল তারা ভোগ করতে পারে না। ছেলেবউ সব অধিকারে নেয়। স্বামী নামক জীবটাকে তারই মনে করে শুধু। একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে তার ওপর। মা বাবার কোনো অধিকার নেই ছেলের ওপর। এমন মনোভাব দেখায় উঠতে বসতে। কোণঠাসা করে রাখে শ্বশুর শাশুড়িকে। তার মা বাবা তার ভাইবোনকে নিয়ে চঁাদেরহাট বসায় শ্বশুরঘরে। যতো অধিকার এদের। শ্বশুর-শাশুড়ি-ননদ-দেবর এরা সবাই অনেক দূরের। ঘর থেকে তাড়াতে পারলে যেন বঁাচে।

ব্যক্তিত্বহীন পুরুষ যাদের মেরুদÐ নড়বড়ে তারাই এসব মেনে নেয়। চেয়ে চেয়ে দেখে। সুখের সাগরে ভাসে। নিজের মা- বাবা-ভাই-বোনকে কানাকড়ি পরিমাণ মূল্য না দিয়ে বউয়ের মা বাবাকে গাল ভরে আম্ম আব্বা ডাকে। শালীকে স্নেহের ঝঁাপিতে টইটম্বুর করে শ্যালককে ভাইয়ের দায়িত্বে কঁাধে নেয়। এদের এসব সুসন্তানকে আমরা কি নামে অভিধা দিতে পারি। মা বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে মৌজ মাস্তিতে ভাসমান এসব মানব সন্তানকে আমরা আর যাই ভাবি মানুষ ভাবতে পারি না। গ্রামীণ পরিবেশে চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত রেখে বাড়িতে ফেলে রাখা এসব মা বাবারা কি ভালো আছে? এসব খেঁাজ নেয়ার সময় পায় না বিশাল পদে কমর্রত সন্তানটি। অথচ আলিশান ফ্ল্যাটে জায়গা করে নেয় বিদেশি কুকুর থেকে শুরু করে বউয়ের মা বাপ সবাই। বউয়ের মা বাবার ডাক্তার দেখানো ওষুধপত্র কেনাÑ ডায়াবেটিস চেকআপ, ইনসুলিন দেয়া সবই তিনি করতে পারেন। নিজের মাটাকে এনে ডাক্তার দেখানোর সময় তার হয় না। সময় অপচয় করা হবে তাতে। এত টাকাপয়সা খরচের দরকার কি। বুড়ো বয়সে অসুখ হয় এরকম— এ ধরনের মনোভাব তাদের।

গত হয়ে যাওয়া একটা ঘটনা সামাজিক মাধ্যমগুলোয় ঝড় তুলেছিল বেশ

তিন সন্তান সবাই প্রতিষ্ঠিতÑ যার যার জায়গায়। বাবা ছিল রিটায়াডর্ পারসন। নিজের টাকায় কেনা ফ্ল্যাটাও কেড়ে নেয় সন্তানরা। কোনো ছেলের কাছেই বাবার শেষ আশ্রয় জুটলো না। তাড়িয়ে দিল সবাই। মসজিদের বারান্দায় আশ্রয় নেয় বাবা। শেষে অসুস্থ হয়ে পড়লে এক মহৎপ্রাণ ব্যক্তি ক্লিনিকে ভতির্ করায়। সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন ওই অবসর প্রাপ্ত অফিসার। সন্তানকে ফোন করা হলো লাশ দাফনের জন্য। মিটিংয়ের ব্যস্ততার অজুহাত দেখায়। আরো কয়বার ফোনে আসার অনুরোধ করা হলে ওই কুসন্তান জানায়, বাবার লাশটা আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামে দান করে দিতে। সময় নেই তার লাশ গ্রহণ করার। এসব কুসন্তান জন্ম দিয়েই ভুল করেছিল বাবাটি।

মাকে কাছে রাখা যতœআত্তি করা ফরজ না। ফরজ বউয়ের মাকে কাছে রাখা। তাকে দুধ ডিম ও ফলে বলবান রাখা। তার একটু অসুখে অসুখী হওয়া। অথচ মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের জান্নাত। সে জান্নাতকে অবহেলা স্বয়ং আল্লাহও সহ্য করবে না। আল্লাহর পরে কাউকে সেজদা করার বিধান থাকলে তাহলে সেটা হতো জন্মদাত্রী মা। তারপর বাবা। কখনো অন্য কেউ নয়।

