শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঐতিহ্যের আবহে গ্রামীণ পিঠাপুলি

ফোরকান বেগম
  ০৭ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

সারাবছরই কোনো না কোনো ধরনের পিঠাপুলি খাওয়ার রেওয়াজ সেই আদিকাল থেকেই বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে। তবে শীতকালই হলো হরেকরকম পিঠাপুলি খাওয়ার মৌসুম। আমার পিঠাশিল্পী নানি উম্মে সাইদ ফাতেমা কেবল নামেই আধুনিক ছিলেন না, শতরকম পিঠাও তিনি তৈরি করতে পারতেনÑ ভাপাপিঠা চার-পঁাচরকম (ঝাল, মিষ্টি, নারকেল ভাপা, পাতিল ভাপা, বঁাশভাপা), চিতইপিঠা, দুধচিতই, কুলিপিঠা, সমুচাপিঠা (ঝাল ও মিষ্টি), ঐতিহ্যবাহী ফুলপিঠা বা নকশিপিঠা, তৈলপিঠা, ঝুরিপিঠা (একাধিক রকম), ঝুরির মোয়া, মুড়ির মোয়া, চুইপিঠা, কলাচুইপিঠা, তালের বুলবুলা, তালের রুটিপিঠা, কঁাঠালের বুলবুলা, কঁাঠালের রুটিপিঠা, পাটিশাপটা (ঝাল ও মিষ্টি), আন্দেশাপিঠা, গোটাপিঠা (ঝাল ও মিষ্টি), ডিমচিতই, চিটারুটিপিঠা, পাকনপিঠা, গোকুলপিঠা, চুটকিপিঠা, জামদানিপিঠা, হঁাড়িপিঠা, চাপড়িপিঠা, পাতাপিঠা, জিলাপিপিঠা, কড়িপিঠা, রসপিঠা ইত্যাদি বহুরকম পিঠার নাম করেছেন নানি।

ঐতিহ্যবাহী পিঠাপুলি আমাদের দেশের সংস্কৃতির এক বিরাট অংশ। আবহমানকাল থেকে চলে আসা পিঠাপুলির উৎসব এবং শতাধিক রকমের পিঠা তৈরির মধ্য দিয়ে এ দেশের নারীদের শিল্পী সত্তার পরিচয় মেলে। এ দেশের নারীরা কত যে গুণের অধিকারী, ধৈযর্শীলা ও কঠোর পরিশ্রমী তার পরিচয় পাওয়া যায় তাদের তৈরি পিঠার নকশা, রকমারি ডিজাইন ও বানানোর পদ্ধতি দেখলে।

শীতকালই পিঠা খাওয়ার উত্তম সময়। হেমন্তে নতুন ধান ঘরে ওঠে। ধান মাড়াই, সিদ্ধসহ প্রক্রিয়াজাত করা শেষ হতে না হতেই শীত এসে হাজির হয়। তখন নতুন ধানের নতুন চালে হরেকরকম পিঠা বানাতে থাকে গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে।

আজকাল বড় বড় শহর, গঞ্জ, হাট-বাজারগুলোতেও কয়েক ধরনের পিঠার বেশ প্রচলন দেখা যায়, বিশেষ করে চিতই পিঠা, ভাপাপিঠা, তেলের ডুবাপিঠা। রাস্তার ধারে গরিব নারী-পুরুষ এ পিঠা তৈরি করে বিক্রি করে। বেশ ভালোই চলে পিঠার ব্যবসা। গরিব, ধনী, ছাত্রছাত্রী, রিকশাওয়ালা অনেকেই এসব পিঠা সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার বা বিকালের নাস্তা হিসেবে খেতে পছন্দ করে। ভাপাপিঠায় গুড়, নারকেল আর চিতইপিঠায় সহযোগ হিসেবে ধনেপাতার চাটনি বা শুঁটকির ভতার্ বা গুঁড়ের টুকরা দেয়া হয়। পিঠা ফেরি করে এতে বহু গরিব লোকের কমর্সংস্থান হয়েছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে পিঠা বিক্রয়ের আয় দিয়েই চলেছে তাদের ঘর-সংসার। এতে আরেকটি লাভও হচ্ছে। বিদেশি ফাস্টর্ ফুডের দিকে যতটা ঝেঁাক ছিল সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে, সে ঝেঁাকটি এখন পিঠার দিকে গেছে। নকশিপিঠা, ঝুরিপিঠা, নারকেলের লাড্ডু, বরফিপিঠা বিদেশেও যায়। তা অবশ্য বাণিজ্যিকভিত্তিতে নয়। আমাদের দেশের নানারকম পিঠাÑ যা কয়েক মাস সংরক্ষণ করা যায়। সেসব পিঠা বাজারজাত করাসহ যদি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা যায়, তবে তা থেকে আমরা প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও অজর্ন করতে পারি।

আমাদের দেশের মেলাগুলোয় পিঠার উৎসবে অনেক সময় বিদেশিদের দেখা যায় মজা করে পিঠা খেতে। নকশা করা পিঠার বাহারি ডিজাইন দেখে তারা অবাক হয়। কি করে বাংলাদেশের গ্রামের গরিব নারীরা এত সুন্দর নকশা করতে পারে। সুস্বাদু পিঠাপুলি তৈরি করতে পারে? বহু প্রশ্ন করে তারা এ নিয়ে। বাংলাদেশের সন্তানরা তাদের মায়ের হাতের হরেকরকম রান্না, পিঠাপুলি খেতে পারে। পিঠাপুলি আমাদের বিরাট ঐতিহ্য ও নারীর শিল্পী সত্তার পরিচয় বহন করে। দেশ-বিদেশে পিঠাশিল্পের বাণিজ্যিকীকরণ দরকার। তা হলে দেশের সুনাম বৃদ্ধির পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক দরিদ্র বেকার নারী-পুরুষের কমর্সংস্থানের মধ্য দিয়ে তাদের জীবন মানেরও উন্নতি ঘটবে নিঃসন্দেহে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<30853 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1