বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নারী উন্নয়নে চাই সাম্য

মানবচক্রের যেই মাধ্যমে আমাদের এই পৃথিবীতে আসা, তার একটি অপার মাধ্যম এই নারী। এই নারী কখনো মা, কখনো বোন আবার কখনো স্ত্রী। ধর্মেও আছে নারীর সম্মানের স্থান। হাজার সম্পর্কের মধ্যে তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অন্যতম। নিজেকে অন্যের সুখে হাসতে হাসতে বিলিয়ে দিতে পিছপা হন না এই নারী। তাই হয়তো একাই ভালোবাসে সমস্যা ও সমাধানের হালটি কাঁধে তুলে নিতে ও নানা ঘাত-প্রতিঘাত পার করেই চলে এই নারীর জীবন। তাই তার উদ্দেশ্য করে আর তাকে সম্মান জানাতে বিশ্বে একটি দিন আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হয় নারী দিবস হিসেবে। সেই দিনটি হলো ৮ মার্চ।
তাসনিম নাহের
  ০৪ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

প্রতিবছরই আন্তর্জাতিক নারী দিবসের একটি প্রতিপাদ্য থাকে। চলতি বছরের প্রতিপাদ্য হলো, 'ব্যালেন্স ফর বেটার'। অর্থাৎ নারী জীবনের উন্নয়নে চাই সাম্যতা। নারীর জীবনে যা কিছু ভালো অর্জিত হবে তার জন্য চাই ভারসাম্যমূলক অবস্থান। সেটা পরিবারে হতে পারে। সমাজে কিংবা ব্যক্তিক উন্নয়নেও।

তবে প্রতিপাদ্য বা স্স্নোগান কেবল মুখে আওড়ালে হবে না, হৃদয় ও মননে ধারণ করতে হবে। নারীর উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিশ্চিত করতে হলে নারীর প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। সেই সঙ্গে সব ধরনের অন্ধত্ব, অনাচার ও কূপমন্ডূকতা থেকে সমাজকে মুক্ত করার জন্য চাই সাংস্কৃতিক জাগরণ। নিরন্তর অনুশীলনের মধ্যদিয়ে সমাজকে এমন স্তরে নিয়ে যেতে হবে, যেখানে নারী-পুরুষের কোনো বৈষম্য থাকবে না। নারী নিজেকে অসহায় বা দুর্বল ভাববে না।

নারী দিবসের উত্থান হয়েছিল শত বছর আগে। ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে সেলাই কারখানার নারী শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করেন। তখন নিউ ইয়র্ক বস্ত্র কারখানায় হাজার হাজার নারী শ্রমিক কাজ করত। তাদের দৈনিক ১৫ ঘণ্টার ওপরে পরিশ্রম করতে হতো। কিন্তু সে অনুপাতে মজুরি দেয়া হতো না। সুই, সুতা, বিদু্যৎসহ অন্য আনুষঙ্গিক যে সব জিনিসপত্র নারীরা ব্যবহার করত, মালিকরা সে বাবদ বেতন থেকে কেটে রাখত। বিলম্বে ফ্যাক্টরিতে যাওয়া, কাজের ক্ষতি করা অথবা টয়লেটে বেশি সময় নেয়ার জন্য শ্রমিকদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হতো। মালিকগোষ্ঠীর এ অমানবিক শোষণের বিরুদ্ধে ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ নিউ ইয়র্কের সেলাই কারখানায় নারী শ্রমিকরা উপযুক্ত বেতন ও দশ ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলনে নামে। আন্দোলন দমনে পুলিশ নারীদের ওপর গুলি চালায়। ধারণা করা হয়, এ ঘটনার মাধ্যমে নারী আন্দোলনের ইতিহাসে পুলিশ প্রথম গুলি চালায়। ফলে আন্দোলন আরও জোরদার হয়। পরে নারীর ভোটাধিকার ইসু্য আন্দোলনের অন্যতম কর্মসূচি হিসেবে সামনে আসে। সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৮৬০ সালে নিউ ইয়র্ক শহরের সেলাই কারখানার নারী শ্রমিকরা দাবি আদায়ের জন্য ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে সমর্থ হয়। নারী শ্রমিকদের এ সংগ্রামকে স্মারক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে প্রধান ভূমিকা পালন করেন ক্লারা জেটকিন। ক্লারা ১৮৭৮ সালে সিবার ইনস্টিটিউট থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। এর মাধ্যমে ক্লারা শিক্ষকতার সনদ অর্জন করেন। তিনি ১৯০৫ সালে 'গ্রিকহাইট' নামক তার বিখ্যাত প্রকাশনা ও সম্পাদনা শুরু করেন। ১৯০৭ সালে আন্তর্জাতিক নারী সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হলে ক্লারা তার সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯১০ সালে কোপেন হেগেনে কমিউনিস্টদের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে ক্লারা ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস ঘোষণার প্রস্তাব দেন এবং তা সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়। পরের বছর অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড এবং জার্মানিতে প্রথমবারের মতো নারী দিবস পালিত হয়। ১৯১৩ ও ১৪ সালে আন্তর্জাতিক নারী দিবস প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রতিবাদ হিসেবে পালিত হয়। নারী আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণায় নারী-পুরুষের সমঅধিকারের ব্যাপারে স্বীকৃতি দেয়া হয়। ১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনের নেত্রী ক্লারা জেটকিন পুরুষের পাশাপাশি নারীর সমঅধিকারের দাবিটি আরও জোরালো করেন। তারই নেতৃত্বেই ১৯০৭ সালে জার্মানির স্টুটগার্টে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক নারী সম্মেলন। ১৯১০ সালে কোপেন হেগেনে ১৭টি দেশের ১০০ জন প্রতিনিধি নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে এ সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯১১ সাল থেকে ৮ মার্চ দিনটিকে 'নারীর সমঅধিকার দিবস' হিসেবে পালিত হয়। নারী অধিকারের যৌক্তিক দাবিগুলো বিবেচনায় রেখে ১৯৪৫ সালে সানফ্রাসিসকোতে জাতিসংঘ স্বাক্ষর করে 'জেন্ডার ইকুয়ালিটি' চুক্তিতে। ১৯৭৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ৮ মার্চ নারী দিবস পালনের জন্য উত্থাপিত বিল অনুমোদন পায়। ঐতিহাসিক সংগ্রামের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘ ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে ৮ মার্চকে 'আন্তর্জাতিক নারী দিবস' ঘোষণা করে।

দিন বদলাচ্ছে। আমাদের এখন প্রয়োজন কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা। যাতে আর কোনো নারী সহিংসতার শিকার হয়ে পত্রিকার শিরোনাম না হয়। দৃপ্ত পদক্ষেপে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। এ জন্য নারীদের উন্নয়নের পথকে কণ্টকমুক্ত, নিরাপদ করার জন্য প্রয়োজন কঠোর আইন।

নারীরা সবক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার। বিশেষ করে যখন সম্পদের অধিকারের প্রশ্ন আসে তখন নারীদের সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করা হয় নারী উপাধি দিয়ে। পরিবার থেকেই নারীরা বৈষম্যের শিকার হয়। বৈষম্যের ফলে নারী শোষণ-নিপীড়নের শিকার হয় বেশি। অথচ নারীও একজন পরিপূর্ণ মানুষ। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সর্বত্র নারীরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত।

তাই নারীদের আর অবহেলা, অবজ্ঞা নয়। যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে নারী জাতির উন্নয়ন অব্যাহত থাকুক এবং আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০১৯ সফল হোক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<39270 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1