সন্তানকে মানুষ করতে একটা মায়ের যে শ্রম ব্যয়। তার ঋণ সারাজীবনেও শোধ করা যাবে না। শোধ হবে না মায়ের ভালোবাসারও। যে অপরিসীম স্নেহ মমতা ভালোবাসা মা সন্তানে বিলান। তার সিকি পরিমাণ ও ছেলেমেয়ে থেকে তারা পায় না। আর শ্রমের কথা তো বলাইবাহুল্য। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, মা সন্তানের জন্য যে শ্রম দেয়। পৃথিবীর আর কোনো সম্পকের্ এরকম নিঃস্বাথর্ দেয়া নেই। সব সম্পকর্ই বিনিময় খেঁাজে। শুধু মা ছাড়া। এ এক অপাথির্ব দান সৃষ্টিকতার্র। যার মা আছে ঘরে। সে ঘর স্বগর্সম। মন্দির মসজিদের চেয়ে এটাও কম নয়। বিভিন্ন মাজারে মাজারে অবুঝ যারা সেজদায় পড়ে যে অশ্রæ বিসজর্ন করে। তা মায়ের পদতলে বসে মায়ের সেবা করলে আল্লাহর সন্তুষ্টি আসতো দ্বিগুন।

মাকে অনাদরে অবহেলায় রেখে যেসব লোক দান খয়রাতে মশগুল। সে দান ও কতটুকু নেক আমলে লিখা হবে আমরা জানি না। মায়ের একটু মলিন মুখ। এক ফেঁাটা অশ্রæও সন্তানের জন্য অমঙ্গলকর। সন্তানের কারণে মা যদি কষ্ট পায়। সে কষ্ট বিধাতার আরশ অবধি পেঁৗছে যাবে। যা সন্তানের ভবিষ্যৎ জীবন কণ্টাকাকীণর্ করে তুলবে। যদিও কোনো মা-ই তার সন্তানকে অভিশাপ দেন না। সন্তান যতই কষ্ট দিক, খারাপ আচরণ করুক। মা সহ্য করে যায় সব। কারণ মা তো মা-ই। মায়ের তুলনা হয় না অন্য কিছুর সঙ্গে।

শেষ বয়সটায় মা বাবাদের সময়টা খুব একটা ভালো যায় না। বাধর্ক্য পরনিভর্রতা এসব কারণে তারা একটা হীনমন্যতায় ভোগে। সব কিছু নিজ অধিকার থেকে চলে যাওয়ার দুঃখ ও কাজ করে ভেতরে ভেতরে। নিজেকে অপ্রয়োজনীয় ভাবতে শুরু করে এ সময়টায়। তখন আমরা সন্তানরা মা বাবাকে যদি মানসিক এবং শারীরিকভাবে সাপোটর্ না দেই। তাহলে খুবই অসহায় হয়ে পড়ে আমাদের বাবা মায়েরা। তাদের হাতে টাকা দিলে এটা ওটা দিলে খুশী হয়Ñ যার পর নেই। নিভর্রতার আশ্রয় খেঁাজে সন্তানের মাঝে। ভালোবাসলে মায়া দেখালে আপ্লুত হয়। ছোটকালে আমরা যে রকম হতাম। ঠিক সে রকম। একটু অবহেলায় একটু কটু কথায় বিষাদিত হয় মুখ শরীর পুরো অবয়ব। মায়ের হাসি অমলিন রাখার মূল মন্ত্র মাকে ভালোবাসুন। মায়ের সেবা করুন। মার পছন্দ অপছন্দের মূল্যায়ন করুন। তবেই ইহলোক পরলোক শান্তির হবে।

সময় থাকতে দঁাতের যেমন মযার্দা দিতে হয় তেমন মা বাবা বেঁচে থাকতে তাদের আগলে রাখুন। সেবা দিয়ে মায়া দিয়ে। মরে যাওয়ার পর জোড় গরুতে পুরো এলাকার লোক খাইয়ে মেজবান দেয়ায় কোনো সওয়াব নেই। সারাজীবন মায়ের খবর নিলেন না। যেই মাত্র চোখ বুজল। মাকে দেখার জন্য দুচারদিন লাশ ফ্রিজারে রেখে দেয়া। তারপর লোক দেখানো মায়াকান্না। চেহলাম দেয়া অঢেল পয়সাকড়ি খরচ করে। এতে ক্ষতি বৈ লাভ হবে না। তার চেয়ে বরং বেঁচে থাকতেই আমরা এ জান্নাতকে ভালোবাসি। কারণ মায়ের সেবা করা মানেই তো জান্নাত পাওয়া। উপলক্ষবিহীন এ ভালোবাসার যুৎসই দাম দেই সেবায় মায়ায় ভালোবাসায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<22043 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1