সর্বোপরি চাই বাংলা
ভাষার সম্মান
তাজরীন মেধা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ছোটবেলায় পাঠ্যপুস্তকে ভাষা শহীদ বরকত, জব্বার, শফিউরের নাম মুখস্থ করে এসেছি। বাংলা বইয়ের গদ্য থেকে জানতে পেরেছি বাংলা ভাষার জন্য নাকি ১৯৫২ সালে মানুষ প্রাণ দিয়েছে। আশ্চর্য লাগত! ভাষার জন্য আবার কেউ প্রাণ দেয় নাকি?
ভাষা দিবসের মাহাত্ম্য জেনে সত্যিই গর্ববোধ হতো, বাঙালিরাই একমাত্র জাতি- যারা নিজেদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য জীবন দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি।
তবে, স্বয়ং আমরা নিজেরাই পর্যাপ্ত মূল্য দিতে পারেনি এই ত্যাগের। ফ্যাশন সচেতন এই জাতি এখন ভাষা দিবস হিসেবে শুধুই বোঝে শাড়ি বা ওড়নার ভাঁজে 'অ আ ক খ' বস্নক করা অথবা একুশে ফেব্রম্নয়ারি সকাল বেলা খালি পায়ে ফুলের ডালা নিয়ে শহীদ মিনার পর্যন্ত যাওয়া! শিশুরা ভাষা দিবস হিসেবে শুধু অমর একুশে বইমেলা বোঝে। ব্যাস! এটুকুতেই তাদের ভাষা প্রেম শেষ!
আমাদের এই মায়ের ভাষা আজ অতি আধুনিকতার ছোঁয়ায় পদে পদে অবহেলিত হচ্ছে; এর প্রধান কারণ পাশ্চাত্য সংস্কৃতি অনুসরণ। বর্তমান যুগের বাবা-মা সন্তানদের বাংলা মিডিয়ামে নয় বরং নামি-দামি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে পড়াতে অধিক উৎসুক; তরুণ সমাজ ইংরেজি গান বা ফিল্ম না দেখাকে আনস্মার্টনেস মনে করে; আশপাশে তাকালে অশিক্ষিত থেকে আরম্ভ করে অতি উচ্চশিক্ষিত সবার মুখে ইংরেজি ভাষার প্রয়োগ!
\হযেখানে আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ২৯তম সাধারণ অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দিয়েছেন সেখানে এ জাতির বাংলায় কথা বলতে এত লজ্জা কিসের? বাংলা ভাষার বিকাশ ঘটানোর জন্য আমাদের তরুণ সমাজকে বেশি বেশি বাংলা ভাষায় রচিত বই পড়া, শুধু বইমেলায় গেলেই চলবে না বরং বই পড়তেও হবে, বিতর্কের ভাষা হিসেবে বাংলাকে গুরুত্ব দিতে হবে, যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে সর্বস্তরে বাংলা ব্যবহার করতে হবে এবং সর্বোপরি বাংলা ভাষাকে সম্মান করতে হবে।
মাতৃভাষার বিকৃতি বড়ই লজ্জার
সাদিয়া ইসলাম নিধি
উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ, ঢাকা
আমাদের ভাষা অনেক সুন্দর, অনেক মার্জিত একটা ভাষা মাতৃভাষা হওয়ায় পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর এই ভাষা আমরা অবলীলায় সহজেই শিখে যাচ্ছি।
মাঝেমধ্যে অবাক হয়ে ভাবি, বায়ান্ন সালে ভাষার জন্য আমাদের তরুণ বীর ছেলেরা যদি নিজেদের জীবন উৎসর্গ না করে দিত তাহলে আমাদের এখন উর্দুতে কথা বলতে হত! সেই বীর সন্তানদের প্রতি অন্তর থেকে গভীর শ্রদ্ধা, তাদের এই ঋণ আমরা কখনো শোধ করতে পারব না। ভাষার জন্য নিজেদের জীবন দিয়ে আমাদের মাতৃভাষা উপহার দিয়ে গেছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা প্রতিনিয়ত এই ভাষাটাকে কতভাবে বিকৃত করে চলেছি। এটা অপ্রত্যাশিত, বড় লজ্জার।
সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হচ্ছে, এখনকার অনেক শিশুরাই কিন্তু ঠিকমত শুদ্ধ বাংলা বলতে পারছে না। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের বদৌলতে ইংরেজি আর টিভি সিরিয়ালের প্রাদুর্ভাবে হিন্দি খুব ভালোমতো বাংলা ভাষায় ঢুকে যাচ্ছে মাঝে মধ্যেতো ভয় হয়, শেষমেশ আর বাংলা ভাষাটা থাকে কিনা! এই একুশ শতকে এসে এটাই চাওয়া, আমাদের সবার প্রিয় সুন্দর এই ভাষাটি যেন হারিয়ে না যায়। মায়ের মুখের প্রিয় ভাষাটিকে সবাই যত্ন করে অন্তরে লালন করি, এটাই প্রত্যাশা।
বাংলা ভাষার স্থান হোক প্রথম
সাদিয়া আফরিন
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
ভাষার মাধ্যমেই আমরা পূর্ণাঙ্গরূপে মনের ভাব প্রকাশ করে থাকি। বাঙালিই একমাত্র জাতি যারা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে। বাংলা ভাষা দিনে দিনে সুপ্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। বিশ্বের অন্য দেশগুলোতে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে- যা সমগ্র বাঙালি জাতির জন্য অত্যন্ত গর্বের একটি বিষয়। কিন্তু সমগ্র বিশ্বে যখন বাংলা ভাষা পরিচিতি পাচ্ছে, নিজের স্থান দখল করে নিচ্ছে তখন নিজ দেশেই আবার অবহেলিত হচ্ছে। বিশেষত আধুনিকতার দোহাই দিয়ে অনেকেই বাংলা ভাষাকে এড়িয়ে পাশ্চাত্য দেশের ভাষাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। উচ্চ ও উন্নত শিক্ষার নাম করে 'ইংলিশ মিডিয়াম' এর শিক্ষার্থীরা বাংলা ভাষা প্রায় ভুলতে বসেছে- যা বাংলা ভাষা ও বাঙালি জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জার। নিজস্ব ভাষা অর্জনের ৬৬ বছরে এসে মাতৃভাষার প্রতি অনীহা প্রত্যাশিত নয়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এই প্রত্যাশা রাখি যেন ভাষা ব্যবহারে সবার মধ্যে শৃঙ্খলা আসে। সবাই নিজস্ব ভাষার গুরুত্ব উপলব্ধি করুক। পাশ্চাত্য দেশের ভাষাকে একদম এড়িয়ে নয়, তবে সমানতালে মাতৃভাষা বাংলা তার পূর্ণ মর্যাদা পাক। বায়ান্নর ভাষা শহীদদের রক্তের ও প্রাণের সম্মান রক্ষা হোক।