শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সমতার এপিঠ-ওপিঠ

বতর্মান বিশ্বে যে কোনো চ্যালেঞ্জিং পেশাতে বাংলাদেশের নারীরাও সম্পৃক্ত হচ্ছেন বেশ গবের্র সঙ্গে। আর এরই হাত ধরে ওয়াল্ডর্ ইকোনমিক ফোরামের গবেষণা তথ্যানুযায়ী নারী-পুরুষ সমতা সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। নারী-পুরুষ ব্যবধান কমিয়ে সমতা নিশ্চিতের উদ্দেশ্যে প্রতিবছর বৈশ্বিক লিঙ্গ বৈষম্যবিষয়ক সূচক (গেøাবাল জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স) প্রকাশ করে থাকে ওয়াল্ডর্ ইকোনমিক ফোরাম...
সাবিহা মুনমুন
  ০৭ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

না। বৈষম্য নয়, জেন্ডার হলো এটা সমাজ কতৃর্ক নিধাির্রত বৈশিষ্ট্য। আর এই বৈশিষ্ট্যই অনেক সময় নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য তৈরি করার ক্ষেত্রে ভ‚মিকা রাখে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এই নিধাির্রত জেন্ডার ভ‚মিকার কারণেই সমাজ নারীকে যেমন বিমানের পাইলট হিসেবে দেখতে পছন্দ করে না, তেমনি রান্নাঘরে পুরুষের উপস্থিতিও সমাজ স্বাভাবিকভাবে মেনে নিত না। কিন্তু দিন পাল্টাচ্ছে। বতর্মান সময়ে শিক্ষিত মা ও শিক্ষিত পরিবারের কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করে দিন দিন একটি আধুনিক সমাজ গঠিত হচ্ছে যেখানে নারীরা প্রচুর সুযোগ পাচ্ছে ছেলেদের সমপযাের্য় নিজেদের মেধাকে কাজে লাগানোর।

এ কারণেই বতর্মান বিশ্বে যে কোনো চ্যালেঞ্জিং পেশাতে বাংলাদেশের নারীরাও সম্পৃক্ত হচ্ছেন বেশ গবের্র সঙ্গে। আর এরই হাত ধরে ওয়াল্ডর্ ইকোনমিক ফোরামের গবেষণা তথ্যানুযায়ী নারী-পুরুষ সমতা সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। নারী-পুরুষ ব্যবধান কমিয়ে সমতা নিশ্চিতের উদ্দেশ্যে প্রতিবছর বৈশ্বিক লিঙ্গ বৈষম্যবিষয়ক সূচক (গেøাবাল জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স) প্রকাশ করে থাকে ওয়াল্ডর্ ইকোনমিক ফোরাম। বৈশ্বিকভাবে নারী-পুরুষ সমতা সূচকে সবার শীষের্ রয়েছে আইসল্যান্ড আর সূচকে সবার শেষে রয়েছে ইয়েমেন। মঙ্গলবার ওয়াল্ডর্ ইকোনমিক ফোরামে প্রকাশিত গেøাবাল জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্সের প্রতিবেদনে বিশ্বে নারী-পুরুষ সমতার এমন চিত্র উঠে এসেছে। বিশ্বের ১৪৪টি দেশের শিক্ষাগত সাফল্য, স্বাস্থ্য, অথৈর্নতিক সুযোগ এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন এই চারটে মূল ক্ষেত্রসহ মোট ১৪টা ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতায় কেমন অগ্রগতি হয়েছে তার ভিত্তিতেই এই সূচক তৈরি করা হয়।

দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের পর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। তালিকায় ভারতের অবস্থান ৮৭ নাম্বারে। আর দক্ষিণ এশিয়ায় সব থেকে নিচে রয়েছে পাকিস্তান। সূচকে পাকিস্তানের অবস্থান ১৪৩তম স্থানে। বৈষম্য সূচকে শীষের্ রয়েছে আইসল্যান্ড। সবার শেষে রয়েছে ইয়েমেন। ওপরের দিক থেকে আইসল্যান্ডের পর রয়েছে ফিনল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেন, রোয়ান্ডা, আয়ারল্যান্ড, ফিলিপিন্স, ¯েøাভেনিয়া ও নিউজিল্যান্ড।

