শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
নারী শিক্ষা

এগিয়ে যেতে এগিয়ে নিতে

মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুলস্নাহ
  ০৮ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

সামাজিক, আর্থিক, সাংস্কৃতিক নানা কারণে চারপাশের দরিদ্র পুরুষ যেমন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত, তেমনি সর্বস্তরে ব্যাপকসংখ্যক নারীও অকারণে আজ শিক্ষার আলো থেকে বহুদূরে। আধুনিক সমাজব্যবস্থা কুসংস্কার, নিপীড়ন ও বৈষম্যের বেড়াজালে সর্বদা নারীকে ঘিরে রেখেছে। নারী শিক্ষাকে কেবল পরিবারের মঙ্গল, শিশুযত্নের ও ঘরকন্নার কাজে সীমাবদ্ধ রেখে দিব্যি দেশ ও দশের উন্নয়নে বাধাগ্রস্ত করেছে। কিন্তু স্বাধীনতার পর বাঙালি নারীদের কিছুসংখ্যক আত্মনির্ভরশীল, জাতীয় উৎপাদনে অংশগ্রহণ, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তৎপর হয়ে ওঠে। এরপরও নারীর সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা হয়নি এখনও। এর জন্য শঙ্কামুক্ত নারী শিক্ষার ব্যবস্থা করা জরুরি। যার মূল লক্ষ্য হবে নারীকে সচেতন ও প্রত্যয়ী হিসেবে গড়ে তোলা, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ও দারিদ্র্য বিমোচনে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক অগ্রগতিসাধনে সহায়তা করা, সুন্দর ও স্বাচ্ছন্দ্যময় পরিবার গঠনে উৎসাহিত করা এবং যৌতুক ও নারী নির্যাতনরোধ প্রক্রিয়ায় সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে পারার দৃষ্টিভঙ্গি ও আত্মপ্রত্যয়ী হওয়ার যোগ্যতা সৃষ্টি করা। নৈতিকতাহীন শিক্ষা, পরস্পরবিরোধী শিক্ষা, সহশিক্ষা পরিহার করে একটি জীবন ও বৈশ্বিক পরিচ্ছন্ন ধারণানুযায়ী উৎপাদনশীল ও কর্মমুখী শিক্ষানীতির বড্ড দরকার।? নারীর প্রতি সবধরনের বৈষম্য বিলোপের জন্য আন্তর্জাতিক দলিল সিডো সনদে যেমনটা বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কারণ নারীরা আজও অশিক্ষা কিংবা কুশিক্ষার চার দেয়ালে বন্দি। অথচ সন্তান জন্মের পর নারীরাই সন্তানের যাবতীয় শিক্ষার ভার গ্রহণ করে থাকেন। শিশুর সেবাযত্ন, খাওয়াদাওয়া, আচার-আচরণ, আদব-কায়দা শিক্ষা দেয়া সম্পূর্ণ তাদের ওপরই নির্ভর করে। কাজেই সুশিক্ষিত মা না হলে সুসন্তান কখনোই আশা করা যায় না। নেপোলিয়ান বোনাপার্ট বলেছিলেন, 'যদি তোমরা আমায় একজন ভালো (শিক্ষিতা) মা দাও, আমি তোমাদের একটি ভালো জাতি উপহার দেব। নারীজাতি শিক্ষিত না হলে পুরো জাতিই অশিক্ষা ও কুশিক্ষার অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকবে। সত্যিকারার্থে কোনো ধর্মই আজ অবধি নারী শিক্ষার বিরোধিতা করেনি, বরং নারী শিক্ষাকে উৎসাহিত করেছে। তাই সর্বপ্রথম নারীজাতিকে শিক্ষিত করা চাই।

