শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মেয়েদের হল জীবনের মধুর গল্প

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) রয়েছে ছাত্রীদের জন্য সুবিশাল চারটি হল। হলে মেয়েদের কাটে মধুর সময়। মেয়েদের কাছ থেকে জানা গেল, সেইসব নানান গল্প। তাদের সেই হল জীবনের গল্প নিয়ে লিখছেন আবুল বাশার মিরাজ, ছবি তুলেছেন শিশির মহন্ত
নতুনধারা
  ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

‘জাগো নারী জাগো বহ্নিশিখা। জাগো স্বাহা সীমন্তে রক্তটিকা।’ জাতীয় কবি কাজী নজরুলের কবিতার কথাগুলো আজ অনেকটাই পরিপূণর্তা পেয়েছে। আর খুব বেশিদিন নেই যেদিন বাংলাদেশের সব মেয়েই জাগবে, সবের্ক্ষত্রে তারা জায়গা করে নেবে এটাই প্রত্যাশা। কেবল শিক্ষাই পারে তাদের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পেঁৗছে দিতে। ইদানীং, শিক্ষা ক্ষেত্রেও মেয়েরা তাদের দূরদশির্তা প্রমাণ দেখিয়ে যাচ্ছে। প্রতি বছর এসএসসি, এইচএসসিতে মেয়েদের পাশের হার সেটাই প্রমাণ করে। আজকাল পুরুষদের পাশাপাশি সমানভাবে বিভিন্ন পেশায় তারা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। রাজনীতি থেকে সমাজসেবাসহ বিভিন্ন কাজে মেয়েদের সুনাম এখন চারদিকে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন মেয়ের সংখ্যা প্রায় ২৫২৪ জন, যা মোট শিক্ষাথীর্র প্রায় ৪২ ভাগ। মেয়েরা বিশেষ কোনো কোটায় নহে, অদম্য মেধার পরিচয় দিয়ে ভতির্ হয়েছে প্রকৃতি কন্যাখ্যাত চিরসবুজের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারা হাতে-কলমে পাঠ নিচ্ছেন মাটি আর উদ্ভিদের। এরপরও তারা কিভাবে প্রবাসে থেকে পড়ছেন, সে বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেন। সবাই বলেছেন, বেশ ভালো আছি। এমন মধুময় জীবন হারাতে চাই না। চলে যাওয়ার সময় অনেক কষ্টই পাব। এর আগে চোখ মেলে দেখতে চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কিছু।

ঢাকা থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে এবং ময়মনসিংহ জেলা শহর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দক্ষিণে ব্রহ্মপুত্র নদের প্রান্তে চির সবুজে ঘেরা গ্রামীণ পরিমÐলে ১২০০ একর এলাকাজুড়ে অবস্থিত এই প্রকৃতি কন্যার। শিক্ষা, গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও স¤প্রসারণ এ চার লক্ষ্যকে সামনে রেখে আজ থেকে প্রায় ৫৫ বছর আগে ১৯৬১ সালের ১৮ আগস্ট যাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশের কৃষি শিক্ষার সবোর্চ্চ এ বিদ্যাপীঠ। বতর্মানে কৃষি শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় ছাত্রী হলে জীবনযাপনে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তারপরও হল জীবনের সুখ-দুঃখ, পাওয়া না পাওয়া, টক-ঝাল-মিষ্টি নানান অভিজ্ঞতা।