যদিও শিক্ষাগত সাফল্যের দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের কোনো দেশই নারী-পুরুষের ব্যবধান পুরোপুরি ঘোচাতে পারেনি। তবে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কেবল শ্রীলঙ্কা এ ব্যবধান পুরোপুরি ঘোচাতে সক্ষম হয়েছে। বৈশ্বিক সূচকে আইসল্যান্ডের পর রয়েছে ফিনল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেন, রুয়ান্ডা, আয়ারল্যান্ড, ফিলিপাইন, ¯েøাভানিয়া ও নিউজিল্যান্ড। অথর্নীতিবিদরা মনে করছেন, বাংলাদেশে তৈরি পোশাকশিল্পে বিপুলসংখ্যক নারীর অংশগ্রহণ রয়েছে, অন্যান্য ক্ষেত্রেও নারীরা এগিয়েছেন। তবু সমতার জায়গা থেকে অনেক পিছিয়ে আছেন। বাংলাদেশ নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে এগিয়ে থাকলেও অথৈর্নতিক এবং মজুরি বৈষম্য এখনো রয়ে গেছে বলা হয়।

আমাদের গ্রামীণ অথর্নীতিতে নারীর সাবির্ক অবদান পুরুষের তুলনায় বেশি হলেও নারীর অধিকাংশ কাজ অথৈর্নতিক নিরিখে বিবেচিত হয় না, শিক্ষায় অগ্রগতি থাকলেও কমর্সংস্থানের সুযোগ পুরুষের তুলনায় অনেক কম। কায়িক শ্রমের ক্ষেত্রে নারীরা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত পুরুষের তুলনায়। এ ছাড়া সামাজিক ক্ষেত্রে নারীরা প্রতিনিয়ত হচ্ছেন নিযার্তন এবং নিগ্রহের শিকার। প্রতিদিন গণমাধ্যমে এ ধরনের খবর উদ্বেগজনক। সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, আমাদের দেশে ৬৯ শতাংশ কিশোরীর বিয়ে হয়ে যায় ১৩-১৫ বছর বয়সের মধ্যে, এদের ৯২ শতাংশ শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে পড়ে।

ধমীর্য় ও সামাজিক অনুশাসন, পারিবারিক পযাের্য় পুরুষতন্ত্রের প্রভাব নারীর অগ্রগতি ও লৈঙ্গিক সমতা অজের্ন বড় বাধা। এ ছাড়া জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে অনেক নারীই বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক মূল্যবোধসহ নানা বাধা-বিপত্তির মুখে তারা এগোতে পারছেন না; বরং ব্যবসা ক্ষেত্রেও বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। আমরা একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা বলি। বলাইবাহুল্য, নারীর ন্যায্য মজুরি, সম্পত্তিতে সমঅধিকার ও বাজারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা না গেলে এ ধরনের স্বপ্ন কখনো বাস্তবায়িত হবে না। পুরুষ ও নারী উভয়েই যে মানুষ নামের প্রজাতির অন্তগর্ত এবং যোগ্যতা ও মেধায় কেউ কারও চেয়ে পিছিয়ে নেই, এ সত্যটি আমাদের মাথায় প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি এখনো। দেখা গেছে, কোনো বিশেষ পেশা বা কাজে নারীর চেয়ে পুরুষ যেমন বেশি দক্ষতা দেখাতে পারে আবার অন্য একটি পেশা বা কাজে পুরুষের চেয়ে নারী নিজেকে বেশি দক্ষ প্রমাণ করতে পারে। সুতরাং যোগ্যতার প্রশ্নে নারী-পুরুষের মধ্যে প্রভেদ করা যুক্তিসঙ্গত নয়। নারীরা যে পুরুষের চেয়ে অথৈর্নতিকভাবে পিছিয়ে রয়েছে, তাদের নিরাপত্তাহীনতাবোধের একটি বড় কারণ। এই নিরাপত্তাহীনতার দায়ও পুরুষের। নারীকে নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তা দিতে হবে, নিশ্চিত করতে হবে তার ন্যায্য মজুরি। তবেই আমাদের নারীরা বিশ্ব অঙ্গনে নিজেদের ও বাংলাদেশকে আরও উঁচুতে নিয়ে যেতে পারবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<30852 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1