সম্প্রতি একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ৮০ শতাংশ নারী মানসিক নির্যাতনের শিকার। এমনকি যেসব নারী উপার্জন করে সংসারে অবদান রাখছেন, তাদের মধ্যে ১০ থেকে ২০ শতাংশ মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নারীর প্রতি সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এমনটা হচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। আজকাল সংসারে স্ত্রীর অবদান আছে কি নেই, তা পুরুষের কাছে বিবেচ্য নয়। অনেক শিক্ষিত পুরুষ মনে করেন, গায়ে হাত না তুললেই কেবল নির্যাতন হয় না। কিন্তু মানসিক নির্যাতনটা একজন নারীর জন্য আরও ভয়াবহ ব্যাপার। সন্তানের ওপরও এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। যদিও গ্রামাঞ্চলে দেখা যায়, রোজগার করা নারীর ওপর নির্যাতনটা অপেক্ষাকৃত কম হচ্ছে। কিন্তু শহরে শিক্ষিত উচ্চবিত্ত পরিবারে মানসিক নির্যাতনের মাত্রা কিন্তু বেশি বৈ কম নয়। শিক্ষার অভাবে এখনও অনেক নারীই জানেন না কোথায় গিয়ে মামলা করতে হয়। মামলা করতে কত টাকা লাগে। শিক্ষিত হলেই নারী তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন হবেন। সচেতন না হলে তাদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়তেই থাকবে দিনদিন।

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দুনিয়ার শুরু থেকে নারীরা নিজেদের কর্মঠ ও সক্ষম হিসেবে গড়ে তুলেছেন;? তাদের উপযোগী বিভিন্ন কাজে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন। সে সময় তারা সেবিকা, শিক্ষিকা, রাঁধুনি হিসেবে আত্মনিয়োগ করেছেন। এসবের পাশাপাশি নারীর জন্য সহায়ক পরিবেশে উন্নত থেকে উন্নততর শিক্ষাব্যবস্থাও সময়ের দাবি? পরিবেশগত সহায়তা পেলে নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রেও ভালো করতে পারবেন-? তবে শিক্ষার উদ্দেশ্য কেবল চাকরি নয়, বরং সমাজ-সংসারের অন্যান্য কাজেও তাদের শিক্ষার বড্ডো প্রয়োজন রয়েছে। সংসারে সার্বিক সুখশান্তি ও পরিবারকে সুশৃঙ্খল ও উৎকৃষ্ট করে গড়ে তুলতেও নারীশিক্ষার বিকল্প নেই। শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুলস্নাহ বলেন, 'শিক্ষার উদ্দেশ্য কেবল মনুষত্বের বিকাশ করা, চাকরি বা নিছক জ্ঞানার্জন নয়। জ্ঞান বেশ বড় বিষয়। যে জাতি জ্ঞানে যত উন্নত, তাদের সম্মান ও ঐশ্বর্য তত উন্নত।' জ্ঞানার্জন ও শিক্ষালাভের মাধ্যমে নিজেকে গড়ে তোলার পাশাপাশি অন্য নারীদেরও শেখাবার প্রয়োজন রয়েছে নারীসমাজের। আমাদের সমাজে নারী লেখকের বড় অভাব। নারীদের নারীসমাজের উন্নয়ন-অগ্রগতি ও চরিত্রগঠনের জন্য লেখালেখির উদ্যোগ নেয়াও দরকার। শিক্ষিত নারী কেবল একটি পরিবার নয়, জাতির উন্নয়নেও বড় ভূমিকা রাখতে পারেন। সুতরাং প্রকৃত শিক্ষার আলো প্রবেশ করানো চাই নারীর কোমল অন্তরে। যাতে একজন নারী সামাজিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে বেড়ে ওঠতে পারেন? ফলে নারী নির্যাতনসহ জীবনযাপনের নানান অসঙ্গতি ও প্রতিবন্ধকতা যেন দূর হতে পারে। কারণ নারী সমাজেরই একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। নারীকে বাদ দিয়ে কোনো সমাজ এগিয়ে যেতে পারে না। নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশ যেমন এগিয়ে যাবে, তেমনি দেশের উন্নয়নে রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রেও নারীর অবদান বহুগুণে বাড়বে। কাজেই নারীর উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<44487 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1