বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চাই মানসিকতার পরিবতর্ন

একজন নারী সংসার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। নারী ব্যতীত সংসারের ভিত দুবর্ল হয়ে পড়ে। নারীরা তাদের ত্যাগ, ভালোবাসা ও পরিশ্রমের সঠিক মূল্যায়ন পায় না। তাই ফলাফল আসে নেতিবাচক। যা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। নারীকে সঠিক রূপে মূল্যায়ন করতে হলে একজন নারীর পুরো জীবন ব্যবস্থাকে উপলব্ধি করতে হবে এবং উপলব্ধিকে কমের্ বাস্তবায়ন করতে হবে। একজন নারী সংসারে কতটুকু শ্রম দিয়ে থাকেন, সন্তানের জীবন গঠনে মায়ের ভ‚মিকা কী, নারীর দুবর্লতা ও অপুষ্টির কারণগুলো কী কী এবং নারীর নিজস্ব প্রতিভা ও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথে বাধাসমূহ আমাদের আলোচ্য বিষয়। বিষয়গুলো যুক্তি ও সম্ভাব্যতার আলোকে তুলে ধরছেন মাসুমা রুমা
নতুনধারা
  ২১ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

একজন নারী বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে স্বামীর ঘরে পা রাখেন। কিন্তু সংসারজীবনে কল্পনা আর বাস্তবতার মাঝে যখন বিরাট ব্যবধান প্রত্যক্ষ করেন, সমস্যা উৎপত্তি ঘটে তখন থেকেই। তবু সংসারে নিজেকে স্থায়ী করার জন্য, সামাজিকতাকে অক্ষুণœ রাখার জন্য নারীরা সব যন্ত্রণাকে উৎরিয়ে সংসারে শান্তি প্রতিষ্ঠার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। সব সময় সে প্রচেষ্টা সফলতার মুখ দেখে এমনটা না। কিন্তু ব্যতিক্রমকে আমরা কেন উদাহরণ হিসেবে নেব? একটা সময় নারী তার গভের্ সন্তান ধারণ করেন। ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন মা। একজন নারী সন্তান জন্ম দেয়ার পর থেকে সন্তানের জীবন ও ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। কি করলে তার আদরের সন্তানটি পৃথিবীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে, হয়ে উঠবে শ্রেষ্ঠ সন্তানÑ একজন মায়ের চিন্তার তালিকা বিষয়গুলো শীষের্ থাকে। সন্তানের সুস্বাস্থ্যের জন্য তিনি নানা প্রদ্ধতি অবলম্বন করেন। সন্তানকে খারাপ সঙ্গ ও অশ্লীলতা থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেন। সন্তানের মানসিক বিকাশের জন্য নিজেকে সব সময় সজাগ রাখেন। সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য ভালো ও মানসম্মত একটি স্কুলে ভতির্ করিয়ে দেয়ার জন্য রীতিমতো যুদ্ধ শুরু করে দেন। সংসারের কাজের ফঁাকে ফঁাকে ছেলেমেয়েকে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করে তোলেন। ভালো একটি স্কুলে ভতির্ করানোর পর মায়ের জন্য শুরু হয়ে যায় নতুন লড়াই। সন্তানকে সময়মতো স্কুলে নিয়ে যাওয়া, সময়মতো পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো, পড়াশোনা করিয়ে ভালো ফলাফল করানোÑ সব কিছুই যেন একজন মায়ের একার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। অধিকাংশ পরিবারে পিতা কেবল অথর্ সরবারহের দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু অথের্র বাইরেও যে পরিবার, পরিবারের সদস্যদের প্রতি অনেক ধরনের দায়িত্ব রয়েছে সে বিষয়টি পুরুষ সদস্যরা খুব কমই অনুভব করেন। বাড়ির পুরুষ সদস্যরা পরিবারকে খুব কম সময় দিয়ে থাকেন। ফলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কিংবা পিতার সঙ্গে সন্তানদের মধ্যে ধীরে ধীরে এক ধরনের দূরত্ব তৈরি হয়। এ দূরত্ব অনেক ক্ষেত্রে সংসার ভেঙে যাওয়ারও কারণ হতে পারে। একজন নারীকে কেবল সন্তানের যতœ নিতে হয় তা কিন্তু নয়, বরং স্বামীসহ সংসারের বাকি সদস্যদেরও ভালোমন্দ ভাবতে হয় তাকে। কে কি খাবে, কি করবে, কিসে খুশি, কিসে অখুশি, কার জন্য কি সিদ্ধান্ত নিতে হবেÑ এসব কিছু একজন নারীকেই ভাবতে হয়। ঘুম থেকে উঠে ঘুমাতে যাওয়ার পূবর্ পযর্ন্ত তার স্বস্তি মেলে না। এত কিছুর পরও অধিকাংশ নারী পরিবারের সদস্যদের মন জয় করতে পারে না। ফলে বেশিরভাগ নারীর ভাগ্যে উপহার হিসেবে ঘৃণা আর নিযার্তনই জোটে। লাঞ্ছিত হয় নারী সত্তা।