ছাত্রী হলে সিট সংকট থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় হল জীবনের প্রথম বছর কাটে গণরুমে। এ ছাড়াও প্রথম বষের্র শিক্ষাথীের্দর কিছু কিছু কাজে থাকে প্রতিক‚লতা। তবে গণরুমের মজাও রয়েছে অনেক। এখানে ঘুমানোর জায়গা কম হলেও আনন্দের পরিসীমা অনেক বিস্তৃত। হাসি-ঠাট্টা, নাচ-গান, একজনের খাবার অন্যজন জোর করে খাওয়া, বিশেষ করে আচার আনলে তো কথাই নেই। সেই সঙ্গে মাঝে মধ্যে মান-অভিমান, কিছু খুনসুটিও রয়েছে গণরুমে। তারপর ছয় মাস বা একবছর পর সুযোগ হয় বøকে থাকার। বøকের রুমের জীবন আবার সম্পূণর্ আলাদা। চার শয্যাবিশিষ্ট রুম, পাশে বেসিন, রান্না করার জায়গা, লকার প্রভৃতি সুবিধা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের আনন্দময় অভিজ্ঞতা টিভিরুম। কমন রুমে রয়েছে ইনডোর খেলার নানা সামগ্রী। টেবিল টেনিস, ক্যারাম, দাবা, লুডু খেলায় মেতে থাকেন ছাত্রীরা। সেমিস্টার সিস্টেম চালু থাকায় পড়াশোনার চাপ অনেক বেশি। সেই সঙ্গে আছে প্র্যাকটিক্যাল, নোট, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশনÑ যা ছাত্রীদের ব্যস্ততা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তারপরও আড্ডার বিন্দুমাত্র কমতি নেই হলে। একবার শুরু হলে তা আর শেষ হয় না। কত যে বিষয় নিয়ে আড্ডা হয় তার কোনো ইয়ত্তা নেই। মধুময় এ সময়গুলো খুবই মজাদার এবং কখনই ভুলবার নয়। যত গভীর রাতেই ঘুমাক না কেন সকাল ৮টায় চোখ মুছতে মুছতে সবাই ক্লাসে যায় ঠিকই।

হল জীবনের আরও একটি উপভোগ করার মতো বিষয় হলো ফ্লোর ফিস্ট, এতে অনেক আনন্দ, আড্ডা, নাচ-গান, বিকেলে শাড়ি পরে ঘুরতে বের হওয়া, সন্ধ্যায় প্রতিযোগিতামূলক খেলা, মজার মজার খাবার খাওয়া, সবকিছু মিলে অতুলনীয়। তবে ছোটদের সবসময় সতকর্ থাকতে হবে যেন কোনো বড় আপু যে কোনো ভাবেই হোক কষ্ট না পায়, প্রচুর সম্মান দিতে হবে তাদের। তারা যেমন কটাক্ষ করে কথা শোনায় তেমনি আবার স্নেহও করেন। এটা তেমন কোনো ব্যাপার না। কেননা, টক-ঝাল-মিষ্টি তো থাকবেই, না থাকলেই বা কেমন হবে। এ ছাড়া হলে বিভিন্ন ধরনের মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করার সুযোগ হয়। খুব ভালো, খুব মন্দ, ধামির্ক, উচ্ছৃঙ্খল, আধুনিক, রাগী, বাচাল আরও যে কত ধরনের!

হলের কোনো বান্ধবীর জন্মদিন পালন করা হয় খুব মজা করে। তাকে না জানিয়ে সবকিছু আয়োজন করে ঠিক রাত ১২.০১ মিনিটে সবাই মিলে হাজির হয় তার রুমে। তারপর হৈ-হুল্লোড় করে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো, কেক কাটা, আনন্দ-উল্লাস করা হয়। পহেলা বৈশাখ বা কোনো অনুষ্ঠানে সবাই মিলে দল বেঁধে বের হয় ঘুরতে। অবসরে চঁাদা তুলে কয়েকজনে মিলেও ভালো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। অনেকে মাঝে মধ্যে বা প্রায় নিয়মিত রান্না করে খায়। এরপর সময় কাটে সিনেমা-নাটক দেখে, বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করে। কেউ আবার সারা রাত পার হয়ে যায় ছেলেবন্ধুর সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে। অনেক সময় বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে ঝগড়া করে, কান্নাকাটি করে পরদিন না খেয়ে থাকা।

সবকিছু মিলিয়ে হল জীবন একটা অসাধারণ জীবন। এখানে না এলে এর মজা বুঝতে পারা খুবই কঠিন। অনেক বাস্তব একটা জীবনের মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ করে দেয় এই হল জীবন। বন্ধুদের সঙ্গে অনেক রাত জেগে আড্ডা দেয়া, ছাদে বৃষ্টিতে ভেজা, জ্যোৎস্না উপভোগ করা, একসঙ্গে সবাই মিলে হঠাৎ কোথাও যাওয়ার পরিকল্পনা করা, ক্যান্টিনে বসে বিকালের নাস্তা করা, বড়দের সম্মান করা, ছোটদের স্নেহ করা ইত্যাদি অনেক কিছুরই সুযোগ করে দেয় এই হল জীবন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<36095 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1