প্রতিটি মানুষই পৃথিবীতে কোনো না কোনো প্রতিভা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু কয়জন মানুষ তার প্রতিভার সদ্ব্যবহার করতে পারেন? প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিতে পারেন? বিশেষ করে কয়জন নারী? সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নারীর জীবনব্যবস্থা ও অবস্থানে আমূল পরিবতর্ন এসেছে এটা যেমন সত্যি, তেমনি নারীদের চিরাচরিত কিছু বিষয় অপরিবতির্তই রয়ে গেছে এটাও চরম সত্য। প্রতিটি নারী যদি তার দক্ষতা আর প্রতিভার সঠিক ব্যবহার করতে পারে তাহলে সমাজ ও রাষ্ট্রের আমূল পরিবতর্ন আসবে। দেশের আথির্ক ও সামাজিক অবকাঠামোগত উন্নতি সাধন হবে। সংসার গঠন আর পরিবারের সদস্যদের যতœ নিতে গিয়ে অধিকাংশ নারী তার মেধা ও প্রতিভাকে ধ্বংস করে ফেলে। নিজেকে ধীরে ধীরে আত্মনিভর্রশীলতার ইচ্ছা থেকে দূরে সরিয়ে পরনিভর্রশীল করে তোলে। এই পরনিভর্রশীলতাকে অনেক নারী মেনে নিলেও তাতে আত্মতৃপ্তি খুব কমই থাকে। নারীর নিজস্বতার অপমৃত্যু ঘটে। নারী বেঁচে থেকেও মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করে অনেক ক্ষেত্রে। নারীর ভালো লাগা, মানসিক সুস্থতার প্রতি যতœশীল হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূণর্। কিন্তু দুঃখের বিষয়, নারীর মানসিক সুস্থতার প্রতি অধিকাংশ পুরুষই উদাসীন। দিন-রাত পরিবারের জন্য শ্রম দিতে গিয়ে নারীরা নিজের শরীরের প্রতি অবহেলা করে। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারীরা শারীরিক দুবর্লতা আর পুষ্টিহীনতার স্বীকার হয়। শারীরিক এই বিপযর্য়ও প্রতিভাকে শেষ করে দেয় ধীরে ধীরে। অসুস্থ শরীরে তার জন্য পারিপাশ্বির্কতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলা কঠিন হয়ে পড়ে। নারীরা ক্রমাগত হতাশায় ভুগতে থাকে। পৃথিবীর যাবতীয় আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়ে। অনেক পুরুষকে বলতে শুনেছি যে, সাম্প্রতিক বিশ্ব সম্পকের্ নারীর ধারণা খুবই সংকীণর্। আমার প্রশ্ন হলোÑ একজন নারী সংসার, সন্তান আর পরিবারের শান্তি প্রতিষ্ঠায় জীবনের সিংহভাগ সময় ব্যয় করার পর পৃথিবী সম্পকের্ জানার আগ্রহ কোথা থেকে পাবে? একজন পুরুষ কমর্জীবন শেষে স্ত্রীকে কতটুকু একান্ত সময় দিয়ে থাকেন বা দিতে ইচ্ছুক? স্ত্রীর ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠা আর স্বপ্ন বাস্তবায়নে কতজন স্বামী সচেতন? আজকাল পড়াশোনার প্রতি কমবেশি সবাই সচেতন। শহরের গÐি পেরিয়ে সে সচেতনতা গ্রামেও পেঁৗছে গেছে। নারী-পুরষ উভয়ই শিক্ষিত হচ্ছে। কিন্তু এই বিশাল পরিমাণ শিক্ষিত নাগরিকের মধ্যে সুশিক্ষিত নাগরিকের সংখ্যা গুনে দেখলে আমরা রীতিমতো আশাহত হব। এটাই বাস্তবতা। কিন্তু এমন বাস্তবতা কখনোই আমাদের কাম্য ছিল না।

নারীর সহযোগিতা ব্যতীত সভ্যতাকে উন্নয়নের সবোর্চ্চ স্তরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না। নারী-পুরুষের সমান অধিকার মূলত সম্মান, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, বিশ্বাস আর সচেতনতার সমতা। অনেকে নারীর অধিকার আন্দোলনের কথা বললেও মূল বিষয় থেকে কেন জানি আমরা দূরে সরে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত। সময় এসেছে সব কিছু ঢেলে সাজানোর। সব কিছু বদলে ফেলার। এ জন্য সবাইকে সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে। করতে হবে মানবিকতার চচার্। করতে হবে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবতর্ন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<33071 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1